মানিকগঞ্জের হরিরামপুর থানা শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কেন্দ্র নয়, একই সঙ্গে একটি সবজিখাতেও পরিণত হয়েছে। থানার চারপাশে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে আছে বড় পুকুর, কলার ক্ষেত, এবং ভবনের পূর্ব দিকে অর্ধেক একর জমিতে সবজি চাষের জায়গা।

এই চাষের মূল দায়িত্ব তিন বছর ধরে পালন করছেন আন্দারমানিক গ্রামের কৃষক সুমন রাজবংশী। পুলিশ সদস্যরা পরিবেশ-পরিচর্যা সামলেও চাষের দায়িত্ব সুমনের কাঁধে।

সুমনের বাবা গণেশ রাজবংশী নদীতে মাছ ধরতেন। কিন্তু নদী-জলাশয়ে মাছের ঘাটতি এবং পরিবারের জীবিকার প্রয়োজনে সুমন কৃষির পথে পা বাড়ান। ২০২৩ সালে তিনি হরিরামপুর থানার খালি জমিতে সবজি চাষ শুরু করেন। প্রথম বছরের লাভ তাকে অনুপ্রাণিত করে।

শুক্রবার দেখা যায় সুমন ফুলকপির ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার করছেন। এবার তিনি ৫ হাজার ফুলকপির চারা লাগিয়েছেন, প্রতি চারার দাম চার টাকা, মোট খরচ ২০ হাজার টাকা। তবে অতিবৃষ্টির কারণে এক-তৃতীয়াংশ চারা নষ্ট হয়ে গেছে। এখনও ফুল আসেনি, তাই বাজারদরের ওঠানামা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। “লালশাক করেছিলাম, বৃষ্টিতে ভালো হয়নি, তবু ১০ হাজার টাকার মতো বিক্রি করেছি। কিন্তু এবার ফুলকপি হয়তো লোকসানে যাবে,” বলেন তিনি।

ফুলকপির পাশাপাশি সুমন ভুট্টা ও কাঁচা মরিচও চাষ করেন। বর্ষার মরিচ কিছুটা লাভ দিয়েছে এবং সংসারের খরচ সামলাতে সাহায্য করেছে। চাষের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো আগাছা নিয়ন্ত্রণ। “আগাছা না থাকলে প্রতিটি মৌসুমেই ভালো লাভ হতো,” জানান তিনি। ভবিষ্যতে ভুট্টা চাষে মনোযোগ দেওয়ার পরিকল্পনা আছে।

পুলিশও এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছে। থানার ওসি মজিবুর রহমান বলেন, “খালি জায়গা পড়ে থাকলে কোনো মানে নেই। চাষ হলে পরিবেশ সবুজ থাকে, আগাছা কমে, মশার উপদ্রবও কমে। কৃষকও আয়ের মুখ দেখেন। এটি এলাকার জন্য ইতিবাচক উদ্যোগ।”

পদ্মানদীর তীরে সুমনের সবজিক্ষেত্র শুধু লাভের জায়গা নয়, বরং তার পরিশ্রমের গল্পও। প্রতিটি ফসলের জন্য তিনি ঘামে ভেজা শ্রমের প্রতিটি ফোঁটা দিতে প্রস্তুত, কঠিন পরিবেশ ও বাজারদরের ওঠানামার মধ্যেও নিজের স্বপ্নে অটল।

সবুজের এই লড়াই তাই শুধু একজন কৃষকের নয়—এলাকার মানুষেরও।