ময়মনসিংহে ‘ক্রসফায়ারে’ যুবক নিহতের ঘটনায়

ডিবি’র সাবেক ওসিসহ ১৭ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ

প্রতিনিধি
ময়মনসিংহ
আপডেট : ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ২৩: ৪৬
Thumbnail image
ছবি: প্রতিনিধি

ময়মনসিংহ শহরের পুরোহিত পাড়া এলাকায় ২০১৮ সালের ২৪ মে কথিত ক্রসফায়ারে নিহত যুবক রাজন হত্যাকাণ্ডে জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সাবেক ওসি আশিকুর রহমানসহ ১৭ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

রোববার (২০ এপ্রিল) বিকেলে ময়মনসিংহের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক শরিফুল হক মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের দায়িত্ব দেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতের পুলিশ পরিদর্শক মুসতাসিনুর রহমান।

এর আগে ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর নিহত রাজনের বাবা হারুন অর রশিদ আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। তাতে তিনি অভিযোগ করেন, তাঁর ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে তুলে নিয়ে অর্থ না পেয়ে ক্রসফায়ারের নামে হত্যা করেছে পুলিশ।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৮ সালের ২২ মে রাতের এক পর্যায়ে ডিবির একটি দল পুলিশের পোশাকে পুরোহিত পাড়ায় হারুন অর রশিদের বাসায় গিয়ে তাঁর ছেলে রাজনকে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে যায়। ওসি আশিকুর রহমান জানান, “ছেলেকে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেওয়া হবে।”

পরদিনও রাজন বাড়ি না ফেরায় তাঁর বাবা ডিবি অফিসে যান। সেখানেও তিনি ছেলের ব্যাপারে কোনো তথ্য না পেয়ে অপেক্ষায় থাকেন। পরে লুকিয়ে দেখেন, রাজন ডিবি কার্যালয়ের লকআপে রয়েছে।

এরপর ২৪ মে সকাল ১০টার দিকে ওসি আশিকুর রহমান রাজনের বাবাকে ডেকে নিয়ে ছেলের মুক্তির বিনিময়ে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। অর্থ দিতে না পারলে ‘ক্রসফায়ারের’ হুমকিও দেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। টাকা জোগাড় করতে না পেরে অসহায় বাবা রাতেও ছেলেকে বাঁচানোর চেষ্টা চালান।

কিন্তু পরদিন রাত ২টার দিকে রেলওয়ে পুকুরপাড় এলাকায় চিৎকার শুনে স্থানীয়রা ছুটে গিয়ে দেখতে পান, হাত বাঁধা রাজনকে সেখানে দাঁড় করিয়ে রেখেছে পুলিশ। কিছুক্ষণের মধ্যে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয় তাঁকে।

ঘটনাস্থলে মৃত্যু হওয়ার পর রাজনের মরদেহ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় ডিবি পুলিশ। সেখানে ময়নাতদন্ত শেষে ২৫ মে তাঁর লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

রাজনের বাবা পরদিন থানায় গিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিতে চাইলে, ডিবির ওসি আশিকুর রহমানের নির্দেশে তাঁকেও তুলে নিয়ে হুমকি দেওয়া হয়। বলা হয়, তিনি যদি মামলা করতে যান, তাকেও ‘ক্রসফায়ারে’ দেওয়া হবে। এই ভয়েই তখন তিনি চুপ থাকেন।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বদলে গেলে সাহস করে ছেলের হত্যার বিচার চেয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেন রাজনের বাবা।

মামলায় যাঁরা আসামি, তাঁরা হলেন- সাবেক ডিবি ওসি আশিকুর রহমান, পুলিশ পরিদর্শক মুখলেসুর রহমান, এসআই ফারুক আহমেদ, এসআই পরিমল চন্দ্র দাস, এসআই আকরাম হোসেন, এএসআই আব্দুল মজিদ, জিন্নাত হাসান মানিক, জাকির হোসেন, জিল্লুর রহমান, কনস্টেবল কাউসার হাবীব, গুলজার, সোহরাব আলী, সাইদুল, সেলিম, রাশেদুল, সানোয়ার ও জহিরুল ইসলাম।

বাদী হারুন অর রশিদ বলেন, “ডিবির ওসি আশিক আমার ছেলেকে টাকা না পেয়ে মেরে ফেলেছে। তার ওপর আবার আমার ছোট ভাই আলালকে ওই মিথ্যা মামলায় এক নম্বর আসামি করা হয়েছে। এটা বিচার পাওয়ার পরিবর্তে আরেকটি শাস্তি।”

রাজনের চাচা আলালকে হত্যা মামলার আসামি করায় মামলার বাদীপক্ষ আদালতের কাছে সে মামলা বাতিলেরও আবেদন জানিয়েছে।

বাদীপক্ষের আইনজীবী সালাহ উদ্দিন পাঠান বলেন, “ঘটনার প্রায় ৬ বছর পর হলেও আদালতের এ পদক্ষেপ সুবিচারের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। আমরা আশা করি, পিবিআই সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য তুলে ধরবে এবং দোষীরা শাস্তি পাবে।”

তিনি আরও বলেন, “একজন অসহায় বাবা ছেলের মৃত্যুর বিচার চাইতে পারেনি শুধু হুমকির ভয়ে। এখন পরিস্থিতি বদলেছে। বিচার ব্যবস্থার ওপর আমাদের আস্থা আছে।”

এই বিষয়ে জানতে সাবেক ডিবি ওসি আশিকুর রহমানের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁর মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

জেলা নিয়ে আরও পড়ুন

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলা হঠাৎ করেই বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। আজ শনিবার (২৬ এপ্রিল) ন্যাশনাল গ্রিডে সমস্যা হওয়ায় কারণে বিকেল থেকে বিদ্যুৎ–সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এতে পুরো ‘ব্ল্যাক আউট’ হয়ে পড়ে খুলনা ও বরিশালসহ ২১ জেলা।

১১ ঘণ্টা আগে

বাগেরহাটের রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুইটি ইউনিটের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। জাতীয় গ্রিডে সমস্যার কারণে আজ শনিবার (২৬ এপ্রিল) বিকাল থেকে ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্লান্টের ৬৬০ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিটটি বন্ধ রাখা হয়।

১১ ঘণ্টা আগে

কুমিল্লার মুরাদনগরে একই রশিতে ঝুলন্ত অবস্থায় মা ও ছেলের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এটি হত্যা না কি আত্মহত্যা তা উদঘাটনে কাজ করছে পুলিশ। তবে স্থানীয়সহ পরিবারের দাবি, মা ও ছেলেকে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।

১২ ঘণ্টা আগে

জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে ভাতিজার শাবলের আঘাতে চাচা নিহত হয়েছেন। সুলতান হোসেন খান (৪৫) নামের ওই নিহত ব্যক্তি বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার ইলুহার ইউনিয়নের মলুহার গ্রামের বাসিন্দা।

১২ ঘণ্টা আগে