খাগড়াছড়িতে বৈসাবি’র আমেজ

আপডেট : ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ২০: ০০
Thumbnail image
ছবি: সংগৃহীত

সর্বজনীন বৈসাবি উদযাপন কমিটির উদ্যোগে খাগড়াছড়ি জেলা শহরে বৈসাবি উৎসবকে স্বাগত জানিয়ে বর্ণাঢ্য র‌্যালি হয়েছে। গতকাল সকালে চেঙ্গী স্কয়ার থেকে র‌্যালিটি বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক ঘুরে নিউজিল্যান্ড এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। হাজারো পাহাড়ি নারী-পুরুষের বর্ণিল পোশাকে র‌্যালিটি খাগড়াছড়ি শহরকে রঙিন করে তুলে।

বৈসাবি মানেই রঙে-বর্ণে বৈচিত্র্যময় এক ঐতিহ্যবাহী উৎসব। বিজু-সাংগ্রাই-বৈসু, যে নামেই বলা হোক না কেনো, এই উৎসব যেনো পাহাড়িদের প্রেরণা-পাহাড়ের সংস্কৃতির জাগরণ।

WhatsApp Image 2025-04-08 at 14.51.55_32f821a2

আগামী ১২ এপ্রিল চাকমা সম্প্রদায়ের তরুন-তরুনী, কিশোরী-ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা হল্লা করে ফুল তুলে নদী-খালে গঙ্গা দেবীর উদ্দেশ্যে ফুল নিবেদনের মধ্য দিয়ে পুরাতন বছরের গ্লানি মুছে নতুন বছরের শুভ কামনায় নিজেদের পবিত্রতা কামনা করবে। এছাড়া ফুল দিয়ে ঘরের প্রতিটি দরজার মাঝখানে মালা গেঁথে সাজানো হয়।

১৩ এপ্রিল চাকমা সম্প্রদায়ের মূল বিঝু আর পরের দিন ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ বা গজ্জাপয্যা পালন করবে। একই দিন ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের হারিবৈসু, বিযুমা, বিচিকাতাল। ফুল বিজু,মূলবিজু ও বিচিকাতাল নামে নিজস্ব বৈশিষ্ট্যতায়। ১৪ এপ্রিল খাগড়াছড়িতে মারমা সম্প্রদায় সাংগ্রাইং উৎসবে ঐতিহ্যবাহী জলকেলি বা পানি খেলা ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে হবে বর্ষবরণের র‌্যালি। এ উৎসবে আনন্দের আমেজ ছড়ায়।

WhatsApp Image 2025-04-08 at 14.51.55_01625146

এই প্রাণের উৎসব বৈসাবিকে আনন্দ মুখর করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে সবাই। চাকমাদের বিঝু মারমাদের সাংগ্রাই আর ত্রিপুরাদের বৈসু ও তনচংগ্যাদের বিহু নিয়ে বৈসাবি। উৎসবের আরো কয়টি বাকি থাকলেও এই উৎসবকে কেন্দ্র করে খাগড়াছড়ির বিভিন্ন স্থানে চলছে বৈসাবি মেলা-খেলাধুলা ও র‌্যালিসহ নানা আয়োজন।

১৯৮৫ সাল থেকে খাগড়াছড়িসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত তিন সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠনের সম্মিলিত উদ্যোগে ‘বৈসাবি’ নামে এ উৎসব পালন করে আসছে। যা সময়ের ব্যবধানে নিজ নিজ সম্প্রদায়ের লোকদের কাছে ‘বৈসাবি’ শব্দটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ত্রিপুরা, মারমা ও চাকমা সম্প্রদায় তাদের নিজস্ব নামে ‘ত্রিপুরা ভাষায় বৈসুক, মারমা ভাষায় সাংগ্রাই এবং চাকমা ভাষায় বিজু’ নামে এ উৎসব পালন হয়ে থাকে। এ তিন সম্প্রদায়ের নিজস্ব ভাষার নামের প্রথম অক্ষর নিয়ে ‘বৈসাবি’ নামকরণ করা হয়। প্রতিবছর বাংলা নববর্ষের পাশাপাশি পাহাড়ের বসবাসরত বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ঐতিহ্যবাহী দিনটি পালন করে থাকে।

WhatsApp Image 2025-04-08 at 14.51.55_aeeebdc3

এদিকে বৈসাবি উৎসব শুরু হতে আরো কয়েকদিন বাকি থাকলেও ইতিমধ্যে শহর ছাড়িয়ে প্রত্যন্ত এলাকায় চলছে ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা। ঘরে ঘরে চলছে পুরাতন বছর বিদায় দিয়ে নতুন বছরকে স্বাগতম জানানোর প্রস্তুতি।

এদিকে পাহাড়ে বাংলা নববর্ষ এবং বৈসাবী উদযাপন উপলক্ষে পার্বত্য জেলা পরিষদ, জেলা প্রশাসন, ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর ইনিস্টিটিউটের পক্ষ থেকেও ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

বাংলা বছরের শেষ দুই দিন ও নবর্বষের প্রথম দিন চাকমারা বিজু পালন করে থাকেন প্রথম দিন ফুল বিজু মূল বিজু ও বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন গুজ্জ্যপুজ্জ্য দিন বলা হয়। পাহাড়ের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির এই উৎসবের আলাদা নাম আছে। চাকমাদের বিঝু, মারমাদের সাংগ্রাই, ত্রিপুরাদের বৈসু ও তনচংগ্যাদের বিহু এই প্রথম আদ্যক্ষর নিয়ে বৈসাবি।

এই উৎসবকে কেন্দ্র করে খাগড়াছড়ির বৈসাবি উদযাপন কমিটির উদ্যোগে খাগড়াছড়ি শহরের প্রাণ কেন্দ্র নিউজিল্যান্ড এলাকায় চলছে বৈসাবি মেলা।

জেলা উদযাপন কমিরি যুগ্ম সদস্য সচিব রুমেল মারমা বৈসাবি উৎসবকে কেন্দ্র করে খাগড়াছড়ির বৈসাবি উদযাপন কমিটির উদ্যোগে খাগড়াছড়ি শহরের প্রাণ কেন্দ্র নিউজিল্যান্ড এলাকায় চলছে বৈসাবি মেলা।

খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার বলেন, বৈসাবি উৎসব বিগত বছরগুলোর চেয়ে ভিন্ন আঙ্গিকে। উৎসবে রং ছড়াবে অন্য ধরণের। উৎসব উপভোগ করতে আসবে বিপুল সংখ্যক দেশী-বিদেশী পর্যটক। আমরা অতিথিদের স্বাগত জানাতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি।

খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার মো: আলেফিন জুয়েল বলেন, খাগড়াছড়িতে বৈসাবি উৎসব যাতে নির্বিঘ্নে পালন করতে পারে তার জন্য তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ ওয়াদুদ ভূইয়া বলেন, খাগড়াছড়ি জেলাবাসী এবার অতীতের যে কোন বছরের চেয়ে আরো আনন্দঘন ও উৎসব মুখর পরিবেশে বৈসাবি উৎসব পালন করবে। তিনি বলেন বৈসাবি উৎসব পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর হলেও বাঙালিসহ সব জাতি-গোষ্ঠী এ উৎসব উপভোগ করেন।

বংশ পরম্পরায় পালিত এই উৎসবের সাথে আধুনিকতার ছোঁয়া আর বাংলা’র মিশেলে বৈসাবি হয়ে উঠেছে সর্বজনীন অন্য এক পাহাড়িয়া উৎসবে। উৎসবে সবার অংশগ্রহণে সাম্প্রাদায়িক সম্প্রীতি বৃদ্ধি পাবে, এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয়দের ।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

জেলা নিয়ে আরও পড়ুন

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলা হঠাৎ করেই বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। আজ শনিবার (২৬ এপ্রিল) ন্যাশনাল গ্রিডে সমস্যা হওয়ায় কারণে বিকেল থেকে বিদ্যুৎ–সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এতে পুরো ‘ব্ল্যাক আউট’ হয়ে পড়ে খুলনা ও বরিশালসহ ২১ জেলা।

১১ ঘণ্টা আগে

বাগেরহাটের রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুইটি ইউনিটের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। জাতীয় গ্রিডে সমস্যার কারণে আজ শনিবার (২৬ এপ্রিল) বিকাল থেকে ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্লান্টের ৬৬০ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিটটি বন্ধ রাখা হয়।

১১ ঘণ্টা আগে

কুমিল্লার মুরাদনগরে একই রশিতে ঝুলন্ত অবস্থায় মা ও ছেলের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এটি হত্যা না কি আত্মহত্যা তা উদঘাটনে কাজ করছে পুলিশ। তবে স্থানীয়সহ পরিবারের দাবি, মা ও ছেলেকে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।

১২ ঘণ্টা আগে

জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে ভাতিজার শাবলের আঘাতে চাচা নিহত হয়েছেন। সুলতান হোসেন খান (৪৫) নামের ওই নিহত ব্যক্তি বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার ইলুহার ইউনিয়নের মলুহার গ্রামের বাসিন্দা।

১২ ঘণ্টা আগে