ব্যাংকের না বন্ধুর টাকা !

আবু সাদেক দম্পত্তির জ্ঞাত আয়বহির্ভূত প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা

আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২২: ৩৪
Thumbnail image

আওয়ামী সরকারে আমলে রাতারাতী ধনী হয়ে যান লক্ষিপুরের এক দম্পতি। গড়েন সম্পদের পাহাড়। এই দম্পত্তির কোম্পানির নাম ফাস্ট এস এস এন্টারপ্রাইজ প্রাইভেট লিমিটেড। কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হলেন আবু সাদেক ও চেয়ারম্যান হয়েছেন তার প্রিয়তমা স্ত্রী হালিমা আইরীন। অভিযোগ উঠেছে এই সম্পদ অর্জনের পেছেনে কাজ করেন কুমিল্লার তৎকালীন পুলিশ সুপার টুটুল চক্রবর্তী।

WhatsApp Image 2025-02-24 at 8.42.16 PM (2)

ঢাকার মোহাম্মদপুরে মোহাম্মদীয়া হাউজিং সোসাইটিতে রয়েছে তাদের আলীসান হেড অফিস। কর্পোরেট অফিস রাজধানীর ধানমন্ডিতে। লক্ষীপুর জেলার বাশিকপুর ইউনিয়নের নন্দী গ্রামের মৃত মো: মোবারক উল্লাহর ছেলের হঠাৎ এ পরির্বতনে তখন অনেকেই অবাক হয়েছিলেন।

আবু সাদেক জ্ঞাত আয়বহির্ভূত প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন। একই সঙ্গে ওভার ইনভয়েস দেখিয়ে বিদেশে অর্থ পাচার, ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে সরকারি টেন্ডারের অর্থ আত্মসাৎ, ২০১৪ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ভ্যাট-ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে আনা ১৭১টি কনটেইনারে চালানের ১৭০ কোটি টাকার কাগজপত্রসহ তার অনেক অপকর্মের নথি অভিযোগের সঙ্গে দুদকে জমা দেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে চীন, দুবাই ও মালয়েশিয়ায় হুন্ডি ব্যবসায়ীর মাধ্যমে অর্থ পাচারের অভিযোগও উঠেছে।

WhatsApp Image 2025-02-24 at 8.42.16 PM (1)

২০১৪ সালেও এই আবু সাদেক একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকুরী করতেন। রাতারাতি তার বদলে যাওয়ার পিছনে এমন কি কারিশমা আছে তা জানতে চাইলে তিনি নিখাদ খবরকে বলেন,সব ব্যাংকের টাকা। ব্যাংকের টাকা দিয়েই বিজনেস শুরু করেছি।এখন আমার হাতে আর কিছু নেই। আমি এখন দেউলিয়া হয়ে গেছি। ইউনিয়ন ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংক ইতোমধ্যে আমাকে ক্লাসিফাইড করে দিয়েছে।ব্যাংক থেকে টাকা আনার জন্য কোস্পানির প্রোফাইলে কিছু অতিরঞ্জিত লেখার কথা স্বীকার করে তিনি আরো বলেন, আমি কোথাও কোন অনিয়ম করিনি। আমার বিরুদ্ধে অনেক বড় ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এ ষড়যন্ত্র করছে আমার সাবেক পার্টনার। সে আমার টাকা মেরে দিয়েছে।

WhatsApp Image 2025-02-24 at 8.42.16 PM

এদিকে তাঁর কোম্পানি প্রোফাইল ঘেঁটে দেখা গেছে নদীর বালু উত্তোলন থেকে শুরু করে এমন কোন কাজ নেই যে তিনি করেননি। তাঁর ব্যবসা শুধু দেশেই সীমাবদ্ধ নয় বিদেশ থেকে বৈদ্যতিক সরঞ্জামাদি, ভারী মেশিনারিজসহ অনেক ইকুইপমেন্ট সরবরাহ করেছেন।

এসব ব্যবসার আড়ালে তার বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। দুদকেও অভিযোগ জমা হয়েছে এই ব্যবসায়ী ও তার মালিকানাধীন ফাস্ট এসএস গ্রুপের বিরুদ্ধে। আবু সাদেকের বিরুদ্ধে দুদকে জমা পড়া অভিযোগে ৫ হাজার কোটি টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ, হুন্ডির মাধ্যমে ও ওভার ইনভয়েস দেখিয়ে বিদেশে অর্থ পাচার, ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে সরকারি টেন্ডারের অর্থ আত্মসাৎসহ ১৫০ কোটি টাকা ভ্যাট-ট্যাক্স ফাঁকির বিষয়েও তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। তাঁর ব্যবসায়ীক পার্টনারকে অপহরণ করে ডিবি অফিসে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে। অপহরণ করে ৬ কোটি টাকা আদায় চেষ্টার মামলা হয়েছে তার বিরুদ্ধে।

WhatsApp Image 2025-02-24 at 8.42.15 PM (2)

মামলা দায়েরের পর গত ২ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে তাকে গ্রেপ্তারও করে পুলিশ। পরে কারাগারে পাঠানো হলেও মাত্র তিন দিনেই জামিনে মুক্ত হয়ে যান। এ ঘটনায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি সরকারের কাছে ব্যাখ্যা জানতে চেয়ে বিবৃতি দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

আবু সাদেকের সাবেক ব্যবসায়ী অংশীদার জুলফিকার আলী মল্লিক নিজেকে ভুক্তভোগী দাবি করে এ প্রতিবেদককে বলেন, এই সাদেক আমাকে অপহরণ করে ৬ কোটি টাকা দাবী করেছে। তাকে একাজে সহযোগীতা করেছেন ডিবি পুলিশের সাবেক প্রধান হারুন অর রশিদ।

WhatsApp Image 2025-02-24 at 8.42.15 PM (1)

অবৈধভাবে উপার্জিত হারুন অর রশিদের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা ব্যবসায়ী আবু সাদেকের কাছে গচ্ছিত রয়েছে বলে জানান তিনি। নিজেকে লন্ডন বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক পারভেজ মল্লিক এর ছোট ভাই দাবী করে ব্যবসায়ী জুলফিকার আলী মল্লিক আরো বলেন,আবু সাদেক আমার সাথে প্রতারণা করেছে। চেক নেয়ার পর টাকা ফেরৎ দিলেও পরে আর চেক ফেরৎ দেয়নি।বার বার তার কাছে চাইলে সে জানায় এই চেক হারিয়ে ফেলেছে। অথচ চেক তার কাছেই ছিল। মিথ্যা কথা বলে গোপনে আমার বিরুদ্ধে পরে চেকের জন্য জিডি করে রাখে। এ ঘটনা জানার পর আমিও জিডি করেছি।

WhatsApp Image 2025-02-24 at 8.42.15 PM

আবু সাদেক রাতারাতি ধনি হওয়ার পেছনের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আবু সাদেকের স্কুল জীবনের বন্ধু কুমিল্লার তৎকালীন পুলিশ সুপার টুটুল চক্রবর্তীই তাকে ধনী বানিয়েছেন। টুটুল চক্রবর্তীর বাড়িও লক্ষিপুরে। সাদেককে কোটি কোটি টাকা দিয়েছেন তিনি। পরে তারই মাধ্যমে খাতির হয় ডিবি হারুনের সাথে। এরপর তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

তিনি আরো বলেন, এখন লক্ষিপুরের সাবেক এমপি এনি ভাইয়ের মাধ্যমে টাকা দেনা পাওনার বিষয়টি সুরাহার জন্য প্রচেষ্টা চলছে। গতকাল আমরা তাঁর বসুন্ধুরার বাসায় বসেছিলাম। একটি সি এ ফার্মের মাধ্যমে হিসাব নিকাশ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

তবে এসব বিষয়ে আবু সাদেক বলেন, জুলফিকার আলী মল্লিক আমার ৬ কোটি টাকা মেরে দেয়ার চেষ্টা করছে। তার ভাই বিএনপির বড় নেতা। এই সুযোগে সে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে আমাকে জেল খাটিয়েছে। অতীতে ডিবির হারুনের সাথে তার কোন সম্পর্ক ছিলো না উল্লেখ করে বলেন, আমি আমার পাওনা টাকা উদ্ধারের জন্য প্রথমে শেরে বাংলানগর থানায় সাধারণ ডায়েরি করি। এরপর ডিবির কাছে পাওনা টাকার ডকুসেন্টসহ অভিযোগ করলে আমরা দুজনেই ডিবি কার্যালয়ে যাই। এখানে অপহরণের কোন বিষয় নেই। তারপরও আমাকে হয়রানি করার জন্য বিভিন্ন জায়গায় মিথ্যা অভিযোগ ও মামলা রুজু করছে।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

জাতীয় নিয়ে আরও পড়ুন

অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে মীর নাসির ও তার ছেলে মীর হেলালের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের ৬ মার্চ গুলশান থানায় মামলা করে দুদক। এ মামলায় বিশেষ জজ আদালত একই বছরের ৪ জুলাই মীর নাসিরউদ্দিনকে ১৩ বছর এবং মীর হেলালউদ্দিনকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেন

২ দিন আগে

বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি ফয়েজ আহমেদের হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব মন্তব্য করেন

২ দিন আগে

যখন র‌্যাব পরিচালিত টিএফআই সেলে ব্যারিস্টার আরমানকে আটকের বিষয়ে জানতে পেরেছেন, তখন কোনো ব্যবস্থা নিয়েছেন কিনা

২ দিন আগে

গত এক বছরে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগে ঝুলে থাকা প্রায় সাড়ে ৯ লাখ এনআইডি সংশোধন আবেদন নিষ্পত্তি করেছে ইসি

২ দিন আগে