পরমাণু শক্তি কমিশনের জয়

আপডেট : ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ২৩: ২৮
Thumbnail image

এন্ট্রিগ্রেটেড বাজেট এন্ড একাউন্টিং সিস্টেম (আইবাস++)পদ্ধতি অবলম্বন করলো না বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আওয়াতাধীন বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন। অবশেষে পিছু হটলো অর্থ মন্ত্রণালয়। কমিশনের স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে শর্তসাপেক্ষে ৩য় এবং চতুর্থ কিস্তির টাকা ম্যানুয়ালি ছাড় করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

কমিশনের আন্দোলনের পর পরশু মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট অনুবিভাগ -১, বাজেট শাখা -৩ এর উপ সচিব মো: মশিউর রহমান তালুকদার এক চিঠিতে মন্ত্রণালয় এ অর্থ ছাড় দেয়। তবে জুন জুলাইয়ের মধ্যে আইবাস++ পদ্ধতিতে প্রবেশ না করলে ম্যানুয়ালি আর কোন অর্থ বরাদ্দ দিবে না বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে,সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে শুরু করে অধিকাংশ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারী এমনকি কমিশন যে মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও আইবাস++ পদ্ধতিতে বেতন ভাতা পেয়ে থাকেন। স্বচ্ছতা ও ব্যয় কমানোর লক্ষ্যে রাষ্ট্রের সকল কর্মচারীদের এ পদ্ধতিতে বেতন ভাতা প্রদান করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলেও জানা গেছে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে আরো জানা গেছে, ইহা একটি সমন্বিত আর্থিক ব্যবস্থাপনার পদ্ধতি। যা বাজেট প্রণয়ন, হিসাব রক্ষণ, এবং অর্থ ব্যবস্থাপনার কাজকে স্বয়ংক্রিয় করে তোলে। এতে বিভিন্ন স্তরের মধ্যে ডেটা আদান-প্রদান ও লেনদেন প্রক্রিয়াকরণে সহায়তা করে, যা ম্যানুয়ালি করার চেয়ে বেশি সাশ্রয়ী। অর্থ মন্ত্রণালয় আগে ম্যানুয়ালি টাকা বরাদ্দ দিত। কোন প্রতিষ্ঠানের এক বছরের বরাদ্দের টাকা প্রথম মাসেই প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে চলে যেত। আইবাস++পদ্ধতি অবলম্বন করার ফলে সারা বছরের জন্য বরাদ্দের টাকা প্রথম মাসেই তুলে নেয়ার কোন সুযোগ নেই। ম‍্যানুয়াল পদ্ধতির পরিবর্তে প্রতিষ্ঠানের বরাদ্দের টাকা পিএল অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ছাড় করা হচ্ছে। এতে করে সরকারের কয়েক হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হচ্ছে বলেও জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে দেশের অধিকাংশ সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান পিএল অ্যাকাউন্টের আওতায় এসেছে। তবে নানা অজুহাতে পরমাণু শক্তি কমিশন এ পদ্ধতিতে আসতে চাচ্ছেন না।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরমাণু বিজ্ঞানী সংঘের সভাপতি ড. এএমএস সাইফুল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেছেন, ভারতীয় একটি প্রতিষ্ঠানের তৈরি আইবাস নামক সফটওয়্যারে অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের ৬শ বিজ্ঞানীসহ ২৫শ কর্মকর্তা-কর্মচারী দুই মাস ধরে বেতন-ভাতা প্রদান বন্ধ রয়েছে। বিগত ঈদ-উল-ফিতরে তারা বেতন-ভাতা পাননি। ফলে তাঁদের পরিবারে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। শুধু তাই নয়; মন্ত্রণালয় থেকে জিও জারি না করায় নবীন বিজ্ঞানীরা বিদেশে উচ্চশিক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, বেতন বৈষম্য ও পদ অবনমন করা, রুপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্পে কমিশনের অধিকার খর্বের চেষ্টা, বিশেষ সুবিধা চালু না থাকা ও পদোন্নতি না হওয়াসহ বহুবিদ সমস্যায় ভুগছেন বিজ্ঞানীসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এসব সমস্যার কারণে ইতোমধ্যে অনেকে পেশা পরিবর্তন করেছেন। ফলে দেশের পরমাণু বিজ্ঞানের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়ছে। তাই স্বায়ত্তশাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন কমিশনের বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

সংঘের বর্তমান সভাপতি ড. এএমএস সাইফুল্লাহ আরো বলেন,

আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থা আইইএ’র রীতিনীতি অনুসরণ করে কমিশন। উপযোগিতা যাচাই না করে আইবাস নাম সফটওয়্যারের মাধ্যমে বেতন-ভাতা প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রণালয়। এতে বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামের তালিকার পাশাপাশি প্রত্যেকের পরিবারের জীবন বৃত্তান্ত, সংশ্লিষ্ট দফতরের আয়ব্যয়, আমদানি-রফতানি, বিভিন্ন দেশের সাথে চুক্তি সব কিছু এই সফটওয়ারে দিতে হয়। এই সফটওয়্যারটি নিয়ন্ত্রণ হয়ে থাকে বিদেশ থেকে। এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার রীতিনীতি মেনে পরমাণু প্রযুক্তি সংক্রান্ত বিশেষায়িত গবেষণা ও সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করলে কোন গোপনীয়তাই থাকবে না। কমিশনের কর্মকর্তারা দ্বিমত পোষণ করায় গত দুই মাস তাদের বেতন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তারা বিশেষায়িত ব্যবস্থা চালুর দাবি জানিয়ে একাধিকবার উপদেষ্টার সাথে বৈঠক করেছেন। উপদেষ্টা বিষয়টি পজিটিভ নির্দেশনা দিলেও আটকে যাচ্ছে মন্ত্রণালয় থেকে।

এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নথি ঘেঁটে জানা যায়, অর্থ বিভাগের বাজেট অনুবিভাগ-১, শাখা-৫ থেকে ২৯ নং পত্রে সরকারের নগদ ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনয়নে পার্সোনাল লেজার একাউন্টস ব্যবহারের জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়।

অর্থ বিভাগের একই শাখা থেকে ৬২ নং পত্রে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের ক্যাশ ম্যানেজমেন্ট এ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার লক্ষ্যে অর্থ ছাড়ে পুনরায় পার্সোনাল লেজার একাউন্টস ব্যবহারের জন্যও নির্দেশনা প্রদান করা হয়।

উক্ত শর্ত পূরণ না হওয়ায় পরমাণু শক্তি কমিশনের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বেতন ভাতাদি উত্তোলন অনিয়মিত হয়ে পড়ে ।

এদিকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র এক কর্মকর্তা জানান, অর্থ বিভাগের নির্দেশনা প্রদান এবং পরমাণু শক্তি কমিশন কর্তৃক নির্দেশনা না মানার কারণে যে জটিলতা তৈরি হয়েছে এর দায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের নয়। পরমাণু শক্তি কমিশন পরিকল্পিতভাবে এ দায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং সিনিয়র সচিব জনাব মোকাব্বির হোসেনের উপর চাপানো হচ্ছে ।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আরেকটি সূত্র জানায়, কমিশনে যে গ্রেডে যত পদ আছে তার চেয়ে অনেক বেশি জনকে নানা কৌশলে বেতন ও পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। আইবাস/পিএল অ্যাকাউন্টে গেলে থলের বিড়াল বের হয়ে আসতে পারে। এটি কোনোভাবেই যেন বাস্তবায়ন না হয় এ জন্য মরিয়া হয়ে উঠেপড়ে লেগেছে কমিশন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সরকার নিয়ে আরও পড়ুন

একটি উপজেলায় শাসনব্যবস্থার দ্বিতীয় ব্যক্তি হচ্ছেন এসি ল্যান্ড (ভূমি)। তাই তার মানসিক চিন্তার উন্নয়ন ঘটাতে হবে, মননে পরিবর্তন আনতে হবে। বিশেষায়িত জ্ঞান অর্জন করে মাঠ প্রশাসনে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে

১৩ ঘণ্টা আগে

বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব দেওয়ার দাবিতে আন্দোলনের কারণে টানা ৪০ দিন নগর ভবনের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এ সময় কর্মকর্তারা অফিসে না গেলেও তাদের গাড়ির বিপরীতে প্রতিদিন ১৪–১৫ লিটার তেল খরচ দেখানো হয়েছে

১৩ ঘণ্টা আগে

কমিশনের সুপারিশের সারাংশ ও বাস্তবায়নের পথরেখা তৈরির কাজ চলছে। সাংবাদিকদের পেশাগত উৎকর্ষতা, সেল্ফ-রেগুলেশন, সেক্টরাল ইউনিটি এবং গণমাধ্যমকে অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ তৈরির বিষয়গুলো গুরুত্বের সাথে আলোচিত হচ্ছে

১৩ ঘণ্টা আগে

এই মুহূর্তে আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো জাতীয় নির্বাচন। এটি শুধু ক্ষমতার পালাবদল নয়, গণতন্ত্রের শেকড়কে আরও মহিমান্বিত করার এক সুযোগ। নির্বাচনের সময় প্রায় দেড় লাখ পুলিশ মাঠপর্যায়ে দায়িত্ব পালন করবেন। তাদের প্রত্যেকের কার্যক্রম জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে পর্যবেক্ষিত হবে

১৫ ঘণ্টা আগে