কালিগঞ্জ সরকারি হাসপাতাল কার্যত অচল

চিকিৎসক সংকটে বন্ধ জরুরি বিভাগ সমূহ : নষ্ট অ্যাম্বুলেন্স

প্রতিনিধি
Thumbnail image

চিকিৎসক সংকটে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এর ফলে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। বর্তমানে হাসপাতালে ৩৪ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন মাত্র ৩ জন। এ অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর ডেন্টাল বিভাগ, রেডিওগ্রাফি, অপারেশন থিয়েটার বন্ধ হয়ে গেছে। আর অ্যাম্বুলেন্স সেবা তো দীর্ঘদিন ধরে অচল হয়ে পড়েছে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল। এ হাসপাতালে নিয়মিত কর্মরত থাকার কথা তালিকা অনুযায়ী ১৬৮ জন। তারাই বিভিন্ন স্তরে দায়িত্ব পালন করবেন। সে হিসেবে হাসপাতালের মোট জনবলের সংখ্যা নির্দিষ্ট নিয়মে নির্ধারিত হলে, কনসালট্যান্ট (বিভিন্ন বিভাগ), রেসিডেন্ট/মেডিক্যাল অফিসার, ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল অফিসার। সিনিয়র স্টাফ নার্স, স্টাফ নার্স, মিডওয়াইফ। ল্যাব টেকনিশিয়ান, এক্স-রে/ইমেজিং টেকনিশিয়ান, ফার্মাসিস্ট। ওয়ার্ড বয়/আয়া, ওয়ার্ড মাস্টার, ক্লিনার, ক্যাটারিং স্টাফ।

ম্যানেজার, হিসাবরক্ষক, রিসেপশনিস্ট।

২৪ ঘণ্টা সেবা প্রদানের জন্য ৩ শিফটে কাজ করবেন। চিকিৎসক সংকট থাকার কারণে ২৫ জন স্টাফ নার্স, মিডওয়াইফ, টেকনোলোজিস্ট, ওয়ার্ড বয় থেকে মালি পর্যন্ত বসে বসে সময় কাটাচ্ছেন ও বেতন সুবিধাদি ভোগ করছেন চিকিৎসা সেবা প্রদান ব্যতিত। অথচ খবরের অন্তরালে সরকারী ঔষধ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সুবিধাদি লুটপাট করা হচ্ছে এমন অভিযোগ ভুক্তভোগী রোগীদের।

বুধবার দিনব্যাপী সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়মিত কর্মরত আছেন মাত্র তিনজন চিকিৎসক। এর বাইরে ডা. এ এম মুসাদ্দিক হোসাইন খান সপ্তাহে মাত্র দুই দিন রোগী দেখেন এবং ডা. গৌতম চক্রবর্তী সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করেন বিধায় কালিগঞ্জে পূর্ণ সময় উপস্থিত থাকেন না। ফলে প্রতিদিন শত শত রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তিনজন চিকিৎসকের।

চিকিৎসক সংকটের কারণে হাসপাতালে আসা রোগীদের ভোগান্তির শেষ নেই। বিশেষ করে ইমার্জেন্সি বিভাগে স্ট্রোক ও দুর্ঘটনায় আহত রোগীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে রোগী ভর্তি দেখিয়ে সাতক্ষীরা সদর বা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হচ্ছে। রোগীদের অভিযোগ, রেফার্ডের নামে সময় ক্ষেপণ করা হয়। এতে পথিমধ্যে রোগীর অবস্থা আরও গুরুতর হয়ে পড়ে, এমনকি মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, হাসপাতালের ভেতর ও আশপাশে সক্রিয় রয়েছে একটি দালাল চক্র। তারা রোগীদের অ্যাম্বুলেন্স ঠিক করে দেওয়ার নাম করে টাকা আদায় করছে, আবার অনেককে বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালে নিতে প্রলুব্ধ করছে। ফলে রোগীরা একদিকে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে আর্থিকভাবে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে।

শফিকুল ইসলাম নামে এক রোগী অভিযোগ করে বলেন, ডাক্তার দেখানোর পর ওষুধ নিতে গেলে প্যারাসিটামল আর পেট কামড়ানোর ওষুধ ছাড়া কিছুই পাই না। ডাক্তার নেই, ওষুধ নেই, নামে মাত্র সরকারি হাসপাতাল।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকারি হাসপাতালের এই বেহাল অবস্থার সুযোগ নিয়ে কালিগঞ্জের বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলো রমরমা ব্যাবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে কালিগঞ্জ উপজেলার প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

স্থানীয় আইনজীবী অ্যাডভোকেট জাফর উল্লাহ ইব্রাহিম বলেন, সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো, কালিগঞ্জ হাসপাতালে ডাক্তার নেই। রোগীরা প্রতারিত হচ্ছে, দালালের খপ্পরে পড়ছে। কোনো চিকিৎসা না দিয়ে শুধু ‘রেফার্ড’ করে হাজার হাজার টাকা নষ্ট করানো হচ্ছে।

এ বিষয়ে কালিগঞ্জ উপজেলা ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রূপা রানী পাল বলেন, আমাদের ডাক্তার সংকট চরমে। আমি সহ মোট তিনজন চিকিৎসক দিয়ে হাসপাতাল চালানো হচ্ছে। এখানে ৩৪ জন চিকিৎসক থাকার কথা। এই মুহূর্তে আমার সাথে আছে ডা. অঞ্জন এবং ডা. আজাদুল হক। তবে আরও চিকিৎসক পদায়ন করা হলে সেবার মান উন্নত হবে। এছাড়া সম্ভব নয়।

স্থানীয় লোকজনের দাবী, দ্রুত কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক নিয়োগ, বন্ধ থাকা বিভাগগুলো চালু করা, অ্যাম্বুলেন্স মেরামত ও দালাল চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে জনস্বাস্থ্য চরম ঝুঁকির মুখে পড়বে।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

জেলা নিয়ে আরও পড়ুন

তীব্র শৈত্যপ্রবাহে যখন উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে জনজীবন চরমভাবে বিপর্যস্ত, ঠিক সেই সময় অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে আন্তর্জাতিক সেবামূলক সংস্থা ‘জাকাত ফাউন্ডেশন অব আমেরিকা, বাংলাদেশ’।

১ ঘণ্টা আগে

চিকিৎসক সংকটে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এর ফলে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। বর্তমানে হাসপাতালে ৩৪ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন মাত্র ৩ জন।

১ ঘণ্টা আগে

বার্মাছড়ি মুখ এলাকা থেকে ঝিরিপথে পাচারকৃত বিপুল পরিমাণ অবৈধ কাঠ জব্দ করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। সকালে মগকাটা এলাকায় পরিচালিত এক অভিযানে ঘটনাস্থল থেকে ৫৩০ পিস অবৈধ কাঠ উদ্ধার করা হয়। জব্দকৃত কাঠের পরিমাণ আনুমানিক এক হাজার ষাট ঘনফুট, যার বাজারমূল্য প্রায় চার লক্ষ সাতাত্তর হাজার টাকা।

২ ঘণ্টা আগে

সংঘাত নয়, শান্তি ও সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ি এ স্লোগানকে সামনে রেখে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে জেন্ডার সচেতনতা ও সহিংসতা প্রতিরোধ বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

৬ ঘণ্টা আগে