সাবেক আইজিআর মান্নানের সম্পদের পাহাড়

প্রতিনিধি
মো. মাজহারুল পারভেজ ও আব্দুল্লাহ আল মামুন
আপডেট : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৭: ১১
Thumbnail image
নিবন্ধন পরিদপ্তরের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিআর) খান মো. আব্দুল মান্নান

নিবন্ধন অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিআর) খান মো. আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং জালজালিয়াতির সীমাহীন অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। জ্ঞাতআয়বহির্ভূত কোটি কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে সাবেক এই সরকারি কর্মকর্তার। তার এই সম্পত্তি বৈধ করতে তিনি নানা কারসাজি করে যাচ্ছেন। আশ্রয় নিয়েছেন নানা জালজালিয়াতির। ঘনিষ্ঠজনরা বলছেন, দুর্নীতি ও জালজালিয়াতির এক মহাসম্রাট এই মান্নান।

২০১২ সালের ১৫ মার্চ নিবন্ধন পরিদপ্তরের মহাপরিদর্শক হিসেবে নিয়োগ পান সিনিয়র জেলা জজ খান মো. আব্দুল মান্নান। পরে ২০১৮ সালের ৭ জানুয়ারি থেকে এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক এ নিয়োগ লাভ করেন। নির্বাচন কমিশনারের জন্য সার্চ কমিটি প্রকাশিত ৩২২ জনের তালিকার ৬১ নম্বরে ছিলেন তিনি। হাছিনার সুনজরে ছিলেন বলেই তিনি যা চাইতেন তা পেয়ে যেতেন।

নথিপত্র ঘেঁটে জানা যায়, পূর্বাচল ৫ নম্বর সেক্টরে ৫ কাঠার দুটি প্লট রয়েছে তার। একটিতে লাগিয়েছেন চন্দনগাছ। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ২৪ নম্বর রোডের ব্লক এম, প্লট ৬৭৯-এ রয়েছে ৭ তলা বাড়ি। পান্থপথে আছে একটি প্রাইভেট হাসপাতাল। শেয়ার আছে একটি বেসরকারি ব্যাংকে। উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরের ১৫ নম্বর রোডে দুটি ফ্ল্যাট আছে, যার আনুমানিক মূল্য ৬ কোটি টাকা। এ ছাড়া সেক্টর ১০, রোড ১৩-এর ৬২/সি ও সেক্টর ৩, রোড নম্বর ৮, প্লট ৯-এর মালিক তিনি।

এদিকে, রাজধানীর উত্তরা আবাসিক এলাকায় (সেক্টর-৩, রোড-৮, প্লট-৯) ৫ কাঠার একটি প্লট জালিয়াতির মাধ্যমে হস্তান্তরের অভিযোগ উঠেছে সাবেক আইজিআর খান মো. আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, রাজউকের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহায়তায় ভুয়া ওয়ারিশ তৈরি করে প্লটটি দখলের পাঁয়তারা করা হচ্ছে।

সম্প্রতি জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে পাঠানো একটি অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, সাবেক আইজিআর খান মো. আব্দুল মান্নানের স্ত্রী মোসা. শাকিলা বেগম এবং তার দুই ভাই মো. হারুনুর রশিদ খান ও মো. আব্দুল হান্নান খান মিলে মিসেস জরিনা বেগম ও মোহাম্মদ রাশেদ রাজা নামে ভুয়া ওয়ারিশ তৈরি করেন। পরে তাদের নামে বায়না দলিল রেজিস্ট্রি করিয়ে প্লটটি নিজেদের দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালান।

অভিযোগ রয়েছে, বিচার বিভাগের ক্ষমতার অপব্যবহার করে আব্দুল মান্নান আদালতের মাধ্যমে ভুয়া ওয়ারিশদের পক্ষে রায় পেতে সহযোগিতা করেন। এরপর জরিনা বেগমের মৃত্যুর পর মুহাম্মদ আব্দুল মান্নান নামের এক ব্যক্তির সোনালী ব্যাংকের স্টেটমেন্ট জাল করে জরিনা বেগমের নামে উপস্থাপন করেন। এর মাধ্যমে মোহাম্মদ রাশেদ রাজাকে ভুয়া ওয়ারিশ প্রমাণিত করা হয়।

পরে প্রতারক মো. জিয়াউল হক ভুয়া ওয়ারিশ রাশেদ রাজার কাছ থেকে প্লটটি বায়না করেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে প্লটটি গোপনে জাকির হোসেন, জুবায়ের আলম ও সজীব আহমেদের কাছে বিক্রির জন্য নগদ ২ কোটি টাকা গ্রহণ করেন। জালিয়াতি করা অর্থ দিয়ে জিয়াউল হক তার ছেলেকে অস্ট্রেলিয়া পাঠিয়ে দেন এবং রাশেদ রাজাকে মালয়েশিয়ায় পাঠান।

পরিস্থিতি বুঝতে পেরে সাবেক আইজিআরের পরিবার রাজউক, রেজিস্ট্রি অফিসসহ বিভিন্ন দপ্তরে প্লট হস্তান্তরের অনুমতি বন্ধের জন্য আবেদন করেন।

অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, রাজউকের সংশ্লিষ্ট স্টেট ও ভূমি শাখার কর্মকর্তারা এবং আইন শাখার কয়েকজন কর্মকর্তা বিষয়টি জানার পরও উদাসীনতার ভান করে দ্রুত নথিপত্র জিয়াউল হকের পক্ষে মতামত দেন। ফলে প্লটটি জাকির হোসেন গংয়ের কাছে হস্তান্তরের অনুমতি দেওয়া হয়।

পরে পুনরায় আবেদন করা হলে হস্তান্তর প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়। তবে রাজউকের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যস্থতায় মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে প্লটটি হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

অভিযোগপত্রে রাষ্ট্রের স্বার্থে ভুয়া ওয়ারিশদের মাধ্যমে হস্তান্তর হওয়া প্লটটি বাতিল এবং দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে। এ ছাড়া রাজউকের মাধ্যমে ভবন নির্মাণ করে ফ্ল্যাট বিক্রির মাধ্যমে রাজস্ব আয় করার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।

নিবন্ধন পরিদপ্তরের মহাপরিদর্শক থাকাকালে খান মো. আব্দুল মান্নান অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন। তার আমলে নিবন্ধন পরিদপ্তরের রেজিস্ট্রি অফিসগুলোতে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে, যার নজির অতীতে নেই।

নিয়ম অনুযায়ী, সরকারি দপ্তরগুলোর জেলা পর্যায়ে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ স্থানীয় নাগরিকদের মধ্য থেকে সম্পন্ন হওয়ার কথা। কিন্তু আব্দুল মান্নান এই নিয়ম উপেক্ষা করে নিবন্ধন পরিদপ্তরে তার আত্মীয়স্বজন এবং টাকা নিয়ে ভিন্ন এলাকার লোকজন নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

অভিযুক্ত নিবন্ধন পরিদপ্তরের সাবেক মহাপরিদর্শক খান মো. আব্দুল মান্নানের বক্তব্য নেওয়ার জন্য বারবার ফোন ও এসএমএস করেও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। পরে তার উত্তরার বা্সায় গেলে তার স্বজনরা জানান তিনি অসুস্থ । হুইলচেয়ারে চলাফেরা করেন, তাই তার সঙ্গে দেখা করা যাবে না।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

দুর্নীতি নিয়ে আরও পড়ুন

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) গাবতলীতে অভিযান চালিয়ে সেবাগ্রহীতাদের অর্থ নিয়ে কাজের নামে হয়রানি ও হেনস্তার অভিযোগে ৮ দালালকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

৭ ঘণ্টা আগে

গত ১৭ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী 'ইউনিক রোড রয়েলস' নামক চলন্ত বাসে ধর্ষণের ঘটনাটি সঠিক নয়— এমনটাই জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

১০ ঘণ্টা আগে

চলন্ত বাসে ডাকাতি ও নারীদের যৌন নির্যাতনের ঘটনার মূলহোতা আলমগীরসহ তার সহোদরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলো ঘটনার মূলহোতা আলমগীর শেখ (৩৪) ও তার সহোদর রাজীব হোসেন (২১)। তারা মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর উপজেলার আমতলী গ্রামের খোরশেদ আলম শেখের ছেলে।

১২ ঘণ্টা আগে