শর্মিলা রহমান সিঁথি নিঃশব্দ এক বিপ্লবের নাম

Thumbnail image
মরহুম আরাফাত রহমান কোকো ও স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান।

শর্মিলা রহমান সিঁথি যেন এক নিঃশব্দ বিপ্লবের নাম। স্বৈরশাসকের রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে নিজের জীবনকে বাজি রেখে নির্ভয়ে তিনি মালয়েশিয়া, লন্ডন ও ঢাকায় পরিবারকে সময় দিয়েছেন।

শেখ হাসিনার আমলে, শত খারাপ সময়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার পাশে যে কয়েকজন মানুষ ছিলেন এদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ছোট ছেলে মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

পরিবারের প্রতি তার বিরল ভালোবাসা থাকলেও গত ১০ বছরে তার জীবন থেকে হারিয়ে গেছে প্রিয়তম স্বামী কোকো ও জন্মদাতা বাবা ও মমতাময়ী মা। এতকিছুর পরেও ভেঙে পড়েননি এই বিপ্লবী নারী।

স্বামী ও বাবা মা সহ এই তিনটি মূল ভিত্তি হারানোর পর যে কারো ভেঙে পড়ার কথা। জীবনে বড়ো শূন্যতায় মানসিকভাবে দুর্বল হওয়ার কথা। মানসিক চাপ, শোক, উদ্বেগ ও হতাশা সব ছাপিয়ে তিনি যুদ্ধের ময়দান থেকে কখনো পিছ পা হননি। জিয়া পরিবারকে আগলে রেখেছেন পরম মমতায়।

শাশুড়ি খালেদা জিয়াও ছোট ছেলেকে হারিয়ে শর্মিলা ও তার দুই মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন।

খালেদা দুই পুত্রবধূকেই ভালোবাসেন মেয়ের মতো। দুই পুত্রবধুরও শাশুড়ীই হলো প্রাণ।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

বিশেষ করে কোকো মারা যাওয়ার পর শর্মিলাই হয়ে উঠেন খালেদা জিয়ার ত্রাণকর্তা। শাশুড়ির শরীর খারাপের কথা শুনলেই রাজনৈতিক নির্যাতন নিপীড়নের কথা উপেক্ষা করে শাশুড়ির কাছে চলে আসতেন।

ইংলিশ মিডিয়ামে লেখাপড়া করলেও শর্মিলা পরিবারের প্রতি অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্যশীল। ছাত্র জীবনেও ছিলেন তিনি মেধাবী। উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য বিদেশেও গেছেন।

এক পর্যায়ে দুই পরিবারের একান্ত ইচ্ছায় বিয়ে হয় কোকোর সাথে। যদিও আগে তাদের কোনো চেনা-জানা ছিলো না। কোকো ছিল অনেকটা রাজনীতি বিমুখ। রাজনীতি পছন্দ করতেন না শর্মিলা। তাই, তাদের দুই জনের একজনকেও কখনো রাজনৈতিক বা সামাজিক বিষয় নিয়ে মিডিয়ার মুখোমুখি হতে দেখা যায়নি। তারা একজন ছিলেন আরেকজনের অন্তরাত্মা।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জরুরি অবস্থার সময় গ্রেপ্তার হন সিঁথির স্বামী আরাফাত। এরপর সিঁথির জীবনে নেমে আসে অমাবস্যার কালো আঁধার। ২০০৮ সালের ১৭ জুলাই তৎকালীন সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এক নির্বাহী আদেশে মুক্তি পান কোকো। এরপর কোকো সিঁথি ও তার অবুঝ দুই কন্যাকে সঙ্গে নিয়ে চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড চলে যান। পরে সেখান থেকে চলে যান মালয়েশিয়া। মালয়েশিয়ায় গিয়ে উঠেন এক ভাড়া বাড়িতে।

সেখানে থেকে কোকো ও সিঁথি নিয়মিত খালেদা জিয়ার সাথে যোগাযোগ রাখতেন। হাসিনার দমন পীড়নে বিএনপির নেতাকর্মীরা যখন অতিষ্ঠ, তখন এক পর্যায়ে কোকো দেশে মায়ের কাছে চলে আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মা খালেদা, হাসিনার নির্মম নির্যাতনের ভয়ে তাকে দেশে আসতে বারণ করেন।

দেশে আসতে না পারায় একাকী মায়ের লড়াই সংগ্রাম ও দুঃখ কষ্টের কথা ভেবে কোকো ভীষণ কষ্ট পেতেন। এরই মধ্যে ২০১৫ সালে মাত্র ৪৫ বছর বয়সে হঠাৎ হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হন আরাফাত রহমান কোকো।

দ্রুত তাকে নেয়া হয় মালয়েশিয়ার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে। হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

অল্প বয়সে সিঁথি হারান তার প্রিয়তম স্বামী আরাফাত রহমান কোকোকে। স্বামীকে হারিয়ে দুই মেয়ে, জাফিয়া রহমান ও জাহিয়া রহমানকে নিয়ে শুরু করেন নতুন লড়াই।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

মালয়েশিয়া ছেড়ে তারা চলে যান লন্ডনে। সেখানে দুই মেয়ের লেখাপড়ার পাশাপাশি অসুস্থ বাবা ও শাশুড়ির খবর রাখতেন নিয়মিত। তাদের দেখতে হাসিনার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে শাশুড়ি ও মায়ের বাসায় যেতেন।

কখনো কোনো অভিযোগ করেননি। মুখ খুলেননি কোনো মিডিয়ার সামনে।

কোকো মারা যাওয়ার দুই বছর যেতে না যেতেই ২০১৭ সালের মার্চ মাসে হারান তার প্রকৌশলী বাবা এমএইচ হাসান রাজাকে। তিনি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, রাজউকের প্রকৌশলী ছিলেন। চলতি বছর ২০২৫ সালের এপ্রিলে মারা যান দুঃখিনী শর্মিলার মা মুকরেমা রেজা।

তারপরও স্থির আছেন এই বিপ্লবী নারী। তার যেন নেই কোনো চাওয়া পাওয়া ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

বিএনপি নিয়ে আরও পড়ুন

শর্মিলা রহমান সিঁথি যেন এক নিঃশব্দ বিপ্লবের নাম। স্বৈরশাসকের রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে নিজের জীবনকে বাজি রেখে নির্ভয়ে তিনি মালয়েশিয়া, লন্ডন ও ঢাকায় পরিবারকে সময় দিয়েছেন।

৩ ঘণ্টা আগে

ঢাকায় প্রত্যাবর্তনের পর শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির কবর জিয়ারত করেছেন। বেলা সাড়ে ১১টার কিছু আগে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশেই অবস্থিত ওসমান হাদির কবরে পৌঁছান।

৪ ঘণ্টা আগে

যশোরের ছয়টি আসনের মধ্যে তিনটিতেই মনোনয়ন পরিবর্তন করেছে বিএনপি। এর মধ্যে একটি আসন জোটের শরিক দলকে ছেড়ে দিয়েছে।

১৭ ঘণ্টা আগে

জামালপুরে নবঘোষিত শহর ও সদর উপজেলা পূর্ব ছাত্রদলের কমিটি বাতিরের দাবিতে মশাল মিছিল ও বিক্ষোভ করেছে ত্যাগী ও পদবঞ্চিত ছাত্রদলের নেতারা। (২৬ ডিসেম্বর) শুক্রবার সন্ধ্যায় শহরের পুরাতন ফুলবাড়িয়া ঈদগা মাঠ থেকে একটি মশাল মিছিল বের করা হয়।

১৮ ঘণ্টা আগে