আশাশুনিতে সজনের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা

বাণিজ্যিক ভাবে সজনে উৎপাদন করতে পারলে চাষিরা লাভবান হবে

প্রতিনিধি
সাতক্ষীরা
Thumbnail image

সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার প্রতিটা রাস্তার দুই ধারে সজনের বাম্পার ফলন চোখে পড়ার মতো। উৎপাদন খরচ ও পরিচর্যা কম বলেই সজনে চাষে আগ্রহী চাষিরা। উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে এখানকার উৎপাদিত সজনে এখন দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়।

প্রতিদিন পাইকারী ব্যবসায়ীরা উপজেলার বিভিন্ন বাজার থেকে সজনে ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যায়। মৌসুমের শুরুতে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে সজনে বিক্রয় হচ্ছে বলে জানিয়েছে ক্রেতারা। তবে কিছু দিন পরে তা কমে ৭০ থেকে ৮০ টাকায় এসে দাঁড়াবে। স্বাদে ও গুণে ভরপুর এ সবজিটি সকলের কাছে খুব প্রিয় হয়ে উঠেছে। গ্রাম পর্যায়ে সজনের ব্যাপক চাষ হয়ে থাকে। এছাড়া জমির আইল, সড়কের ধার, অনাবাদি জমিতে সজনের চাষ হয় প্রচুর পরিমাণে। তবে বাণিজ্যিক ভাবে সজনে উৎপাদন করতে পারলে অন্যান্য যে কোন সবজি উৎপাদনের থেকে এটি লাভ জনক বেশি হবে।

ইংরেজীতে সজনের নাম ‘ড্রামস্ট্রিক’ যার অর্থ ঢোলের লাঠি। সজনের ইংরেজী নামটি অদ্ভুত হলেও এটি একটি অতি প্রয়োজনীয় জীবন রক্ষাকারী উদ্ভিদ। বাংলাদেশে এটি নিয়ে তেমন গবেষণা না হলেও বিশ্বের বহু দেশে এ নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। বিশেষ করে সজনে গাছ, বৃদ্ধিকারক হরমোন, ঔষধ, কাগজ তৈরী ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। বহুদিন হতেই আমাদের দেশে এটি সবজির পাশাপাশি ঔষধ হিসেবে ব্যবহারিত হয়ে আসছে। সজনের ফুল ও পাতা শুধু শাক হিসেবেই নয়, পশু খাদ্য হিসেবেও ব্যবহার হয়ে থাকে। এর পাতা শারীরিক শক্তি ও আহারের রুচির উন্নতি হয়। এর মধ্যে আছে ভিটামিন এ, বি, সি, নিকোটিনিক এসিড, প্রোটিন ও চর্বি জাতীয় পদার্থ, কার্বোহাইড্রেট ইত্যাদি। অনেকে আবার এটির স্যুপ তৈরি করে খেয়ে থাকে। এ সময়ে ঋতু পরিবর্তনের কারণে অনেকেরই মুখে স্বাদ থাকে না। আর এ স্বাদকে ফিরিয়ে আনতে সজনের জুড়ি নেই। সজনের ফুল সর্দি কাশিতে, যকৃতের কার্যকারিতায়, কৃমি প্রতিরোধে এবং শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। সজনের ডাটাতে প্রচুর এমাইনো এসিড আছে। সজনের বীজ থেকে তেলও পাওয়া যায়, যা বাতের ওষুধ তৈরির কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে এবং ঘড়ি ঠিক করার জন্য যে বেল ওয়েল ব্যবহার হয় তা এর বীজ হতে পাওয়া যায়। ২০ হতে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সজনে ভাল জন্মায় এবং যেসব এলাকায় ২৫০ হতে ১৫০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয় সেখানে ভাল জন্মায়। বেলে দোঁআশ হতে দোঁআশ এবং পিএইচ ৫.০ হতে ৯.০ সম্পন্ন মাটি সহ্য করতে পারে।

সজিনা চাষে সারের তেমন প্রয়োজন হয়না। তবে ইউরিয়া এবং জৈব সার প্রয়োগ করলে গাছ ভাল হয়। সজিনা বৃক্ষটি বীজ ও ডাল এর মাধ্যমে বংশ বিস্তার করে। তবে সাতক্ষীরা জেলায় ডাল পুঁতে অঙ্গজ বংশ বিস্তারের মাধ্যমে সজিনার চাষ হয়। খাদ্যের পুষ্টিগুণ অনুযায়ী সজিনাতে প্রতি ১০০ গ্রামে খাদ্যপোযোগী পুষ্টি উপাদান হচ্ছে জ্বলীয় অংশ ৮৩.৩ গ্রাম, খনিজ ১.৯ গ্রাম, আঁশ ৪.৮ গ্রাম, খাদ্যশক্তি ৬০ কিলোক্যালোরি, প্রোটিন ৩.২ গ্রাম, চর্বি ০.১ গ্রাম, শর্করা ১১.৪ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২১.০ মিলি গ্রাম, লোহা ৫.৩ মিলি গ্রাম, ক্যারোটিন ৭৫০ মাইক্রো গ্রাম, ভিটামিনএ ০.০৪ মিলি গ্রাম, ভিটামিন বি (১)০.০২ মিলি গ্রাম, ভিটামিন ৪৫.০ মিলি গ্রাম।

সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানাগেছে, সজিনা একটি লাভ জনক সবজি। রোগ বালাই প্রায় নেই এবং উৎপাদন খরচ খুব কম। তাই কৃষকদের সজিনা চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। সজিনা উৎপাদনকারীদের বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। বাণিজ্যিক ভাবে সজিনা চাষে কৃষকদের আগ্রহী করে তুলতে কৃষি কর্মকর্তারা নানা মুখি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সুস্থতা নিয়ে আরও পড়ুন

জাম্বুরা একটি জনপ্রিয় এবং পুষ্টিগুণে ভরপুর ফল, যা দেশের প্রায় সব স্থানেই পাওয়া যায়। এটি ভিটামিন সি, ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের একটি ভালো উৎস। সাধারণত এটি বিভিন্ন মসলা দিয়ে চাটনি করে অথবা এমনিতেই খাওয়া হয়। তবে যেকোনো খাবারের মতোই জাম্বুরার কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে, যা সবার জন্য উপয

১৭ দিন আগে

ভালো ফল পেতে প্রথম সপ্তাহে প্রতিদিনই ব্যবহার করুন। দ্বিতীয় সপ্তাহে ৩-৪ বার। তৃতীয় সপ্তাহে ২-৩ বার। এভাবে পরবর্তী সপ্তাহগুলোতে ২ দিন করে ব্যবহার করুন। ১ ঘণ্টা তেল লাগিয়ে এরপর ধুয়ে ফেলুন। এই এক ঘণ্টার মধ্যে সম্ভব হলে দুবার মালিশ করুন

১৮ দিন আগে

তখন তো ফেসবুক ছিলো না। লেখা ভাইরাল কিনা সেটা বোঝারও উপায় ছিলো না। কিন্তু মিরপুর থেকে যখন কারওয়ানবাজারগামী বাসে উঠতাম, তখন দেখতাম, বাসের লোকজন প্রথম আলো পত্রিকা খুলে ঠিক আমার লেখাটাই পড়ছে। তাদের চোখেমুখে আনন্দের আভা।

১৮ দিন আগে

সবজি হোক বা বাটা মসলা সব কিছু সংরক্ষণের কিছু নিয়ম আছে। নিয়ম না মেনে দীর্ঘ দিন পর্যন্ত ফ্রিজে তা রাখলে ছত্রাকের সংক্রমণ ঘটতে পারে

২৪ দিন আগে