কুষ্টিয়া-ঢাকার হাতিরঝিলে সেনাবাহিনী সাঁড়াশি অভিযান
বিশেষ প্রতিনিধি
তিন ঘণ্টার এক শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানের পর ঢাকার অপরাধজগতের ডন ও দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনকে কুষ্টিয়ার একটি বাসা থেকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করেছে সেনাবাহিনী। এ সময় তার সঙ্গে থাকা আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী মোল্লা মাসুদসহ ৪জনকে আটক করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো সুব্রত বাইন ওরফে ফতেহ আলী, আবু রাসেল মাসুদ ওরফে মোল্লা মাসুদ, শুটার আরাফাত ও শরীফ ওরফে ড্রাইভার শরীফ। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৫টি বিদেশি পিস্তল, ১০টি ম্যাগাজিন, ৫৩ রাউন্ড গুলি ও একটি স্যাটেলাইট ফোন উদ্ধার করা হয়। মঙ্গলবার (২৭ মে) বিকেলে রাজধানীর সেনাসদরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আইএসপিআরের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সামি-উদ-দৌলা চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি আরো বলেন,আজ ভোর ৫টা থেকে শুরু হওয়া কুষ্টিয়া এবং ঢাকার হাতিরঝিলে পরিচালিত সাঁড়াশি অভিযানে ৪৬ স্বতন্ত্র পদাতিক ব্রিগেডের একটি ইউনিট, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে সফলভাবে ২ জন শীর্ষ তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী এবং তাদের ২ জন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে।’
আইএসপিআর পরিচালক আরো বলেন, ‘এই চক্রটি দেশের বিভিন্ন এলাকায় হত্যা, চাঁদাবাজি ও নাশকতা চালিয়ে আসছিলো। সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদ ২০০১ সালে সরকার ঘোষিত তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী ও সেভেন স্টার গ্রুপের মূল পরিকল্পনাকারী। এই অভিযান ছিল দীর্ঘদিনের গোয়েন্দা তথ্য ও পরিকল্পনার ফসল।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, সুব্রত বাইনের বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজিসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। সর্বশেষ গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মগবাজারের বিশাল সেন্টারে দলবল নিয়ে মহড়া দিয়েছেন শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন। একটি দোকান দখলের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেখানে গিয়েছিলেন তিনি। পরে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীকে ডেকে কথা বলেছেন। এ নিয়ে সেখানকার ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
দরজা ভেঙে গ্রেফতার হয়>
কুষ্টিয়া শহরের কালীশংকরপুর এলাকার যে তিনতলা বাড়ির নিচতলা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়, সেখানে দেড় মাস ধরে অবস্থান করছিলেন সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদ। বাসাটি ভাড়া নিয়েছিলেন প্রবাসফেরত হেলাল নামের এক ব্যক্তি। তিনি প্রথমে মালিককে বলেছিলেন গোডাউনের মতো কিছু করবেন। পরে তার মাধ্যমেই ওই বাসায় ওঠেন সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদ।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সব সময় ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ থাকতো নিচতলার। যারা থাকতেন, তারা কারও সাথে মেলামেশা বা কথাবার্তা বলতেন না। কিছুদিন আগে মধ্যবয়সী এক নারীকেও দেখেছেন ওই বাসায়। কাপড় মেলে দেয়া দেখে তাদের ধারণা, ওই নারী দু-একদিন অবস্থানও করেছেন।
গ্রেফতারের বর্ণনা দিতে গিয়ে দোতলার মেসে থাকা একজন জানান, সকাল ৫টা ২০ মিনিটের দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাকে ডেকে তোলেন।
প্রথমে সেনা সদস্যরা তাদের বেশকিছু প্রশ্ন করেন। পরে বুঝতে পারেন যে তারা সাধারণ শিক্ষার্থী। পরে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতেই নিচতলায় নেমে আসে সেনারা। দরজা ভেঙে দুই জন সন্ত্রাসীকে খুঁজে পায়। এরপর তাদের কালো রঙের মাইক্রো গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যায়।
গ্রেফতারের সময় একজন ফুল প্যান্ট পরা ছিল এবং আরেকজন ছিল লুঙ্গি পরিহিত।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ভোরে যখন ফজরের নামাজ শেষে তারা বাড়ি ফিরছিলেন, তখন সেনাবাহিনীর ৫ থেকে ৬টি গাড়ি এবং একটি কালো রঙের মাইক্রো যেতে দেখেছেন তারা।
সুব্রত বাইনের উত্থান হয় বিশাল সেন্টার থেকে
রেস্টুরেন্টের কর্মচারী থেকে ধীরে ধীরে অপরাধজগতের সঙ্গে জড়িয়ে যান। পরে বিশাল সেন্টারই হয়ে ওঠে তাঁর কর্মকাণ্ড পরিচালনার কেন্দ্র। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র বলছে, মূলত নব্বইয়ের দশকে মগবাজারের বিশাল সেন্টার ঘিরেই উত্থান হয় সুব্রত বাইনের। তিনি এই বিপণিবিতানের কাছে চাংপাই নামে একটি রেস্টুরেন্টের কর্মচারী ছিলেন। সেখান থেকে ধীরে ধীরে অপরাধজগতের সঙ্গে জড়িয়ে যান। পরে বিশাল সেন্টারই হয়ে ওঠে তাঁর কর্মকাণ্ড পরিচালনার কেন্দ্র। ২০০১ সালের ২৫ ডিসেম্বর ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর যে নামের তালিকা তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত সরকার ঘোষণা করেছিল, তাঁদের অন্যতম ছিলেন সুব্রত বাইন। তাঁর নামে এখন ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি রয়েছে। সেখানে তাঁর বয়স দেখানো হয়েছে ৫৫ বছর। তাঁকে ধরিয়ে দিতে তখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পুরস্কার ঘোষণা করেছিল।
১৯৯১ সালে ঢাকার আগারগাঁও এলাকায় জাসদ ছাত্রলীগ নেতা মুরাদ হত্যার মধ্য দিয়ে তার সন্ত্রাস জীবনের উত্থান শুরু হয়।
২০০৩ সালের দিকে পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর তৎপরতা বেড়ে গেলে সুব্রত ভারতে পালিয়ে যান। সেখানে যাওয়ার পর কলকাতার স্পেশাল টাস্কফোর্স কারাইয়া এলাকা থেকে ২০০৮ সালের ১৩ অক্টোবর সুব্রতকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে। তার বিরুদ্ধে কলকাতায় অস্ত্র ও অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলাও হয়। ওই মামলায় ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি জামিনে ছাড়া পেয়ে আবার গা ঢাকা দেন সুব্রত।
এরপর ২০০৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্কফোর্সের কর্মকর্তাদের ধাওয়া খেয়ে সুব্রত বাইন নেপাল সীমান্তের কাকরভিটা শহরে ঢুকে পড়েন। পরে নেপালের পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারের প্রায় তিন বছরের মাথায় ২০১২ সালের ৮ নভেম্বর সুড়ঙ্গ খুড়ে নেপালের কারাগার থেকে পালিয়ে ফের ভারতে অনুপ্রবেশ করেন সুব্রত বাইন।
একই বছরের ২৭ নভেম্বর কলকাতার বৌবাজারের একটি বাসা থেকে সুব্রতকে গ্রেপ্তার করে ভারতীয় পুলিশ। সেখানে ফতেহ আলী নাম নিয়ে ছদ্মবেশে অবস্থান করছিলেন তিনি।
সুব্রত বাইনের হাত ধরেই মোল্লা মাসুদ অপরাধ জগতে জড়িয়ে পড়েন। মোল্লা মাসুদ রাজধানীর মতিঝিল ও গোপীবাগ এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতেন। ২০০৩ সালের পরে তাঁকে আর বাংলাদেশে দেখা যায়নি। ভারতে তিনি আবু রাসেল মো. মাসুদ নামে পরিচিত হন। ভারতীয় নাগরিক রিজিয়া সুলতানাকে বিয়ে করে সেখানে বসবাস করছিলেন।
পুলিশ জানায়, মোল্লা মাসুদের বিরুদ্ধে যে-সব মামলা আছে, তার মধ্যে সাবেক সাংসদ কামাল মজুমদারের ভাগনে মামুন হত্যা, পুরান ঢাকায় মুরগি মিলন হত্যা, খিলগাঁওয়ের তিলপাপাড়ায় ট্রিপল মার্ডার উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তাঁর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অসংখ্য জিডি আছে। ২০০১ সালে তৎকালীন সরকার যে ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম ঘোষণা করে, তাতে মোল্লা মাসুদেরও নাম ছিল।
কুষ্টিয়ার যে বাসায় থাকতেন সন্ত্রাসীরা:
মেসের বাসিন্দা এক ছাত্র বলেন, মালিকের কাছ থেকে পুরো বাড়িটি তাঁরা ভাড়া নিয়েছেন। একজন ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে আছেন। দেড় মাস আগে পেছনের বাড়ির বাসিন্দা হেলাল উদ্দিন ও তাঁর স্ত্রী মিনারা খাতুন (হীরা) আসেন। তাঁরা নিচতলার ফ্ল্যাট ভাড়া চান। তাঁরা বলেন, এখানে অনলাইনে পোশাক কেনাবেচার জন্য পোশাক রাখা হবে এবং তাঁদের কিছু লোকজন থাকবেন। মাসিক ছয় হাজার টাকা ভাড়ায় ফ্ল্যাটটি ভাড়া দেন ছাত্ররা। এরপর হেলাল উদ্দিন এই ভবনের সামনে একটি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করেন। ক্যামেরার সংযোগ পেছনে তাঁর নিজের বাড়িতে নিয়ে যান।
ওই ছাত্র আরও বলেন, ভাড়া নেওয়ার কয়েক দিন পর এই বাসায় এক ব্যক্তি আসেন। বাসা থেকে তারা খুব একটা বের হতেন না। ২০ থেকে ২৫ দিন আগে এক নারীকে নিচতলার এই ফ্ল্যাটে দেখতে পান ছাত্ররা। ওই নারী কিছুদিন এখানে অবস্থান করেন বলে ছাত্ররা জানান।
ছাত্ররা জানান, ১০-১২ দিন ধরে এই ভবনের সামনে একটি লাল রঙের প্রাইভেট কার এসে দাঁড়াত। বেশ কিছু লোকের যাতায়াত তাঁরা লক্ষ করতেন। তবে কারও সঙ্গে ছাত্রদের কোনো কথা হতো না। নিচতলার যে ফ্ল্যাট থেকে সুব্রত বাইনকে আটক করা হয়েছে ওই ফ্ল্যাটের ভেতরে গত দেড় মাসে কোনো রকম খাবার রান্না হয়নি। সব খাবার বাইরে থেকে আনা হতো।
সুব্রত বাইনকে যে ফ্ল্যাট থেকে আটক করা হয়েছে, ঠিক সেই ভবনের পেছনেই মিনারা খাতুন ও হেলাল উদ্দিনের বাড়ি। মিনারা একটি পোশাকের দোকানের মালিক। তাঁর স্বামীর মাধ্যমে এই ব্যক্তিরা এখানে বাসা ভাড়া নিয়েছিলেন।
মিনারা খাতুন বলেন, তাঁর স্বামী হেলাল উদ্দিন ১৭ থেকে ১৮ বছর দুবাই ছিলেন। চলতি বছরের প্রথম দিকে তিনি দেশে ফেরেন। দেড় মাস আগে তাঁর স্বামী তাঁকে জানান, কয়েকজন ব্যক্তি এখানে থাকবে, মিনারা যেন সামনের ভবনের নিচতলাটা ভাড়া নেন। এরপর মেসের ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলে ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেন তাঁরা। এরপর ওই ব্যক্তিরা এই নিচতলাতে থাকতে শুরু করেন। এ ঘটনার পর মিনারা খাতুনের স্বামী হেলাল উদ্দিন এর আর কোনো খবর নেই।
আতঙ্কে মেস ছেড়ে যাচ্ছেন ছাত্ররা:
সুব্রত বাইনকে আটকের পর ভবনটির দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় থাকা ছাত্ররা বাড়ি চলে যাচ্ছেন। দুপুরের পর গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হওয়ায় ছাত্রদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়। বিকেল চারটার দিকে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় ১৮ জন ছাত্রের মধ্যে অন্তত ১০ জন ব্যাগ নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন।
জনমনে স্বস্তি:
এদিকে সেনাবাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানে তাদের গ্রেফতার হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে জনমনে স্বস্তি ফিরে আসে। এ অভিযান অব্যাহত রেখে সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অনুরোধ জানিয়েছেন দেশের বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ।
তিন ঘণ্টার এক শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানের পর ঢাকার অপরাধজগতের ডন ও দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনকে কুষ্টিয়ার একটি বাসা থেকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করেছে সেনাবাহিনী। এ সময় তার সঙ্গে থাকা আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী মোল্লা মাসুদসহ ৪জনকে আটক করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো সুব্রত বাইন ওরফে ফতেহ আলী, আবু রাসেল মাসুদ ওরফে মোল্লা মাসুদ, শুটার আরাফাত ও শরীফ ওরফে ড্রাইভার শরীফ। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৫টি বিদেশি পিস্তল, ১০টি ম্যাগাজিন, ৫৩ রাউন্ড গুলি ও একটি স্যাটেলাইট ফোন উদ্ধার করা হয়। মঙ্গলবার (২৭ মে) বিকেলে রাজধানীর সেনাসদরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আইএসপিআরের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সামি-উদ-দৌলা চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি আরো বলেন,আজ ভোর ৫টা থেকে শুরু হওয়া কুষ্টিয়া এবং ঢাকার হাতিরঝিলে পরিচালিত সাঁড়াশি অভিযানে ৪৬ স্বতন্ত্র পদাতিক ব্রিগেডের একটি ইউনিট, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে সফলভাবে ২ জন শীর্ষ তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী এবং তাদের ২ জন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে।’
আইএসপিআর পরিচালক আরো বলেন, ‘এই চক্রটি দেশের বিভিন্ন এলাকায় হত্যা, চাঁদাবাজি ও নাশকতা চালিয়ে আসছিলো। সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদ ২০০১ সালে সরকার ঘোষিত তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী ও সেভেন স্টার গ্রুপের মূল পরিকল্পনাকারী। এই অভিযান ছিল দীর্ঘদিনের গোয়েন্দা তথ্য ও পরিকল্পনার ফসল।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, সুব্রত বাইনের বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজিসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। সর্বশেষ গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মগবাজারের বিশাল সেন্টারে দলবল নিয়ে মহড়া দিয়েছেন শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন। একটি দোকান দখলের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেখানে গিয়েছিলেন তিনি। পরে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীকে ডেকে কথা বলেছেন। এ নিয়ে সেখানকার ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
দরজা ভেঙে গ্রেফতার হয়>
কুষ্টিয়া শহরের কালীশংকরপুর এলাকার যে তিনতলা বাড়ির নিচতলা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়, সেখানে দেড় মাস ধরে অবস্থান করছিলেন সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদ। বাসাটি ভাড়া নিয়েছিলেন প্রবাসফেরত হেলাল নামের এক ব্যক্তি। তিনি প্রথমে মালিককে বলেছিলেন গোডাউনের মতো কিছু করবেন। পরে তার মাধ্যমেই ওই বাসায় ওঠেন সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদ।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সব সময় ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ থাকতো নিচতলার। যারা থাকতেন, তারা কারও সাথে মেলামেশা বা কথাবার্তা বলতেন না। কিছুদিন আগে মধ্যবয়সী এক নারীকেও দেখেছেন ওই বাসায়। কাপড় মেলে দেয়া দেখে তাদের ধারণা, ওই নারী দু-একদিন অবস্থানও করেছেন।
গ্রেফতারের বর্ণনা দিতে গিয়ে দোতলার মেসে থাকা একজন জানান, সকাল ৫টা ২০ মিনিটের দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাকে ডেকে তোলেন।
প্রথমে সেনা সদস্যরা তাদের বেশকিছু প্রশ্ন করেন। পরে বুঝতে পারেন যে তারা সাধারণ শিক্ষার্থী। পরে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতেই নিচতলায় নেমে আসে সেনারা। দরজা ভেঙে দুই জন সন্ত্রাসীকে খুঁজে পায়। এরপর তাদের কালো রঙের মাইক্রো গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যায়।
গ্রেফতারের সময় একজন ফুল প্যান্ট পরা ছিল এবং আরেকজন ছিল লুঙ্গি পরিহিত।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ভোরে যখন ফজরের নামাজ শেষে তারা বাড়ি ফিরছিলেন, তখন সেনাবাহিনীর ৫ থেকে ৬টি গাড়ি এবং একটি কালো রঙের মাইক্রো যেতে দেখেছেন তারা।
সুব্রত বাইনের উত্থান হয় বিশাল সেন্টার থেকে
রেস্টুরেন্টের কর্মচারী থেকে ধীরে ধীরে অপরাধজগতের সঙ্গে জড়িয়ে যান। পরে বিশাল সেন্টারই হয়ে ওঠে তাঁর কর্মকাণ্ড পরিচালনার কেন্দ্র। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র বলছে, মূলত নব্বইয়ের দশকে মগবাজারের বিশাল সেন্টার ঘিরেই উত্থান হয় সুব্রত বাইনের। তিনি এই বিপণিবিতানের কাছে চাংপাই নামে একটি রেস্টুরেন্টের কর্মচারী ছিলেন। সেখান থেকে ধীরে ধীরে অপরাধজগতের সঙ্গে জড়িয়ে যান। পরে বিশাল সেন্টারই হয়ে ওঠে তাঁর কর্মকাণ্ড পরিচালনার কেন্দ্র। ২০০১ সালের ২৫ ডিসেম্বর ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর যে নামের তালিকা তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত সরকার ঘোষণা করেছিল, তাঁদের অন্যতম ছিলেন সুব্রত বাইন। তাঁর নামে এখন ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি রয়েছে। সেখানে তাঁর বয়স দেখানো হয়েছে ৫৫ বছর। তাঁকে ধরিয়ে দিতে তখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পুরস্কার ঘোষণা করেছিল।
১৯৯১ সালে ঢাকার আগারগাঁও এলাকায় জাসদ ছাত্রলীগ নেতা মুরাদ হত্যার মধ্য দিয়ে তার সন্ত্রাস জীবনের উত্থান শুরু হয়।
২০০৩ সালের দিকে পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর তৎপরতা বেড়ে গেলে সুব্রত ভারতে পালিয়ে যান। সেখানে যাওয়ার পর কলকাতার স্পেশাল টাস্কফোর্স কারাইয়া এলাকা থেকে ২০০৮ সালের ১৩ অক্টোবর সুব্রতকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে। তার বিরুদ্ধে কলকাতায় অস্ত্র ও অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলাও হয়। ওই মামলায় ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি জামিনে ছাড়া পেয়ে আবার গা ঢাকা দেন সুব্রত।
এরপর ২০০৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্কফোর্সের কর্মকর্তাদের ধাওয়া খেয়ে সুব্রত বাইন নেপাল সীমান্তের কাকরভিটা শহরে ঢুকে পড়েন। পরে নেপালের পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারের প্রায় তিন বছরের মাথায় ২০১২ সালের ৮ নভেম্বর সুড়ঙ্গ খুড়ে নেপালের কারাগার থেকে পালিয়ে ফের ভারতে অনুপ্রবেশ করেন সুব্রত বাইন।
একই বছরের ২৭ নভেম্বর কলকাতার বৌবাজারের একটি বাসা থেকে সুব্রতকে গ্রেপ্তার করে ভারতীয় পুলিশ। সেখানে ফতেহ আলী নাম নিয়ে ছদ্মবেশে অবস্থান করছিলেন তিনি।
সুব্রত বাইনের হাত ধরেই মোল্লা মাসুদ অপরাধ জগতে জড়িয়ে পড়েন। মোল্লা মাসুদ রাজধানীর মতিঝিল ও গোপীবাগ এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতেন। ২০০৩ সালের পরে তাঁকে আর বাংলাদেশে দেখা যায়নি। ভারতে তিনি আবু রাসেল মো. মাসুদ নামে পরিচিত হন। ভারতীয় নাগরিক রিজিয়া সুলতানাকে বিয়ে করে সেখানে বসবাস করছিলেন।
পুলিশ জানায়, মোল্লা মাসুদের বিরুদ্ধে যে-সব মামলা আছে, তার মধ্যে সাবেক সাংসদ কামাল মজুমদারের ভাগনে মামুন হত্যা, পুরান ঢাকায় মুরগি মিলন হত্যা, খিলগাঁওয়ের তিলপাপাড়ায় ট্রিপল মার্ডার উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তাঁর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অসংখ্য জিডি আছে। ২০০১ সালে তৎকালীন সরকার যে ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম ঘোষণা করে, তাতে মোল্লা মাসুদেরও নাম ছিল।
কুষ্টিয়ার যে বাসায় থাকতেন সন্ত্রাসীরা:
মেসের বাসিন্দা এক ছাত্র বলেন, মালিকের কাছ থেকে পুরো বাড়িটি তাঁরা ভাড়া নিয়েছেন। একজন ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে আছেন। দেড় মাস আগে পেছনের বাড়ির বাসিন্দা হেলাল উদ্দিন ও তাঁর স্ত্রী মিনারা খাতুন (হীরা) আসেন। তাঁরা নিচতলার ফ্ল্যাট ভাড়া চান। তাঁরা বলেন, এখানে অনলাইনে পোশাক কেনাবেচার জন্য পোশাক রাখা হবে এবং তাঁদের কিছু লোকজন থাকবেন। মাসিক ছয় হাজার টাকা ভাড়ায় ফ্ল্যাটটি ভাড়া দেন ছাত্ররা। এরপর হেলাল উদ্দিন এই ভবনের সামনে একটি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করেন। ক্যামেরার সংযোগ পেছনে তাঁর নিজের বাড়িতে নিয়ে যান।
ওই ছাত্র আরও বলেন, ভাড়া নেওয়ার কয়েক দিন পর এই বাসায় এক ব্যক্তি আসেন। বাসা থেকে তারা খুব একটা বের হতেন না। ২০ থেকে ২৫ দিন আগে এক নারীকে নিচতলার এই ফ্ল্যাটে দেখতে পান ছাত্ররা। ওই নারী কিছুদিন এখানে অবস্থান করেন বলে ছাত্ররা জানান।
ছাত্ররা জানান, ১০-১২ দিন ধরে এই ভবনের সামনে একটি লাল রঙের প্রাইভেট কার এসে দাঁড়াত। বেশ কিছু লোকের যাতায়াত তাঁরা লক্ষ করতেন। তবে কারও সঙ্গে ছাত্রদের কোনো কথা হতো না। নিচতলার যে ফ্ল্যাট থেকে সুব্রত বাইনকে আটক করা হয়েছে ওই ফ্ল্যাটের ভেতরে গত দেড় মাসে কোনো রকম খাবার রান্না হয়নি। সব খাবার বাইরে থেকে আনা হতো।
সুব্রত বাইনকে যে ফ্ল্যাট থেকে আটক করা হয়েছে, ঠিক সেই ভবনের পেছনেই মিনারা খাতুন ও হেলাল উদ্দিনের বাড়ি। মিনারা একটি পোশাকের দোকানের মালিক। তাঁর স্বামীর মাধ্যমে এই ব্যক্তিরা এখানে বাসা ভাড়া নিয়েছিলেন।
মিনারা খাতুন বলেন, তাঁর স্বামী হেলাল উদ্দিন ১৭ থেকে ১৮ বছর দুবাই ছিলেন। চলতি বছরের প্রথম দিকে তিনি দেশে ফেরেন। দেড় মাস আগে তাঁর স্বামী তাঁকে জানান, কয়েকজন ব্যক্তি এখানে থাকবে, মিনারা যেন সামনের ভবনের নিচতলাটা ভাড়া নেন। এরপর মেসের ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলে ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেন তাঁরা। এরপর ওই ব্যক্তিরা এই নিচতলাতে থাকতে শুরু করেন। এ ঘটনার পর মিনারা খাতুনের স্বামী হেলাল উদ্দিন এর আর কোনো খবর নেই।
আতঙ্কে মেস ছেড়ে যাচ্ছেন ছাত্ররা:
সুব্রত বাইনকে আটকের পর ভবনটির দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় থাকা ছাত্ররা বাড়ি চলে যাচ্ছেন। দুপুরের পর গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হওয়ায় ছাত্রদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়। বিকেল চারটার দিকে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় ১৮ জন ছাত্রের মধ্যে অন্তত ১০ জন ব্যাগ নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন।
জনমনে স্বস্তি:
এদিকে সেনাবাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানে তাদের গ্রেফতার হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে জনমনে স্বস্তি ফিরে আসে। এ অভিযান অব্যাহত রেখে সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অনুরোধ জানিয়েছেন দেশের বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ।
জামালপুরে অভিযানে ৪ কেজি গাঁজা সহ বিপ্লব ব্যাপারী (৩২) ও মো. শফিকুল ইসলাম শিপন (৩৩) নামে ২ দুই মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করেছে জামালপুর ডিবি পুলিশ।
৭ দিন আগেজামালপুরে অভিযানে ৪ কেজি গাঁজা সহ বিপ্লব ব্যাপারী (৩২) ও মো. শফিকুল ইসলাম শিপন (৩৩) নামে ২ দুই মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করেছে জামালপুর ডিবি পুলিশ।