রাজউকের ৪০ কোটির প্লট বেদখলে

১৫ বছর ধরে এই প্লটের দখলে ছিল আওয়ামী সরকারের সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। ৫ আগস্টের পর রাতারাতি মালিক বনে যান ইহসানুল হক।

প্রতিনিধি
বিশেষ প্রতিনিধি
Thumbnail image
সেক্টর-৩, রোড নং-৯ এর ১ নং প্লটটি বেদখলে ৫৩ বছর ধরে-নিখাদ খবর

রাজধানীর উত্তরায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্রায় ৪০ কোটি টাকা মূল্যের একটি প্লট বেদখল হয়ে পড়ে আছে। রাজউকের কিছু অসৎ কর্মকর্তার কারণেই গত ৫৩ বছরেও মূল্যবান এই প্লটটির দখল নিতে পারছেনা রাজউক। এমন অভিযোগ করছেন খোঁদ রাজউকের একাধিক কর্মকর্তা কর্মচারী। স্বাধীনতার পর এপর্যন্ত বার বার এ প্লটটির হাত বদল হয়েছে। কিন্তু অদৃশ্য এক কারণে রাজউক এ প্লটের দখল নিতে পারেনি। সর্বশেষ এই প্লটের দখলে ছিলেন আওয়ামী সরকারের সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু।

এই প্লটে মন্ত্রীর প্রতিষ্ঠান প্রিয় প্রাঙ্গনের সাইনবোর্ডও ছিল দীর্ঘদিন ধরে। প্লটটি নিজের নামে করে নিতে রাজউকের ছোট বড় ও মাঝারি ধাঁচের একাধিক কর্মকর্তাকে একাধিকবার ফোনও দিয়েছিলেন তিনি।

তার ফোনের পর অনেক কর্মকর্তাই চাপে পড়ে যান। সাবেক এই মন্ত্রীর হুমকিতে স্টেট-২ এর তৎকালীন উপ-পরিচালক শফিউল্লাহ তদন্ত না করে জাল নথি তৈরী করেন বলেও জানা গেছে। সেই নথি তৈরীর কারণে তাকে বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যেতে হয়েছে। পরবর্তীতে এই ফাইল আবার অধিক তদন্তের জন্য পিছনে পাঠানো হয়। এরপর সে যাত্রায় আর সফল হতে পারেননি এই প্রতিমন্ত্রী।

রাজউকের নথি ঘেঁটে জানা যায়, ০৩ নম্বর সেক্টরের ৯ নং রোডের ১ নং প্লটের প্রকৃত মালিক ছিলেন এক পাকিস্তানি নাগরিক। তার নাম ফয়েজ আহমেদ। ১৯৬৪ সালে তিনি এই প্লটের বরাদ্ধ পান। স্বাধীনতার পর এই ব্যক্তি পাকিস্তানে ফিরে যান। এরপর ৯ কাঠার এই প্লটটি বিভিন্ন দখলদারদের হাত বদল হয়ে সর্বশেষ সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর দখলে আসে। ৫ আগস্টের পর আর প্রিয়প্রাঙ্গনের সাইনবোর্ড দেখা যায়নি। তবে রাতের আধারে এই প্লটের দখল নেন ইহসানুল হক নামে জনৈক এক ব্যক্তি। তিনি এই প্লটে একটি সাইনবোর্ড ও লাগিয়ে দেন। সাইনবোর্ডে লেখা রাজউক অনুমোদিত আম-মোক্তার নামা সুত্রে এই সম্পত্তির মালিক ইহসানুল হক। এই সাইন বোর্ডে বেশ কয়েকটি টেলিফোন নম্বরও দেয়া আছে। তবে টেলিফোন নম্বরে ফোন করে কাউকে পাওয়া যায়নি।

প্লটের ভিতরে কর্তবরত নিরাপত্তা প্রহরী ইব্রাহিম মিয়া জানান, গত ৩৫ বছর ধরে তিনি এখানে নিরাপত্তার দায়ীত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে বহু মানুষ এ প্লটের মালিক বলে দাবী করেছেন। তবে সঠিক কাগজপত্র কেউ দেখাতে পারেননি। প্রিয় প্রাঙ্গনের সাইনবোর্ড প্রসংঙ্গে জানতে চাইলে এই নিরাপত্তা প্রহরী সাইনবোর্ড থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, তিনি আমাদের মালিকের আত্মীয়। তারা এখানে ভবন নির্মাণ করতে এসেছিলেন। জমিতে মামলা থাকার কারণে তারা চলে গেছেন।

চতুর এই সিকিউরিটি আরো বলেন, জমিতে যেই ঝামেলা আছে তা রাজউক মিটাত পারে। তারা ইচ্ছা করেই ঝামেলা মিটাচ্ছেনা। বর্তমান দখলদার ইহসানুল হক কিভাবে মালিক হয়েছেন বা তার কাছে কোন কাগজ আছে কিনা তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। তবে তিনি শুনেছেন জমির মালিক তাকে পাওয়ার দিয়েছেন। ইহশানুল হকের ফোন নম্বর বা ঠিকানা আছে কিনা জানতে চাইলে এই নিরাপত্তাপ্রহরী এই প্রতিদেককে বলেন, আমার সাথে তার দেখা হয়নি। বেতন ভাতা কোথা থেকে আসে এবিষয়ে জানতে চাইলে সে চটে যায়।

স্থানীয় প্রতিবেশী জানায়, এই প্লটের দখলদার পরিবর্তন হলেও নিরাপত্তা প্রহরীর কোন পরিবর্তন হয়না। দখলদারদের সহযোগী হয়ে তারা একের পর এক নানা সুবিধা নিচ্ছে। নিশ্চয়ই এরাও ভালো মানুষ নয়। তাদেরকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই দখলদারদের রহস্য উম্মোচন হতে পারে। কাগজে কলমে আসলে এই প্লটের মালিক নাই। দীর্ঘদিন প্রিয় প্রাঙ্গন নামের একটি সাইনবোর্ডও সাটানো ছিল এই প্লটে। তবে ০৫ আগস্টের পর রাতারাতি হাওয়া হয়ে উড়ে যায় এই সাইনবোর্ড। নজরে আসে আরেক ভূমি খেকো এহসানুল হকের। দ্রুত দখল নিয়ে নেন দামী এই প। রটটির। দখল পাকা পোক্ত ও দেখবাল করার জন্য নিয়োগ দেন আনসার সদস্য।

রাজউকের ক' তালিকাভুক্ত এই প্লট গত ৫৩ বছরে দখলে কেন নিতে পারেনি সরেজমিনে গিয়ে এই চিত্র তুলে ধরা হলো।

এদিকে রাজউকের উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ-২ এর প্রধান কামরুল ইসলাম নিখাদ খবরকে বলেন, এই প্লটের মালিকানা নিয়ে ঝামেলা রয়েছে। এই প্লটের জন্য সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু আমাকে ফোন দিয়েছিল। তখনই আমি বুঝতে পারি এটাতে বড় ধরণের ঝামেলা আছে। পরে তিনি উপপরিচালক সফিউল্লাকে ভালো করে যাচাই বাছাই করে রিপোর্ট দিতে বলেন। সফিউল্লাহ বায়াস্ট হয়ে দ্রুত রিপোর্ট দিয়ে মালিকানা প্রুভ করে দেয়ার চেষ্টা করে। সাধারণত উপপরিচালকরাই এ কাজটি করে থাকেন বলে জানান কামরুল।

কিন্তু উপপরিচালক একাজ করার পর তার সন্দেহ হলে তিানি তার কাছে বিষয়টি জানতে চান। তখন ডিডি তাকে জানান, এক পক্ষের বাসায় গিয়ে কাগজপত্র যাচাই বাছাই করেই রিপোর্ট দিয়েছেন তিনি। এরপর তিনি ডিডিকে বললেন আপনাকে বললাম স্লো করতে আর আপনি দ্রুত রিপোর্ট দিয়ে দিলেন। ডিডি তখন উত্তরে বলেছিল স্যার আমি লোড নিতে পারছিলাম না। তখন এই ফাইল অধিকতর তদন্তের জন্য বেকে পাঠান। এরই মধ্যে এই ডিডির অন্যত্র বদলি হয়। পরে ওই পক্ষটি মালিকানা দাবি করতে চিইলে আমরা মালিকানা যাচাইয়ের জন্য সিআইডিকে চিঠি দেই। সিআইডি এখনো পর্যন্ত চিঠির কোন উত্তর দেয়নি। সুতরাং কোন ব্যক্তিই এই প্লটের মালিকানা দাবী করলে তা সঠিক হবেনা। তবে ৫৩ বছর ধরে কেন এই প্লটটির ঝামেলা নিস্পত্তি করা গেলোনা এ বিষয়ে এই কর্মকর্তা কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

দুর্নীতি নিয়ে আরও পড়ুন

সুন্দরবনের আদাচাইরে কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনীর যৌথ অভিযানে দুর্ধর্ষ ডাকাত করিম শরীফ বাহিনীর দুই সদস্যকে অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ আটক করা করেছে।

১ দিন আগে

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক হুইপ ও খুলনা-১ সাবেক সংসদ সদস্য পঞ্চানন বিশ্বাসের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

৪ দিন আগে

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান আন্দোলন চলাকালীন সাভারের আশুলিয়ায় মরদেহ পোড়ানোর ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে।

৪ দিন আগে

নরসিংদী গণপূর্ত বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) মো. ইকরামুল হাসান চৌধুরি যেন টাকার মেশিন। ছোট চাকুরি করেও রাতারাতি শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। ঘুষ নেন অভিনব কায়দায়। থাকেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। নিজেকে আড়াল করে রাখতেই বেশী পছন্দ করেন তিনি। দিনের বেলায় অফিসে আসেন না এই কর্মকর্তা।

৬ দিন আগে