নিখাদ খবর ডেস্ক
নেতানিয়াহু আগে থেকেই বেশ কয়েকটি স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন। চলতি বছর তার হার্নিয়া অপসারণ করা হয়েছে এবং তার আগের বছর হৃদরোগের কারণে পেসমেকার স্থাপন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে পুনরায় ইসরাইলি সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর নেতানিয়াহু একাধিকবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে তার দপ্তর জানিয়েছে। ২০২৩ সালের জুলাইয়ে নেতানিয়াহুর শরীরে পেসমেকার প্রতিস্থাপন করা হয়। এর আগে মাথা ঘোরার অভিযোগেও তাকে একবার হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল।
পরে ২০২৪ সালের মার্চে তিনি হার্নিয়া অস্ত্রোপচার করান। আর ওই বছরের ডিসেম্বরে তার প্রোস্টেট গ্রন্থি অপসারণ করা হয়।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে অব্যাহত ইসরাইলি আগ্রাসনে গাজায় এ পর্যন্ত ৬১,৭০০-এরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন (সুত্র গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস)। এছাড়া ধ্বংসস্তূপের নিচে নিখোঁজ আরো হাজার হাজার মানুষ মৃত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্ববাসীর কাছে নেতানিয়াহু এ যুগের হিটলার হিসেবে পরিচিত।
২০২৪ সালে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) থেকে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে এ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
এটিই পশ্চিমা গণতন্ত্রের আদলে তৈরি কোনো দেশের নেতার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির প্রথম ঘটনা। আইসিসি বলছে, “ক্ষুধাকে ব্যবহার করে যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের জন্য এই দুইজনকে দায়ী করার যৌক্তিক ভিত্তি রয়েছে।”
নেতানিয়াহুর জন্ম ১৯৪৯ সালে তেল আবিবে। তিনি বেড়ে উঠেছেন জেরুজালেমে। উচ্চমাধ্যমিকে পড়ার সময় তিনি পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। তাঁর বাবা ঐতিহাসিক বেনজিয়ন নেতানিয়াহু ওখানে শিক্ষকতা ও গবেষণার সুযোগ পেয়েছিলেন।
১৯৬৭ সালে নেতানিয়াহু আইডিএফের অভিজাত শাখা সাইয়েরেত মাতকালে যোগ দেন। ১৯৭২ সালে ছিনতাই হওয়া উড়োজাহাজ থেকে জিম্মি উদ্ধার অভিযান ও ১৯৭৩ সালে ইয়ম কিপ্পুর যুদ্ধে অংশ নেন। তিনি ক্যাপ্টেন পদে পদোন্নতি পেয়েছিলেন। এরপর তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসেন। স্থাপত্যকলায় স্নাতকের পর এমআইটি থেকে ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা ও হার্ভার্ডে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করেন।
‘বিবি: মাই স্টোরি’তে নেতানিয়াহু তিনটি চরিত্রের কথা বলেছেন, যাঁরা তাঁর জীবনে গভীর প্রভাব রেখেছে। এই তালিকায় আছেন তাঁর বাবা বেনজিয়ন। ১০২ বছর বয়সে ২০১২ সালে তিনি মারা যান। লেখাপড়া শেষে নেতানিয়াহু কিছুদিন বেসরকারি খাতে চাকরি করেছেন। তিনি ইসরায়েলের বৃহত্তম আসবাব প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেছেন। টাকার জন্য চাকরিটা করেছিলেন বটে, তবে বিক্রির এই কৌশল তিনি আর জীবনেও ভোলেননি। বাগাড়ম্বর আর ধোঁকা দেওয়ার সব উপায়ই তিনি শিখে নিয়েছিলেন সে সময়।
১৯৮২ সালে তিনি ওয়াশিংটনে ফিরে যান ইসরায়েলের উপরাষ্ট্রদূত হিসেবে। চোস্ত মার্কিন উচ্চারণে ইংরেজি বলা নেতানিয়াহু অল্পদিনের মধ্যে মার্কিন টেলিভিশনের পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন। উগ্রবাদিতা ছিল তাঁর ট্রেডমার্ক। শুরু থেকেই মিথ্যা প্রচারণা চালিয়েছেন তিনি। যেমন বুক ফুলিয়ে বলেছেন, ইহুদিরা আরবদের জমি দখল করেনি, বরং আরবরাই ইহুদিদের জমি দখল করেছে। ইহুদিরাই এ অঞ্চলের প্রকৃত বাসিন্দা। আরবরা উপনিবেশ করেছে।
জাতিসংঘে তাঁর কাজ ছিল ডানপন্থী নেতা ও প্রধানমন্ত্রী আইজ্যাক শামিরের পক্ষে সপাটে কথা বলে যাওয়া। তিনি নিয়মিত নাইটলাইন ও ইউএস নিউজে হাজির হতেন। সেখানেও আলোকচিত্রীদের বলা ছিল এমনভাবে ক্যামেরা ধরতে হবে, যেন তাঁর ঠোঁটের ওপরের কাটা দাগ দেখা না যায়। উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় তিনি জেরুজালেম থেকে একটা আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন। হঠাৎ সাইরেন বেজে উঠলে তিনি মুখে মাস্ক পরে আলোচনা চালিয়ে যান।
১৯৮৮ সালে নেতানিয়াহু দেশে ফিরে আসেন। ইসরায়েলের পার্লামেন্ট কেনেসেটে তিনি লিকুদের সদস্য হিসেবে আসন পান এবং উপপররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন। উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ইসরায়েলের পক্ষে মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করেন।
১৯৯২ সালে লেবার পার্টি লিকুদের রাজনৈতিক প্রভাবকে চূর্ণ করে দেয়। আইজ্যাক রাবিন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন এবং ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাতের সঙ্গে শান্তি আলোচনা শুরু করেন। পরের বছর নেতানিয়াহু তাঁর একদা ‘বস’ শামিরকে সরিয়ে লিকুদের চেয়ারম্যান হন। শান্তি আলোচনা ও পরবর্তীকালে অসলো শান্তি চুক্তি নিয়ে সুযোগ পেলেই তিনি একহাত নিতে শুরু করেন। তিনি ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে শান্তি আলোচনার ঘোর বিরোধী ছিলেন।
১৯৯৫ সালের অক্টোবরে জেরুজালেমের এক প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি তাঁর কুখ্যাত ‘বেলকনি স্পিচ’ দেন। সমাবেশে রাবিনকে নাৎসি হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। নেতানিয়াহু পরে দাবি করেন, ওই সমাবেশে উত্তেজক এমন কিছু বলা হয়নি। যদিও লিকুদের যে রাজনীতিকেরা সে সময় সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, তাঁরা ঠিকই বুঝতে পারছিলেন কী ঘটতে চলেছে। এক মাস পর উগ্রবাদী ইহুদি তেল আবিবে একটি শান্তি সমাবেশের শেষে রাবিনকে হত্যা করে।
পরের বছর নির্বাচনে নেতানিয়াহু জয়লাভ করেন। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী দপ্তরের ভাষ্য, নেতানিয়াহু হেবরন ও ওয়াই শান্তি চুক্তি করেন ফিলিস্তিনের সঙ্গে। তিনি বৈদেশিক মুদ্রা নীতিমালাকে শিথিল করেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বেসরকারি খাতে স্থানান্তর করেন এবং বাজেটঘাটতি কমিয়ে আনেন। তাঁর সময় বৈদেশিক বিনিয়োগ শীর্ষে পৌঁছায়।
নির্ধারিত সময়ের ১৭ মাস আগে ডাকা নির্বাচনে ১৯৯৯ সালে নেতানিয়াহু লেবার পার্টির ইহুদ বারাকের কাছে পরাজিত হন। তিনি লিকুদ থেকেও সরে দাঁড়ান এ সময়। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন অ্যারিয়েল শ্যারন। ২০০১ সালে শ্যারন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলে আবারও সরকারে ফেরেন নেতানিয়াহু। এবার তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। অধিকৃত গাজা উপত্যকা থেকে ইহুদি বসতি প্রত্যাহারের প্রতিবাদে ২০০৫ সালে তিনি পদত্যাগ করেন।
তবে নেতানিয়াহুকে খুব বেশি দিন ক্ষমতার বাইরে থাকতে হয়নি। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে শ্যারন কোমায় চলে যাওয়ার আগে লিকুদ পার্টি ছেড়ে শ্যারন কাদিমা নামের মধ্যপন্থী একটি দল গঠন করেছিলেন। ফলে নেতানিয়াহু আবারও লিকুদের নেতৃত্বে আসেন এবং ২০০৯ সালের মার্চে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন। এ দফায় তিনি প্রায় ১০ মাস অধিকৃত পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপন বন্ধ রেখেছিলেন। প্রকাশ্যে সে সময় স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের কথাও বলেছিলেন। তবে এ সবই ছিল মুখের কথা।
তিনি কখনো স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে ছিলেন না। ২০১৯ সালে তিনি ইসরায়েল রেডিওকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিন রাষ্ট্র কখনই হবে না। মানুষ যেমনটি বলছে, তেমনটি তো নয়ই। এটা কখনই হবে না।’
এক যুগের মধ্যে ২০২১ সালে চতুর্থবারের মতো ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে আবারও সংঘাত দেখা দেয়। এর আগে তাঁর পতনের জন্য বিরোধীপক্ষগুলো এককাট্টা হয়েছিল। কিন্তু অমীমাংসিত একাধিক নির্বাচনের পর তাঁরা নেতানিয়াহুর বিরোধিতার পথ থেকে সরে আসেন। তাঁর পেছনেই এসে দাঁড়ান।
২০২২ সালের নভেম্বরে পঞ্চমবারের মতো নির্বাচিত হয়ে নেতানিয়াহু ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে কট্টর সরকার গঠন করেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, রাজনৈতিক বিভেদ ভুলে সবার হয়ে উঠবেন। কিন্তু সরকার গঠন করেই তিনি বিচার বিভাগ সংস্কারের প্রস্তাব আনলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে লাগাতার প্রতিবাদ সভা চলছে। ৭৫ বছর আগে ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার পর কখনো এত বড় প্রতিবাদ সভা দেখেনি দেশটির লোকজন।
বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বড় সংকটের মুখোমুখি এখন। দেশটির বিচার বিভাগ যেভাবে চলছিল, তিনি আর সেভাবে চলতে দিতে চান না।
নেতানিয়াহু শুধু নিজেকে মধ্যপ্রাচ্যের উইনস্টন চার্চিল মনে করেন না। তিনি মনে করেন, তিনি মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমাদের প্রতিনিধি। এই যুদ্ধ শুরুর পর তাঁকে আমরা বলতে শুনি, ‘আমরা হলাম আলোর সন্তান, আর ওরা অন্ধকারের।’ এটা যে তিনি শুধু মুখে বলেন, তা–ই নয়। এটা তাঁর বিশ্বাস। সে কারণে তিনি গাজার সঙ্গে অন্তহীন সংঘাত চালিয়ে যাচ্ছেন।
তবে পশ্চিমাদের স্বঘোষিত প্রতিনিধি হিসেবে নিজেকে ঘোষণা দিলেও পশ্চিমা নেতাদের অনেকেই তাঁকে পছন্দ করেন না। তবে প্রতিটি সংঘাতেই নেতানিয়াহুর ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পেয়েছে। কিন্তু এক ট্রাম্প বাদে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্টই ঠিক তাঁর বন্ধু নয়।
নেতানিয়াহুর সঙ্গে বারাক ওবামার সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত খারাপ। ২০১৫ সালে নেতানিয়াহু কংগ্রেসে এক বক্তৃতায় পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ইরানের সঙ্গে চুক্তি করায় যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করেন। এতে ওবামা প্রশাসন অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হয়। প্রশাসন নেতানিয়াহুর এ সফরকে ক্ষতিকর বলে উল্লেখ করে। আরও বলে, নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নাক গলিয়েছেন।
পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপন নিয়েও ওবামার প্রতিক্রিয়া ছিল কঠোর। নেতানিয়াহু নিজেই তাঁর স্মৃতিকথায় লিখেছেন, ওভাল অফিসে তিনি ওবামার সঙ্গে দেখা করতে যান। সৌজন্যমূলক কোনো কথাবার্তা ছাড়াই ওবামা তাঁর ওপর চড়াও হন।
নেতানিয়াহু আগে থেকেই বেশ কয়েকটি স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন। চলতি বছর তার হার্নিয়া অপসারণ করা হয়েছে এবং তার আগের বছর হৃদরোগের কারণে পেসমেকার স্থাপন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে পুনরায় ইসরাইলি সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর নেতানিয়াহু একাধিকবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে তার দপ্তর জানিয়েছে। ২০২৩ সালের জুলাইয়ে নেতানিয়াহুর শরীরে পেসমেকার প্রতিস্থাপন করা হয়। এর আগে মাথা ঘোরার অভিযোগেও তাকে একবার হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল।
পরে ২০২৪ সালের মার্চে তিনি হার্নিয়া অস্ত্রোপচার করান। আর ওই বছরের ডিসেম্বরে তার প্রোস্টেট গ্রন্থি অপসারণ করা হয়।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে অব্যাহত ইসরাইলি আগ্রাসনে গাজায় এ পর্যন্ত ৬১,৭০০-এরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন (সুত্র গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস)। এছাড়া ধ্বংসস্তূপের নিচে নিখোঁজ আরো হাজার হাজার মানুষ মৃত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্ববাসীর কাছে নেতানিয়াহু এ যুগের হিটলার হিসেবে পরিচিত।
২০২৪ সালে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) থেকে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে এ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
এটিই পশ্চিমা গণতন্ত্রের আদলে তৈরি কোনো দেশের নেতার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির প্রথম ঘটনা। আইসিসি বলছে, “ক্ষুধাকে ব্যবহার করে যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের জন্য এই দুইজনকে দায়ী করার যৌক্তিক ভিত্তি রয়েছে।”
নেতানিয়াহুর জন্ম ১৯৪৯ সালে তেল আবিবে। তিনি বেড়ে উঠেছেন জেরুজালেমে। উচ্চমাধ্যমিকে পড়ার সময় তিনি পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। তাঁর বাবা ঐতিহাসিক বেনজিয়ন নেতানিয়াহু ওখানে শিক্ষকতা ও গবেষণার সুযোগ পেয়েছিলেন।
১৯৬৭ সালে নেতানিয়াহু আইডিএফের অভিজাত শাখা সাইয়েরেত মাতকালে যোগ দেন। ১৯৭২ সালে ছিনতাই হওয়া উড়োজাহাজ থেকে জিম্মি উদ্ধার অভিযান ও ১৯৭৩ সালে ইয়ম কিপ্পুর যুদ্ধে অংশ নেন। তিনি ক্যাপ্টেন পদে পদোন্নতি পেয়েছিলেন। এরপর তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসেন। স্থাপত্যকলায় স্নাতকের পর এমআইটি থেকে ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা ও হার্ভার্ডে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করেন।
‘বিবি: মাই স্টোরি’তে নেতানিয়াহু তিনটি চরিত্রের কথা বলেছেন, যাঁরা তাঁর জীবনে গভীর প্রভাব রেখেছে। এই তালিকায় আছেন তাঁর বাবা বেনজিয়ন। ১০২ বছর বয়সে ২০১২ সালে তিনি মারা যান। লেখাপড়া শেষে নেতানিয়াহু কিছুদিন বেসরকারি খাতে চাকরি করেছেন। তিনি ইসরায়েলের বৃহত্তম আসবাব প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেছেন। টাকার জন্য চাকরিটা করেছিলেন বটে, তবে বিক্রির এই কৌশল তিনি আর জীবনেও ভোলেননি। বাগাড়ম্বর আর ধোঁকা দেওয়ার সব উপায়ই তিনি শিখে নিয়েছিলেন সে সময়।
১৯৮২ সালে তিনি ওয়াশিংটনে ফিরে যান ইসরায়েলের উপরাষ্ট্রদূত হিসেবে। চোস্ত মার্কিন উচ্চারণে ইংরেজি বলা নেতানিয়াহু অল্পদিনের মধ্যে মার্কিন টেলিভিশনের পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন। উগ্রবাদিতা ছিল তাঁর ট্রেডমার্ক। শুরু থেকেই মিথ্যা প্রচারণা চালিয়েছেন তিনি। যেমন বুক ফুলিয়ে বলেছেন, ইহুদিরা আরবদের জমি দখল করেনি, বরং আরবরাই ইহুদিদের জমি দখল করেছে। ইহুদিরাই এ অঞ্চলের প্রকৃত বাসিন্দা। আরবরা উপনিবেশ করেছে।
জাতিসংঘে তাঁর কাজ ছিল ডানপন্থী নেতা ও প্রধানমন্ত্রী আইজ্যাক শামিরের পক্ষে সপাটে কথা বলে যাওয়া। তিনি নিয়মিত নাইটলাইন ও ইউএস নিউজে হাজির হতেন। সেখানেও আলোকচিত্রীদের বলা ছিল এমনভাবে ক্যামেরা ধরতে হবে, যেন তাঁর ঠোঁটের ওপরের কাটা দাগ দেখা না যায়। উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় তিনি জেরুজালেম থেকে একটা আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন। হঠাৎ সাইরেন বেজে উঠলে তিনি মুখে মাস্ক পরে আলোচনা চালিয়ে যান।
১৯৮৮ সালে নেতানিয়াহু দেশে ফিরে আসেন। ইসরায়েলের পার্লামেন্ট কেনেসেটে তিনি লিকুদের সদস্য হিসেবে আসন পান এবং উপপররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন। উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ইসরায়েলের পক্ষে মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করেন।
১৯৯২ সালে লেবার পার্টি লিকুদের রাজনৈতিক প্রভাবকে চূর্ণ করে দেয়। আইজ্যাক রাবিন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন এবং ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাতের সঙ্গে শান্তি আলোচনা শুরু করেন। পরের বছর নেতানিয়াহু তাঁর একদা ‘বস’ শামিরকে সরিয়ে লিকুদের চেয়ারম্যান হন। শান্তি আলোচনা ও পরবর্তীকালে অসলো শান্তি চুক্তি নিয়ে সুযোগ পেলেই তিনি একহাত নিতে শুরু করেন। তিনি ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে শান্তি আলোচনার ঘোর বিরোধী ছিলেন।
১৯৯৫ সালের অক্টোবরে জেরুজালেমের এক প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি তাঁর কুখ্যাত ‘বেলকনি স্পিচ’ দেন। সমাবেশে রাবিনকে নাৎসি হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। নেতানিয়াহু পরে দাবি করেন, ওই সমাবেশে উত্তেজক এমন কিছু বলা হয়নি। যদিও লিকুদের যে রাজনীতিকেরা সে সময় সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, তাঁরা ঠিকই বুঝতে পারছিলেন কী ঘটতে চলেছে। এক মাস পর উগ্রবাদী ইহুদি তেল আবিবে একটি শান্তি সমাবেশের শেষে রাবিনকে হত্যা করে।
পরের বছর নির্বাচনে নেতানিয়াহু জয়লাভ করেন। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী দপ্তরের ভাষ্য, নেতানিয়াহু হেবরন ও ওয়াই শান্তি চুক্তি করেন ফিলিস্তিনের সঙ্গে। তিনি বৈদেশিক মুদ্রা নীতিমালাকে শিথিল করেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বেসরকারি খাতে স্থানান্তর করেন এবং বাজেটঘাটতি কমিয়ে আনেন। তাঁর সময় বৈদেশিক বিনিয়োগ শীর্ষে পৌঁছায়।
নির্ধারিত সময়ের ১৭ মাস আগে ডাকা নির্বাচনে ১৯৯৯ সালে নেতানিয়াহু লেবার পার্টির ইহুদ বারাকের কাছে পরাজিত হন। তিনি লিকুদ থেকেও সরে দাঁড়ান এ সময়। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন অ্যারিয়েল শ্যারন। ২০০১ সালে শ্যারন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলে আবারও সরকারে ফেরেন নেতানিয়াহু। এবার তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। অধিকৃত গাজা উপত্যকা থেকে ইহুদি বসতি প্রত্যাহারের প্রতিবাদে ২০০৫ সালে তিনি পদত্যাগ করেন।
তবে নেতানিয়াহুকে খুব বেশি দিন ক্ষমতার বাইরে থাকতে হয়নি। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে শ্যারন কোমায় চলে যাওয়ার আগে লিকুদ পার্টি ছেড়ে শ্যারন কাদিমা নামের মধ্যপন্থী একটি দল গঠন করেছিলেন। ফলে নেতানিয়াহু আবারও লিকুদের নেতৃত্বে আসেন এবং ২০০৯ সালের মার্চে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন। এ দফায় তিনি প্রায় ১০ মাস অধিকৃত পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপন বন্ধ রেখেছিলেন। প্রকাশ্যে সে সময় স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের কথাও বলেছিলেন। তবে এ সবই ছিল মুখের কথা।
তিনি কখনো স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে ছিলেন না। ২০১৯ সালে তিনি ইসরায়েল রেডিওকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিন রাষ্ট্র কখনই হবে না। মানুষ যেমনটি বলছে, তেমনটি তো নয়ই। এটা কখনই হবে না।’
এক যুগের মধ্যে ২০২১ সালে চতুর্থবারের মতো ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে আবারও সংঘাত দেখা দেয়। এর আগে তাঁর পতনের জন্য বিরোধীপক্ষগুলো এককাট্টা হয়েছিল। কিন্তু অমীমাংসিত একাধিক নির্বাচনের পর তাঁরা নেতানিয়াহুর বিরোধিতার পথ থেকে সরে আসেন। তাঁর পেছনেই এসে দাঁড়ান।
২০২২ সালের নভেম্বরে পঞ্চমবারের মতো নির্বাচিত হয়ে নেতানিয়াহু ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে কট্টর সরকার গঠন করেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, রাজনৈতিক বিভেদ ভুলে সবার হয়ে উঠবেন। কিন্তু সরকার গঠন করেই তিনি বিচার বিভাগ সংস্কারের প্রস্তাব আনলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে লাগাতার প্রতিবাদ সভা চলছে। ৭৫ বছর আগে ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার পর কখনো এত বড় প্রতিবাদ সভা দেখেনি দেশটির লোকজন।
বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বড় সংকটের মুখোমুখি এখন। দেশটির বিচার বিভাগ যেভাবে চলছিল, তিনি আর সেভাবে চলতে দিতে চান না।
নেতানিয়াহু শুধু নিজেকে মধ্যপ্রাচ্যের উইনস্টন চার্চিল মনে করেন না। তিনি মনে করেন, তিনি মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমাদের প্রতিনিধি। এই যুদ্ধ শুরুর পর তাঁকে আমরা বলতে শুনি, ‘আমরা হলাম আলোর সন্তান, আর ওরা অন্ধকারের।’ এটা যে তিনি শুধু মুখে বলেন, তা–ই নয়। এটা তাঁর বিশ্বাস। সে কারণে তিনি গাজার সঙ্গে অন্তহীন সংঘাত চালিয়ে যাচ্ছেন।
তবে পশ্চিমাদের স্বঘোষিত প্রতিনিধি হিসেবে নিজেকে ঘোষণা দিলেও পশ্চিমা নেতাদের অনেকেই তাঁকে পছন্দ করেন না। তবে প্রতিটি সংঘাতেই নেতানিয়াহুর ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পেয়েছে। কিন্তু এক ট্রাম্প বাদে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্টই ঠিক তাঁর বন্ধু নয়।
নেতানিয়াহুর সঙ্গে বারাক ওবামার সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত খারাপ। ২০১৫ সালে নেতানিয়াহু কংগ্রেসে এক বক্তৃতায় পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ইরানের সঙ্গে চুক্তি করায় যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করেন। এতে ওবামা প্রশাসন অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হয়। প্রশাসন নেতানিয়াহুর এ সফরকে ক্ষতিকর বলে উল্লেখ করে। আরও বলে, নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নাক গলিয়েছেন।
পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপন নিয়েও ওবামার প্রতিক্রিয়া ছিল কঠোর। নেতানিয়াহু নিজেই তাঁর স্মৃতিকথায় লিখেছেন, ওভাল অফিসে তিনি ওবামার সঙ্গে দেখা করতে যান। সৌজন্যমূলক কোনো কথাবার্তা ছাড়াই ওবামা তাঁর ওপর চড়াও হন।
জনপ্রিয় টিকটকার সানাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ১৭ বছর বয়সী টিকটকার সানা ইউসুফ ইতোমধ্যে পাকিস্তানে জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করছিলেন।
৪ দিন আগেচলতি বছর হজে প্রথম বারের মতো অগ্নিনির্বাপক হিসেবে ড্রোন মোতায়েন করা হচ্ছে। যার নাম দেয়া হয়েছে ‘ফ্যালকন’। এই ড্রোনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করা হয়েছে এবং এটি নির্দিষ্টভাবে অগ্নিনির্বাপক কাজের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। ড্রোনটি এমন সব স্থানে ব্যবহার করা হবে যেখানে পৌঁছানো চ্যালেঞ্জিং।
৫ দিন আগেজনপ্রিয় টিকটকার সানাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ১৭ বছর বয়সী টিকটকার সানা ইউসুফ ইতোমধ্যে পাকিস্তানে জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করছিলেন।
চলতি বছর হজে প্রথম বারের মতো অগ্নিনির্বাপক হিসেবে ড্রোন মোতায়েন করা হচ্ছে। যার নাম দেয়া হয়েছে ‘ফ্যালকন’। এই ড্রোনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করা হয়েছে এবং এটি নির্দিষ্টভাবে অগ্নিনির্বাপক কাজের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। ড্রোনটি এমন সব স্থানে ব্যবহার করা হবে যেখানে পৌঁছানো চ্যালেঞ্জিং।