শুধু ফারইস্টের কাছেই পাওনা ২৭৫২ কোটি টাকা

বীমাখাতে সীমাহীন অনিয়ম দুর্নীতি

প্রতিনিধি
বিশেষ প্রতিনিধি
আপডেট : ২৪ আগস্ট ২০২৫, ২২: ৩৫
Thumbnail image
ছবি: সংগৃহীত

দেশে মোট ৩৬টি জীবন বীমা কোম্পানির অনিষ্পত্তি বীমা দাবির পরিমাণ ৪ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৫টি কোম্পানিরই অনিষ্পত্তি বীমা দাবির পরিমাণ ৩ হাজার ৮২৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ জীবন বীমার মোট অনিষ্পত্তি দাবির ৮৭ শতাংশই এই ৫ কোম্পানির। বীমা খাত থেকে টাকা পয়সা নিয়ে অনেকে পালিয়ে যাচ্ছেন। দীর্ঘদিন ঘুরেও বীমার টাকা তোলা যাচ্ছে না।

অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে বর্তমানে তীব্র আস্থা সংকটে পড়েছে খাতটি। এ খাতের প্রতি আস্থা বাড়াতে স্বচ্ছতা ও সুশাসন জরুরি বলে মত দেন ভুক্তভোগী ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানিটির কাছে গ্রাহকের পাওনা ছিল ২ হাজার ৯৪৬ কোটি টাকা, যার মধ্যে মাত্র ১৯৪ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে কোম্পানিটি।

এছাড়া ৮১৬ কোটি টাকার সম্পদ ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলামসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় মামলা হয়েছে। মামলার অন্য আসামিরা হলেন সাবেক পরিচালক মো. হেলাল মিয়া, শারিয়ার খালেদ, নাজনীন হোসেন, খন্দকার মোস্তাক মাহমুদ, মো. মনোয়ার হোসেন, কে এম খালেদ, এম এ খালেক, ইফফাৎ জাহান, মো. মিজানুর রহমান, মোজাম্মেল হোসেন, রাবেয়া বেগম, মো. মোশাররফ হোসেন, কাজী ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, মো. হেমায়েত উল্লাহ, সৈয়দ আবদুল আজিজ, প্রকৌশলী আমির হোসেন, তাসলিমা ইসলাম, সাবিহা খালেক, সারওয়াৎ খালেদ সিমিন, মো. আজহার খান, মো. সোহেল খান, গোলাম কিবরিয়া ও এস এম মোর্শেদ। এজাহারে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে প্রতিষ্ঠানটির অনুকূলে ৩৩.৫৬ শতাংশ জমিসহ ভবন ২০৭ কোটি ৩৬ লাখ ৬০ হাজার টাকায় ক্রয়ের নামে ৪৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও অজ্ঞাত ব্যক্তিদের নামে স্থানান্তর করে অবৈধ উৎস গোপনের মাধ্যমে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় বিলাসবহুল বাড়ি কিনেছেন নজরুল ইসলাম। বাড়িটির ঠিকানা ১১৫২২ মানাতি বে এলএন, ওয়েলিংটন, এফএল ৩৩৪৪৯। ২০১৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি বাড়িটি কেনা হয়েছিল ৭ লাখ ৫৪ হাজার ৩২৭ মার্কিন ডলার দিয়ে। বাড়ি কিনতে কোনো ঋণ নেওয়া হয়নি অর্থাৎ পুরো অর্থই একবারে পরিশোধ করা হয়। এ ছাড়া ছেলেমেয়ের নামে মো. নজরুল ইসলাম একই রাজ্যে গড়ে তুলেছেন তিনটি কোম্পানি।

এছাড়া ঋণের নামে জালিয়াতি করে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের প্রায় ৯৮ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। কোম্পানির সাবেক চেয়ারম্যান ও পরিচালকরা এর সঙ্গে জড়িত। ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্সের (এনডিই) নামে ভুয়া বিল ভাউচারে এই অর্থ আত্মসাৎ হয়।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (ইড্রা) এক মুখপাত্র বলেন, ফারইস্ট ইসলামীকে বকেয়া দাবি পরিশোধে বেশ কয়েকটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া তাদের কার্যক্রম মনিটরিং করা হচ্ছে।

ইড্রার ২০২২ সালের অনিরীক্ষিত তথ্য অনুযায়ী, ফারইস্ট ইসলামীর কাছে বর্তমানে ৪ হাজার ৫৫৯ কোটি টাকা পাওনা আছে। এর মধ্যে কোম্পানিটি নিষ্পত্তি করেছে মাত্র ৯৭০ কোটি টাকা বা মোট দাবির ২১ দশমিক ২৯ শতাংশ।

২০২১ সালের এপ্রিলে ফারইস্ট ইসলামীকে নিয়ে একটি বিশেষ অডিট পরিচালনায় দেশের চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ফার্ম শিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোম্পানিকে নিয়োগ দেয় আইডিআরএ। ২০২২ সালের মে মাসে আইডিআরএ’র কাছে একটি প্রতিবেদন জমা দেন অডিটর।

অডিট প্রতিবেদনে বলা হয়, কোম্পানিটির ২ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এ ছাড়া ৪৩২ কোটি টাকার হিসাব সংক্রান্ত অনিয়ম ধরা পড়েছে।

ফারইস্ট ইসলামীর সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও এমএ খালেক, সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হেমায়েত উল্লাহ, সাবেক পরিচালক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত।

মূলত ২টি উপায়ে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছিল। একটি হলো- বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি দামে জমি কেনা এবং কোম্পানির মুদারাবা টার্ম ডিপোজিট রিসিপ্ট (এমটিডিআর) বন্ধক রেখে ব্যাংক ঋণ নেওয়া।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

বীমা নিয়ে আরও পড়ুন

অন্যান্য বছরের চেয়ে ফলন অনেক ভালো হয়েছে। খরচ কম ও লাভ বেশি হওয়া বাড়ছে আখ চাষে। সরকারের পৃষ্টপোষকতা পেলে আরো বাড়বে আখের আবাদ মনে করেন চাষিরা। ক্রেতারা জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছরের আখ দেখতে অনেক সুন্দর, রসালো ও মিষ্টি। দামও হাতের নাগালে কাছে

৬ ঘণ্টা আগে

দেশে মোট ৩৬টি জীবন বীমা কোম্পানির অনিষ্পত্তি বীমা দাবির পরিমাণ ৪ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৫টি কোম্পানিরই অনিষ্পত্তি বীমা দাবির পরিমাণ ৩ হাজার ৮২৯ কোটি টাকা।

২১ ঘণ্টা আগে

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আবারও বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যমতে, ২৪ আগস্ট পর্যন্ত গ্রস রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩০৮৬৮ দশমিক ৭৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ৩০.৮৬ বিলিয়ন ডলার)।

১ দিন আগে

বর্তমানে এর মুনাফা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এফডিআরের (ফাইন্যান্স ডিপোজিট রেট) পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৫০ কোটি টাকায়, যা তার আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণ বহন করে।

১ দিন আগে