প্রতিমন্ত্রী শ্বশুর জেপি চেয়ারম্যান-জামাইয়ের নিয়োগ বাণিজ্য

বেতন ছাড়া শতাধিক শিক্ষকের মানবেতর জীবন

Thumbnail image
ফাইল ছবি

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের স্থানান্তরিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে প্রায় একশ অবৈধ সহকারী শিক্ষক গত দুই বছর ধরে অবৈধভাবে চাকুরি করছে। তবে আইনি জটিলতায় তারা বেতন বঞ্চিত। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সরকারি চাকুরি বিধান উপেক্ষা করে মিথ্যা প্রলোভনে এদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।

বিনিময়ে সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা ও জামাতা মংসুইপ্রু চৌধুরি অপু জন প্রতি হাতিয়ে নিয়েছিল ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা। অনেকে নিয়োগে অর্থ জোগান দিতে গিয়ে সহায়-সম্পত্তি হারিয়ে পথে বসেছে। কিন্তু নিয়োগ প্রক্রিয়া আইন বিধি বহি:ভূত হওয়ায় বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবন পার করছে শতাধিক শিক্ষকের পরিবার। প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ বলছে,নিয়োগ প্রক্রিয়া অবৈধ। কাজে বেতন পাওয়ার সুযোগ নেই।

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু’র আমলে ২০২৩ প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তার শ্বশুর সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রীর প্রভাব খাটিয়ে শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ৪০ বছর পর্যন্ত আবেদন করার সুযোগ দেয়। জামাই-শ্বশুর মিলে প্রত্যেক চাকুরি প্রার্থীর কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় ১৫ লাখ থেকে ২০ লাখ পর্যন্ত। সে সময় কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার প্রতিশ্রুতি ছিল পার্বত্য এলাকা বিশেষ বিবেচনায় তিনি জাতীয় সংসদে চাকুরি বয়স বৃদ্ধির আইন পাশ করে নিবেন। এমন প্রতিশ্রুতিতে সেই সময়ে চাকরি প্রার্থীরা সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার আশায় আবেদন করেন।

প্রতিমন্ত্রী শ্বশুর কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা ও জামাই জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরীর অপু’র প্রতিশ্রুতিতে অনেক বেকার যুবক সহায়-সম্পত্তি বিক্রি করে জামাই-শ্বশুরের হাতে তুলে দেন ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা। ঐ বিজ্ঞপ্তিতে অনুয়ারী তখন ৩৩৬ জন সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পেয়ে বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর সালে যোগদান করেন। কিন্তু তার মধ্যে প্রায় শতাধিক নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকের বষয় ৩০ বছরের বেশি হওয়ায় হিসাব নিরীক্ষা অফিস তাদের বেতন আটকে দেয়।

ফলে ঐ সব শিক্ষকের ভাগ্যে নেমে আসে অন্ধকার। গত দুই বছর ধরে বেতন না পেয়ে ও প্রতিদিন বিদ্যালয় ও শিক্ষা অফিসের বারান্দায় ঘুরছে তারা।

সে সময় খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদে শিক্ষক নিয়োগে ঘুষ বাণিজ্যের সংবাদ প্রকাশ করায় অনেক সাংবাদিক হেনস্তা ও মিথ্যা মামলার আসামি হয়েছিলেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাটিরাঙা উপজেলার বেশ কয়েকজন অভিভাবক বলেন,নিয়মিত শিক্ষক নিজের প্রয়োজনে বেতন বঞ্চিত শিক্ষকের উপর পাঠদানের দায়িত্ব নিয়ে ক্লাস ফাঁকি দিচ্ছে। অপর দিকে বেতন না পাওয়ার দূঃখে পাঠদান না দিয়ে অফিস কক্ষেই বসে থাকেন শিক্ষক।। ফলে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে।

দীঘিনালা রশিক নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেতন বঞ্চিত সহকারী শিক্ষক মিতামাইযার কাছে তার নিয়োগ বৈধ না কি অবৈধ জানতে চাইলে ক্ষেপে গিয়ে বলেন, আপনার সমস্যা কি? চাকুরি বৈধ বা অবৈধ সেটা আমাদের ব্যাপার বলেই ফোন কেটে দেন।

মাটিরাঙার খেদাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বেতন বঞ্চিত শিক্ষক মুন্নাফ বলেন,দুই বছর ধরে বেতন না পেয়ে চাকুরি করছি। প্রয়োজনে দশ বছর বেতন ছাড়াই করবো।বেতন না পাওয়ার কারণে আমরা উচ্চ আদালতে রিট করেছি। আদালত থেকে আমাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে।

চাকরি বৈধ না কি অবৈধ সে বিষয়ে জিজ্ঞেস করলেই ফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি। পরে বারংবার ফোন দিলে ও রিসিভ করেননি তিনি।

খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেস সংসদ সদস্য ওয়াদুদ ভুইয়া বলেন,বিগত আওয়ামী লীগের আমলে জেলা পরিষদের হস্তান্তরিত খাগড়াছড়ি জেলার শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসব বিভাগসহ সব বিভাগে ঘুষ বিনিময়ে অযোগ্যদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে অযোগ্যদের নিয়োগ হওয়ায় জেলার শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। মেধাশূন্য হয়ে পড়েছে পুরো জেলা।

খাগড়াছড়ি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শফিকুল ইসলাম বলেন,সেই সময়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটাই অবৈধ ছিল। কারণ ২০১৯ সালে মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন ছিল ত্রিশ বছর বয়স পর্যন্ত চাকরি প্রার্থীরা আবেদন করতে পারবেন।কিন্তু জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত আবেদন করার সুযোগ দেয়ায় এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

অপরাধ নিয়ে আরও পড়ুন

সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলা অবনতির প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে টাঙ্গাইলে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল ও ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) টাঙ্গাইল জেলা শাখা।

২ ঘণ্টা আগে

সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও ষড়যন্ত্রমূলকভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করার প্রতিবাদে সাতক্ষীরায় স্বেচ্ছাসেবক দলের বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

২ ঘণ্টা আগে

সকল হত্যাকাণ্ডের বিচারের দায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নিতে হবে বলে ঘোষণা করেন বিএনপির এই নেতা।

৩ ঘণ্টা আগে

রফিকুল ইসলাম রফিক বলেন,বিএনপির জনপ্রিয়তা ইর্ষন্বিত হয়ে ৭১-এর পরাজিত ও পতিত আওয়ামী লীগসহ অপশক্তিগুলো বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে প্রধান টার্গেট বানিয়েছে। তাকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে ষড়যন্ত্রকারীরা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য ছড়িয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।

৩ ঘণ্টা আগে