মোঃ মাজহারুল পারভেজ
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান লক্ষ্য তিনটি। একটি হলো জুলাই গণহত্যার বিচার, দ্বিতীয়টি হলো সংস্কার এবং তৃতীয়টি হলো নির্বাচন। কিন্তু ১০ মাসে বিচারের কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি আমরা লক্ষ করিনি। শেখ হাসিনাসহ জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার শেষ পর্যন্ত হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় বাড়ছে। বিচারের নামে হচ্ছে প্রহসন। শত শত আসামি বানিয়ে মামলার গুরুত্ব হালকা করা হচ্ছে। মিথ্যা মামলায় হয়রানি করা হচ্ছে নিরীহ মানুষকে, অথচ আসল অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। দেশজুড়ে বেশুমার মামলা বাণিজ্য চলছে। যে যার বিরুদ্ধে ইচ্ছা মামলা করছে। মামলার নামে চলছে ব্ল্যাকমেইলিং।
এদিকে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে দুর্নীতি রয়ে গেছে এবং অনেক ক্ষেত্রে বেড়ে গেছে। তবে তা নিয়ন্ত্রণে সরকারের আন্তরিকতাও দেখা যাচ্ছে না। উপদেষ্টাদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি-লুটপাটের কাহিনি নিয়ে দেশজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে তোলপাড়। অথচ কারো বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। নতুন বাংলাদেশে দুর্নীতি কমেনি, বরং নতুন আঙ্গিকে চলছে লুটপাট। শেয়ারবাজার থেকে নিরীহ জনগণের ২৫ হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। এসবের তদন্ত নেই, বিচার নেই। অর্থ উপদেষ্টা যেন আইএমএফের বাংলাদেশ প্রতিনিধি। তাঁর কাজ দেশের অর্থনীতি ঠিক করা নয়, আইএমএফের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী কাজ করা। উপদেষ্টাদের নানা বিতর্কিত কথাবার্তা ও কাজকর্মে মানুষ বিরক্ত।
গত ১০ মাসে দেশে চুরি, ডাকাতি, ধর্ষণ বেড়েই চলছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ন্যূনতম উন্নতি হয়নি; বরং প্রতিদিন অবনতি ঘটছে। দেশের মানুষ নিরাপত্তাহীন। দায়িত্ব গ্রহণ করেই সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ভারতের সঙ্গে দেশবিরোধী চুক্তি বাতিল করা হবে। কিন্তু গত ১০ মাসে অন্তর্বর্তী সরকার ভারতের সঙ্গে একটি চুক্তিও বাতিল করেনি। ভারত উলটো বাংলাদেশের সঙ্গে একাধিক চুক্তি বাতিল করেছে। স্থলপথে ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধ করার নেতিবাচক প্রভাব এরই মধ্যে অর্থনীতিতে দেখা যাচ্ছে। সরকার দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি রোধে সফল হতে পারেনি। সব কিছুর দাম বেড়েই চলছে। নতুন বাজেট বাস্তবায়িত হলে দ্রব্যমূল্য আরো নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে
দেশে নতুন বিনিয়োগ বন্ধ, শিল্প ধ্বংসসহ বহু কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। নিরাপত্তার অভাব, জ্বালানি সংকট, ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মিথ্যা হত্যা মামলা অর্থনীতিকে রীতিমতো অচল করে দিয়েছে। দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন হলো বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠান। বেশির ভাগ বড় বড় শিল্প গ্রুপের ব্যাংক হিসাব জব্দ করে তাদের দুদক দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। বিদেশি বিনিয়োগের নামে কোটি টাকার বিনিয়োগ সম্মেলনের ফলাফল শূন্য।
সরকারের পাশাপাশি এনসিপির অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলা, নেতাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা, কোনো কোনো নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ—এসব নানা কারণে দলটি যেমন ইমেজ সংকটে পড়েছে, তাদের প্রতি সাধারণের আবেদনও দিন দিন কমছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যতটা প্রত্যাশা নিয়ে গঠন করা হয়েছে তরুণদের এ দল, ততটাই হতাশা উপহার দিয়েছে তারা। একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ও সম্ভাবনার বার্তা নিয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশ করে এনসিপি।
এরপর একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে যুক্ত হন দলটির নেতাকর্মীরা। সর্বশেষ এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষারকে কর্মকাণ্ড নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওঠা নৈতিক স্খলনের অভিযোগ। যদিও এ অভিযোগের ফলে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)৷ বিষয়টি নিষ্পত্তি হওয়ার আগপর্যন্ত সারোয়ার তুষারকে এনসিপির সব সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে৷ এর আগে জ্যেষ্ঠ মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন ‘চাঁদাবাজ’ নেতাকে থানা থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে এসে সমালোচনায় বিদ্ধ হন। নিজ দল থেকে শোকজও করা হয় তাকে। এর আগে মোংলা সমুদ্রবন্দর ইস্যুতে জড়িয়ে সমালোচিত হন তিনি।
সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছেন যুগ্ম সদস্য সচিব গাজী সালাউদ্দিন তানভীর। তার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক নিয়োগ ও এনসিটিবির বই ছাপার কাজে ‘কমিশন বাণিজ্য’ ও ‘হস্তক্ষেপ’ করার বড় অভিযোগ রয়েছে। তানভীরের বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে দলের ভেতরে ও বাইরে বেশ আলোচনা চলছিল। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতিও দেওয়া হয়
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের সাবেক দুই ব্যক্তিগত কর্মকর্তা তুহিন ফারাবী ও ডা. মাহমুদুল হাসানের বিরুদ্ধেও তদবির বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্যসহ নানা অনিয়মের মাধ্যমে শত কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার সাবেক সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) মো. মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ উঠেছে। তাদের সবাইকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। তবে কারো বিরুদ্ধেই এখনো মামলা হয়নি।
নিজ এলাকায় এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমের শতাধিক গাড়ির বহরের মহড়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তার দলেরই আরেক নেতা ডা. তাসনিম জারা। সারজিস আলম ওই প্রশ্নের জবাবে তখন গাড়িগুলো তার আত্মীয়-স্বজনরা দিয়েছেন বলে দাবি করেন। গাড়ি ব্যবহার বিষয়ক আরেক সমালোচনার জবাবে আব্দুল হান্নান মাসউদ দাবি করেছেন, তার বিলাসবহুল গাড়িটি জামায়াতের এক ব্যবসায়ী নেতা তাকে দিয়েছেন।
এনসিপি আত্মপ্রকাশের দিন জমকালো সমাবেশ এবং পাঁচতারা হোটেলে দলটির ইফতার পার্টিতে খরচের উৎস নিয়েও প্রশ্ন আছে। দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম দল চালাতে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ‘ডোনেশন' নেওয়ার কথা বলেছেন। তবে তারা কত টাকা নিয়েছেন এবং কাদের কাছ থেকে নিয়েছেন তা এখনো প্রকাশ করেননি। এছাড়া কয়েকজন নেতার বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহার, রাতারাতি জীবনধারার পরিবর্তন, হেলকিপ্টারে ভ্রমণ প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
রেল ভবনে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি)-র একান্ত সচিবের কক্ষে তদবির করার অভিযোগ ওঠে এনসিপির সংগঠক (হবিগঞ্জ) নাহিদ উদ্দিন তারেকের বিরুদ্ধে। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে। ভিডিওতে তারেকের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সিনথিয়া জাহিন আয়েশাকেও দেখা গেছে। এছাড়া স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার সাবেক সহকারি একান্ত সচিব (এপিএস) মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সাবেক ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) ছাত্র প্রতিনিধি তুহিন ফারাবি ও ডা. মাহমুদুল হাসানের বিরুদ্ধেও নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
ওয়াসার আউটসোর্সিংয়ের নিয়োগে সুপারিশ নিয়ে সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ও এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এবং যুগ্ম আহ্বায়ক নুসরাত তাবাসসুমকে নিয়ে সমালোচনা হয়েছে অনেক।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আমরা এই নীতিতে অটল আছি যে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের জিরো টলারেন্স। আমাদের নেতাদের বিরুদ্ধে যে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এসেছে, সেজন্য আমাদের একটা শৃঙ্খলা কমিটি করা আছে। ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান মিডিয়াকে বলেন, মানুষ এনসিপির প্রতি মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। কারণ, তারা প্রতিটি দলের সঙ্গে অনৈক্য সৃষ্টি করেছে। যাকে যখন দরকার কাছে টেনেছে, কাজ শেষে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। সবাইকে মাইনাস করে গণঅভ্যুত্থানের একক শক্তি হিসেবে নিজেদের আবির্ভূত করেছে। বিভিন্ন নেতাকে নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র এবং কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিচ্ছে। আমাদের দল ভাঙার ষড়যন্ত্রের সঙ্গেও তারা জড়িত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক নিখাদ খবরকে বেলেন, এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাদের গড় বয়স ২৫ থেকে ৩০ বছর। দেশের রাজনীতিতে তার চেয়ে বেশি বয়সী বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, দিচ্ছেন। দলকে সাসটেইনেবল করার জন্য কাঠামো তারা তৈরি করতে পারেনি । এটা বয়সের জন্য হতে পারে, অভিজ্ঞতার জন্য হতে পারে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান লক্ষ্য তিনটি। একটি হলো জুলাই গণহত্যার বিচার, দ্বিতীয়টি হলো সংস্কার এবং তৃতীয়টি হলো নির্বাচন। কিন্তু ১০ মাসে বিচারের কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি আমরা লক্ষ করিনি। শেখ হাসিনাসহ জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার শেষ পর্যন্ত হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় বাড়ছে। বিচারের নামে হচ্ছে প্রহসন। শত শত আসামি বানিয়ে মামলার গুরুত্ব হালকা করা হচ্ছে। মিথ্যা মামলায় হয়রানি করা হচ্ছে নিরীহ মানুষকে, অথচ আসল অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। দেশজুড়ে বেশুমার মামলা বাণিজ্য চলছে। যে যার বিরুদ্ধে ইচ্ছা মামলা করছে। মামলার নামে চলছে ব্ল্যাকমেইলিং।
এদিকে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে দুর্নীতি রয়ে গেছে এবং অনেক ক্ষেত্রে বেড়ে গেছে। তবে তা নিয়ন্ত্রণে সরকারের আন্তরিকতাও দেখা যাচ্ছে না। উপদেষ্টাদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি-লুটপাটের কাহিনি নিয়ে দেশজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে তোলপাড়। অথচ কারো বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। নতুন বাংলাদেশে দুর্নীতি কমেনি, বরং নতুন আঙ্গিকে চলছে লুটপাট। শেয়ারবাজার থেকে নিরীহ জনগণের ২৫ হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। এসবের তদন্ত নেই, বিচার নেই। অর্থ উপদেষ্টা যেন আইএমএফের বাংলাদেশ প্রতিনিধি। তাঁর কাজ দেশের অর্থনীতি ঠিক করা নয়, আইএমএফের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী কাজ করা। উপদেষ্টাদের নানা বিতর্কিত কথাবার্তা ও কাজকর্মে মানুষ বিরক্ত।
গত ১০ মাসে দেশে চুরি, ডাকাতি, ধর্ষণ বেড়েই চলছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ন্যূনতম উন্নতি হয়নি; বরং প্রতিদিন অবনতি ঘটছে। দেশের মানুষ নিরাপত্তাহীন। দায়িত্ব গ্রহণ করেই সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ভারতের সঙ্গে দেশবিরোধী চুক্তি বাতিল করা হবে। কিন্তু গত ১০ মাসে অন্তর্বর্তী সরকার ভারতের সঙ্গে একটি চুক্তিও বাতিল করেনি। ভারত উলটো বাংলাদেশের সঙ্গে একাধিক চুক্তি বাতিল করেছে। স্থলপথে ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধ করার নেতিবাচক প্রভাব এরই মধ্যে অর্থনীতিতে দেখা যাচ্ছে। সরকার দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি রোধে সফল হতে পারেনি। সব কিছুর দাম বেড়েই চলছে। নতুন বাজেট বাস্তবায়িত হলে দ্রব্যমূল্য আরো নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে
দেশে নতুন বিনিয়োগ বন্ধ, শিল্প ধ্বংসসহ বহু কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। নিরাপত্তার অভাব, জ্বালানি সংকট, ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মিথ্যা হত্যা মামলা অর্থনীতিকে রীতিমতো অচল করে দিয়েছে। দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন হলো বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠান। বেশির ভাগ বড় বড় শিল্প গ্রুপের ব্যাংক হিসাব জব্দ করে তাদের দুদক দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। বিদেশি বিনিয়োগের নামে কোটি টাকার বিনিয়োগ সম্মেলনের ফলাফল শূন্য।
সরকারের পাশাপাশি এনসিপির অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলা, নেতাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা, কোনো কোনো নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ—এসব নানা কারণে দলটি যেমন ইমেজ সংকটে পড়েছে, তাদের প্রতি সাধারণের আবেদনও দিন দিন কমছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যতটা প্রত্যাশা নিয়ে গঠন করা হয়েছে তরুণদের এ দল, ততটাই হতাশা উপহার দিয়েছে তারা। একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ও সম্ভাবনার বার্তা নিয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশ করে এনসিপি।
এরপর একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে যুক্ত হন দলটির নেতাকর্মীরা। সর্বশেষ এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষারকে কর্মকাণ্ড নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওঠা নৈতিক স্খলনের অভিযোগ। যদিও এ অভিযোগের ফলে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)৷ বিষয়টি নিষ্পত্তি হওয়ার আগপর্যন্ত সারোয়ার তুষারকে এনসিপির সব সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে৷ এর আগে জ্যেষ্ঠ মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন ‘চাঁদাবাজ’ নেতাকে থানা থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে এসে সমালোচনায় বিদ্ধ হন। নিজ দল থেকে শোকজও করা হয় তাকে। এর আগে মোংলা সমুদ্রবন্দর ইস্যুতে জড়িয়ে সমালোচিত হন তিনি।
সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছেন যুগ্ম সদস্য সচিব গাজী সালাউদ্দিন তানভীর। তার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক নিয়োগ ও এনসিটিবির বই ছাপার কাজে ‘কমিশন বাণিজ্য’ ও ‘হস্তক্ষেপ’ করার বড় অভিযোগ রয়েছে। তানভীরের বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে দলের ভেতরে ও বাইরে বেশ আলোচনা চলছিল। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতিও দেওয়া হয়
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের সাবেক দুই ব্যক্তিগত কর্মকর্তা তুহিন ফারাবী ও ডা. মাহমুদুল হাসানের বিরুদ্ধেও তদবির বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্যসহ নানা অনিয়মের মাধ্যমে শত কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার সাবেক সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) মো. মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ উঠেছে। তাদের সবাইকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। তবে কারো বিরুদ্ধেই এখনো মামলা হয়নি।
নিজ এলাকায় এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমের শতাধিক গাড়ির বহরের মহড়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তার দলেরই আরেক নেতা ডা. তাসনিম জারা। সারজিস আলম ওই প্রশ্নের জবাবে তখন গাড়িগুলো তার আত্মীয়-স্বজনরা দিয়েছেন বলে দাবি করেন। গাড়ি ব্যবহার বিষয়ক আরেক সমালোচনার জবাবে আব্দুল হান্নান মাসউদ দাবি করেছেন, তার বিলাসবহুল গাড়িটি জামায়াতের এক ব্যবসায়ী নেতা তাকে দিয়েছেন।
এনসিপি আত্মপ্রকাশের দিন জমকালো সমাবেশ এবং পাঁচতারা হোটেলে দলটির ইফতার পার্টিতে খরচের উৎস নিয়েও প্রশ্ন আছে। দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম দল চালাতে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ‘ডোনেশন' নেওয়ার কথা বলেছেন। তবে তারা কত টাকা নিয়েছেন এবং কাদের কাছ থেকে নিয়েছেন তা এখনো প্রকাশ করেননি। এছাড়া কয়েকজন নেতার বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহার, রাতারাতি জীবনধারার পরিবর্তন, হেলকিপ্টারে ভ্রমণ প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
রেল ভবনে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি)-র একান্ত সচিবের কক্ষে তদবির করার অভিযোগ ওঠে এনসিপির সংগঠক (হবিগঞ্জ) নাহিদ উদ্দিন তারেকের বিরুদ্ধে। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে। ভিডিওতে তারেকের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সিনথিয়া জাহিন আয়েশাকেও দেখা গেছে। এছাড়া স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার সাবেক সহকারি একান্ত সচিব (এপিএস) মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সাবেক ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) ছাত্র প্রতিনিধি তুহিন ফারাবি ও ডা. মাহমুদুল হাসানের বিরুদ্ধেও নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
ওয়াসার আউটসোর্সিংয়ের নিয়োগে সুপারিশ নিয়ে সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ও এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এবং যুগ্ম আহ্বায়ক নুসরাত তাবাসসুমকে নিয়ে সমালোচনা হয়েছে অনেক।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আমরা এই নীতিতে অটল আছি যে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের জিরো টলারেন্স। আমাদের নেতাদের বিরুদ্ধে যে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এসেছে, সেজন্য আমাদের একটা শৃঙ্খলা কমিটি করা আছে। ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান মিডিয়াকে বলেন, মানুষ এনসিপির প্রতি মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। কারণ, তারা প্রতিটি দলের সঙ্গে অনৈক্য সৃষ্টি করেছে। যাকে যখন দরকার কাছে টেনেছে, কাজ শেষে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। সবাইকে মাইনাস করে গণঅভ্যুত্থানের একক শক্তি হিসেবে নিজেদের আবির্ভূত করেছে। বিভিন্ন নেতাকে নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র এবং কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিচ্ছে। আমাদের দল ভাঙার ষড়যন্ত্রের সঙ্গেও তারা জড়িত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক নিখাদ খবরকে বেলেন, এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাদের গড় বয়স ২৫ থেকে ৩০ বছর। দেশের রাজনীতিতে তার চেয়ে বেশি বয়সী বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, দিচ্ছেন। দলকে সাসটেইনেবল করার জন্য কাঠামো তারা তৈরি করতে পারেনি । এটা বয়সের জন্য হতে পারে, অভিজ্ঞতার জন্য হতে পারে।
মুতা বিয়ার নামে কুমারীদের ইজ্জত নষ্ট করছে ধনাঢ্য এক শিল্পপতি। টানা ২০ বছর ধরে খোদ রাজধানীতে এ অপকর্ম করে বেড়াচ্ছেন তিনি। সব কিছু হারিয়ে তথ্য প্রমাণ থাকার পরও লোক লজ্জার ভয়ে বিচার চাইতে পারেনি ভুক্তভোগী নারীরা।
২১ দিন আগেনিবন্ধন অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিআর) খান মো. আব্দুল মান্নান এর পাশে এখন আর কেউ নেই। আদালত খান মো. আব্দুল মান্নান ও তার স্ত্রী সাকিলা বেগমের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ব্লকের আদেশ দেয়ার পর একদিনেই পরিস্থিতি একেবারে পাল্টে গেছে।
২৮ মে ২০২৫হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে গড়ে তোলা শিল্পকারখানা নিয়ে এখন চরমভাবে শঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা। জ্বালানি সংকট, ঋণের উচ্চ সুদহার, ডলার সংকট, নিরাপত্তাহীনতা, মামলা-হামলাসহ নানান রকম সংকটে ব্যবসায়ীরা। চরম গ্যাস ও ব্যাংকিং সংকটে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দেশের কল-কারখানাগুলো।
১৮ মে ২০২৫ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিসরির বরাতে সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, ভারত ও পাকিস্তানের ডিরেক্টর জেনারেল অফ মিলিটারি অপারেশনস (ডিজিএমও) একমত হয়েছেন— উভয়পক্ষই বিকাল ৫টা থেকে স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে সব ধরনের সামরিক পদক্ষেপ বন্ধ করবে।
১০ মে ২০২৫অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান লক্ষ্য তিনটি। একটি হলো জুলাই গণহত্যার বিচার, দ্বিতীয়টি হলো সংস্কার এবং তৃতীয়টি হলো নির্বাচন। কিন্তু ১০ মাসে বিচারের কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি আমরা লক্ষ করিনি।
মুতা বিয়ার নামে কুমারীদের ইজ্জত নষ্ট করছে ধনাঢ্য এক শিল্পপতি। টানা ২০ বছর ধরে খোদ রাজধানীতে এ অপকর্ম করে বেড়াচ্ছেন তিনি। সব কিছু হারিয়ে তথ্য প্রমাণ থাকার পরও লোক লজ্জার ভয়ে বিচার চাইতে পারেনি ভুক্তভোগী নারীরা।
নিবন্ধন অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিআর) খান মো. আব্দুল মান্নান এর পাশে এখন আর কেউ নেই। আদালত খান মো. আব্দুল মান্নান ও তার স্ত্রী সাকিলা বেগমের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ব্লকের আদেশ দেয়ার পর একদিনেই পরিস্থিতি একেবারে পাল্টে গেছে।
হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে গড়ে তোলা শিল্পকারখানা নিয়ে এখন চরমভাবে শঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা। জ্বালানি সংকট, ঋণের উচ্চ সুদহার, ডলার সংকট, নিরাপত্তাহীনতা, মামলা-হামলাসহ নানান রকম সংকটে ব্যবসায়ীরা। চরম গ্যাস ও ব্যাংকিং সংকটে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দেশের কল-কারখানাগুলো।