ভারতে অবস্থানরত আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যকে কেন্দ্র করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৩২ নম্বরের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি ধ্বংস করাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা ও ভাঙচুরের বিষয়টি নিয়ে ‘সন্দেহ পোষণ’ করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির একাধিক নেতা।

শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডাকেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে আমেরিকায় অবস্থানরত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ প্রায় সব সদস্য অনলাইনে অংশগ্রহণ করেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের এতদিন পর এসব ভাঙচুর-বিশৃঙ্খলার পেছনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন দীর্ঘায়িত করার একটি সুদূরপ্রসারী চক্রান্ত অথবা দেশে ভিন্ন কিছুর পথ তৈরি করার প্রেক্ষাপট তৈরির চেষ্টা থাকতে পারে।

শুক্রবার সকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির সভায় নীতিনির্ধারণী নেতারা ধানমন্ডির ৩২ নম্বরসহ বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুরের ঘটনা, সংস্কার কমিশনগুলোর প্রতিবেদনসহ চলমান পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেন।

বৈঠকে শেখ হাসিনার বক্তব্য, বক্তব্যকে কেন্দ্র করে ধানমন্ডি বত্রিশের বাড়ি ভাঙা, সারা দেশে আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের ঘটনার আদ্যোপান্ত বিশ্লেষণ করেন বিএনপির নেতারা।

বৈঠকে আরও অংশ নেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস (অনলাইনে), গয়েশ্বর চন্দ্র রায়; ড. আব্দুল মঈন খান; নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী (অনলাইনে), সালাউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু (অনলাইনে), হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন (অনলাইনে)।

বিএনপির সূত্র জানিয়েছে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে স্থায়ী কমিটি আগামী সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য একটি প্রতিনিধিদল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সাক্ষাতে বিএনপি দলীয়ভাবে উদ্বেগ ও অবস্থান তুলে ধরবে। একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গেও একটি প্রতিনিধিদল সাক্ষাৎ করবে। এর দিনক্ষণ এখনো ঠিক হয়নি। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্র সফরে আছেন। আগামীকাল রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেল নাগাদ তাদের দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

হঠাৎ করে তৈরি হওয়া উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বিবৃতি দিয়ে কঠোরভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানায় বিএনপি। এর ব্যত্যয় হলে দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির প্রসার ঘটবে বলে দলটি সরকারকে সতর্ক করেছে।

এ দুটি সিদ্ধান্তের সঙ্গে গতকাল দলটি সারা দেশের নেতাকর্মীদের কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ও হিংসাত্মক কর্মকাণ্ডে জড়িত না হতে জরুরি নির্দেশনা দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ‘বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কোনো বিরোধী পক্ষের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, ম্যুরাল ভাঙচুরসহ কোনো হিংসাত্মক কর্মকাণ্ডে দলীয় নেতাকর্মীরা যেন কোনোভাবে জড়িত না হয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ গণমাধ্যমকে জানান, গণঅভ্যুত্থানের পর যে পরিবর্তন, যে প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছিল, নৈরাজ্য করে তা কখনো পূরণ করা যাবে না। যে ঘটনাগুলো ৫ আগস্ট, ৬ আগস্ট ঘটেনি, এখন সে ঘটনা ঘটছে। তখন ঘটলে হয়তো মানুষ এগুলো স্বাভাবিকভাবে নিত, কিন্তু এখন মানুষ বিষয়গুলো স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে পারছে না।