মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার লেছড়াগঞ্জ মৌজায় বালুমহাল ইজারা দিলেও বালু তোলা হচ্ছে তিন কিলোমিটার দূরের উত্তর বয়রা মৌজায়। এতে নদীপাড়ের জনবসতি, ফসলি জমি এবং কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বেরিবাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও ড্রেজার শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বয়রা ইউনিয়নের পদ্মা নদীপাড়ে আটটি ভারী ড্রেজিং মেশিন দিয়ে প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বালু উত্তোলন চলছে। প্রতিদিন গড়ে ৬০ থেকে ৭০টি বলগেট নদী থেকে বালু পরিবহন করছে। প্রতিটি বলগেট গড়ে ১৫ হাজার ৫০০ ঘনফুট বালু বহন করে, যার হিসাবে দৈনিক উত্তোলিত বালুর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১০ লাখ ঘনফুট।

জেলা প্রশাসনের দেওয়া ইজারা অনুযায়ী, ইজারাদার সর্বোচ্চ ২ কোটি ২৪ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন করতে পারবে। কিন্তু স্থানীয়দের ধারণা, গত এক মাস ধরে নিয়মিতভাবে এত বিপুল পরিমাণ বালু উত্তোলনের ফলে ওই সীমা ইতিমধ্যে অতিক্রম হয়েছে।

লেছড়াগঞ্জ ও বয়রা দুটি ভিন্ন ইউনিয়নের আওতাভুক্ত। ইজারা দেওয়া স্থান থেকে বালু উত্তোলনের স্থান প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে হওয়ায় বিষয়টি স্পষ্টভাবে ইজারার শর্ত ভঙ্গ বলেই মনে করছেন স্থানীয়রা।

পদ্মা নদীর পাড়ে গিয়ে দেখা যায়, বায়তুল মোকাদ্দেস, মইনিয়া ড্রেজিং প্রকল্প ২, এমবি স্বপ্নের বাংলা, এমবি কালুরগাঁও, গোলাপ এন্টারপ্রাইজ, হাসান-হোসেন ও আব্দুল্লাহ লোড ড্রেজিং প্রকল্প ৩ নামের ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে।

এক ড্রেজার শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘প্রতিদিনই প্রশাসনের কেউ না কেউ আসে, তারা জানেন কোথা থেকে বালু উঠছে। কিন্তু কেউ কিছু বলেন না।’

স্থানীয়দের অভিযোগ, বালু তোলার ফলে পদ্মার পাড় ক্রমেই ভাঙছে। হুমকির মুখে পড়েছে বেরিবাঁধ, বসতবাড়ি ও কৃষিজমি। প্রতিবছর বর্ষায় নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।

এই বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত হিসেবে নাম এসেছে হরিরামপুর উপজেলা কৃষকদলের সভাপতি মিজানুর রহমান ও সাবেক ছাত্রদল নেতা আশিকুজ্জামান শিপুর।

মিজানুর রহমান জানান, বাইরে থেকে নয় ইজারাকৃত নির্ধারিত স্থান থেকেই বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এ বিষয়ে হরিরামপুর উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আশিকুজ্জামান শিপুর সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।

তবে একই কথা বলেন আশিকুজ্জামান শিপু। তিনি বলেন, ইজারাকৃত জায়গা থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।

ইজারার বাইরে থেকে বালু উত্তোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কোহিনুর আক্তার বলেন, বিষয়টি আমি অবগত আছি। আমাদের এসি ল্যান্ড নেই। ডিসি মহোদয়কে জানিয়েছি, অভিযানের জন্য ম্যাজিষ্ট্রেট ও সেনাবাহিনী চেয়েছি। ইজারার বাইরে থেকে বালু উত্তোলন করা হলে অভিযান চালানো হবে। একইসঙ্গে সার্ভেয়ারকে নিয়ে পুনরায় ইজারার স্থান নির্ধারণ করা হবে।

এদিকে বালুমহালের অনিয়ম নিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন এশিয়ান টিভির জেলা প্রতিনিধি অভি হাসান দেওয়ান ও আরও কয়েকজন সাংবাদিক। এ ঘটনায় হরিরামপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তিনি।

অভিযোগে বলা হয়, ২০ জুলাই দুপুরে লেছড়াগঞ্জ এলাকায় সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে অভিকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের পর অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় তাঁর মোবাইল, আইডি কার্ড, ক্যামেরা ও বুম ছিনিয়ে নেওয়া হয়। পরে সহকর্মীদের সহযোগিতায় তিনি উদ্ধার হন।

অভির অভিযোগে বলা হয়, হামলাকারীরা হুমকি দিয়েছে- আবার যদি বালু মহাল নিয়ে সংবাদ করতে আসেন, তবে তাঁকে হত্যা করে গুম করে ফেলা হবে।

হরিরামপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান বলেন, অভিযোগ দায়েরের পর কেউ আর যোগাযোগ করেনি। পরে সেটাকে সাধারণ ডায়েরি হিসেবে নথিভুক্ত করে রেখেছি।