বিএনপি নেতা ফরহাদ হালিম ডোনারের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ

Thumbnail image

উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ শাখা ডক্টর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)-এর নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ-অসন্তোষ দিন দিন বেড়েই চলছে।

৩ বারের সভাপতি ডা. রোকনুজ্জামান রুবেলকে সাময়িক অব্যাহতি, হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসার তানভির মাহমুদ তৌহিদকে চাকরি থেকে অব্যাহতি ও ৩ জনসহ মোট ৫ জনকে সাময়িকভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

এ ছাড়া বিএনপির বেশ কিছু পদধারী নেতাকর্মীকে হাসপাতালের কার্যক্রম থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজের চেয়ারম্যান ফরহাদ হালিম ডোনারের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। শোনা যাচ্ছে, তার এই স্বেচ্ছাচারিতার ফলে ডাক্তারদের বৃহত্তম সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) নেতাদের মধ্যে বিভাজন-রেখার প্রস্থ দিন দিন চওড়া হচ্ছে।

ড্যাবের একাধিক দায়িত্বশীল নেতাকর্মী জানান, উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ শাখার ড্যাবের দুই নেতার দ্বন্দ্বে পরিস্থিতি চরম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে। মূলত তাদের এমন ঘটনাকে কেন্দ্র করে দলে সৃষ্ট এই বিভক্তি শেষ পর্যন্ত এই সংগঠনকে ভাঙতে অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ শাখার এক ডাক্তার দৈনিক নিখাদ খবরকে বলেন, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সবথেকে বেশি ভূমিকা ছিল সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. রোকনুজ্জামান রুবেলের।

রাজপথে ছাত্রদের সাথে একাত্ম হয়ে আন্দোলন এবং আহত ছাত্রদের সুচিকিৎসার জন্য রাত-দিন তিনি খেটেছেন। সেই রোকনুজ্জামানকে সাময়িক অব্যাহতি দিয়ে আওয়ামী লীগের দোসরদের জায়গা করে দিচ্ছেন ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার। কোনো প্রকার নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই যাকে ইচ্ছা তাকে অব্যাহতি দিয়ে পছন্দের লোকদের নিয়োগ দেওয়ার কথাও শোনা যাচ্ছে।

ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ এবং উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ দখল করেছে ডা. ডোনার এবং ডা. দোলন। ট্রাস্টি বোর্ডের মাধ্যমে এ হাসপাতাল পরিচালিত হয়ে থাকলেও ডা. ডোনার এখন এটাকে প্রাইভেট ক্লিনিকে পরিণত করে ফেলেছেন।

এই দখলের বিরুদ্ধে অবস্থান করায় বিএনপির দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত যোদ্ধাকে চাকরিচ্যুত করেছেন এই দখলবাজ বিএনপির তথাকথিত ডাক্তার নেতারা। এই দখলের ব্যাপারে বিএনপিকে অবশ্যই পদক্ষেপ নিতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৩ সেপ্টেম্বর উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল শাখার সভাপতি পদ থেকে ডা. রোকনুজ্জামান রুবেলকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে সংগঠনবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগ তোলা হলেও সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। তার পরিবর্তে একই দিন সংগঠনের সহসভাপতি অধ্যাপক ডা. জাহানারা লাইজুকে সভাপতি পদে মনোনীত করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, এই ডা. জাহানারা লাইজু একজন সুবিধাভোগী ড্যাব নেতা। তিনি আওয়ামী লীগের সময় হাসপাতালের তৎকালীন চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. আব্দুর রাজ্জাকের খুব আস্থাভাজন ছিলেন। শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগের এমন কোনো কর্মসূচি নেই, যেখানে তিনি সামনের সারিতে ছিলেন না। তার এসব কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া একাধিক ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে সভাপতির প্রশ্ন উঠেছে একজন বিএনপির ত্যাগী নেতা হওয়া সত্ত্বেও ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার কি তাহলে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছেন?

জানতে চাইলে উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ শাখা ড্যাবের সাবেক তিনবারের সভাপতি ডা. রোকনুজ্জামান রুবেল দৈনিক নিখাদ খবরকে বলেন, উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল একটি ট্রাস্টি প্রতিষ্ঠান। এখান বর্তমানে যে ইসি কমিটি আছে, তার বেশিরভাগ সদস্যই আওয়ামী লীগের পকেট কমিটির সদস্য। স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতনের পর ডা. ফরহাদ হালিম ডোনারকে ম্যানেজ করে তারা এখনো এখানে বহাল তবিয়তে আছেন। এই কমিটি একটি অবৈধ কমিটি।

তিনি বলেন, তিনিসহ যে ৫ জনকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, তা সম্পূর্ণ অবৈধ। আমাকে যে অব্যাহতির চিঠি দেওয়া হয়েছে, তা ড্যাব অফিস থেকে দেওয়া হয়নি। ফরহাদ হালিম ডোনার এটি গুলশান নিকেতনে অবস্থিত জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের অফিস থেকে ইস্যু করিয়েছেন, যা এই সংগঠনের নিয়মনীতির বাইরে। এ ছাড়া তিনি তার ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য হাসপাতালে একক আধিপত্য বিরাজ করছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হয়ে তিনি ব্যক্তিস্বার্থের জন্য কীভাবে আওয়ামী লীগের অবৈধ এ কমিটির সদস্যদের বৈধতা দেন, তা নিয়ে জনমনে ব্যাপক প্রশ্ন উঠেছে। বর্তমানে ডোনার ও তার কিছু সহযোগী মিলে উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে একটি ক্লিনিকে রূপান্তর করেছেন।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ড্যাবের সদ্য বিদায়ী সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশীদ দৈনিক নিখাদ খবরকে বলেন, উত্তরা আধুনিক মেডিকেলের চেয়ারম্যান হলেন আমাদের প্রধান উপদেষ্টা ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার। এখন ডোনার সাহেবের সঙ্গে ওইখানে ডা. রুবেলের নানা ধরনের গ্রুপিং, লবিং অনেক কিছু আছে। মালিকানাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। এক পর্যায়ে তিনি ডোনার সাহেবের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। যার কারণে ডোনার সাহেবের সুপারিশে আমাদের ওই কমিটি বদল করা হয়েছে।

একটা ডিসিপ্লিন তো থাকতে হবে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ডোনার সাহেব তো ড্যাবের প্রধান উপদেষ্টা। তার সঙ্গে ড্যাবের একজন সদস্য যখন বিরোধে জড়িয়ে যাবে। তখন তো আমাদের এটা করা ছাড়া উপায় থাকে না।

আমি ব্যক্তিগতভাবে রোকনকে ডেকেছি এবং কথাও বলেছি বিষয়টাকে মিনিমাইজ করতে।

ডা. রোকনুজ্জামানের সাময়িক অব্যাহতির বিষয়ে কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে কিনা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, এত তদন্ত কমিটি কমিটি লাগে না আমাদের এ সংগঠনে। একজন সদস্যকে অব্যাহতি দিতে কি এমন তদন্ত কমিটি দরকার হতে পারে? তাকে তোর ড্যাবের সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়নি। দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে আরেকজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

আর যেহেতু ডোনার ওই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান। আর ওইখানকার ড্যাবের প্রেসিডেন্ট যদি তার বিরুদ্ধে থাকে। তাহলে তার কার্যক্রম পরিচালনা করাটাও তো একটা অসুবিধার বিষয়। সেই কারণেই রোকনকে আমরা সেখান থেকে দায়িত্ব থেকে সাময়িক অব্যাহতি দিয়েছি। যাতে পারস্পরিক বিরোধ যেন না থাকে।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

বিএনপি নিয়ে আরও পড়ুন

আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নিষিদ্ধ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

৫ ঘণ্টা আগে

গণহত্যাকারী হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত ও দলটিকে নিষিদ্ধের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছে ছাত্র-জনতা।

৫ ঘণ্টা আগে

তিনি বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে আমরা অনেক জায়গায় দেখেছি করিডোরের নাম করে বিদেশি এজেন্ট এসেছে। বিভিন্ন রকম ইন্টেলিজেন্স গোয়েন্দা সংস্থা এসেছে। বিভিন্ন দেশ ঢুকেছে। ইউএন ঢুকেছে।

১১ ঘণ্টা আগে