কিশোরগঞ্জে সুদের ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হওয়ার মতো পরিস্থিতিতে পড়েছেন অবসরপ্রাপ্ত ইউনিয়ন পরিষদ সচিব আসাদুজ্জামান আসাদ। সহকর্মীর ওপর ভরসা করেই টাকা ধার নিয়েছিলেন, কিন্তু সেই বিশ্বাসই আজ তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও তিনি প্রতারণার শিকার হয়ে হারানো অর্থ ফিরে পাচ্ছেন না। ভেঙে পড়েছেন পরিবার–সন্তানদের ভবিষ্যতও অনিশ্চয়তায়।

আসাদের ভাষ্যমতে, আর্থিক সংকটে পড়ে তিনি ২০১৯ সালের জুনে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলার পূর্ব অষ্টগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন সচিব ও বর্তমান প্রশাসনিক কর্মকর্তা কামরুজ্জামান খান শিরিনের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা ধার নেন। শর্ত অনুযায়ী তিনি জামানত হিসেবে তিন লাখ টাকার একটি চেক তার কাছে জমা দেন।
পরবর্তী বছর এপ্রিল মাসে ধার করা টাকা শোধ করলেও, শিরিন সুদের নামে আরও টাকা দাবি করেন এবং চেক ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানান। পরে বাধ্য হয়ে আসাদ অতিরিক্ত ৯০ হাজার টাকা পরিশোধ করলেও চেক ফেরত পাননি।

অবস্থার আরও অবনতি ঘটে চলতি বছরের ২৭ এপ্রিল, যখন রূপালী ব্যাংক কিশোরগঞ্জ শাখা থেকে ওই চেক ব্যবহার করে তিন লাখ টাকা তুলে নেন কামরুজ্জামান শিরিন—ধার শোধ হয়ে যাওয়ার পরও।

ভুক্তভোগী আসাদ বলেন,

“বিশ্বাস করেই টাকা নিয়েছিলাম। কিন্তু সে প্রতারণা করে আমার তিন লাখ টাকা তুলে নিয়েছে। এখন পরিবার নিয়ে চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছি।”

আসাদের দুই মেয়েই মেডিকেল কলেজে পড়েন। বড় মেয়ে আমাতুল্লাহ সুরাইয়া ইভার পরীক্ষার ফরম পূরণের জন্য ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে গিয়ে জানা যায়—তার বাবার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। ফলে পরীক্ষা দিতে পারেননি তিনি।
মেয়ে জান্নাতুল আইরিন বলেন,

“দাদার টাকা তুলেই আমাদের পরীক্ষা বন্ধ হয়ে গেছে। বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন, অসুস্থ হয়ে পড়ছে।”

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কামরুজ্জামান শিরিন দাবি করেন—আসাদ নিজেই চেক দিয়ে তিন লাখ টাকা নিয়েছেন, পরে তিনি তা উত্তোলন করেছেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি সাক্ষাতে কথা বলবেন বলে ফোন কেটে দেন।

অষ্টগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিলশাদ জাহান বলেন,

“এ বিষয়ে এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এই প্রতারণার ঘটনায় এলাকাজুড়ে ক্ষোভ দেখা দিলেও এখনো ন্যায়বিচার এবং নিজের সঞ্চিত অর্থ ফেরত পাওয়া নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় ভুগছেন অবসরপ্রাপ্ত সচিব আসাদুজ্জামান আসাদ।