সীমান্তের ৮ গ্রামের ‘সোনার হরিণ’ বিশুদ্ধ পানি

ঝরনার পানি, ছড়া আর পুকুরই ভরসা হাজারো মানুষের

প্রতিনিধি
এম. এ. কালাম, ময়মনসিংহ
আপডেট : ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৪: ১২
Thumbnail image
ছবি: প্রতিনিধি

ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলা। এক পাশে মেঘালয়ের পাহাড়, অন্য পাশে বাংলাদেশের সীমান্ত জনপদ। প্রকৃতির সৌন্দর্যে মোড়ানো এ জনপদে বসবাসরত মানুষদের জীবনের এক করুণ বাস্তবতা- বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট। দক্ষিণ মাইজপাড়া ও ঘোষগাঁও ইউনিয়নের অন্তত ৮টি গ্রামের মানুষ প্রতিদিন জীবন বাজি রেখে সংগ্রহ করছেন ঝরনার পানি, পাহাড়ি ছড়া কিংবা পুকুরের পানি। এটাই তাদের একমাত্র ভরসা।

বর্ষায় পাহাড় থেকে নামে ঝরনার ধারা। সেই ঝরনাই যেন জীবনধারা। স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীসহ সাধারণ মানুষ ছড়ার বালু সরিয়ে গর্ত করে সংগ্রহ করেন পানি। আর শুকনো মৌসুমে ঝরনা শুকিয়ে গেলে তৃষ্ণা মেটাতে পুকুরই শেষ ভরসা।

দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নের গিলগড়া, কাশিপুর, বাকপাড়া, শানখলা, পঞ্চনন্দপুর ও ঘোষগাঁও ইউনিয়নের গোলইভাংগা, চন্দকোনা- এমন অন্তত আটটি গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ বিশুদ্ধ পানির নাগাল পান না। কেউ কেউ নিজের খরচে সাবমারসিবল পাম্প বসালেও, অধিকাংশই অর্থাভাবে তা পারেননি। পাহাড়ি অঞ্চলে নলকূপ বসানোও সহজ নয়- মাটির নিচে পাথরে আটকে যায় পাইপ, আর খরচও অনেক বেশি।

2af2e549-4a7b-424d-80ae-bf3c793278ba

স্থানীয় বাসিন্দা আসমা খাতুন বলেন, “নলকূপ বসাতে গেলে পাথরে পাইপ আটকে যায়। আবার খরচও অনেক বেশি। আমরা গরিব মানুষ, এত খরচ কই পাই? সরকারও সহায়তা করছে না। বাধ্য হয়েই বর্ষায় বৃষ্টির পানি, আর বাকি সময় ছড়া আর পুকুরের পানি খাই।”

গিলগড়া গ্রামের আমেনা খাতুনের কণ্ঠে ক্ষোভ, “কতো নেতা-সরকারি লোকরে কইলাম টিউবওয়েল লাগাইয়া দেওয়ার জন্য। কিন্তু সবাই আশ্বাস দিছে, কাম কেহুই করে নাই। খারাপ পানি খাইয়া পেটের ব্যাথা, চর্মরোগ হইতাছে। ভালা পানি এখন সোনার হরিণ।”

আদিবাসী নারী ইতি চিসিম বলেন, “জানি এসব পানি খাওয়া ঠিক না। কিন্তু কী করুম? তৃষ্ণাতো মিটাইতে অইবো। সরকার যদি কিছু করে, তবে বাঁচি।”

দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির বলেন, “সীমান্ত এলাকায় নলকূপ বসাতে অনেক গভীরে পাইপ বসাতে হয়। পাথরে আটকে যায়, খরচও বাড়ে। গত তিন বছরে ১০টি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে, আরও করার পরিকল্পনা আছে।”

b81b5727-0e4c-442b-9d63-17042564d2fc

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, পাহাড়ি এলাকার অনেক জায়গায় ৫০ থেকে ৬০ মিটার গভীরেও পানির স্তর পাওয়া যায় না। অনেক সময় পাইপ পাথরে আটকে যায়। শুষ্ক মৌসুমে অগভীর নলকূপেও পানি পাওয়া যায় না।

ধোবাউড়া উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী শফিউল আজম বলেন, “সীমান্ত এলাকার কিছু জায়গায় প্রকৃতিগত বাধায় নলকূপ বসানো সম্ভব হয় না। তবে দুইটি নতুন গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে। আমরা বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিশাত শারমিন বলেন, “পানি সংকট নিরসনে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। বিষয়টি জেলা ও মন্ত্রণালয় পর্যায়ে জানানো হয়েছে। অচিরেই সুপেয় পানির নিশ্চয়তা দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

একবিংশ শতাব্দীর বাংলাদেশে এখনও সীমান্তের হাজারো মানুষ বিশুদ্ধ পানির জন্য পাহাড়ি ছড়া আর পুকুরের ওপর নির্ভরশীল। এটি কেবল অবহেলিত একটি জনপদের গল্প নয়, এটি আমাদের উন্নয়নের অসম বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি। এই সংকটে এখনই উদ্যোগ না নিলে আগামী দিনে পানির জন্য লড়াই আরও কঠিন হয়ে উঠবে।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

জেলা নিয়ে আরও পড়ুন

রাঙামাটির কাউখালীতে মারমা তরুণীকে ধর্ষণের প্রতিবাদে খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। তবে মো. ফাহিম ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তার সাথে ঐ তরুণীর আড়াই বছর ধরে প্রেম-স্বামী ও স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক ছিল। বরং ঐ তরুণী কিছু দিন আগে আমাকে বাদ দিয়ে নতুন সম্পর্ক গড়েছে অন্য যুবকের।

৭ ঘণ্টা আগে

নরসিংদীতে স্ত্রীকে হত্যা করে নিজে ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেছে রাজু মিয়া নামের এক ব্যক্তি। রাজু মিয়া নরসিংদী সদর উপজেলার বালুসাই গ্রামের বাসিন্দা। তার পিতা মৃত আলী মোহাম্মদ।

৮ ঘণ্টা আগে

শুক্রবার বিকেলে গাজীপুরের টঙ্গীতে দুই শিশুকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় তাদের মা আলেয়া বেগম (৩০) কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ পাশবিক ও মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের পর শনিবার (১৯ এপ্রিল) টঙ্গী পূর্ব থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হলে অভিযুক্ত আসামীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মামলার নম্বর–৩৪।

১১ ঘণ্টা আগে

রাজশাহীতে এসএসসি পরীক্ষার্থী কন্যাকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয় তার বাবা আকরাম হোসেনকে। এই নৃশংস ঘটনার মূল অভিযুক্ত নান্টু ও তার সহযোগী খোকন মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব-৫।

১৪ ঘণ্টা আগে