বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫
  • সর্বশেষ
  • বিশ্ব
  • বিশেষ সংবাদ
  • রাজনীতি
  • বিনোদন
  • জীবনযাপন
  • খেলা
  • বাংলাদেশ
  • অর্থনীতি
  • ইপেপার
  • ইপেপার
nikhad logo
অনুসরণ করুন
facebooktwittertiktokpinterestyoutubelinkedininstagramgoogle
  • নিখাদ খবর
  • বিজ্ঞাপন
  • সার্কুলেশন
  • শর্তাবলি ও নীতিমালা
  • গোপনীয়তা নীতি
  • যোগাযোগ
স্বত্ব: ©️ দৈনিক নিখাদ খবর|ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: পারভীন আফরোজ খান ওপ্রকাশক: আ. হ. ম তারেক উদ্দীন
বিশেষ সংবাদ
বিবিধ

বন্ড সুবিধার অপব্যবহার

অবৈধভাবে হাজার হাজার টন বন্ডের সুতা ঢুকছে নরসিংদীতে

প্রতিনিধি
নজরুল ইসলাম
প্রকাশ : ২২ অক্টোবর ২০২৫, ১৭: ২৩
আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২৫, ১৭: ৪৪
logo

অবৈধভাবে হাজার হাজার টন বন্ডের সুতা ঢুকছে নরসিংদীতে

নজরুল ইসলাম

প্রকাশ : ২২ অক্টোবর ২০২৫, ১৭: ২৩
Photo

প্রতিদিন হাজার হাজার টন বন্ডের সুতা অবৈধভাবে প্রবেশ করছে নরসিংদীর খোলা বাজারে। তবে আটক হচ্ছে একেবারেই অল্পস্বল্প। বন্ড সুবিধা ব্যবহার করে পোশাক তৈরির শুল্কমুক্ত এ সুতা আমদানি করে খোলাবাজারে বিক্রি করেছে এক শ্রেণীর মুনাফালোভী দেশবিরোধী ব্যবসায়ীরা। এতে দেশের টেক্সটাইল শিল্পের সামনে নতুন করে সংকট তৈরি হচ্ছে। ভারত ও চীন থেকে সুতা আমদানি সাম্প্রতিক সময়ে আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে বিপাকে পড়ছেনে দেশের টেক্সটাইল শিল্প উদ্যোক্তারা। এমন পরিস্থিতিতে অনেক কারখানায় উৎপাদন কমছে। কিছু কারখানা ইতোমধ্যে বন্ধ হয়েছে। একই সাথে গুদামগুলোতে অবিক্রীত সুতা জমার পরিমাণও বাড়ছে।

সরকার দেশীয় শিল্পকে উৎসাহিত করতে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও চোরাকারবার-সহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে এ খাতে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জিত হচ্ছে না। জানা যায়, প্রতিবছর ভারত থেকে চোরাই পথে প্রায় ৫৪ হাজার কোটি টাকার শাড়ি-কাপড় বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। সীমান্তবর্তী এলাকার কিছু সিন্ডিকেট কাস্টম্‌সের অসাধু কর্মকর্তাদের সঙ্গে আঁতাত করে শুল্ক ছাড়াই এসব কাপড় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নিয়ে আসে। পরে কুরিয়ার সার্ভিসে রাজধানীর নামকরা সব শপিংমলে সেসব পণ্য পৌঁছে দেওয়া হয়। একই কৌশলে বন্ড সুবিধায় আনা সুতা ক্রেতার সুবিধাজনক গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার আরেকটি সিন্ডিকেট রয়েছে। বন্ডের সুতা ও চোরাই পোশাকের অবাধ প্রবেশের কারণে দেশীয় পোশাকশিল্প প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পকে সহায়তা করতে বন্ড সুবিধা দিয়ে আসছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বন্ড সুবিধায় বর্তমানে তৈরি পোশাকশিল্পের কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী কাঁচামাল আমদানি হয়ে থাকে। বন্ড সুবিধায় আমদানিকৃত শুল্কমুক্ত সুতা ও অন্যান্য কাঁচামাল রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ওয়্যারহাউজে প্রবেশের আগেই বিভিন্ন ব্যবসায়ীর হাতে চলে যায়। এ ধরনের অবৈধ কর্মকাণ্ডের ফলে দেশে ব্যাবসার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। চোরাচালানের মাধ্যমে দেশে আসা পণ্যের সঙ্গে দেশীয় পণ্য প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারায় অনেক দেশীয় কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

নরসিংদীতেও বিক্রি হচ্ছে বন্ডের সুতা। নরসিংদী বড়ো বাজার, মাধবদী, শেকেরচর ও রায়পুরার হাসনাবাদ বাজারে বিক্রি হচ্ছে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সুতা। একেকজন ব্যবসায়ী প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৮ থেকে ১০ কোটি টাকার সুতা বিক্রি করছে। দেশে উৎপাদিত সুতার চেয়ে বন্ডে আমদানি করা চাইনিজ ও ভারতীয় সুতার দাম কম হওয়ায় তাঁতীরাও ক্রয় করছে দেদারসে। তবে স্থানীয় প্রশাসন একেবারে নীরব। অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই শুল্ক ফাঁকি দিয়ে এ অবৈধ ব্যাবসা করছে তারা। তবে মাসোহারা নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে নরসিংদী কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট-এর প্রধান রবিন্দ্র কুমার সিনহা বলেন,

আমরা প্রায় প্রতিনিই অভিযান পরিচালনা করছি। সম্প্রতি ৭৫ হাজার কেজি সুতা আটক করে ট্যাক্স ও জরিমানা আদায় করা হয়েছে।

এ অভিযান অব্যাহত থাকার কথা জানিয়ে তিনি আরো বলেন,

নরসিংদীর বাজার গুলোতে যারা এ অবৈধ ব্যাবসার সাথে জড়িত রয়েছে আমরা তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় নিয়ে আসবো।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)-এর পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন নিখাদ খবরকে বলেন,

আমরা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছি, কিন্তু কাজ হচ্ছে না। বাজারে বন্ডের অবৈধ সুতা বিক্রি হচ্ছেই। যেহেতু বন্ডে আমদানি করলে ডিউটি ফি দিতে হয় না সেহেতু দেশে উৎপাদিত সুতার চেয়ে কম দরে বিক্রি করা যায়। সে কারণে দেশে উৎপাদিত সুতা এখন আর বেশী দামে কেউ কিনতে চাচ্ছে না। আমরা চাই এই অবৈধ ব্যবসায়ীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে এ ব্যাবসা চিরতরে বন্ধ করা হোক। বিলম্ব হলে দেশে সুতা উৎপাদনের মিল-কারখানা গুলো বন্ধ হয়ে যাবে। বেকার হয়ে পড়বে হাজার হাজার মানুষ।

উল্লেখ্য, গত ৯ অক্টোবর ভোরে সদর উপজেলার মাধবদী গরুর হাট ও আশপাশের এলাকা থেকে মাত্র সাড়ে ৭ টন সুতা জব্দ করে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট নরসিংদী বিভাগ। এক অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রতিদিন প্রায় হাজার হাজার টন বন্ডের সুতা অবৈধভাবে প্রবেশ করছে এ জেলায়। মাধবদী, শেকেরচর, নরসিংদী, বড় বাজার ও আমীরগঞ্জে চলছে রমরমা অবৈধ সুতার এ ব্যাবসা। এ ব্যাবসার সাথে যারা জড়িত রয়েছে প্রাথমিকভাবে এদের অনেকেই শনাক্ত করা গেছে বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে শেকেরচরের মাসুদ ট্রেডার্স, মাধবদীর আল-আমীন ট্রেডার্স, একই এলাকার খায়ের অ্যান্ড সন্স, মাধবদীর মেসার্স কোহিনুর ট্রেডার্স, নরসিংদীর দিলীপ বাবু, একই এলাকার হামজা ট্রেডার্স ও রায়পুরার উপজেলার আমিরগঞ্জে হাসনাবাদ বাজারের ব্যবসায়ী হাজী ট্রেডার্সের মালিক রফিক মিয়া। এসব অবৈধ সুতা বিক্রি করার কথা স্বীকার করে হাসনাবাদ বাজারের ব্যবসায়ী রফিক মিয়া জানান,

দাম বেশী হওয়ায় বাংলা সুতা কেউ নিতে চায় না। এছাড়া বাজারে বাকি বাট্টা আছে তাই ব্যাবসাও ছাড়তে পারছি না। আমরা চাই দেশে অবৈধভাবে এসব সুতা আসা বন্ধ হোক। সুতা আসা বন্ধ হলেই এ ব্যাবসা বন্ধ হয়ে যাবে। অথবা যারে ডিউটি না দিয়ে সুতা আমদানি করে খোলা বাজারে বিক্রি করে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হোক। আমরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, আমাদেরকে হয়রানি করলে কি লাভ হবে?

খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, চায়না সুতা বাকীতে নেয়া যায়। দামেও কম আবার লাভ বেশী। এদিকে দেশি সুতা নগদে ক্রয় করতে হয়, লাভও কম। হাসনাবাদ বাজারে জহির মিয়া ও ডালিম মিয়া নামে আরো দুই ব্যবসায়ী এ অবৈধ ব্যাবসার সাথে জড়িত। তাদেরও একই কথা।

হামজা ও বিটি ইয়ার্ন ট্রেডিং-এর মালিকের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন,

সবাই যেভাবে করে আমরা এভাবেই ব্যাবসা করি। যা পারেন লেখেন। এসব লেখে লাভ হবে না বলে হুমকি দিয়ে বলেন, আমরা এসব গুনিনা।

শেকের চরের মাসুদ ট্রেডার্সকে ফোন করলে তিনি বলেন, আগে এ ব্যাবসা করতাম। এখন আর করিনা। একই কথা বলেছেন মাধবদীর আল আমীন ট্রেডার্সের মালিক। ফোন ধরেননি খায়ের অ্যান্ড সন্স। অনুসন্ধানে জানা গেছে, এদের সবার গোডাউনেই অবৈধ সুতা রয়েছে এবং কাস্টম্‌স ম্যানেজ করেই তারা বীরদর্পে এ অবৈধ ব্যাবসা পরিচালনা করছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী জানান,

প্রতি মাসে তিনি কাস্টমসকে ৩৫ হাজার টাকা করে মাসোহারা প্রদান করেন। তারা নিজেরা গদিতে এসেই টাকা নিয়ে যায়।

খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের সাইফুল ইয়ার্ন ট্রেডিং, জেমি এন্টারপ্রাইজ, ব্যাপারী ইয়ার্ন ট্রেডিং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে চায়না সুতা যায় নরসিংদীর বাজারে। এ অবৈধ ব্যাবসার ফলে দেশীয় সুতার কেনা-বেচা একেবারে নেই বললেই চলে। দ্রুত এ অবস্থার পরিত্রাণ চায় প্রকৃত ব্যবসায়ীরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন,

বাংলাদেশের টেক্সটাইল ও স্পিনিং শিল্প বছরে প্রায় ২৩ বিলিয়ন ডলার মূল্যরে উৎপাদন করে এবং রফতানি খাতের ৮০ শতাংশ সাপ্লাই চেইনে এই খাত পরোক্ষভাবে যুক্ত। তাই এই শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হলে শুধু কারখানা মালকি নয়, ব্যাংক, বিমা, পরবিহন, শ্রমবাজারসহ পুরো অর্থনীতিতে তার প্রভাব পরবে।
Thumbnail image

প্রতিদিন হাজার হাজার টন বন্ডের সুতা অবৈধভাবে প্রবেশ করছে নরসিংদীর খোলা বাজারে। তবে আটক হচ্ছে একেবারেই অল্পস্বল্প। বন্ড সুবিধা ব্যবহার করে পোশাক তৈরির শুল্কমুক্ত এ সুতা আমদানি করে খোলাবাজারে বিক্রি করেছে এক শ্রেণীর মুনাফালোভী দেশবিরোধী ব্যবসায়ীরা। এতে দেশের টেক্সটাইল শিল্পের সামনে নতুন করে সংকট তৈরি হচ্ছে। ভারত ও চীন থেকে সুতা আমদানি সাম্প্রতিক সময়ে আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে বিপাকে পড়ছেনে দেশের টেক্সটাইল শিল্প উদ্যোক্তারা। এমন পরিস্থিতিতে অনেক কারখানায় উৎপাদন কমছে। কিছু কারখানা ইতোমধ্যে বন্ধ হয়েছে। একই সাথে গুদামগুলোতে অবিক্রীত সুতা জমার পরিমাণও বাড়ছে।

সরকার দেশীয় শিল্পকে উৎসাহিত করতে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও চোরাকারবার-সহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে এ খাতে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জিত হচ্ছে না। জানা যায়, প্রতিবছর ভারত থেকে চোরাই পথে প্রায় ৫৪ হাজার কোটি টাকার শাড়ি-কাপড় বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। সীমান্তবর্তী এলাকার কিছু সিন্ডিকেট কাস্টম্‌সের অসাধু কর্মকর্তাদের সঙ্গে আঁতাত করে শুল্ক ছাড়াই এসব কাপড় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নিয়ে আসে। পরে কুরিয়ার সার্ভিসে রাজধানীর নামকরা সব শপিংমলে সেসব পণ্য পৌঁছে দেওয়া হয়। একই কৌশলে বন্ড সুবিধায় আনা সুতা ক্রেতার সুবিধাজনক গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার আরেকটি সিন্ডিকেট রয়েছে। বন্ডের সুতা ও চোরাই পোশাকের অবাধ প্রবেশের কারণে দেশীয় পোশাকশিল্প প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পকে সহায়তা করতে বন্ড সুবিধা দিয়ে আসছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বন্ড সুবিধায় বর্তমানে তৈরি পোশাকশিল্পের কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী কাঁচামাল আমদানি হয়ে থাকে। বন্ড সুবিধায় আমদানিকৃত শুল্কমুক্ত সুতা ও অন্যান্য কাঁচামাল রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ওয়্যারহাউজে প্রবেশের আগেই বিভিন্ন ব্যবসায়ীর হাতে চলে যায়। এ ধরনের অবৈধ কর্মকাণ্ডের ফলে দেশে ব্যাবসার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। চোরাচালানের মাধ্যমে দেশে আসা পণ্যের সঙ্গে দেশীয় পণ্য প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারায় অনেক দেশীয় কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

নরসিংদীতেও বিক্রি হচ্ছে বন্ডের সুতা। নরসিংদী বড়ো বাজার, মাধবদী, শেকেরচর ও রায়পুরার হাসনাবাদ বাজারে বিক্রি হচ্ছে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সুতা। একেকজন ব্যবসায়ী প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৮ থেকে ১০ কোটি টাকার সুতা বিক্রি করছে। দেশে উৎপাদিত সুতার চেয়ে বন্ডে আমদানি করা চাইনিজ ও ভারতীয় সুতার দাম কম হওয়ায় তাঁতীরাও ক্রয় করছে দেদারসে। তবে স্থানীয় প্রশাসন একেবারে নীরব। অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই শুল্ক ফাঁকি দিয়ে এ অবৈধ ব্যাবসা করছে তারা। তবে মাসোহারা নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে নরসিংদী কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট-এর প্রধান রবিন্দ্র কুমার সিনহা বলেন,

আমরা প্রায় প্রতিনিই অভিযান পরিচালনা করছি। সম্প্রতি ৭৫ হাজার কেজি সুতা আটক করে ট্যাক্স ও জরিমানা আদায় করা হয়েছে।

এ অভিযান অব্যাহত থাকার কথা জানিয়ে তিনি আরো বলেন,

নরসিংদীর বাজার গুলোতে যারা এ অবৈধ ব্যাবসার সাথে জড়িত রয়েছে আমরা তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় নিয়ে আসবো।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)-এর পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন নিখাদ খবরকে বলেন,

আমরা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছি, কিন্তু কাজ হচ্ছে না। বাজারে বন্ডের অবৈধ সুতা বিক্রি হচ্ছেই। যেহেতু বন্ডে আমদানি করলে ডিউটি ফি দিতে হয় না সেহেতু দেশে উৎপাদিত সুতার চেয়ে কম দরে বিক্রি করা যায়। সে কারণে দেশে উৎপাদিত সুতা এখন আর বেশী দামে কেউ কিনতে চাচ্ছে না। আমরা চাই এই অবৈধ ব্যবসায়ীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে এ ব্যাবসা চিরতরে বন্ধ করা হোক। বিলম্ব হলে দেশে সুতা উৎপাদনের মিল-কারখানা গুলো বন্ধ হয়ে যাবে। বেকার হয়ে পড়বে হাজার হাজার মানুষ।

উল্লেখ্য, গত ৯ অক্টোবর ভোরে সদর উপজেলার মাধবদী গরুর হাট ও আশপাশের এলাকা থেকে মাত্র সাড়ে ৭ টন সুতা জব্দ করে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট নরসিংদী বিভাগ। এক অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রতিদিন প্রায় হাজার হাজার টন বন্ডের সুতা অবৈধভাবে প্রবেশ করছে এ জেলায়। মাধবদী, শেকেরচর, নরসিংদী, বড় বাজার ও আমীরগঞ্জে চলছে রমরমা অবৈধ সুতার এ ব্যাবসা। এ ব্যাবসার সাথে যারা জড়িত রয়েছে প্রাথমিকভাবে এদের অনেকেই শনাক্ত করা গেছে বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে শেকেরচরের মাসুদ ট্রেডার্স, মাধবদীর আল-আমীন ট্রেডার্স, একই এলাকার খায়ের অ্যান্ড সন্স, মাধবদীর মেসার্স কোহিনুর ট্রেডার্স, নরসিংদীর দিলীপ বাবু, একই এলাকার হামজা ট্রেডার্স ও রায়পুরার উপজেলার আমিরগঞ্জে হাসনাবাদ বাজারের ব্যবসায়ী হাজী ট্রেডার্সের মালিক রফিক মিয়া। এসব অবৈধ সুতা বিক্রি করার কথা স্বীকার করে হাসনাবাদ বাজারের ব্যবসায়ী রফিক মিয়া জানান,

দাম বেশী হওয়ায় বাংলা সুতা কেউ নিতে চায় না। এছাড়া বাজারে বাকি বাট্টা আছে তাই ব্যাবসাও ছাড়তে পারছি না। আমরা চাই দেশে অবৈধভাবে এসব সুতা আসা বন্ধ হোক। সুতা আসা বন্ধ হলেই এ ব্যাবসা বন্ধ হয়ে যাবে। অথবা যারে ডিউটি না দিয়ে সুতা আমদানি করে খোলা বাজারে বিক্রি করে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হোক। আমরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, আমাদেরকে হয়রানি করলে কি লাভ হবে?

খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, চায়না সুতা বাকীতে নেয়া যায়। দামেও কম আবার লাভ বেশী। এদিকে দেশি সুতা নগদে ক্রয় করতে হয়, লাভও কম। হাসনাবাদ বাজারে জহির মিয়া ও ডালিম মিয়া নামে আরো দুই ব্যবসায়ী এ অবৈধ ব্যাবসার সাথে জড়িত। তাদেরও একই কথা।

হামজা ও বিটি ইয়ার্ন ট্রেডিং-এর মালিকের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন,

সবাই যেভাবে করে আমরা এভাবেই ব্যাবসা করি। যা পারেন লেখেন। এসব লেখে লাভ হবে না বলে হুমকি দিয়ে বলেন, আমরা এসব গুনিনা।

শেকের চরের মাসুদ ট্রেডার্সকে ফোন করলে তিনি বলেন, আগে এ ব্যাবসা করতাম। এখন আর করিনা। একই কথা বলেছেন মাধবদীর আল আমীন ট্রেডার্সের মালিক। ফোন ধরেননি খায়ের অ্যান্ড সন্স। অনুসন্ধানে জানা গেছে, এদের সবার গোডাউনেই অবৈধ সুতা রয়েছে এবং কাস্টম্‌স ম্যানেজ করেই তারা বীরদর্পে এ অবৈধ ব্যাবসা পরিচালনা করছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী জানান,

প্রতি মাসে তিনি কাস্টমসকে ৩৫ হাজার টাকা করে মাসোহারা প্রদান করেন। তারা নিজেরা গদিতে এসেই টাকা নিয়ে যায়।

খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের সাইফুল ইয়ার্ন ট্রেডিং, জেমি এন্টারপ্রাইজ, ব্যাপারী ইয়ার্ন ট্রেডিং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে চায়না সুতা যায় নরসিংদীর বাজারে। এ অবৈধ ব্যাবসার ফলে দেশীয় সুতার কেনা-বেচা একেবারে নেই বললেই চলে। দ্রুত এ অবস্থার পরিত্রাণ চায় প্রকৃত ব্যবসায়ীরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন,

বাংলাদেশের টেক্সটাইল ও স্পিনিং শিল্প বছরে প্রায় ২৩ বিলিয়ন ডলার মূল্যরে উৎপাদন করে এবং রফতানি খাতের ৮০ শতাংশ সাপ্লাই চেইনে এই খাত পরোক্ষভাবে যুক্ত। তাই এই শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হলে শুধু কারখানা মালকি নয়, ব্যাংক, বিমা, পরবিহন, শ্রমবাজারসহ পুরো অর্থনীতিতে তার প্রভাব পরবে।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

বিবিধ নিয়ে আরও পড়ুন

ক্যাঙারুর রঙে সবচেয়ে বেশি সিসার উপস্থিতি

ক্যাঙারুর রঙে সবচেয়ে বেশি সিসার উপস্থিতি

গবেষণায় ১৬১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ৯৩টি (৫৭ দশমিক ৮ শতাংশ) নমুনায় সিসার পরিমাণ নিরাপদ মাত্রা ৯০ পিপিএমের নিচে ছিল। বাকি ৬৮টি নমুনা (৪২ দশমিক ২ শতাংশ) বিএসটিআই নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করেছে। এর মধ্যে, ২৬ দশমিক ২ শতাংশ নমুনায় সিসার পরিমাণ ১ হাজার পিপিএমের বেশি এবং ৩ দশমিক ১ শতাংশে ৫০ হাজার পি

৫ ঘণ্টা আগে
রংপুরের সদ্যপুষ্করনীতে ফরাসি রাষ্ট্রদূত ও ইউএনডিপি প্রতিনিধির আগমন

রংপুরের সদ্যপুষ্করনীতে ফরাসি রাষ্ট্রদূত ও ইউএনডিপি প্রতিনিধির আগমন

রংপুর সদর উপজেলার সদ্যপুস্করনী ইউনিয়ন পরিষদের আয়োজনে সোমবার (২৭ অক্টোবর) বর্ণাঢ্য আয়োজনে মুখরিত হয়ে ওঠে সদ্যপুষ্করনী । ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের কার্যক্রম পরিদর্শন এবং স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে ঘনিষ্ঠভাবে জানার উদ্দেশ্যে আগমন করেন

৩ দিন আগে
বাড়ছে লোডশেডিং, অতিষ্ঠ জনজীবন

বাড়ছে লোডশেডিং, অতিষ্ঠ জনজীবন

দেশে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংখ্যা ১৩৫টি। শেখ হাসিনা সরকার গত পনেরো বছরে দেশে একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছে। জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত না করে অপরিকল্পিতভাবে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। অনেক ক্ষেত্রে চাহিদাও বিবেচনায় নেওয়া হয়নি

৫ দিন আগে
মানসিক স্বাধীনতা রাষ্ট্রের উন্নয়নে জরুরি

মানসিক স্বাধীনতা রাষ্ট্রের উন্নয়নে জরুরি

বন্ধু মনে হলেই, বন্ধু হয়ে গেছি। সে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান দেখার সময় আমার নেই। তবে এর জন্য আমার মাকে অনেক কথা শুনতে হয়েছে। এবং এ কারণে আমার পিঠে বেত এবং গাছের ডাল ভাঙা হয়েছে। কিন্তু আমি নিজের জগতে অবিচল

৫ দিন আগে
ক্যাঙারুর রঙে সবচেয়ে বেশি সিসার উপস্থিতি

ক্যাঙারুর রঙে সবচেয়ে বেশি সিসার উপস্থিতি

গবেষণায় ১৬১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ৯৩টি (৫৭ দশমিক ৮ শতাংশ) নমুনায় সিসার পরিমাণ নিরাপদ মাত্রা ৯০ পিপিএমের নিচে ছিল। বাকি ৬৮টি নমুনা (৪২ দশমিক ২ শতাংশ) বিএসটিআই নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করেছে। এর মধ্যে, ২৬ দশমিক ২ শতাংশ নমুনায় সিসার পরিমাণ ১ হাজার পিপিএমের বেশি এবং ৩ দশমিক ১ শতাংশে ৫০ হাজার পি

৫ ঘণ্টা আগে
রংপুরের সদ্যপুষ্করনীতে ফরাসি রাষ্ট্রদূত ও ইউএনডিপি প্রতিনিধির আগমন

রংপুরের সদ্যপুষ্করনীতে ফরাসি রাষ্ট্রদূত ও ইউএনডিপি প্রতিনিধির আগমন

রংপুর সদর উপজেলার সদ্যপুস্করনী ইউনিয়ন পরিষদের আয়োজনে সোমবার (২৭ অক্টোবর) বর্ণাঢ্য আয়োজনে মুখরিত হয়ে ওঠে সদ্যপুষ্করনী । ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের কার্যক্রম পরিদর্শন এবং স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে ঘনিষ্ঠভাবে জানার উদ্দেশ্যে আগমন করেন

৩ দিন আগে
বাড়ছে লোডশেডিং, অতিষ্ঠ জনজীবন

বাড়ছে লোডশেডিং, অতিষ্ঠ জনজীবন

দেশে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংখ্যা ১৩৫টি। শেখ হাসিনা সরকার গত পনেরো বছরে দেশে একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছে। জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত না করে অপরিকল্পিতভাবে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। অনেক ক্ষেত্রে চাহিদাও বিবেচনায় নেওয়া হয়নি

৫ দিন আগে
মানসিক স্বাধীনতা রাষ্ট্রের উন্নয়নে জরুরি

মানসিক স্বাধীনতা রাষ্ট্রের উন্নয়নে জরুরি

বন্ধু মনে হলেই, বন্ধু হয়ে গেছি। সে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান দেখার সময় আমার নেই। তবে এর জন্য আমার মাকে অনেক কথা শুনতে হয়েছে। এবং এ কারণে আমার পিঠে বেত এবং গাছের ডাল ভাঙা হয়েছে। কিন্তু আমি নিজের জগতে অবিচল

৫ দিন আগে