মানিকগঞ্জে শিশুশ্রম মুক্ত ৬১ শিশু, ক্লাসরুমে ফিরেছে ১২ জন

প্রতিনিধি
মানিকগঞ্জ
Thumbnail image
ছবি: প্রতিনিধি

মানিকগঞ্জে শিশুশ্রমের কষাঘাত থেকে মুক্তি পেয়েছে ৬১ জন শিশু। তাদের মধ্যে ১২ জন আবারও হাতে তুলে নিয়েছে বই-খাতা, ফিরে গেছে ক্লাসরুমে। জেলা কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উদ্যোগে গত দুই অর্থবছরে এই শিশুদের উদ্ধার করা হয়েছে।

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক মো. মোজাম্মেল হোসেন জানান, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৩০ জন এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আরও ৩১ জন শিশুকে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে শিশুশ্রমের কাজ থেকে ফিরিয়ে আনা হয়। পরে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এদের মধ্যে ১২ জনকে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর আওতায় স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করা হয়েছে।

মোজাম্মেল হোসেন বলেন, "আমরা সরেজমিনে গিয়ে শিশুদের শনাক্ত করে উদ্ধার করি। এরপর শিশুশ্রমে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করি এবং শিশুর পরিবারকে সচেতন করি।"

শিশুশ্রমে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগে দুইটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পরিদর্শন অধিদপ্তর। প্রতিষ্ঠান দুটি হলো—সিংগাইর উপজেলার আঙ্গারিয়া এলাকার বিসমিল্লাহ বেকারি এবং রফিকনগর এলাকার আল মদিনা ফুড।

শ্রম আইন অনুযায়ী (বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬; সংশোধিত ২০১৩), ১৪ বছরের কম বয়সী কোনো শিশুকে শ্রমে নিয়োজিত করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এ ধরনের অপরাধে প্রতিষ্ঠানগুলোকে অর্থদণ্ডসহ অন্যান্য আইনি প্রক্রিয়ার মুখোমুখি হতে হয়।

উদ্ধারকৃত ১২ শিশুকে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে বিদ্যালয়ে ভর্তি করানো হয়েছে। দপ্তর সূত্র জানায়, এদের মধ্যে কেউ কেউ দীর্ঘদিন পর আবার স্কুলের পথে ফিরেছে। কেউ বা প্রথমবারের মতো শিক্ষার স্বাদ পাচ্ছে।

স্থানীয় অভিভাবক ও সমাজকর্মীরা বলছেন, শিশুশ্রমের করাল ছায়া থেকে মুক্তি পাওয়া এই শিশুদের শিক্ষাজীবনে ফিরে আসা শুধু তাদের নয়, গোটা সমাজের জন্যই আশার আলো।

জেলা কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের এই পদক্ষেপ সমাজে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। দপ্তরের কর্মকর্তারা শুধু শিশুদের উদ্ধার করেই থেমে থাকেননি, বরং পরিবার ও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে শিশুদের পুনর্বাসনের জন্যও কাজ করছেন।

এ বিষয়ে মোজাম্মেল হোসেন বলেন, “আমরা শুধু শিশুদের শ্রম থেকে ফিরিয়ে আনি না, তাদের শিক্ষায় যুক্ত করার বিষয়েও পদক্ষেপ নেই। অনেক প্রতিষ্ঠান মালিক এখন শিশুশ্রম বন্ধে আমাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।”

শিশুশ্রমে নিযুক্ত ১২ জন শিশুকে শিক্ষাজীবনে ফিরিয়ে আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সহকারী পরিচালক রুকাইয়া জান্নাত। তিনি বলেন, “কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের সহায়তায় ওই ১২ শিশুকে উদ্ধার করে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় আনা হয়। পরে তাদের নিজ নিজ এলাকার নিকটবর্তী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করানো হয়েছে।”

তিনি আরও জানান, বর্তমানে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়া হলে আরও শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হবে।

শিশুশ্রম প্রতিরোধে শুধু আইনি পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়—এই বাস্তবতায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দারিদ্র্য ও সচেতনতার অভাবই শিশুশ্রমের মূল কারণ। তাই শিশুদের সুরক্ষায় সরকার, স্থানীয় প্রশাসন, পরিবার এবং সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের একযোগে কাজ করা জরুরি।

মানিকগঞ্জের এই সফল উদ্যোগ দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও অনুকরণীয় মডেল হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

জেলা নিয়ে আরও পড়ুন

সাতক্ষীরার তলুইগাছা সীমান্ত দিয়ে ৪ জন বাংলাদেশিকে হস্তান্তর করেছে বিএসএফ।

৭ ঘণ্টা আগে

বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল বলেছেন, দীর্ঘ ১৬ বছর আমরা রাজপদে থেকে আন্দোলন করে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচার হাসিনাকে পদত্যাগে বাধ্য করেছি।

৭ ঘণ্টা আগে

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বাউরা ইউনিয়ন সীমান্ত দিয়ে ফের শিশুসহ ৭ জনকে ঠেলে পাঠিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)।

৭ ঘণ্টা আগে

টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলায় সাবেক বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটুর কথিত দেহরক্ষী হিসেবে পরিচিত ইয়াকুব ওরফে সিয়ামকে গ্রেফতার করেছে দেলদুয়ার থানা পুলিশ।

৭ ঘণ্টা আগে