খেজুর ছোলায় স্বস্তি, অস্বস্তি মাছ-মাংস ও তেলে

রোজার বাজার

প্রতিনিধি
নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট : ০১ মার্চ ২০২৫, ১৩: ১৫
Thumbnail image
ফাইল ছবি

দেশে রোজার সময় জিনিসপত্রের দামে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দিলেও এবারের পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত ‘আংশিক ঠিক থাকার’ কথা বলছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।

তারা বলছেন, রোজায় যেসব পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়, যেমন খেজুর, ছোলা, বিভিন্ন রকমের ডাল, বেসন ও চিনি, সেসব পণ্যের দাম এবার বাড়েনি; সরবরাহও স্বাভাবিক।

তবে লেবু, শসা আর বেগুনের পাশাপাশি দাম বেড়েছে মাছ-মাংসের। ভোগাচ্ছে সয়াবিন তেলও, বিশেষ করে মাস খানেক ধরে বোতলের তেলের যে সংকট চলছে, তা রোজার আগ মুহূর্তেও কাটেনি।

অথচ বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স ও বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন যে ‘প্রতিশ্রুতি’ দিয়েছিল, তাতে গত বুধবারের মধ্যে বাজারে বোতলের সয়াবিনের সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ার কথা ছিল।

অন্যান্য পণ্যের বাজার ‘স্বাভাবিক’ থাকার কারণ হিসেবে বাড়তি আমদানির কথা সামনে আনছেন ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, রোজা সামনে রেখে কয়েকটি পণ্যের আমদানি এবার ২০ থেকে ৬৪ শতাংশ বেশি।

গত অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত চার মাসে দেশে চিনি আমদানি হয় চার লাখ ৫৪ হাজার ৩৪ টন, যা এক বছর আগের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি। এ সময় সয়াবিন তেল আমদানি হয় ৫ লাখ ৯৮ হাজার ২৫২ টন, যা আগের বছরের চেয়ে ৩৪ শতাংশ বেশি। বিভিন্ন প্রকারের ডাল আমদানি ৪৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৫৭ হাজার ৮৩৭ টন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গেল চার মাসে ছোলা আমদানি হয় ৯৭ হাজার ৫৫৫ টন, যা আগের বছরের চেয়ে ৬৪ শতাংশ বেশি।একইভাবে পেঁয়াজ দুই শতাংশ, রসুন ২০ শতাংশ, আদা ৫৬ শতাংশ ও খেজুর ২৩ শতাংশ বেশি আমদানি হয়েছে।

বাজারে এবার ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা থেকে ১২০ টাকায়। গেল রোজায় দাম ওঠে ১১০ টাকায়।

অন্যদিকে ঢাকার বিভিন্ন বাজরে বেগুনের কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা ও বেসন ১২০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেসন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা দরে।

ঢাকার যাত্রাবাড়ী, শনির আখাড়া, কাপ্তান বাজার, শান্তি নগর, কারওয়ান বাজার ও মহাখালী কাঁচাবাজারে ঘুরে দেখা যায়, আমদানি করা সাদা চিনি ১২০ টাকা ও লাল চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা কেজিতে। আখের গুড় ১৪০ টাকা ও মুড়ি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজিতে।

চড়ছে মাছ-মাংসের বাজার

সপ্তাহ দুয়েক আগে শবে বরাতের সময় মাংসের দাম কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে গিয়েছিল। দুদিন পরেই আবার কমে যায়। রোজা ‘উপলক্ষে’ ফের মাংসের দাম বেড়েছে।

বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২১০-২৩০ টাকা কেজিতে; আর সোনালির দাম পড়ছে ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকা।

দুদিন আগেও বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয় ১৯০ থেকে ২০০ টাকা কেজিতে। আর সোনালি ছিল ৩৩০ টাকার মধ্যে।

এ ছাড়া লাল লেয়ার মুরগি ৩০০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৯০ টাকা, আর দেশি মুরগি ৫৬০ টাকা করে কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

আর বাজারে গরুর মাংসের দাম গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা বেড়ে ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খাসির মাংস কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে কিছু-কিছু মাছের দামও কেজি প্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা করে বেড়েছে।

নিকেতন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে ৫০০ গ্রামের ইলিশ এক হাজার টাকা, ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রামের হলে দেড় হাজার টাকা, এক কেজি ওজনের হলে দুই হাজার টাকা চাওয়া হচ্ছে।

রুই মাছের দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে আকৃতিভেদে ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, গলদা চিংড়ি ৭৮০ থেকে ১২০০ টাকা, বড় কাতল ৩৫০ থেকে ৪২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

ভোগাচ্ছে সেই সয়াবিন

মাস খানেক ধরে সয়াবিন তেলের বাজারে যে সংকট চলছে, তা রোজা ‘চলে এলেও’ কাটেনি।

বাজারে তেল যা পাওয়া যাচ্ছে, তার বেশির ভাগই দুই ও ৫ লিটারের বোতলে। ফলে খোলা সয়াবিন তেলের বিক্রি বেড়েছে। প্রতি লিটারের দাম পড়ছে ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা।

বোতলের সয়াবিন তেলের সরকার নির্ধারিত সর্বোচ্চ বিক্রয়মূল্য হচ্ছে প্রতিলিটার ১৭৫ টাকা ও ৫ লিটার ৮৫০ টাকা।

গত ১৬ ফেব্রুয়ারি এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ ভেজিটেবল ওয়েল রিফাইনার্স ও বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বলেছিল, রোজায় ভোজ্যতেলের সংকট হবে না।

আমদানি করা নতুন তেল ‘৭ থেকে ১০ দিনের’ মধ্যে বাজারে আসবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।

তাদের সেই বিজ্ঞপ্তির ১২দিন পার হলেও বাজারে তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি।

সয়াবিন তেলের সরবরাহ ঘাটতির সুযোগে বাজারে পাম তেল বিক্রি বেড়েছে। বাজারে দুই ধরনের পাম তেল পাওয়া যাচ্ছে। রান্নার পরে খুব দ্রুত জমে যাওয়া ‘সাধারণ’ মানের পাম তেল বিক্রি হচ্ছে প্রতিলিটার ১৫০ টাকায়।

আর ভালো মানের সুপার পামওয়েল বিক্রি হচ্ছে দুই লিটার ৩২০ টাকা। আর ৫ লিটারের বোতলজাত পামওয়েল বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ টাকায়।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

বাণিজ্য নিয়ে আরও পড়ুন

কোনো আমদানিকারক বন্দর থেকে নির্ধারিত সময়ে পণ্য ছাড় না করলে, তিন গুণ জরিমানা দিতে হবে বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। বলেন, ‘পর্যাপ্ত পরিমাণ নিত্যপণ্য আমদানি করা হয়েছে। সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই।’

২ দিন আগে

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঘাটতি নেই। সয়াবিন তেলের সরবরাহ কিছুটা কম আছে। এটা অস্বীকার করার কিছু নেই। আগামী দুই দিনের মধ্যে সয়াবিন তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।

৩ দিন আগে

ঢাকার যাত্রাবাড়ী, শনির আখাড়া, কাপ্তান বাজার, শান্তি নগর, কারওয়ান বাজার ও মহাখালী কাঁচাবাজারে ঘুরে দেখা যায়, আমদানি করা সাদা চিনি ১২০ টাকা ও লাল চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা কেজিতে। আখের গুড় ১৪০ টাকা ও মুড়ি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজিতে।

৫ দিন আগে

নাব্য সংকটে প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী নৌবন্দরে সরাসরি পণ্যবাহী বড় জাহাজ ভিড়তে পাড়ছে না। ফলে ছোট ছোট লাইটার জাহাজে পণ্য আনতে হচ্ছে বন্দরে।

৮ দিন আগে