নরসিংদীর মাহফুজুল ইসলাম এবং তার সহকর্মী চারজন বাংলাদেশি নাবিকের জীবন ও মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়েছে কৃষ্ণসাগরে ইউক্রেনের নৌবাহিনীর তীব্র ড্রোন হামলার সময়। এমটি কায়রোস নামের তেল পরিবহনকারী জাহাজটি গত শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) কৃষ্ণসাগরের মাধ্যমে তুরস্কের উপকূলে যাওয়ার সময় লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়।

জাহাজটির চতুর্থ প্রকৌশলী মাহফুজুল ইসলাম প্রথম আলোর সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে বিস্তারিত বর্ণনা দেন,

“হঠাৎ পরপর বিস্ফোরণ। মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে আগুন। লাইফবোটও পুড়ে যায়। চারপাশে তেল ছড়িয়ে পড়ায় সাগরে ঝাঁপ দেওয়ার উপায় ছিল না। প্রচণ্ড ঠান্ডায় জলে নেমেও বাঁচা সম্ভব ছিল না। আমরা মনে মনে শেষবিদায় নিচ্ছিলাম। আরেকজনকে দেখে সহমর্মিতা এবং ভয় একসাথে অনুভব করেছি।”

এই হামলায় এমটি কায়রোসের ২৫ জনের মধ্যে চারজন বাংলাদেশি ছিলেন। তারা হলেন কুষ্টিয়ার আল আমিন, ধামরাইয়ের হাবিবুর রহমান, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের আজগর হোসাইন এবং মাহফুজুল ইসলাম। হামলার সময় ট্যাংকারে প্রায় ১,১৬৩ টন জ্বালানি তেল ছিল। প্রথম হামলা প্রপেলারে আঘাত হানলে জাহাজে তীব্র ঝাঁকুনি এবং ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ১০ মিনিটের ব্যবধানে দ্বিতীয় ড্রোন হামলায় জ্বালানি ট্যাংকারে বিশাল বিস্ফোরণ ঘটে এবং আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

বাঁচার জন্য নাবিকরা দ্রুত ব্রিজে সমবেত হয়, তবে চারপাশে আগুনের কারণে উদ্ধারকর্মীরা সরাসরি লাইফবোটে পৌঁছাতে পারেননি। পরে একটি বাণিজ্যিক জাহাজ এবং তুরস্ক কোস্টগার্ডের তৎপরতায় সবাই নিরাপদে উদ্ধার হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তারা এখন তুরস্কের একটি হোটেলে রয়েছেন।

এই ভয়ঙ্কর ঘটনা বাংলাদেশের নাবিকদের জন্য রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের প্রমাণ, যেখানে গত ২০২২ সালের মার্চেও ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজ ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে হামলার শিকার হয়ে বাংলাদেশি প্রকৌশলী হাদিসুর রহমান নিহত হন।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন জানিয়েছেন, হামলার পর আন্তর্জাতিক সংগঠন ও তুরস্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়, যাতে নাবিকদের জরুরি সহায়তা নিশ্চিত করা যায়। নাবিকরা বর্তমানে নিরাপদে আছেন।

এই ঘটনার ফলে আন্তর্জাতিক জাহাজ চলাচল ও নাবিকদের নিরাপত্তা সম্পর্কে আরও সতর্কবার্তা উচ্চারিত হয়েছে।