হাসিনার দোসর সাজ্জাদ দুবাই কনসুলেটে

Thumbnail image
ছবি : প্রতিনিধি

হাসিনার দোসর মোঃ সাজ্জাদ জহির এখনো বহাল তবিয়তে আছেন দুবাইস্থ বাংলাদেশ কনসুলেটে জেনারেল-এ দ্বিতীয় সচিব পদে। ২০২৩ সালে ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পায় এই সাজ্জাদ জহির। এরপর থেকে অর্থপাচারে সহায়তা, হাসিনাপুত্র জয় ও পুতুলের সাথে নিদারুণ সখ্যতা ও দুবাইয়ে তাদের সম্পদ দেখবাল করার অভিযোগের মত নানা গুরতর অনিয়মের অীবযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। এরপরও এখনো স্বপদে অলৌকিকভাবে বহাল আছেন তিনি।

জুলাই বিপ্লবের পর সরকার সব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করলেও সাজ্জাদ আছেন অদ্যাবধি। ২০২৪ সালের ৫ই আগস্টের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিদেশস্থ মিশনসমূহে সব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিলের নির্দেশনা প্রদান করা হলেও, সাজ্জাদের চুক্তি তখন বাতিল করা হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের সরাসরি সুপারিশে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান তিনি। হাসিনাপুত্র জয় ও পুতুলের সাথে সখ্যতার জের ধরে তিনি কনসাল জেনারেল ও রাষ্ট্রদূতসহ সকলকে ভয়ভীতি দেখিয়ে তটস্থ রাখতেন সাসময়। জয় ও পুতুলের অর্থ পাচারের একটি বড়ো অংশ সাজ্জাদের মাধ্যমে দুবাইতে পাচার হয়েছে এমন অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। দুবাইয়ে জয় ও পুতুলের অর্থ সম্পদও তিনি দেখাশোনা করেন বলে জানা গেছে। জয় ও পুতুল ছাড়াও আওয়ামীলীগদের পলাতক নেতা-কর্মীদের দুবাইয়ে ভিসা, ব্যাবসা কিংবা এ সংক্রান্ত যে-কোনো সহযোগিতা করছেন সাজ্জাদ। তার মাধ্যমে আওয়ামীলীগের পলাতক নেতাগণ দুবাইতে অর্থ পাচার করছেন মর্মে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। তিনি আওয়ামীলীগদের পলাতক নেতাদের বিভিন্ন মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে দুবাই-এ অর্থ আনানোর ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। দীর্ঘদিন দুবাই কনসুলেটে কাজ করার সুবাদে আওয়ামী ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের সাথে তার সখ্যতা রয়েছে। তাই আওয়ামীলীগদের নেতা-কর্মীদের বাংলাদেশে থাকা অবৈধ অর্থ দুবাইতে আনার ক্ষেত্রে সাজ্জাদ সরাসরি সহায়তা দিচ্ছেন। এছাড়া দুবাইতে আওয়ামীলীগের নেতাদের পুনর্বাসনেও নিবিড়ভাবে গোপনে কাজ করে যাচ্ছেন।

এত কিছুর পরও আশ্চর্যের বিষয় হলো, ২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে তিনি নিজেকে বিএনপি'র ঘনিষ্ঠজন বলে প্রচার প্রচার করতে শুরু করেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তির সাথে ছবি দেখিয়ে নিজের আসল পরিচয় গোপনের আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। নিজের রং পালটিয়ে এখন নিজের আওয়ামী পরিচয় গোপনের আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

দুবাইয়ের বর্তমান কনসাল জেনারেল রাশেদুজ্জামান ইতঃপূর্বে আওয়ামী সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে বিগত সরকারের আমলে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসে সাড়ে চার বছর ছিলেন। সাধারণত যেখানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা একটি দূতাবাসে সর্বোচ্চ ৩ থেকে সাড়ে তিন বছর থাকেন, সেখানে জনাব রাশেদ তার প্রভাব প্রতিপত্তি খাটিয়ে নজির বিহীনভাবে ওয়াশিংটন দূতাবাসে সাড়ে ৪ বছর পদায়িত ছিলেন। ৫ আগস্টের পরে তাকে দুবাই কনসুলেটে ট্রান্সফার করা হয়। তিনি যোগদানের পর থেকেই সাজ্জাদ বিভিন্নভাবে তাকে তোষামোদি করছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়,

১৯৯৭ সনে আওয়ামীলীগকে সরকারের সময় দুবাইতে নিযুক্ত বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল আমিনুল হোসেন সরকারের হাত ধরে স্থানীয় ভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে কনসুলেটে নিয়োগ পান সাজ্জাদ।

পরবর্তীতে, তাকে প্রটোকল সহকারী হিসেবে দুবাই এয়ারপোর্টে সরকারি কাজে সফররত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ট্রানজিটকাল ও দুবাই আগমনের সময় তাদের রিসিভ ও সিঅফ করার দায়িত্বে (প্রটোকল) নিয়োজিত করা হয়। এসব ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রটোকল সেবা প্রদানের সুযোগে তাদের সাথে সাজ্জাদের যোগাযোগ স্থাপন হয়।

২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ সরকার পুনরায় ক্ষমতা লাভের পর সাজ্জাদ আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এসময় তিনি নিয়মিতভাবে শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ও কন্যা পুতুলকে প্রটোকল দেবার সুযোগে তাদের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। শেখ হাসিনার মেয়ে জামাই দুবাইতে গ্রেপ্তার হবার পর তিনি শেখ হাসিনার পরিবারকে বিভিন্ন ব্যক্তিগত সেবা প্রদানের মাধ্যমে আওয়ামীলীগদের প্রাক্তন কর্মী হিসেবে তাদের 'গুড বুকে' স্থান করে নেন। পুতুলের স্বামীর জামিনের বিষয়ে তিনি তার ব্যক্তিগত পাসপোর্ট দিয়ে জামিনদার হয়েছিলেন। এরই সুবাদে পুরস্কারস্বরূপ ২০১৭ সালে তাকে কনস্যুলেটের আলংকারিক (নোশনাল) দ্বিতীয় সচিব মর্যাদা প্রদান করা হয়।

২০১৪ সালে আওয়ামীলীগকে সরকার পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর তিনি পুনরায় জয় ও পুতুলের ব্যক্তিগত প্রটোকলের দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। ফলশ্রুতিতে তিনি তাদের আরো আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন। নিয়মানুযায়ী এ ধরনের হাই প্রোফাইল প্রটোকলে কনসাল জেনারেল ও রাষ্ট্রদূত উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও সাজ্জাদ বলতেন, জয় ও পুতুল কেবল উনাকেই উপস্থিত থাকতে বলেছেন। তিনি তাদেরকে বলতেন, জয় ও পুতুল চান না যেন কনসাল জেনারেল কিংবা রাষ্ট্রদূত এই প্রটোকলে উপস্থিত থাকেন।

দলীয় পরিচয়ের কারণে তিনি জয়কে সবসময় 'জয় ভাই' বলে সম্বোধন করতেন। জয় দুবাইতে আসলে মোবাইলে যে সিম ব্যবহার করতেন সেটি সব সময় সাজ্জাদের তত্ত্বাবধানে থাকতো। জয়ের সিম তার তত্ত্বাবধানে থাকার বিষয়টি তিনি গর্বের সাথে সকলকে ফলাও করে প্রচার করতেন। এ বিষয়টি তার বেশ কয়েক জন সহকর্মী নিশ্চিত করেছেন।

জয় ও পুতুলের অর্থ পাচারের একটি বড়ো অংশ সাজ্জাদের মাধ্যমে দুবাইতে পাচার হয়েছে মর্মেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। জয় ও পুতুলের দুবাই-এর অর্থ সম্পদ তিনি দেখাশোনা করেন মর্মে জানা যায়। জয় ও পুতুল ছাড়াও আওয়ামীলীগদের পলাতক নেতা-কর্মীগণের দুবাইয়ে ভিসা, ব্যাবসা কিংবা এ যে-কোনো যেকোন সহযোগিতার প্রয়োজন হলে সাজ্জাদের দ্বারস্থ হন ও তার কাছ থেকে পরামর্শ ও সহায়তা গ্রহণ করেন। যে-কোনো বিষয়ে দুবাইয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করার জন্য তিনি আওয়ামীলীগদের হাই-কমান্ড থেকে নির্দেশপ্রাপ্ত। কনস্যুলেটের পরিচয় ব্যবহার করে সহজেই নিজেকে আড়াল করা যায় বলেই তার উপর এ দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে। কন্স্যুলেটের ভেতরে থেকে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তসমূহ তিনি জানার চেষ্টা করেন। বর্তমান কনসাল জেনারেল যেহেতু তার পরামর্শে কনসুলেট পরিচালনা করছেন, ফলে সহজেই তার পক্ষে গোপন খবর জানা ও সেগুলো দলীয় হাই-কমান্ডকে জানানো সম্ভব হচ্ছে। কনসুলেটে কর্মরত এ পরিচয় দিয়ে তিনি এয়ারপোর্টসহ আমিরাতের যে-কোনো সরকারি দপ্তরে অ্যাকসেস পান। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সংযুক্ত আমিরাতে তিনি এখন আওয়ামিলিগের সবচেয়ে বড়ো আশ্রয়-প্রশ্রয় ও ভরসার স্থান হয়ে দাঁড়িয়েছেন।

এসব বিষয়ে জানার জন্য কনসুলেটের ফাস্ট সেক্রেটারীর ২৪ ব্যাচ এর তথ্য কর্মকর্তা আরিফুর রহমানকে বারবার ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি। এমনকি হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠালেও তিনি কোন উত্তর দেননি।(চলবে)

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

বিবিধ নিয়ে আরও পড়ুন

গবেষণায় ১৬১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ৯৩টি (৫৭ দশমিক ৮ শতাংশ) নমুনায় সিসার পরিমাণ নিরাপদ মাত্রা ৯০ পিপিএমের নিচে ছিল। বাকি ৬৮টি নমুনা (৪২ দশমিক ২ শতাংশ) বিএসটিআই নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করেছে। এর মধ্যে, ২৬ দশমিক ২ শতাংশ নমুনায় সিসার পরিমাণ ১ হাজার পিপিএমের বেশি এবং ৩ দশমিক ১ শতাংশে ৫০ হাজার পি

৫ ঘণ্টা আগে

রংপুর সদর উপজেলার সদ্যপুস্করনী ইউনিয়ন পরিষদের আয়োজনে সোমবার (২৭ অক্টোবর) বর্ণাঢ্য আয়োজনে মুখরিত হয়ে ওঠে সদ্যপুষ্করনী । ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের কার্যক্রম পরিদর্শন এবং স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে ঘনিষ্ঠভাবে জানার উদ্দেশ্যে আগমন করেন

৩ দিন আগে

দেশে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংখ্যা ১৩৫টি। শেখ হাসিনা সরকার গত পনেরো বছরে দেশে একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছে। জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত না করে অপরিকল্পিতভাবে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। অনেক ক্ষেত্রে চাহিদাও বিবেচনায় নেওয়া হয়নি

৫ দিন আগে

বন্ধু মনে হলেই, বন্ধু হয়ে গেছি। সে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান দেখার সময় আমার নেই। তবে এর জন্য আমার মাকে অনেক কথা শুনতে হয়েছে। এবং এ কারণে আমার পিঠে বেত এবং গাছের ডাল ভাঙা হয়েছে। কিন্তু আমি নিজের জগতে অবিচল

৫ দিন আগে