পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা

মুখে ন্যায়-নীতির বুলি আর অন্তরে সাম্প্রদায়িক

Thumbnail image

মুখে ন্যায়-নীতির বুলি উড়ানো পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমার অন্তরে কিন্তু সাম্প্রদায়িক। সম্প্রতি তার মন্ত্রণালয় থেকে প্রায় সাড়ে ১৪ কোটি টাকা মূল্যের অর্থ ও খাদ্যশস্য বরাদ্দ তারই প্রমাণ মিলেছে।

পালিয়ে যাওয়া ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার অন্যতম সুবিধাভোগি ছিলেন বর্তমান পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর জনরোষের পড়ার আতংকে বেশ কয়েক দিন আত্মগোপনেও ছিলেন তিনি।

৯ আগস্ট নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে ১৭ সদস্যের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মন্ত্রিসভা গঠিত হলেও সুপ্রদীপ চাকমা শপথ অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত ছিলেন।

অনুসন্ধানের জানা গেছে, ২০২৩ সালের ২৪ জুলাই সাবেক রাষ্ট্রদূত সুপ্রদীপ চাকমাকে সচিব পদ মর্যাদায় দুই বছরের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেন শেখ হাসিনার সরকার। এর আগে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলে সুপ্রদীপ চাকমা মেক্সিকো ও ভিয়েতনামে রাষ্ট্রদূত ছিলেন। এ ছাড়া রাবাত, ব্রাসলস, আঙ্কারা এবং কলম্বোতে বাংলাদেশ মিশনেও তিনি বিভিন্ন পদে কাজ করেছেন সুপ্রদীপ চাকমা।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান হওয়ার পর সুপ্রদীপ চাকমা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জনসম্মুখে প্রায় সময় মুখে বড় বড় নীতি বাক্য উড়াতে দেখা যেত। কখনও কখনও বড়াই করতে নিজের অতীত কর্ম ও পদ-পদবী নিয়ে। ২০২৪ এর ৫ আগষ্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকারের পতনের পরও আত্মগোপনে চলে যান সুপ্রদীপ চাকমা। তবে শেখ হাসিনার সরকারের আমলে অন্যতম সুবিধাভোগী সুপ্রদীপ চাকমা ভাগ্যক্রমে পেয়ে যান প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস-এর নেতৃত্বাধীন অন্তর্বতিকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে ডাক। এ নিয়ে শুরু থেকে সপ্রদীপপ চাকমাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। তার বিতর্কিত কর্মকান্ড নিয়ে খাগড়াছড়িতে বিভিন্ন সংগঠন বিক্ষোভ সমাবেশ ও প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপিও দিয়েছিল।

সুপ্রদীপ চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হওয়ার পর একে একে বিতর্কের জন্ম দিয়ে যাচ্ছেন। অভিযোগ আছে কখনও বাঙালী জাতিগোষ্ঠীকে অপাহাড়ী, কখনও মারমা ও ত্রিপুরা সম্প্রদায় নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে বিতর্কের জন্ম দেয়া সাবেক রাষ্ট্রদূত উপদেষ্টা কোন এক অদৃশ্য শক্তির বলে এখনও বিতর্কিত কর্মকান্ডের পাশাপাশি ও বৈষম্য চালিয়ে যাচ্ছেন।

তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি তিন পার্বত্য জেলায় আপদকালীন বরাদ্দ বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি, আত্মীয়করণ ও অসামঞ্জস্যমূলক বরাদ্দের চিত্র ফুটে উঠেছে। সম্প্রতি খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের অনুকূলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আপদকালীন ৩ কোটি সাড়ে ১২ লাখ টাকার বরাদ্দ দেয়া হয়। ১ শ ৮৫ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে দেয়া এ বরাদ্দে ভুয়া ও নামসর্বস্ব প্রকল্প দেখিয়ে স্বৈরাচারী দোসর জাতীয় পার্টি, নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ পরিবার, আওয়ামীলীগ ঘনিষ্ট ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান বরাদ্দ ভাগিয়েছে। জাতীয় পার্টির জোকার নেতা নজরুল ইসলাম মাসুদ, আওয়ামীলীগ দোসর ত্রিনা চাকমা, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা শাহাদাতে বাবা নুরুচ্ছাফাসহ সুবিধাবাদীরা এ বরাদ্দে ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। এ বরাদ্দ পত্র প্রকাশের মাত্র ২ দিনের মাথায় ১ হাজার ৯ শ ১৩ মেট্টিক টন খাদ্যশষ্য বিতরণের আরেকটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এ বিজ্ঞপ্তিতেও ফুটে উঠে সাম্প্রদায়িকতার অনন্য এক নজির।

পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা কতটা নিচু মনের ও সাম্প্রদায়িক ব্যক্তিত্ব তা উঠে আছে এ বরাদ্দে। ১ হাজার ৯ শ ১৩ মেট্টিক টন খাদ্যশষ্যের মধ্যে চাকমা সম্প্রদায় পেয়েছেন ১ হাজার ৮ শ ১৩ মেট্টিক টন। একশ মেট্টিক টন দেয়া হয়েছে বাঙালীসহ অন্যান্য জাতিগোষ্ঠিদের অনুকূলে। অথচ পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালি,চাকমা,মারমা ও ত্রিপুরাসহ ১৩ টি জাতি-গোষ্ঠীর বসবাস।

সবশেষ বরাদ্দপত্রে ফুটে উঠেছে ভয়ানক সাম্প্রদায়িকতা-স্বেচ্ছাচারিতার চিত্র। চাকমা অধ্যুষিত এলাকায় প্রকল্পে অগ্রাধিকার দেয়ার পাশাপাশি চাকমা সম্প্রদায়ের জনপ্রতিনিধিদের নামে ভুয়া প্রকল্পে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া একই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা পৃথক পৃথক বরাদ্দ পেয়েছেন।

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য আব্দুল লতিফ নিজের দুই সহোদরের নামে প্রকল্প দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। যা পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন ও প্রবিধির সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এ ছাড়া উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমার জন্মস্থান জেলা সদরের কমলছড়ি ইউনিয়নে ভুয়া প্রকল্পে নিজের আত্মীয় স্বজনদের নাম দেয়া হয়েছে।

সবচেয়ে বড় অভিযোগ, নারী উদ্যোক্তাদের উন্নয়নের নাম ভাঙিয়ে ১২ টি প্রকল্পের অনুকূলে মোটা দাগে ২৫ লক্ষ টাকা অর্থ বরাদ্দ পান ত্রিনা চাকমা নামে এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকার। জানা যায়, এ ত্রিনা চাকমা একজন আওয়ামী দোসর ও সহচর। আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে নারী উদ্যোক্তার নাম ভাঙিয়ে এর আগে পার্বত্য জেলা পরিষদ ও জেলা মহিলা কল্যান সংস্থা হতে নামে বেনামে বিপুল পরিমান অর্থ লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে।

এর আগে চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি ১ম পর্যায়ের খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিশেষ প্রকল্পে কর্মসূচি হতে ৭৫১ মে: টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ প্রদান করা হয়। তন্মধ্যে চাকমা সম্প্রদায়ের অনুকূলে ৪শ ৬০মে.টন, মারমা সম্প্রদায়ের অনকূলে ৯২ মে.টন, ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের অনুকূলে ৬৬ মে. টন ও বাঙালি জনগোষ্ঠীর হিন্দু ,বড়–য়া মুসলিম সম্প্রদায়ের অনুকুলে ১৩৩ মে. টন বরাদ্দ দেয়া হয়। । ০হাজার, ৩৬জন বাঙালির মধ্য মুসলিম বাঙালির মধ্য ৪৭লাখ ১০ হাজার টাকা ও হিন্দু সম্প্রদায়ের অনুকূলে মাত্র ১লক্ষ ৩০ হাজার টাকা ও ৭জন ত্রিপুরা উপজাতির বিপরীতে ৯লক্ষ ৮০হাজার টাকা অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়। তালিকা পর্যবেক্ষনে দেখা যায়, মোট বরাদ্দের ৭৩.০৯% চাকমা সম্প্রদায়ের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়।

এর আগে চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি ১ম পর্যায়ের খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিশেষ প্রকল্পে কর্মসূচি হতে ৭৫১মে: টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ প্রদান করা হয়। তন্মধ্যে চাকমা সম্প্রদায়ের অনুকূলে ৪শ ৬০মে.টন, মারমা সম্প্রদায়ের অনকূলে ৯২মে.টন, ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের অনুকূলে ৬৬ মে. টন ও বাঙালি জনগোষ্ঠীর হিন্দু ,বড়–য়া মুসলিম সম্প্রদায়ের অনুকুলে ১৩৩ মে. টন বরাদ্দ দেয়া হয়।

এ সব অনিয়ম, দুর্নীতি ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে পাহাড়ে বসবাসরত অন্যান্য অংশীজনরা। গেল শনিবার প্রশ্নবিদ্ধ এসব বরাদ্দে প্রতিবাদে রাঙামাটিতে উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমার কুশপুত্তলিকা দাহ করেছেন সচেতন ছাত্র জনতা। পরের দিন খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদ, বিক্ষুব্ধ মারমা সমাজ সহ বিভিন্ন সংগঠন। তাদের দাবীর বৈষম্য ও স্বজনপ্রীতি বরাদ্দ বাতিল না হলে পাহাড়ের প্রধান সামাজিক উৎসব বর্জনসহ আরো কঠিন কর্মসূচী ঘোষনার হুমকি দিয়েছে ত্রিপুরা ও মারমা জনগোষ্ঠী।

পার্বত্য চট্টগ্রাম সম-অধিকার আন্দোলন খাগড়াছড়ি শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. আসাদ উল্লাহ বলেন, এসব নিয়ম, দুর্নীতি ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে অচিরেই মাঠে নামা হবে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেয়া উপদেষ্টা ও সচিবদের নাম্বারে একাধিক বার কল করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

দুর্নীতি নিয়ে আরও পড়ুন

সুন্দরবনের আদাচাইরে কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনীর যৌথ অভিযানে দুর্ধর্ষ ডাকাত করিম শরীফ বাহিনীর দুই সদস্যকে অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ আটক করা করেছে।

৯ ঘণ্টা আগে

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক হুইপ ও খুলনা-১ সাবেক সংসদ সদস্য পঞ্চানন বিশ্বাসের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

৪ দিন আগে

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান আন্দোলন চলাকালীন সাভারের আশুলিয়ায় মরদেহ পোড়ানোর ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে।

৪ দিন আগে

নরসিংদী গণপূর্ত বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) মো. ইকরামুল হাসান চৌধুরি যেন টাকার মেশিন। ছোট চাকুরি করেও রাতারাতি শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। ঘুষ নেন অভিনব কায়দায়। থাকেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। নিজেকে আড়াল করে রাখতেই বেশী পছন্দ করেন তিনি। দিনের বেলায় অফিসে আসেন না এই কর্মকর্তা।

৫ দিন আগে