কিশোরের মৃতদেহ পরিবারকে দেয়নি ইসরায়েল

গাজায় মৃত্যুর মিছিলে যুক্ত আরও ৬৪

প্রতিনিধি
নিখাদ খবর ডেস্ক
আপডেট : ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ১০: ৪৫
Thumbnail image
ছবি: সংগৃহীত

গাজায় কোনভাবেই থামছে না মৃত্যুর মিছিল। কোনো আলোচনা কিংবা সমঝোতা কিছিতেই যেন সায় নেই ইসরায়েল হানাদার বাহিনীর। এনারকীয় তাণ্ডবের শেষ মিলছে না কোনোভাবেই। শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) ভোর থেকে কমপক্ষে ৬৪ জনকে হত্যা করেছে তারা।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে আলজাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবারের হামলায় যারা নিহত হয়েছেন তাদের অধিকাংশই গাজার প্রধান শহর গাজা সিটি এবং উত্তর গাজার বাসিন্দা। তবে গতকাল মধ্য,উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চল— অর্থাৎ সর্বত্র ব্যাপক হামলা চালিয়েছে দখলদার বাহিনী।

বর্তমানে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফার কাছে শাবৌর এবং তেল আস সুলতান এলাকায় ঘাঁটি গেড়েছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। সূত্রের বরাতে জানা গেছে, এই দুই ঘাঁটি থেকেই পরিচালনা করা হয়েছে সর্বশেষ এই হামলা।

এদিকে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি এক জরুরি সতর্কতায় বলেছে, গাজার এখন খাদ্যের প্রয়োজন। কারণ লাখ লাখ মানুষ অনাহারের ঝুঁকিতে রয়েছেন। আল জাজিরার সংবাদদাতা বলছেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলের মানুষ ইসরাইলি বোমা হামলার কারণে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। ত্রাণ সরবরাহের উপর ইসরাইলি অবরোধের কারণে তাদের সন্তানরা অনাহারে থাকছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ১৮ মাস আগে গাজায় ইসরাইলি যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে কমপক্ষে ৫১,০৬৫ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১,১৬,৫০৫ জন আহত হয়েছেন। ওদিকে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস মৃতের সংখ্যা ৬১,৭০০-এরও বেশি বলে জানিয়েছে। কারণ, ধ্বংসস্তূপের নিচে নিখোঁজ হাজার হাজার মানুষকে মৃত বলে ধরে নেয়া হচ্ছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। এতে নিহত হন কমপক্ষে ১২০০ জন। পাশাপাশি আরও ২৫১ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যায় তারা। হামাসের এই হামলার প্রতিবাদে ওইদিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। এতে নিহত হয়েছেন ৫১ হাজারেরও বেশি মানুষ।

দীর্ঘ ১৫ মাস যুদ্ধের পর গত ১৯ জানুয়ারি কাতার, যুক্তরাষ্ট্র ও মিশরের মধ্যস্থতায় গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এটি ছিল তিন পর্বের। প্রথম পর্বে ছিল যুদ্ধ বন্ধ ও জিম্মি-বন্দি বিনিময় শুরু করা, দ্বিতীয় পর্বে ছিল জিম্মি-বন্দি বিনিময়ের কাজ শেষ করা এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার, তৃতীয় পর্বে ছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজাকে পুনর্গঠন।

পশ্চিম তীরে অতর্কিতে ফিলিস্তিনি এক কিশোরকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি সেনারা। কিন্তু তার মৃতদেহ পরিবারের কাছে ফেরত দেয়নি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গুলিবিদ্ধ হয় ১৬ বছর বয়সী ওই ফিলিস্তিনি বালক। এ বছরের শুরু থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে নিহত ২২তম ফিলিস্তিনি শিশু সে। ডিফেন্স ফর চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনাল-প্যালেস্টাইন (ডিসিআইপি) জানিয়েছে, নাবলুসের দক্ষিণে ওসারিন শহরের কাছে ইসরাইলি আক্রমণে জিহাদ আদহাম রেবি আদেলি নামের ওই কিশোর আরও দুই তরুণ ফিলিস্তিনির সাথে গুলিবিদ্ধ হন। তাকে উদ্ধার করতে অ্যাম্বুলেন্স ছুটে যায়। কিন্তু এর ক্রুদের ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে বাধা দেয় ইসরাইলি বাহিনী।

ডিসিআইপির আয়েদ আবু একতাইশ এক বিবৃতিতে বলেন- এখন মৃত্যুর পরেও জিহাদ বিশ্রাম নিতে পারছে না। কারণ ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ তার পরিবারকে মৃতদেহ দাফনের সুযোগ দিচ্ছে না। তার মৃতদেহ এখন আরও ৪১ টি ফিলিস্তিনি শিশুর দেহাবশেষের সাথে মিলিত হয়েছে, যারা ২০১৬ সাল থেকে ইসরাইলি বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছে এবং তাদের মৃতদেহ ইসরাইলি সামরিক বাহিনী নিয়ে গেছে। তাদের পরিবারের কাছে ফেরত দেয়নি।

ডিসিআইপি জানিয়েছে, নিহত ফিলিস্তিনিদের মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার ইসরাইলের নীতি কেবল আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘনই নয়, এটিকে শোকাহত পরিবারগুলির উপর পরিচালিত সম্মিলিত শাস্তির একটি নিষ্ঠুর উপায় হিসেবে দেখা হয়। ওদিকে ইসরাইলি মানবাধিকার গোষ্ঠী ইয়েশ দিন সতর্ক করে দিয়েছে যে, ইসরাইলি সেনাবাহিনী অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লাহ এবং এল-বিরেহ গভর্নরেটে অবস্থিত ফিলিস্তিনি গ্রামের তুরমুস আয়া’র কাছে একটি অবৈধ খামার ফাঁড়ি স্থাপনের জন্য বসতি স্থাপনকারীদের সাথে সমন্বয় করে কাজ করছে।

অধিকৃত অঞ্চলে কাজ করা এই অধিকার গোষ্ঠীটি জানিয়েছে, শিলোহ উপত্যকা অঞ্চল জুড়ে অবৈধ বসতি স্থাপনকারী ফাঁড়িগুলিতে সাম্প্রতিক দিনগুলিতে ক্যারাভান এবং পূর্বনির্মিত বাড়িঘর রয়েছে। আবারও, সেনাবাহিনী অবৈধ খামার ফাঁড়ি স্থাপনে বসতি স্থাপনকারীদের সাথে সহযোগিতা করছে, যারা রাষ্ট্রের সুরক্ষায় ফিলিস্তিনিদের তাদের জমি থেকে বিতাড়িত করার জন্য সহিংসতা ব্যবহার করে- ইয়েশ দীন সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্টে একথা বলেছেন।

ওদিকে, ফিলিস্তিনি তথ্য কেন্দ্রের খবরে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী অধিকৃত পশ্চিম তীরের হেবরনের দক্ষিণে ফাওয়ার ক্যাম্পে হামলা চালিয়েছে এবং গ্রেপ্তার অভিযান শুরু করেছে। স্থানীয় সূত্র আল জাজিরাকে জানিয়েছে, ক্যাম্পে হামলার সময় প্রায় ৩০ ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তার করেছে।

তবে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তির দ্বিতীয় পর্ব না মেনে গত ১৮ মার্চ থেকে ফের গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করলে দেড় হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে উপত্যকাটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এছাড়া অভিযান শুরুর পর থেকে উপত্যকাটিতে খাদ্য ও অন্যান্য জরুরি ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশেও বাধা দিচ্ছে দখলদার বাহিনী।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে আরও পড়ুন