মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার গড়পাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেওয়ান মাসুদ রানার বিরুদ্ধে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। ইউনিয়ন পরিষদের নয়জন সদস্য জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়ে বিষয়টি তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় তৎকালীন চেয়ারম্যান আফছার সরকার পদত্যাগ করে পালিয়ে গেলে ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য দেওয়ান মাসুদ রানা প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন এবং পরে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই তিনি একাধিক অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন বলে অভিযোগ উঠেছে।

প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম: অভিযোগপত্রে বলা হয়, পরিষদের জন্য আসবাবপত্র কেনার একটি প্রকল্পে ১৪টি অফিসিয়াল টেবিল, ১৩টি আর্মড ভিজিটর চেয়ার ও ৫০টি প্লাস্টিক চেয়ার কেনার কথা থাকলেও ভিজিটর চেয়ার না কিনে বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। তদুপরি, কম দামের ফার্নিচার সরবরাহ করে অটবি ব্র্যান্ডের ভুয়া ভাউচার দাখিল করা হয়েছে।

আর্থিক অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ: ট্যাক্স বাবদ আদায়কৃত ৫০,০০০ টাকা পরিষদের ব্যাংক হিসাবে জমা না দিয়ে নিজে আত্মসাৎ করেছেন মাসুদ রানা। চৌকিদার ট্যাক্স থেকে সংগ্রহ করা ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা নিজের নামে ‘অগ্রিম বেতন’ হিসেবে গ্রহণ করেছেন, যা আইনবিরোধী বলে জানিয়েছেন অন্যান্য ইউপি সদস্যরা।

এছাড়া ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্রের আয় থেকেও মাসিক ভিত্তিতে অবৈধভাবে অর্থ গ্রহণ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ঈদের আগে ১৫০টি শাড়ি বিতরণের সময় প্রতিটি সদস্যকে মাত্র ৪টি করে বরাদ্দ দিয়ে বাকি শাড়ি নিজের অনুসারী ও স্বজনদের মধ্যে বিতরণ করেন। উন্নয়ন প্রকল্পের বণ্টনেও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ রয়েছে। অধিকাংশ প্রকল্প নিজের ওয়ার্ডে বরাদ্দ দিয়ে, অন্য সদস্যদের প্রকল্পে ১০-১৫ শতাংশ ঘুষ দাবি করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

৫৮০টি ভিজিএফ কার্ডের মধ্যে মাত্র ৮০টি সদস্যদের বরাদ্দ দিয়ে বাকি কার্ডগুলো নিজের ইচ্ছামতো বণ্টন করেন বলেও অভিযোগ করা হয়।

সদস্যদের অভিযোগ ও প্রশাসনিক প্রতিক্রিয়া: গড়পাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. আলাল হোসেন জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগে আরও আটজন ইউপি সদস্য স্বাক্ষর করেন। তারা চেয়ারম্যান মাসুদ রানাকে অপসারণ করে নতুন প্যানেল চেয়ারম্যান অথবা প্রশাসক নিয়োগের দাবি জানান।

৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আতোয়ার রহমান বলেন, “আমরা সবাই সমান সদস্য হলেও, দায়িত্ব নেওয়ার পর মাসুদ রানা আমাদের গুরুত্ব না দিয়ে এককভাবে সবকিছু পরিচালনা করছেন। উন্নয়ন কাজ, সহায়তা সামগ্রী বণ্টন এবং অর্থ ব্যবস্থাপনায় স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতি রয়েছে।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেওয়ান মাসুদ রানা বলেন, “আমি অভিযোগের বিষয়ে শুনেছি। কয়েকজন সদস্য বলেছেন, তাঁদের ভয়ভীতি দেখিয়ে অভিযোগে স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে। যদি সদস্যরা না চান, তাহলে আমি স্বেচ্ছায় দায়িত্ব ছেড়ে দিতে রাজি আছি।”

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মেজবা-উল-সাবেরিন বলেন, “গড়পাড়া ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। যথাযথ প্রমাণ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”