৫০ বছরেও উদ্ধারে নেই কোনো তৎপরতা
মোঃ মাজহারুল পারভেজ
রাজধানীতে সরকারের প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার বাড়ি বেদখলে পড়ে আছে। গত ৫০ বছরেও দখলমুক্ত করতে পারছে না কোনো সরকার। সরকার বদলের পাশাপাশি বাড়িগুলোর হাতবদল হলেও সরকারের হাতে আর ফিরে আসছে না। অথচ ইচ্ছা করলেই দখলমুক্ত করে সরকার এ সম্পদ হাতে নিতে পারে। কিন্তু কেন নিচ্ছে না, এ বিষয়ে খোঁজখবর নিতে গিয়ে চাঞ্চ্যলকর তথ্য বের হয়ে আসছে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও গণপূর্তের কর্মকর্তারাই কোনো না কোনোভাবে এ চক্রের সঙ্গে জড়িত। সে কারণে দীর্ঘদিন হলেও এ বাড়িগুলো উদ্ধার করতে পারছে না। এতে করে রাষ্ট্রের বিশাল এই সম্পত্তি ভোগ করছে দখলদাররা।
সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায়,গুলশান শুটিং ক্লাব মাঠের ঠিক উত্তর পাশে বিশালাকৃতির প্লটে একটি বাড়ি। হোল্ডিং নম্বর SW(H)-7 এর ২/১। বাড়ির দেয়ালে খোদাই করে লেখা রয়েছে মেজর আরিফ (অবসরপ্রাপ্ত)। প্রধান ফটকের ‘দি স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার্স লি.-এর সাইনবোর্ড শাটানো। এমন ১টি কিংবা ২টি নয়, গ্লোরিয়া জিন্স ও ফ্লেমিং রেস্তোরাঁর মতো আরও ৩৮টি বাড়ি রয়েছে রাজধানীর অভিজাত এলাকায়। সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে দখলদারদের হাত বদল হচ্ছে। কিন্তু রাজউকের হাতে আসছে না এসব বাড়ি। এসব বাড়ির অনুমানিক মূল্য এখন প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। দখলদারদের তালিকায় রয়েছেন ডেভেলপার কোম্পানি,সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর, ব্যবসায়ী, রাজনীতিক ও মুক্তিযোদ্ধারা। তবে রাজউকে তালিকায় দখলদার হিসেবে যাদের দেখানো হয়েছে অধিকাংশ বাড়িতে গিয়ে তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। পাওয়া যায়নি তাদের কোনো স্বজনের সন্ধানও।
স্বাধীনতার পর ৫৩ বছরে বহুবার হাতবদল হয়েছে বিতর্কিত এই ৩৯ বাড়ি। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে অবহেলা ও অনাদরে পড়ে থাকায় কিছু বাড়ি বসবাসের উপযোগিতা হারিয়েছে। বেদখল হওয়া এই বাড়িগুলোর ৩১টি গুলশানের বিভিন্ন এলাকায়। বনানীতে ৫টি, দিলকুশায় ১টি ও মহাখালীতে দুটি বাণিজ্যিক ভবন রয়েছে। বাড়িগুলো সরকারের জিম্মায় না আসার জন্য খোদ গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউকের একটি শক্তিশালী চক্র জড়িত বলে জানা গেছে। বাড়িগুলোর দখল ফিরে পেতে সরকার কমিটি গঠন করলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
রাজউকের এক প্রভাভশালী পরিচালক নিখাদ খবরকে বলেন, এ বিতর্কিত বাড়িগুলো উদ্ধারের জন্য গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে প্রধান করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে কমিটির সদস্যসরা বাড়িগুলো পরিদর্শন করে খোঁজখবর নিয়েছেন। এর বেশি কিছু আর জানি না।
স্বাধীনতার পর গত ৫৩ বছরেও কেন বাড়িগুলো দখলমুক্ত করা গেল না, এ বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিবের কাছে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, সরকারের শত শত কোটি টাকার সম্পত্তি বেদখলে থাকবে কেন? আসলে এটার মধ্যে একটা মিক্সাস আছে। দখলদার তো আর একা নয়। জায়গা নেই বলে এই মুহূর্তে সরকার বিভিন্ন রকম নগর সুবিধা তৈরি করতে পারছে না বলে চিৎকার করছে। এসব ভবন উদ্ধার করে জমির টাকা দিয়ে একটা ফান্ড গঠন করতে পারে। এই ফান্ড দিয়ে যারা নগর সুবিধা বঞ্চিত, তাদের সুবিধা দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। এ ছাড়া এই বাড়িগুলো উদ্ধার করার জন্য যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তাদেরও গাফিলতি রয়েছে বলে মনে করেন এই নগরবিদ। তাদের বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি। রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা করার জন্যই তারা বেতনভুক্ত কর্মকর্তা বা কর্মচারী। এই দায়িত্ব যদি প্রতিপালন করতে তারা না পারেন, তাহলে তো জবাবদিহিতা থাকতে হবে। এই জটিল অঙ্কে যারা জড়িত বা দায়িত্বে অবহেলা করেছেন. তাদের প্রত্যেককে দায়মুক্ত আচরণে বাধ্য করতে হবে।
এদিকে রাজউকের নথি ঘেঁটে দেখা গেছে, বাড়িগুলো উদ্ধার করার জন্য আওয়ামী সরকার ২০২০ সালের জুন মাসে একজন অতিরিক্ত সচিবকে প্রধান করে ৫ সদস্যবিশিষ্ট উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করেছিল। এ কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে (উন্নয়ন অনুবিভাগ-১)। পরে ২০২৩ সালের ১১ জুলাই সৈয়দ মামুনুল আলম এ কমিটির সভাপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ৪টি সভা করা ছাড়া তিনি আর কোনো সফলতা দেখাতে পারেননি।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও রাজউকের একাধিক কর্মককর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, দখলদারেদের হাতে বাড়ির মালিকানার পক্ষে কোনো কাগজপত্র নেই। ১৬ আনা ডকুমেন্টসই সরকারের হাতে রয়েছে। তারপরও কেবল বড় কর্তাদের ম্যানেজ করে বাড়িগুলো দখলে রেখেছে দখলদাররা। এভাবে দখলে রেখে ৫০ বছরে অবৈধ দখলদাররা এ বাড়ি থেকে আয় করছেন কোটি কোটি টাকা।
বাড়িগুলো যারা দখল করে রেখেছেন, এর মধ্যে গুলশানে ৩১ জন। তাদের মধ্যে রাজউকের দখলদারদের তালিকায় মো. ওহীদুল নবীর দখলে আছে ব্লক CEN(B)-17 ও ৯৬/৯১ রোডের ১৯ নম্বর প্লট । ব্লক SWC(02) ১৩নং রোডের ২নং প্লট দখল করে রেখেছেন আ. জব্বার। ব্লক CEN(D)-20 রোড নং ১০১/১০১-এর ১৩নং প্লট দখল করেছেন নেছার মোহাম্মদ খান।
১০৮ নম্বর রোডের ১৮/ডি (নতুন) ১৪নং প্লট দখল করে আছেন টিএ খান। CEN(G)-16/B ১০৮ নম্বর রোডের ১নং প্লটটি দখল করে রেখেছেন আরিফুল হাসান। CEN(H)-০4 ১০৯ নম্বর রোডের ৪ নম্বর প্লট দখল করে রেখেছেন মো. শাহাবুদ্দিন। CEN(H)-32 এবং রোড নং ১১৫ এর ১০ নম্বর প্লট দখলে আছে হারুন নেছার। CES(A)-47 এর রোড নং ১১৬ এর ৯নং প্লট দখল করে রেখেছেন বিলকিস বানু (সাবেক অর্থ মন্ত্রীর ছেলে)। CES(F)-02-এর GA রোডের ১১৩নং বাড়ি দখল করে রেখেছেন নীঘাত পারভীন। CWN(A)-01 01 নং প্লটের বাড়িটি দখল করে রেখেছেন আসাদুজ্জামান ও শওকত আলী চৌধুরী। CWN(A)-02-এর ৪৯ নম্বর রোডের ১ নম্বর প্লটের বাড়টি দখল করে রেখেছেন এসএম তাকী ও হীন কোরাইশী। CWN(A)-18A/B এর ৪৭/৪৮ রোডের ২ নম্বর প্লটটি দখলে রেখেছেন রৌশন আরা বেগম। CWN(A)-43-এর রোড নং ৪১ এর ৬ নম্বর প্লটটি দখলে রেখেছেন হাবিব সুলতানা জায়েদী (ফালু)। CWN(B)-06 এর ৪৪নং রোডের ৩০/এ প্লটটি দখলে রয়েছে মোক্তার আহম্মদ আনসারীর হাতে। CWN(B-)28-এর GA ৪৪ এর ১১৯নং প্লটটি দখলে রেখেছেন হোসনে আরা বেগম। CWN(B)-34 গ রোডের ১১৩নং প্লটটি দখলে রেখেছেন এসকে রেজা চৌধুরী। CWN(C)-০৩ এর GA রোডের ১০৫নং প্লট এর দখল রয়েছে মুস্তারী বেগমের হাতে। CWSA-08 এর রোড নং GA এর ৭৯ নম্বর বাড়ির দখল রয়েছে জনৈক আব্দুলার ভাইয়ের হাতে।
১৬/২১নং রোডের ব্লক নং CWS(C)-05-এর ৬ নম্বর প্লটটি রয়েছে শামসুল হকের হাতে। ৭১/৭৪ নং রোডের ব্লক নং NE(B)-1/A এর ৯ নম্বর প্লটের দখলে রয়েছেন ইউসুফ আলী খান। ৮৭নং রোডের ব্লক নং NE(M)-04 এর ৪ নম্বর প্লট রয়েছে এমএ ছাত্তারের হাতে। ৫৯নং রোডের ব্লক নং NW(E)-02 এর ১৯ নম্বর বাড়ির দখলে রয়েছেন হাফিজা বেগম।
৫৪ নম্বর রোডের ব্লক নং NW(I)-03 এর ১৩ নম্বর প্লট রয়েছে আব্দুল মালেকের হাতে। ৫৩ নম্বর রোডের ব্লক নং NW(I)-06 ১২ নম্বর প্লট রয়েছে মাহবুব আনামের হাতে। তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিলাসবহুল এই দ্বিতল বাড়ির পুরোটাজুড়েই ফ্লেম্বি রেস্টুরেন্টের দখলে।
৫০নং রোডের ব্লক নং NW(K)-11-এর ১৯ নম্বর প্লটটি কাগজে কলমে মোস্তফা হায়দারের নামে থাকলেও দখলে রয়েছেন শেকান্দর আলী নামে এক মুক্তিযোদ্ধা। মূল্যবান এই বাড়ি দখলে রাখার জন্য এখানে ছোট ছোট দোকান করা হয়েছে। ভেতরে ইট-বালু মজুত রেখে ব্যবসা করা হয়। তারপরও মাসে ভাড়া আসে দেড় লাখ টাকা।
GA/১১ নম্বর রোডের ব্লক নং SW(A)-29-এর ৩৫ নম্বর প্লট দখলে রেখেছেন সাবেক আইজি আফসার উদ্দিন। বর্তমানে এখানে গ্লোরিয়া জিন্স-এর খাবারের দোকান। গ্লোরিয়ার মালিক নাভানা রিয়েল এস্টেট। রাজধানীর বিত্তশালীরা এখানে আহার করে থাকেন। প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার শুভর কাছে এই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নাভানা গ্রুপ এই বাড়ি ভাড়া নিয়ে এই প্রতিষ্ঠান করেছে। তবে কার কাছ থেকে ভাড়া নিয়েছে, তা তিনি বলতে পারেননি। এমনকি ভাড়া নেওয়ার কোনো ডকুমেন্টসও তিনি দেখাতে পারেননি। তার মালিকের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, এমডি স্যার বর্তমানে আমেরিকায় আছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাকিস্তান আমলে পুলিশের সাবেক আইজিপি আফসার উদ্দিন এ বাড়িতে থাকতেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এ পর্যন্ত হাত বদল হতে হতে এখন নাভানার হতে।
পাশের একই রোডের ব্লক নং SW(A)-30 এর ৩ নম্বর প্লট দখলে সৈয়দ আহমেদ হাসমীর নাম থাকলেও প্রকৃতপক্ষে বিশাল বাড়িটির দখলে আছে বিএনএস রিয়েল এস্টেটের স্বত্বাধিকারী এম এন এইচ ব্লু। বাড়িটির ভেতরে গোডাউন ও রাস্তার পাশে রেস্তোরাঁসহ ৮-১০টি দোকান রয়েছে। দোকানের সামনে হলুদ ব্যানারে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি রযেছে। ব্যানারে লেখা অর্থজারী মোকদ্দমা নং ৩৭৯/২০১৯ ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, মতিঝিল শাখা, ঢাকা বাদী/ডিক্রিদার। বনাম প্রোপেল ইন্টার ন্যাশনাল লি: গং বিবাদী। গত ২৮ নভেম্বর ২০২০ তারিখে ১৩ কাঠা ৯ ছটাক জমি নিলামে ক্রয় করেন। আসলে এ-সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র তারা দেখাতে পারেননি। রেস্তোরাঁসহ একাধিক দোকানি জানান, পাশেই গুলশান কাঁচাবাজারের চেয়ারম্যান দ্বীন মোহাম্মদের কাছ থেকে তারা এ দোকানগুলো ভাড়া নিয়েছেন। নথি ঘেঁটে দেখা যায়, এই বাড়ির প্রকৃত মালিক ছিলেন পাকিস্তানি নাগরিক সৈয়দ আহমেদ হাসমী। স্থানীরা জানান, গত ৫ বছর আগেও বিএনপি নেতা ফারুক মোল্লার দখলে ছিল এই বাড়ি।
১৪নং রোডের ব্লক নং SW(C)-13 এর ৪নং প্লটে ফাতেমা জোহুরার নাম থাকলেও তাদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। এলাকায় এটি ভূতুড়ে বাড়ি হিসেবে পরিচিত। বাড়ির প্রধান ফটকে বাংলায় ও ইংরেজিতে লেখা রয়েছে এই বাড়ি বিক্রি হবে না। কলিং বেল চাপলে বাড়ির ভেতর থেকে এক নিরাপত্তা প্রহরী বাইরে এসে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এই বাড়িতে বেশকিছু যুবককে হাঁটাহাঁটি করতে দেখা গেছে। তাদের সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রহরী জানান, তারা একটি ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির লোক। দীর্ঘদিন ধরে তারা এখানেই থাকে।
গুলশান-১ শুটিং ক্লাবের ঠিক উত্তরে SW(H)-7 এর ২ নম্বর রোডের ১ নম্বর প্লট। দেয়ালে খোদাই করে লেখা রয়েছে মেজর আরিফ (অবসরপ্রাপ্ত)। বিশাল এই বাড়িতে ৩০ বছর ধরে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করছেন এক বৃদ্ধ। নাম জানতে চাইলেই তিনি চটে যান। এই বাড়ির প্রধান ফটকের ওপরে দি স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার্স লি:-এর সাইনবোর্ড শাটানো রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এই বৃদ্ধ বলেন, তারা এখানে বহুতল ভবন করবে। জায়গার মালিকের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। মালিক কে এবং কোথায় আছে জানতে চাইলে এই বৃদ্ধ বিরক্তির সুরে বলেন, আপনাকে বলতে হবে কেন? তিনি ৩টা গার্মেন্টসের মালিক। তিনি কি এখানে থাকবেন? তবে রাজউকের তালিকায় বাড়িটি রৌশনারা বেগমের নামে রয়েছে।
৪৬ ও ৫২ নং রোডের GN C/A-45-এর ২৭ নম্বর প্লটের দখলে রয়েছেন মো. নাঈম। ৯৩ নম্বর রোডের ব্লক নং ও CEN(A)-15/C প্লট দখলে আছেন এমএম জলিল খান। তাদের বাড়িতে পাওয়া যায়নি। আশপাশের লোকজন তাদের নাম শোনেননি বলে জানান। গুলশানের এসব বাড়িতে দিনের বেলায় লোকজনকে যাতায়াত করতে দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন প্রতিবেশীরা।
বনানীতে রয়েছে আরও ৫টি বাড়ি। ৬নং রোডের ব্লক নং C-94-এর ৬ নম্বর প্লটটি দখল করে রেখেছেন মো. নেহাল উদ্দিন। ১৩ নম্বর রোডের ব্লক নং D-47-এর ২৫ নম্বর প্লট দখল করে রেখেছেন আবসার আলম ওসমানী। ১৭.এ ১২ নম্বর রোডের ব্লক নং E-38-এর ১২ নম্বর প্লট দখল করে রেখেছেন মো. আইয়ুব আনসারী। ৩ নম্বর সড়কের ব্লক নং 1-14 এর ২৮ নম্বর প্লট দখল করে রেখেছেন ওয়াহিদুর রহমান। ও ৭ নম্বর সড়কের ব্লক নং G-23এর ৩১ নম্বর প্লট দখল করে রেখেছেন সাইদ নুরুল গনি । তবে এ বাড়িতে গিয়ে এই নামে কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
দিলকুশায় একটি ও মহাখালীতে রয়েছে আরও দুটি ভবন। ভবনগুলো দিলকুশা Dilkusha-22 আব্দুল জলিল, 60 বাণিজ্যিক ভবন মেহেরুন্নেসা গং ও Mahakhali-54 ইউনাইটেড ট্রেডিং কর্পোরেশনের দখলে রয়েছে।
এ বিষয়ে কমিটি প্রধান সৈয়দ মামুনুল আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে এ কমিটি কাজ করেনি। আমরা কাজ করছি। তালিকায় ৩৯টি থাকলেও আমরা কাজ করছি ৩১টি বাড়ি নিয়ে। ইতোমধ্যে ফুল কমিটি ৩১টি বাড়িতেই দুইবার করে পরিদর্শন করেছি। ৬০-৬২ বছর ধরে অবহেলায় পড়ে থাকা এসব বাড়ির কোথাও কোনো কাগজপত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি। দুই চার জন ছাড়া এই বাড়ির প্রকৃত মালিক কেউ নেই। প্রত্যেকটি বাড়িই এক বিঘার উপরে। পাকিস্তান আমলে এত বিশাল বাড়ি কোন বাঙালির থাকার প্রশ্নই আসে না। অথবা যুদ্ধের সময় এত বড় বাড়ি কেনারও ক্ষমতা ছিল না বাঙালিদের। ৭১-৭২ এ দেশে কোটিপতির সংখ্যা ছিল মাত্র ৫ জন। ৬ কোটি মানুষের সকালে খেলে দুপুরে খাওয়ার নিশ্চয়তা ছিল না। তাহলে সেই সময়ে অবাঙালিদের কাছ থেকে এতগুলো বাড়ি ক্রয় করাও সম্ভব নয়। তাহলে এত বছর ধরে কীভাবে বাড়িগুলো দখল করে রেখেছে, এসব বিষয়ে জানার জন্য দখলদারদের কোনো নোটিশ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে সরকারের উচ্চপদস্থ এই কর্মকর্তা বলেন না, আমরা সেদিকে যাইনি। তবে আমি এ কমিটির সভাপতি হওয়ার পর বেশ কিছু দখলদার আমার সাথে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করেছেন। তাদের মধ্যে আমার দু-একজন বন্ধুও রয়েছেন। তারা খুবই প্রভাবশালী। তবে এ বিষয়ে তাদের আমি কোনো সহায়তা করতে পারব না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছি। সরকার এ বাড়িগুলো ফেরত পাবে কিনা জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা নিশ্চিত করে বলেন, অবশ্যই পাবে। পাবে না কেন? তবে ৫০ বছরে ধরে ফেরত পেল না কেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন,এ বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারবেন না।
রাজধানীতে সরকারের প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার বাড়ি বেদখলে পড়ে আছে। গত ৫০ বছরেও দখলমুক্ত করতে পারছে না কোনো সরকার। সরকার বদলের পাশাপাশি বাড়িগুলোর হাতবদল হলেও সরকারের হাতে আর ফিরে আসছে না। অথচ ইচ্ছা করলেই দখলমুক্ত করে সরকার এ সম্পদ হাতে নিতে পারে। কিন্তু কেন নিচ্ছে না, এ বিষয়ে খোঁজখবর নিতে গিয়ে চাঞ্চ্যলকর তথ্য বের হয়ে আসছে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও গণপূর্তের কর্মকর্তারাই কোনো না কোনোভাবে এ চক্রের সঙ্গে জড়িত। সে কারণে দীর্ঘদিন হলেও এ বাড়িগুলো উদ্ধার করতে পারছে না। এতে করে রাষ্ট্রের বিশাল এই সম্পত্তি ভোগ করছে দখলদাররা।
সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায়,গুলশান শুটিং ক্লাব মাঠের ঠিক উত্তর পাশে বিশালাকৃতির প্লটে একটি বাড়ি। হোল্ডিং নম্বর SW(H)-7 এর ২/১। বাড়ির দেয়ালে খোদাই করে লেখা রয়েছে মেজর আরিফ (অবসরপ্রাপ্ত)। প্রধান ফটকের ‘দি স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার্স লি.-এর সাইনবোর্ড শাটানো। এমন ১টি কিংবা ২টি নয়, গ্লোরিয়া জিন্স ও ফ্লেমিং রেস্তোরাঁর মতো আরও ৩৮টি বাড়ি রয়েছে রাজধানীর অভিজাত এলাকায়। সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে দখলদারদের হাত বদল হচ্ছে। কিন্তু রাজউকের হাতে আসছে না এসব বাড়ি। এসব বাড়ির অনুমানিক মূল্য এখন প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। দখলদারদের তালিকায় রয়েছেন ডেভেলপার কোম্পানি,সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর, ব্যবসায়ী, রাজনীতিক ও মুক্তিযোদ্ধারা। তবে রাজউকে তালিকায় দখলদার হিসেবে যাদের দেখানো হয়েছে অধিকাংশ বাড়িতে গিয়ে তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। পাওয়া যায়নি তাদের কোনো স্বজনের সন্ধানও।
স্বাধীনতার পর ৫৩ বছরে বহুবার হাতবদল হয়েছে বিতর্কিত এই ৩৯ বাড়ি। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে অবহেলা ও অনাদরে পড়ে থাকায় কিছু বাড়ি বসবাসের উপযোগিতা হারিয়েছে। বেদখল হওয়া এই বাড়িগুলোর ৩১টি গুলশানের বিভিন্ন এলাকায়। বনানীতে ৫টি, দিলকুশায় ১টি ও মহাখালীতে দুটি বাণিজ্যিক ভবন রয়েছে। বাড়িগুলো সরকারের জিম্মায় না আসার জন্য খোদ গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউকের একটি শক্তিশালী চক্র জড়িত বলে জানা গেছে। বাড়িগুলোর দখল ফিরে পেতে সরকার কমিটি গঠন করলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
রাজউকের এক প্রভাভশালী পরিচালক নিখাদ খবরকে বলেন, এ বিতর্কিত বাড়িগুলো উদ্ধারের জন্য গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে প্রধান করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে কমিটির সদস্যসরা বাড়িগুলো পরিদর্শন করে খোঁজখবর নিয়েছেন। এর বেশি কিছু আর জানি না।
স্বাধীনতার পর গত ৫৩ বছরেও কেন বাড়িগুলো দখলমুক্ত করা গেল না, এ বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিবের কাছে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, সরকারের শত শত কোটি টাকার সম্পত্তি বেদখলে থাকবে কেন? আসলে এটার মধ্যে একটা মিক্সাস আছে। দখলদার তো আর একা নয়। জায়গা নেই বলে এই মুহূর্তে সরকার বিভিন্ন রকম নগর সুবিধা তৈরি করতে পারছে না বলে চিৎকার করছে। এসব ভবন উদ্ধার করে জমির টাকা দিয়ে একটা ফান্ড গঠন করতে পারে। এই ফান্ড দিয়ে যারা নগর সুবিধা বঞ্চিত, তাদের সুবিধা দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। এ ছাড়া এই বাড়িগুলো উদ্ধার করার জন্য যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তাদেরও গাফিলতি রয়েছে বলে মনে করেন এই নগরবিদ। তাদের বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি। রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা করার জন্যই তারা বেতনভুক্ত কর্মকর্তা বা কর্মচারী। এই দায়িত্ব যদি প্রতিপালন করতে তারা না পারেন, তাহলে তো জবাবদিহিতা থাকতে হবে। এই জটিল অঙ্কে যারা জড়িত বা দায়িত্বে অবহেলা করেছেন. তাদের প্রত্যেককে দায়মুক্ত আচরণে বাধ্য করতে হবে।
এদিকে রাজউকের নথি ঘেঁটে দেখা গেছে, বাড়িগুলো উদ্ধার করার জন্য আওয়ামী সরকার ২০২০ সালের জুন মাসে একজন অতিরিক্ত সচিবকে প্রধান করে ৫ সদস্যবিশিষ্ট উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করেছিল। এ কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে (উন্নয়ন অনুবিভাগ-১)। পরে ২০২৩ সালের ১১ জুলাই সৈয়দ মামুনুল আলম এ কমিটির সভাপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ৪টি সভা করা ছাড়া তিনি আর কোনো সফলতা দেখাতে পারেননি।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও রাজউকের একাধিক কর্মককর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, দখলদারেদের হাতে বাড়ির মালিকানার পক্ষে কোনো কাগজপত্র নেই। ১৬ আনা ডকুমেন্টসই সরকারের হাতে রয়েছে। তারপরও কেবল বড় কর্তাদের ম্যানেজ করে বাড়িগুলো দখলে রেখেছে দখলদাররা। এভাবে দখলে রেখে ৫০ বছরে অবৈধ দখলদাররা এ বাড়ি থেকে আয় করছেন কোটি কোটি টাকা।
বাড়িগুলো যারা দখল করে রেখেছেন, এর মধ্যে গুলশানে ৩১ জন। তাদের মধ্যে রাজউকের দখলদারদের তালিকায় মো. ওহীদুল নবীর দখলে আছে ব্লক CEN(B)-17 ও ৯৬/৯১ রোডের ১৯ নম্বর প্লট । ব্লক SWC(02) ১৩নং রোডের ২নং প্লট দখল করে রেখেছেন আ. জব্বার। ব্লক CEN(D)-20 রোড নং ১০১/১০১-এর ১৩নং প্লট দখল করেছেন নেছার মোহাম্মদ খান।
১০৮ নম্বর রোডের ১৮/ডি (নতুন) ১৪নং প্লট দখল করে আছেন টিএ খান। CEN(G)-16/B ১০৮ নম্বর রোডের ১নং প্লটটি দখল করে রেখেছেন আরিফুল হাসান। CEN(H)-০4 ১০৯ নম্বর রোডের ৪ নম্বর প্লট দখল করে রেখেছেন মো. শাহাবুদ্দিন। CEN(H)-32 এবং রোড নং ১১৫ এর ১০ নম্বর প্লট দখলে আছে হারুন নেছার। CES(A)-47 এর রোড নং ১১৬ এর ৯নং প্লট দখল করে রেখেছেন বিলকিস বানু (সাবেক অর্থ মন্ত্রীর ছেলে)। CES(F)-02-এর GA রোডের ১১৩নং বাড়ি দখল করে রেখেছেন নীঘাত পারভীন। CWN(A)-01 01 নং প্লটের বাড়িটি দখল করে রেখেছেন আসাদুজ্জামান ও শওকত আলী চৌধুরী। CWN(A)-02-এর ৪৯ নম্বর রোডের ১ নম্বর প্লটের বাড়টি দখল করে রেখেছেন এসএম তাকী ও হীন কোরাইশী। CWN(A)-18A/B এর ৪৭/৪৮ রোডের ২ নম্বর প্লটটি দখলে রেখেছেন রৌশন আরা বেগম। CWN(A)-43-এর রোড নং ৪১ এর ৬ নম্বর প্লটটি দখলে রেখেছেন হাবিব সুলতানা জায়েদী (ফালু)। CWN(B)-06 এর ৪৪নং রোডের ৩০/এ প্লটটি দখলে রয়েছে মোক্তার আহম্মদ আনসারীর হাতে। CWN(B-)28-এর GA ৪৪ এর ১১৯নং প্লটটি দখলে রেখেছেন হোসনে আরা বেগম। CWN(B)-34 গ রোডের ১১৩নং প্লটটি দখলে রেখেছেন এসকে রেজা চৌধুরী। CWN(C)-০৩ এর GA রোডের ১০৫নং প্লট এর দখল রয়েছে মুস্তারী বেগমের হাতে। CWSA-08 এর রোড নং GA এর ৭৯ নম্বর বাড়ির দখল রয়েছে জনৈক আব্দুলার ভাইয়ের হাতে।
১৬/২১নং রোডের ব্লক নং CWS(C)-05-এর ৬ নম্বর প্লটটি রয়েছে শামসুল হকের হাতে। ৭১/৭৪ নং রোডের ব্লক নং NE(B)-1/A এর ৯ নম্বর প্লটের দখলে রয়েছেন ইউসুফ আলী খান। ৮৭নং রোডের ব্লক নং NE(M)-04 এর ৪ নম্বর প্লট রয়েছে এমএ ছাত্তারের হাতে। ৫৯নং রোডের ব্লক নং NW(E)-02 এর ১৯ নম্বর বাড়ির দখলে রয়েছেন হাফিজা বেগম।
৫৪ নম্বর রোডের ব্লক নং NW(I)-03 এর ১৩ নম্বর প্লট রয়েছে আব্দুল মালেকের হাতে। ৫৩ নম্বর রোডের ব্লক নং NW(I)-06 ১২ নম্বর প্লট রয়েছে মাহবুব আনামের হাতে। তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিলাসবহুল এই দ্বিতল বাড়ির পুরোটাজুড়েই ফ্লেম্বি রেস্টুরেন্টের দখলে।
৫০নং রোডের ব্লক নং NW(K)-11-এর ১৯ নম্বর প্লটটি কাগজে কলমে মোস্তফা হায়দারের নামে থাকলেও দখলে রয়েছেন শেকান্দর আলী নামে এক মুক্তিযোদ্ধা। মূল্যবান এই বাড়ি দখলে রাখার জন্য এখানে ছোট ছোট দোকান করা হয়েছে। ভেতরে ইট-বালু মজুত রেখে ব্যবসা করা হয়। তারপরও মাসে ভাড়া আসে দেড় লাখ টাকা।
GA/১১ নম্বর রোডের ব্লক নং SW(A)-29-এর ৩৫ নম্বর প্লট দখলে রেখেছেন সাবেক আইজি আফসার উদ্দিন। বর্তমানে এখানে গ্লোরিয়া জিন্স-এর খাবারের দোকান। গ্লোরিয়ার মালিক নাভানা রিয়েল এস্টেট। রাজধানীর বিত্তশালীরা এখানে আহার করে থাকেন। প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার শুভর কাছে এই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নাভানা গ্রুপ এই বাড়ি ভাড়া নিয়ে এই প্রতিষ্ঠান করেছে। তবে কার কাছ থেকে ভাড়া নিয়েছে, তা তিনি বলতে পারেননি। এমনকি ভাড়া নেওয়ার কোনো ডকুমেন্টসও তিনি দেখাতে পারেননি। তার মালিকের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, এমডি স্যার বর্তমানে আমেরিকায় আছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাকিস্তান আমলে পুলিশের সাবেক আইজিপি আফসার উদ্দিন এ বাড়িতে থাকতেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এ পর্যন্ত হাত বদল হতে হতে এখন নাভানার হতে।
পাশের একই রোডের ব্লক নং SW(A)-30 এর ৩ নম্বর প্লট দখলে সৈয়দ আহমেদ হাসমীর নাম থাকলেও প্রকৃতপক্ষে বিশাল বাড়িটির দখলে আছে বিএনএস রিয়েল এস্টেটের স্বত্বাধিকারী এম এন এইচ ব্লু। বাড়িটির ভেতরে গোডাউন ও রাস্তার পাশে রেস্তোরাঁসহ ৮-১০টি দোকান রয়েছে। দোকানের সামনে হলুদ ব্যানারে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি রযেছে। ব্যানারে লেখা অর্থজারী মোকদ্দমা নং ৩৭৯/২০১৯ ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, মতিঝিল শাখা, ঢাকা বাদী/ডিক্রিদার। বনাম প্রোপেল ইন্টার ন্যাশনাল লি: গং বিবাদী। গত ২৮ নভেম্বর ২০২০ তারিখে ১৩ কাঠা ৯ ছটাক জমি নিলামে ক্রয় করেন। আসলে এ-সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র তারা দেখাতে পারেননি। রেস্তোরাঁসহ একাধিক দোকানি জানান, পাশেই গুলশান কাঁচাবাজারের চেয়ারম্যান দ্বীন মোহাম্মদের কাছ থেকে তারা এ দোকানগুলো ভাড়া নিয়েছেন। নথি ঘেঁটে দেখা যায়, এই বাড়ির প্রকৃত মালিক ছিলেন পাকিস্তানি নাগরিক সৈয়দ আহমেদ হাসমী। স্থানীরা জানান, গত ৫ বছর আগেও বিএনপি নেতা ফারুক মোল্লার দখলে ছিল এই বাড়ি।
১৪নং রোডের ব্লক নং SW(C)-13 এর ৪নং প্লটে ফাতেমা জোহুরার নাম থাকলেও তাদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। এলাকায় এটি ভূতুড়ে বাড়ি হিসেবে পরিচিত। বাড়ির প্রধান ফটকে বাংলায় ও ইংরেজিতে লেখা রয়েছে এই বাড়ি বিক্রি হবে না। কলিং বেল চাপলে বাড়ির ভেতর থেকে এক নিরাপত্তা প্রহরী বাইরে এসে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এই বাড়িতে বেশকিছু যুবককে হাঁটাহাঁটি করতে দেখা গেছে। তাদের সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রহরী জানান, তারা একটি ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির লোক। দীর্ঘদিন ধরে তারা এখানেই থাকে।
গুলশান-১ শুটিং ক্লাবের ঠিক উত্তরে SW(H)-7 এর ২ নম্বর রোডের ১ নম্বর প্লট। দেয়ালে খোদাই করে লেখা রয়েছে মেজর আরিফ (অবসরপ্রাপ্ত)। বিশাল এই বাড়িতে ৩০ বছর ধরে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করছেন এক বৃদ্ধ। নাম জানতে চাইলেই তিনি চটে যান। এই বাড়ির প্রধান ফটকের ওপরে দি স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার্স লি:-এর সাইনবোর্ড শাটানো রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এই বৃদ্ধ বলেন, তারা এখানে বহুতল ভবন করবে। জায়গার মালিকের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। মালিক কে এবং কোথায় আছে জানতে চাইলে এই বৃদ্ধ বিরক্তির সুরে বলেন, আপনাকে বলতে হবে কেন? তিনি ৩টা গার্মেন্টসের মালিক। তিনি কি এখানে থাকবেন? তবে রাজউকের তালিকায় বাড়িটি রৌশনারা বেগমের নামে রয়েছে।
৪৬ ও ৫২ নং রোডের GN C/A-45-এর ২৭ নম্বর প্লটের দখলে রয়েছেন মো. নাঈম। ৯৩ নম্বর রোডের ব্লক নং ও CEN(A)-15/C প্লট দখলে আছেন এমএম জলিল খান। তাদের বাড়িতে পাওয়া যায়নি। আশপাশের লোকজন তাদের নাম শোনেননি বলে জানান। গুলশানের এসব বাড়িতে দিনের বেলায় লোকজনকে যাতায়াত করতে দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন প্রতিবেশীরা।
বনানীতে রয়েছে আরও ৫টি বাড়ি। ৬নং রোডের ব্লক নং C-94-এর ৬ নম্বর প্লটটি দখল করে রেখেছেন মো. নেহাল উদ্দিন। ১৩ নম্বর রোডের ব্লক নং D-47-এর ২৫ নম্বর প্লট দখল করে রেখেছেন আবসার আলম ওসমানী। ১৭.এ ১২ নম্বর রোডের ব্লক নং E-38-এর ১২ নম্বর প্লট দখল করে রেখেছেন মো. আইয়ুব আনসারী। ৩ নম্বর সড়কের ব্লক নং 1-14 এর ২৮ নম্বর প্লট দখল করে রেখেছেন ওয়াহিদুর রহমান। ও ৭ নম্বর সড়কের ব্লক নং G-23এর ৩১ নম্বর প্লট দখল করে রেখেছেন সাইদ নুরুল গনি । তবে এ বাড়িতে গিয়ে এই নামে কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
দিলকুশায় একটি ও মহাখালীতে রয়েছে আরও দুটি ভবন। ভবনগুলো দিলকুশা Dilkusha-22 আব্দুল জলিল, 60 বাণিজ্যিক ভবন মেহেরুন্নেসা গং ও Mahakhali-54 ইউনাইটেড ট্রেডিং কর্পোরেশনের দখলে রয়েছে।
এ বিষয়ে কমিটি প্রধান সৈয়দ মামুনুল আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে এ কমিটি কাজ করেনি। আমরা কাজ করছি। তালিকায় ৩৯টি থাকলেও আমরা কাজ করছি ৩১টি বাড়ি নিয়ে। ইতোমধ্যে ফুল কমিটি ৩১টি বাড়িতেই দুইবার করে পরিদর্শন করেছি। ৬০-৬২ বছর ধরে অবহেলায় পড়ে থাকা এসব বাড়ির কোথাও কোনো কাগজপত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি। দুই চার জন ছাড়া এই বাড়ির প্রকৃত মালিক কেউ নেই। প্রত্যেকটি বাড়িই এক বিঘার উপরে। পাকিস্তান আমলে এত বিশাল বাড়ি কোন বাঙালির থাকার প্রশ্নই আসে না। অথবা যুদ্ধের সময় এত বড় বাড়ি কেনারও ক্ষমতা ছিল না বাঙালিদের। ৭১-৭২ এ দেশে কোটিপতির সংখ্যা ছিল মাত্র ৫ জন। ৬ কোটি মানুষের সকালে খেলে দুপুরে খাওয়ার নিশ্চয়তা ছিল না। তাহলে সেই সময়ে অবাঙালিদের কাছ থেকে এতগুলো বাড়ি ক্রয় করাও সম্ভব নয়। তাহলে এত বছর ধরে কীভাবে বাড়িগুলো দখল করে রেখেছে, এসব বিষয়ে জানার জন্য দখলদারদের কোনো নোটিশ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে সরকারের উচ্চপদস্থ এই কর্মকর্তা বলেন না, আমরা সেদিকে যাইনি। তবে আমি এ কমিটির সভাপতি হওয়ার পর বেশ কিছু দখলদার আমার সাথে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করেছেন। তাদের মধ্যে আমার দু-একজন বন্ধুও রয়েছেন। তারা খুবই প্রভাবশালী। তবে এ বিষয়ে তাদের আমি কোনো সহায়তা করতে পারব না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছি। সরকার এ বাড়িগুলো ফেরত পাবে কিনা জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা নিশ্চিত করে বলেন, অবশ্যই পাবে। পাবে না কেন? তবে ৫০ বছরে ধরে ফেরত পেল না কেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন,এ বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারবেন না।
বাংলাদেশ পুলিশের ঊর্ধ্বতন ৮২ জন কর্মকর্তাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আজ মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা পৃথক তিনটি প্রজ্ঞাপনে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
৯ ঘণ্টা আগেতথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম পদত্যাগ করেছেন। আজ মঙ্গলবার উপদেষ্টা পদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। নতুন রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব নিতে তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা যায়। আগামী শুক্রবার আত্মপ্রকাশ করছে নতুন রাজনৈতিক দল।
১৪ ঘণ্টা আগেঅন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, পিলখানায় বীর সেনা সদস্যদের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর অনেকগুলো বছর ধরে জাতি হিসেবে আমাদের নানা বিভ্রান্তিতে রাখা হয়েছে। রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ এই নির্মমতার সুবিচার নিশ্চিত করতে দায়বদ্ধ।
১৫ ঘণ্টা আগেআওয়ামী সরকারে আমলে রাতারাতী ধনী হয়ে যান লক্ষিপুরের এক দম্পতি। গড়েন সম্পদের পাহাড়। এই দম্পত্তির কোম্পানির নাম ফাস্ট এস এস এন্টারপ্রাইজ প্রাইভেট লিমিটেড। কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হলেন আবু সাদেক ও চেয়ারম্যান হয়েছেন তার প্রিয়তমা স্ত্রী হালিমা আইরীন।
১ দিন আগেবাংলাদেশ পুলিশের ঊর্ধ্বতন ৮২ জন কর্মকর্তাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আজ মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা পৃথক তিনটি প্রজ্ঞাপনে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম পদত্যাগ করেছেন। আজ মঙ্গলবার উপদেষ্টা পদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। নতুন রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব নিতে তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা যায়। আগামী শুক্রবার আত্মপ্রকাশ করছে নতুন রাজনৈতিক দল।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, পিলখানায় বীর সেনা সদস্যদের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর অনেকগুলো বছর ধরে জাতি হিসেবে আমাদের নানা বিভ্রান্তিতে রাখা হয়েছে। রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ এই নির্মমতার সুবিচার নিশ্চিত করতে দায়বদ্ধ।
আওয়ামী সরকারে আমলে রাতারাতী ধনী হয়ে যান লক্ষিপুরের এক দম্পতি। গড়েন সম্পদের পাহাড়। এই দম্পত্তির কোম্পানির নাম ফাস্ট এস এস এন্টারপ্রাইজ প্রাইভেট লিমিটেড। কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হলেন আবু সাদেক ও চেয়ারম্যান হয়েছেন তার প্রিয়তমা স্ত্রী হালিমা আইরীন।