১৪ ডিসেম্বর—বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের এক গৌরবময় ও ঐতিহাসিক দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে খুলনার শিরোমণিতে সংঘটিত হয় মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম ভয়াবহ ও বৃহৎ সম্মুখ সমর, যা ইতিহাসে ‘ট্যাংক ব্যাটল অব শিরোমণি’ নামে পরিচিত।

মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর যৌথ এই যুদ্ধে তিন শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় সেনা আত্মত্যাগ করেন। এই যুদ্ধের মাধ্যমেই স্বাধীনতার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে খুলনা শত্রুমুক্ত হওয়ার পথে এগিয়ে যায়।

মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে পাকিস্তানি বাহিনী যশোর ছেড়ে খুলনার শিরোমণি এলাকায় শক্ত প্রতিরক্ষা গড়ে তোলে। ১৪ ডিসেম্বর মেজর গানি ও মেজর মহেন্দ্র সিংয়ের নেতৃত্বে মিত্রবাহিনী ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান নিয়ে চূড়ান্ত অভিযানে গেলে শিরোমণিতে শুরু হয় ভয়াবহ ট্যাংক যুদ্ধ। দিনভর সংঘর্ষে মিত্রবাহিনীর ২৬টি সাঁজোয়া যান ধ্বংস হয় এবং বিপুল প্রাণহানি ঘটে। তবে শেষ পর্যন্ত ১৭ ডিসেম্বর শিরোমণিতে পাকবাহিনী আত্মসমর্পণে বাধ্য হয় এবং খুলনা সম্পূর্ণ শত্রুমুক্ত হয়।

এই যুদ্ধের কৌশল ও ভয়াবহতা ভারত, পোল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের ৩৫টি দেশের সামরিক একাডেমিতে পাঠ্য হিসেবে পড়ানো হয়। বিশ্ব সামরিক বিশ্লেষকেরা একে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এল আলামিন যুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করেছেন।

তবে স্বাধীনতার সাড়ে পাঁচ দশক পার হলেও শিরোমণির এই ঐতিহাসিক যুদ্ধে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সেনাদের স্মরণে যুদ্ধস্থলে কোনো স্মৃতিস্তম্ভ বা শহীদের তালিকা স্মারক নির্মিত হয়নি। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় বাসিন্দারা।

খানজাহান আলী থানা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার স. ম. রেজওয়ান আলীসহ স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, যেখানে মূল যুদ্ধ ও আত্মসমর্পণ হয়েছিল, সেখানেই একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা জরুরি। খুলনা মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মনিরুজ্জামান মনি বলেন,

“এত বড় একটি ঐতিহাসিক যুদ্ধের স্মরণে কোনো স্মৃতিসৌধ না থাকা দুঃখজনক ও লজ্জাজনক।”

খুলনাবাসীর দাবি, ‘ট্যাংক ব্যাটল অব শিরোমণি’র শহীদদের যথাযথ সম্মান জানাতে দ্রুত শিরোমণিতে একটি স্মৃতিসৌধ ও শহীদের তালিকা স্মারক নির্মাণে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হোক।