গাজায় ইসরায়েলের হামলার সময় গ্রেপ্তার এক ফিলিস্তিনি বন্দীর ওপর সৈন্যদের নির্যাতনের ভিডিও ফাঁস হওয়ার ফৌজদারি তদন্তের পর শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর প্রধান আইন কর্মকর্তা ইয়িফাত টোমার-ইয়েরুশালমি পদত্যাগ করেছেন।

তিনি জানান, ২০২৪ সালের আগস্টে ভিডিওটি প্রকাশের অনুমোদন দেওয়ার দায় স্বীকার করে তিনি পদত্যাগ করছেন।

ফিলিস্তিনি বন্দীকে নির্যাতনের ঘটনায় তদন্ত শেষে পাঁচ ইসরায়েলি সেনার বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ গঠন করা হয়েছে, যা ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। এ তদন্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন কট্টর ডানপন্থী ইসরায়েলি রাজনীতিকরা। তদন্তকারী কর্মকর্তারা অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদে গেলে বিক্ষোভকারীরা দুটি সামরিক ঘাঁটিতে প্রবেশ করে।

ঘাঁটিতে অনুপ্রবেশের এক সপ্তাহ পর নির্যাতনের মুহূর্তগুলোর ধারণ করা একটি নিরাপত্তা ক্যামেরার ভিডিও ইসরায়েলের এন১২ নিউজ ফাঁস করে দেয়।

ভিডিওতে দেখা গেছে, সৈন্যরা এক বন্দীকে আলাদা স্থানে নিয়ে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁদের সঙ্গে একটি কুকুর রয়েছে। তাঁরা দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণের সরঞ্জাম ব্যবহার করে নিজেদের কার্যকলাপ এমনভাবে আড়াল করে রেখেছেন, যাতে কেউ দেখতে না পারে।

বুধবার (২৯ অক্টোবর) ইসরায়েলের কট্টরপন্থী প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বলেন, ভিডিও ফাঁসের বিষয়ে ফৌজদারি তদন্ত চলছে। তোমের-ইয়েরুশালমিকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।

টোমার-ইয়েরুশালমি আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেছেন, সামরিক বাহিনীর আইন বিভাগের বিরুদ্ধে অপপ্রচারকে প্রতিহত করার প্রচেষ্টা হিসেবে এই ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছিল। যে বিভাগকে আইনের শাসন বজায় রাখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যুদ্ধের সময় সেটা কলঙ্কের শিকার হয়েছে।

কর্মকর্তার মতে, সহিংসতার ঘটনাগুলোর অবশ্যই তদন্ত হওয়া উচিত

সদে তেইমান আটক কেন্দ্র থেকে পাওয়া ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, ৭ অক্টোবরের হামলায় জড়িত কিছু হামাস যোদ্ধা ও গাজায় অভিযানের সময় আটক ফিলিস্তিনিদের ওই কেন্দ্রে রাখা হয়েছিল। মানবাধিকার সংগঠনগুলো জানিয়েছে, ইসরায়েলি হেফাজতে ফিলিস্তিনি বন্দীদের ওপর ভয়াবহ নির্যাতন চালানো হয়েছে। এসব ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তদন্ত করছে, যদিও তারা দাবি করছে—নির্যাতন ছিল না পদ্ধতিগত।

পদত্যাগপত্রে আইন কর্মকর্তা তোমের ইয়েরুশালমি আটক ব্যক্তিদের ‘সবচেয়ে নিকৃষ্ট সন্ত্রাসী’ হিসেবে উল্লেখ করলেও সন্দেহজনক নির্যাতনের তদন্তের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করেননি।

ইসরায়েলের উগ্রপন্থী রাজনীতিকরা তাঁর পদত্যাগকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বলেন, যারা ইসরায়েলি সেনাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তোলে, তারা সেনা পোশাক পরার যোগ্য নন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইতামার বেন-গভির তোমেরের পদত্যাগকে স্বাগত জানিয়ে জড়িত আরও আইন কর্মকর্তাদের তদন্তের আহ্বান জানান।

বেন-গভির নিজেই এক ভিডিও প্রকাশ করেন, যেখানে তিনি ইসরায়েলি কারাগারে মেঝেতে বাঁধা ফিলিস্তিনি বন্দীদের ওপর দাঁড়িয়ে আছেন এবং বলেন, ৭ অক্টোবরের হামলাকারীদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া উচিত।

সম্প্রতি যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে গাজার প্রায় ১,৭০০ ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হয় ২০ ইসরায়েলি বন্দীর বিনিময়ে। তাঁদের কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, বন্দিদশায় ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

অন্যদিকে, হামাসের হাতে আটক তিন ইসরায়েলি বন্দী জানিয়েছেন, বেন-গভিরের উসকানিমূলক মন্তব্যের পর তাঁদের ওপর নির্যাতন বেড়ে যেত। জবাবে বেন-গভির দাবি করেছেন, এসব অভিযোগ কেবল হামাসের পক্ষেই সুবিধা করছে।