১০০ শয্যার জনবলেই চলছে ২৫০ শয্যার হাসপাতাল

ভোলায় চিকিৎসা সেবা ধুঁকছে, বিপর্যস্ত রোগীরা

প্রতিনিধি
‎আবু মাহাজ,ভোলা
Thumbnail image
ফাইল ছবি

ভোলা সদর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল যেন কাগজে-কলমে মাত্র। বাস্তবে হাসপাতালটি আজও পরিচালিত হচ্ছে ১০০ শয্যার জনবল দিয়ে। দীর্ঘদিন ধরেই এ অচলাবস্থার মধ্য দিয়ে চলছে দ্বীপ জেলা ভোলার প্রধান স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রটির কার্যক্রম।

জেলার প্রায় ২২ লাখ মানুষ চিকিৎসার জন্য নির্ভর করে এই হাসপাতালের ওপর। কিন্তু ডাক্তার-নার্সের সংকটে ন্যূনতম সেবা পেতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে রোগীদের। হাসপাতালটির আউটডোর ও ইনডোর মিলিয়ে প্রতিদিন চিকিৎসা নেয় প্রায় ১২০০ জন রোগী। অথচ চিকিৎসক সংকট এতটাই চরমে পৌঁছেছে যে, এখানে ৬০ জন চিকিৎসকের অনুমোদিত পদ থাকলেও কর্মরত রয়েছেন মাত্র ১৭ জন, যার মধ্যে আবাসিক মেডিকেল অফিসারও রয়েছেন।

হাসপাতালের পরিবেশ নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর। রোগীরা অভিযোগ করছেন, সময়মতো চিকিৎসক বা নার্সের দেখা পাওয়া যায় না। অনেকে ভর্তি হয়েও খালি সিট না পাওয়ায় মেঝেতে বিছানা করে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন।

একজন রোগীর স্বজন মিতু বলেন, "আমি আমার আত্মীয়কে নিয়ে গতকাল রাতে হাসপাতালে এসেছি। এখন দুপুর ১২টা, এখনো কোনো ডাক্তার দেখিনি। সিস্টারদের জিজ্ঞেস করলে বলেন ডাক্তার আসবেন, কিন্তু বাস্তবে কাউকেই দেখতে পাই না।"

স্থানীয়দের অভিযোগ, হাসপাতালে দায়িত্বরত অনেক চিকিৎসক সরকারি দায়িত্ব এড়িয়ে বেসরকারি ক্লিনিকে রোগী দেখে আয় করছেন অতিরিক্ত টাকা। এতে তাদের সহায়তা করছে দালালচক্র। এ চক্রটি হাসপাতালের করিডোরেই অবস্থান নিয়ে রোগীদের বিভিন্ন ক্লিনিকে নিয়ে যাচ্ছে এবং ডাক্তার দেখানোর নামে ধরিয়ে দিচ্ছে হাজার হাজার টাকার টেস্টের ফরম।

জরুরি অবস্থায় সরকারি অ্যাম্বুলেন্সও পাওয়া যায় না। মুমূর্ষু রোগীকে হাসপাতালে আনতে গিয়ে রোগীর স্বজনরা পড়েন চরম বিপাকে।

ভোলা জেলায় মোট ২৬৩টি চিকিৎসকের পদ থাকলেও বাস্তবে কর্মরত আছেন মাত্র ৭৯ জন। নার্স সংকটও রয়েছে একই মাত্রায়। এতে জেলার প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও একই চিত্র-ধুঁকতে থাকা চিকিৎসাসেবা।

এ বিষয়ে ভোলা জেলার সিভিল সার্জন ডা. মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, চিকিৎসক ও নার্সের সংকটে আমরাও চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছি। তারপরও সীমিত জনবল দিয়েই সেবা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে কিছু চিকিৎসক পদায়ন হয়েছে, বাকিদের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আবারো চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশ্বস্ত করা হয়েছে, দ্রুতই বাকি পদগুলো পূরণ করা হবে। তখন হয়তো চিকিৎসার মান কিছুটা হলেও উন্নত হবে।

দেশের একটি পূর্ণাঙ্গ জেলা হাসপাতাল যেখানে দিনের পর দিন চিকিৎসক ও নার্সের সংকটে ধুঁকছে, সেখানকার রোগীদের জন্য এই পরিস্থিতি এক গভীর হতাশার নাম। সরকারি নীতিনির্ধারকদের এখনই দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি- অন্যথায় এই হাসপাতালটি আরও জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে, আর সাধারণ মানুষ অসুস্থ শরীর নিয়ে ঘুরতে থাকবে উপযুক্ত সেবার আশায়।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

জেলা নিয়ে আরও পড়ুন

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের অভাবে স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উপজেলার মানুষ। মাত্র চার জন চিকিৎসক দিয়ে ৩ লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবা চলছে।

৩৮ মিনিট আগে

অযত্ন অবহেলায় বরিশাল শের-ই- বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের শতকরা পঞ্চাশ ভাগ রোগ নির্ণয়ের মেশিন এখন আর কাজ করছে না। এক’শ কোটিরও বেশি টাকা মূল্যের কিছু যন্ত্রপাতি মেরামত যোগ্য হলেও এর জন্য চিঠি চালাচালিতে পার হয়ে যাচ্ছে বছরের পর বছর।

২ ঘণ্টা আগে

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে এবারও দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। থাকবে চার স্তুরের নিরাপত্তা-ব্যবস্থা। ঐতিহ্য ও রেওয়াজ অনুযায়ী বন্দুকের ফাঁকা গুলি ছোড়ার মধ্য দিয়ে শোলাকিয়ায় এবার অনুষ্ঠিত হবে ঈদের ১৯৮তম জামাত। এই জামাতে ইমামতি করবেন মুফতি আবুল খায়ের মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ

২ ঘণ্টা আগে