মুজিব শতবার্ষিকীর সভাপতি জেলে, সদস্য সচিব মিয়ান কৃষি সচিব

হাজার কোটি অনিয়ম করেও কৃষি সচিব!

Thumbnail image
ছবি: সংগৃহীত

মুজিব শতবর্ষ উদ্‌যাপন কমিটির সভাপতি কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরি হত্যা মামলায় কারাগারে রয়েছেন। অথচ মুজিব শতবর্ষ উদ্‌যাপন কমিটির সদস্য সচিব ৪ হাজার কোটি টাকা লুটপাটের নায়ক এমদাদ উল্লাহ মিয়ান (৫৭০৪) এখনো কৃষি সচিব হিসেবে বহাল আছেন। হাসিনার পরীক্ষিত এই আমলা কৃষি সচিব স্বৈরাচারের দোসর। মুজিব শতবর্ষ উদ্‌যাপন কমিটির সদস্য-সচিব থাকা অবস্থায় এমন কোন অনিয়ম নেই যে তিনি করেননি।

আওয়ামী লীগের ৪ বছর ফাস্ট সেক্রেটারি (উপসচিব) হিসেবে বাংলাদেশ হাই কমিশন, কানাডায় কর্মরত ছিলেন তিনি। আওয়ামী কোর গ্রুপের সাথে এখনো সম্পর্ক রেখে চলছেন তিনি । তিনি একজন দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত। মুজিব শতবার্ষিকী উদ্‌যাপনের নাম করে জনগণের হাজার কোটি তছরুপ, ভোল পাল্টে কৃষি সচিব মিয়ান এখন ধরেছেন নতুন রূপ। হাসিনার আমলে খুন গুমসহ বিদেশে অর্থপাচারের সাথে জড়িত তিনি। বিভিন্ন দপ্তরের আমলাদের দায় থেকে মুক্তি দিতে এ দপ্তর থেকে ও দপ্তরে পদোন্নতি কখনো চলতি দায়িত্ব দিয়ে স্থানান্তর করা হচ্ছে।

শেখ হাসিনা পালিয়ে বিদেশে থেকেও যেন মিয়ানদের মাধ্যমে তার আধিপত্য ধরে রেখেছেন দেশের মধ্যে। এমনই এক কর্তার অবস্থান মিলেছে কৃষি মন্ত্রণালয়ে। মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে সারা দেশে ১০ হাজারের বেশি ম্যুরাল, স্মারক নির্মাণকে কেন্দ্র করে ব্যাপক দুর্নীতি, অস্বচ্ছতা এবং দলীয়করণের অভিযোগ উঠেছে মিয়ানের বিরুদ্ধে।

ড. মিয়ান ছিলেন প্রকল্প বাস্তবায়নের অন্যতম প্রধান কর্তা। তিনি বর্তমানে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, মন্ত্রণালয়ে তিনি একই ধরনের দলীয় পক্ষপাত ও আমলাতান্ত্রিক স্বার্থে পরিচালিত নীতি অনুসরণ করছেন। দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে। এই তদন্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর বোন শেখ রেহানা এবং তৎকালীন মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীর নাম এসেছে। কামাল আবদুল নাসের বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।

গত ২৪ শে মার্চ দুর্নীতি দমন কমিশনের এক উপ পরিচালক নাম না প্রকাশের শর্তে গণমাধ্যমকে জানান, বঙ্গবন্ধু শতবার্ষিকী উদ্‌যাপন কমিটির সদস্য সচিব ও বর্তমান কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ডঃ মুহাম্মদ এমদাদুল্লাহ মিয়ান এর বিরুদ্ধে দুদক চেয়ারম্যান বরাবর ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম তুহিনের লিখিত এক অভিযোগ আমলে নিয়েছে দুদক। তিনি আরো জানান অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে, এবং বিস্তর অনুসন্ধান চলমান রয়েছে।

অভিযোগ উঠে মুজিব জন্মশতবার্ষিকী উদ্‌যাপনের নামে প্রায় ২০০ কোটি টাকা খরচ করেন তিনি। নিয়ম বহির্ভূতভাবে পদ্মাসেতু ও গোপালগঞ্জভিত্তিক কয়েকটি প্রকল্প কোনরূপ সম্ভাব্যতা যাচাই ব্যতিরেকেই অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাথে বিশেষ সম্পর্ক ও স্বীয় প্রভাব খাটান। তিনি গাজীপুরে রহিমা-ফজল মেমোরিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ নামে একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। এই প্রতিষ্ঠানের জন্য সরকারী উন্নয়ন তহবিল থেকে নানা প্রক্রিয়ায় প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেন।

কৃষি সচিব মিয়ানের বিরুদ্ধে ফ্যাসিবাদ বিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দের ব্যানারে সম্প্রতি টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে তার অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে। মিয়ানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে, বিতর্কিত প্রকল্প অনুমোদন, মাঠ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে আওয়ামীপন্থি কর্মকর্তাদের পুনর্বাসন ও নিয়োগে তার সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে। বিশেষ করে জুলাই গণঅভ্যুত্থান এর সময় আওয়ামী সরকারের পক্ষে অবস্থান নেওয়া যে-সব আমলা বিবৃতি ও সভা-সমাবেশে অংশ নেন, তাদের অনেকেই পরবর্তীতে পুনর্বাসিত হন। তাদের সবাই আত্মগোপনে থেকে এমদাদ উল্লাহ মিয়ানের ছত্রচ্ছায়ায় পুনর্বাসিত হয়েছেন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন বিভাগে গণঅভ্যুত্থানের বিপক্ষে অংশ নেওয়া কথিত স্বৈরাচারের দোসরদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে পদায়নের বিষয়টি স্পষ্ট।

বর্তমানে কৃষি সচিব হিসেবে দায়িত্বে থাকা এমদাদ উল্লাহ মিয়ানের বিরুদ্ধে কৃষি প্রশাসনে দলীয় পক্ষপাতের অভিযোগ রয়েছে। মাঠ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে আওয়ামীপন্থি কর্মকর্তাদের পুনর্বাসন ও নিয়োগে তার সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে। বিশেষ করে জুলাই গণঅভ্যুত্থান-এর সময় আওয়ামী সরকারের পক্ষে অবস্থান নেওয়া যে-সব আমলা বিবৃতি ও সভা-সমাবেশে অংশ নেন, তাদের অনেকেই পরবর্তীতে পুনর্বাসিত হন। তাদের কেউ সরাসরি না হলেও এমদাদ উল্লাহ মিয়ানের ছত্রছায়া পুনর্বাসিত হয়েছেন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পদায়নে এই প্রভাব স্পষ্ট।

বিগত সরকারের সুবিধাভোগীদের কারণে কার্যত সারাদেশে পতিত ফ্যাসিবাদ সমর্থিতরা পুনর্বাসিত হচ্ছে। সরকারের এসব কর্মকাণ্ড কৌশলে তারা ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে। সচিবালয়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও পতিত সরকারের ঘনিষ্ঠদের কাছে সহসাই পৌঁছে যাচ্ছে। বিগত বড় বড় দুর্নীতি সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় ফাইলপত্র সরিয়ে ফেলারও অভিযোগ উঠেছে।

সম্প্রতি দুই দিনের অফিশিয়াল সফরের শেষদিন নোয়াখালীতে ছাত্র-জনতার তোপের মুখে পড়েন তিনি। এসময় আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী আমলা হিসেবে পরিচিত এমদাদ উল্লাহ মিয়াকে দীর্ঘ সময় অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। এসময় কৃষি সচিব এমদাদ উল্লাহ মিয়াকে নোয়াখালীতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়।

পরে পুলিশের সহায়তায় নোয়াখালী থেকে বের হতে তিনি সক্ষম হন। আন্দোলনকারীদের দাবি, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের পাশাপাশি, আওয়ামী দোসর যারা আছে, তাদেরও সকল জায়গা থেকে অপসারণ করতে হবে। জুলাই-আগস্টের রক্তের সঙ্গে যারা বেইমানি করবে, তাদের বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না।

উল্লেখ্য, এই কৃষি সচিব কুষ্টিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, মুজিব শতবর্ষ উদ্‌যাপন কমিটির সদস্যসচিব এবং আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনকারী হিসেবে পরিচিত।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

দুর্নীতি নিয়ে আরও পড়ুন

মুজিব শতবর্ষ উদ্‌যাপন কমিটির সভাপতি কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরি হত্যা মামলায় কারাগারে রয়েছেন। অথচ মুজিব শতবর্ষ উদ্‌যাপন কমিটির সদস্য সচিব ৪ হাজার কোটি টাকা লুটপাটের নায়ক এমদাদ উল্লাহ মিয়ান (৫৭০৪) এখনো কৃষি সচিব হিসেবে বহাল আছেন।

৭ ঘণ্টা আগে

সাতক্ষীরা সহকারী পুলিশ সুপার( তালা সার্কেল ) হাসানুর রহমান খান জানান, এঘটনায় মা পারুল বেগমকে আটক করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে ।

১২ ঘণ্টা আগে

রাজধানীর মিরপুর থেকে জমি নিয়ে জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার মামলার ৩ আসামিকে গ্রেফতার করেছে পল্লবী থানা পুলিশ। এরা হলেন-জয়নাল আবেদীন, জালাল এবং কাউসার। আসামিদের আদালতে হাজির করার প্রক্রিয়া চলছে।

১ দিন আগে

জ্ঞাত আয় বহির্ভূত এসব টাকা দিয়ে ঝিনাইদহ ছাড়াও তাঁর নিজ জেলা মাগুরা, যশোর ও নড়াইলে নামে-বেনামে গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। এমনকি আওয়ামী লীগ শাসনামলে বিধি বহির্ভূত ভাবে পদায়ন ও জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নিয়েছেন তিনি।

২ দিন আগে