উপদেষ্টা ও সচিবের অপসারণে খাগড়াছড়ির সংগঠনগুলোর আল্টিমেটাম
এইচ এম প্রফুল্ল
পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের বৈষম্যমূলক,গায়েবি প্রকল্পে অর্থ ও খাদ্যশস্য বরাদ্দে ফুঁসে উঠছে পাহাড়ি জেলা খাগড়াছড়ি। বৈষম্যের প্রতিবাদে প্রতিদিন খাগড়াছড়িতে বিভিন্ন সংগঠন বিক্ষোভ সমাবেশ, মানববন্ধন ও সাংবাদিক সম্মেলন প্রধান উপদেষ্টার স্মারকলিপি দেওয়াসহ নানা কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা ও তার ব্যক্তি সহকারী যুগ্ম সচিব কংকন চাকমাকে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা দোসর আখ্যায়িক করে তাদের অপসারণের দাবিতে ৭দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে মাঠে নেমেছে বঞ্চিত ত্রিপুরা,মারমা ও বাঙালি সংগঠনগুলো।
অভিযোগ রয়েছে,প্রত্যেক বরাদ্দে পার্বত্য উপদেষ্টা ও তার ব্যক্তিগত সহকারীর যোগ সাজসে আওয়ামী লীগ পদধারী নেতা ও আওয়ামী লীগ ঘরানার লোক এবং নামসর্বম্ব সমিতির নামে গায়েবি প্রকল্পে অর্থ ও খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অথচ বাস্তবে সরেজমিনে বরাদ্দকৃত ব্যক্তির কোন অস্তিত্ব নেই। আর এর পিছনে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের একজন সদস্যের নাম এসেছে। ভুয়া প্রকল্প দিয়ে পার্বত্য মন্ত্রণালয় খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের কতিপয় সদস্য হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা।
অনুসন্ধানের জানা গেছে,পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তিন দফায় বরাদ্দ ৪ হাজার ১শ ৮৬ মে:টন খাদ্যশস্যের মধ্যে চাকমা সম্প্রদায় ৩ হাজার ৭শ ১৫ মে:টন, মারমা সম্প্রদায় ১শ ১২ মে:টন,ত্রিপুরা ৬৬ মে:টন: ও মুসলমান,হিন্দু ও বড়ুয়া মিলে ২শ ৯৩ মে:টন বরাদ্দ পেয়েছেন। যা বিক্ষুব্ধ করে তুলে বঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে।
প্রথম দফায় চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ৭৫১ মে:টন খাদ্যসশ্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ বরাদ্দে চাকমা সম্প্রদায় ৪৫৯ মে:টন.,মুসলমান,হিন্দু ও বড়ুয়া মিলে ১৩৩ মে:টন. ত্রিপুরা- ৬৬ মে:টন ও মারমা সম্প্রদায় ৯২ মে:টন বরাদ্দ পেয়েছে।
দ্বিতীয় দফায় চলতি বছরের ২৫ মার্চ পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় বিভিন্ন প্রকল্পের অনুকূলে নগদ ৩ কোটি ১২ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেন। বরাদ্দের মধ্যে চাকমা সম্প্রদায় ২ কোটি ২৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা,মুসলমান,হিন্দু ও বড়ুয়া মিলে ৫১ লাখ ২০ হাজার টাকা, মারমা ২০ লাখ ৪০ হাজার ও ত্রিপুরা সম্প্রদায় ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তৃতীয় দফায় চলতি বছরের ২৭ মার্চ এক হাজার ৯শ ১৩ মে:টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। তার মধ্যে বিভিন্ন প্রকল্পের বিপরীতে চাকমা সম্প্রদায় পেয়েছেন এক হাজার ৮শত ২৩ মে:টন. মুসলমান,হিন্দু ও বড়ুয়া মিলে ৮০ মে:টন ও মারমা সম্প্রদায় ১০ মে: টন পেলেও ত্রিপুরা সম্প্রদায় কোন বরাদ্দ পায়নি। সর্বশেষ চলতি মাসের ১৩ মে চতুর্থ(সংশোধিত) এক হাজার ৫শ ২২ মে:টন বরাদ্দে চাকমা সম্প্রদায় এক হাজার ৪শ ৩২ মে:টন,মারমা সম্প্রদায় ১০মে:টন, মুসলমান,হিন্দু ও বড়ুয়া মিলে ৮০ মে:টন এবারের বরাদ্ধেও ত্রিপুরা সম্প্রদায় কোনো বরাদ্দ পায়নি।
২০২২ সালের জনশুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুসারে খাগড়াছড়ির মোট জনসংখ্যা ৭ লাখ ১৪ হাজার ১১৯ জন। এর মধ্যে বাঙালি ৩ লাখ ৬৪ হাজার ৭৪১ (৫১.০৮%) জন এবং অবাঙালি/ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৩৭৮ (৪৮.৯২%) জন।
ধর্মের দিক থেকে মুসলিম ৩ লাখ ৩২ হাজার ৪৯৪ (৪৬.৫৬%) জন, চাকমা, মারমা ও বড়ুয়া মিলে বৌদ্ধ ২ লাখ ৫৬ হাজার ৫১২ (৩৫.৯২%) জন, হিন্দু ও ত্রিপুরা সম্প্রদায় ১ লাখ ১৯ হাজার ৬১৫ (১৬.৭৫%) জন, খ্রীস্টান ৪ হাজার ৪২৮ (০.৬২%) জন এবং অন্যান্য ১ হাজার ১৪৩ (০.১৬%) জন। খাগড়াছড়ি জেলার প্রতি বর্গ কিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব ২৬০ জন ও সাক্ষরতার হার ৭১.৭৩%। আপৎকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলার নামে সরকারের গচ্চা যাচ্ছে তিন কোটি ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা
জানা গেছে, চলতি বছরের ২৫ মার্চ পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ১৮৫ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির বিপরীতে তিন কোটি ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়। তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বরাদ্দ পাওয়া অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই নামই ভুয়া কিংবা নামসর্বস্ব। তালিকায় থাকা একজনের নাম ত্রিনা চাকমা। তিনি নারী উদ্যোক্তাদের উন্নয়নের নাম ভাঙিয়ে ১২টি প্রকল্পের অনুকূলে ২৫ লাখ টাকা অর্থ বরাদ্দ পান । ত্রিনা চাকমার বিরুদ্ধে ফ্যাস্টিট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও নারী উদ্যোক্তাদের বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলেও তার নামে সরকারি অর্থ বরাদ্দে হতবাক হয়েছেন স্থানীয়রা।
এছাড়া রক্তদান ফাউন্ডেশনের নামে ৫০ হাজার টাকা, হাসিখুশি শিল্পগোষ্ঠীর নামে ৪০ হাজার টাকা এবং হিলমুন কালচারাল গ্রুপের নামে ৩০ হাজার টাকাসহ ১ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তালিকার শুরুতেই নাম থাকলেও বাস্তবে এসব সংগঠনের কোনো অস্তিত্ব নেই। সংগঠন তিনটির প্রতিষ্ঠাতা নজরুল ইসলাম মাসুদের নামে এই অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। মাসুদ ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা পরিষদের জাপা এরশাদের লাঙ্গন প্রতীকের প্রার্থী ছিল। তিনি অনেকের কাছে টোকাই নজরুল নামে পরিচিত। ঐ অর্থ বরাদ্দে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ নেতার বাবার প্রতিষ্ঠানেও লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে তালিকার ২৭ নম্বরে থাকা খেজুরবাগান বিত্তহীন সমবায় সমিতি লি. এর সভাপতি নুরুচ্ছাফারের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলে তিনি সাড়া দেননি।
তালিকায় ৫৪ নম্বরে আছে খাগড়াছড়ি সদরের কলেজগেট এলাকার পাহাড়ি বাঙালি সম্প্রীতি সমবায় সমিতির অনুকূলে আর্থ সামাজিক উন্নয়নে মৎস্য বাঁধ সংস্কারসহ মৎস্য চাষ। সমিতির সভাপতি নিশি মনি চাকমা প্রকল্পের অবস্থান সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে পারেননি।
অনুসন্ধান বলছে,ব্যক্তি বিশেষ যোগসাজশে এমন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যা অধিকাংশ প্রকল্পই ভুয়া ও অস্থিত্ববিহীন। আর এসব ভুয়া প্রকল্পের পিছনে পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা,তার ব্যক্তিগত সচিব ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের কতিপয় সদস্যরা জড়িত। তারা বরাদ্দ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে আগাম অর্থ হাতিয়ে নিয়ে তারপর বরাদ্ধ দিচ্ছে। জবাবদিহিতা না থাকার কারণে এমন অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনায় সরকারের অর্থ অপচয় হচ্ছে।
তবে একটি সূত্র জানায়, সর্বশেষ বরাদ্দে পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দে রাঙামটি ও বান্দরবান জেলা পরিষদের মাধ্যমে দেওয়া হলেও খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে বরাদ্দে বৈষম্যমূলক হলেও প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয়েছে।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক এবি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার বলেন,বরাদ্দপ্রাপ্তরা যাতে উপকৃত হন এর জন্য সার্বক্ষণিক মনিটার করা হয়েছে। প্রত্যেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাদ্দের তদারকি করছেন।
এ দিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের চার দফায় নগদ অর্থ ও খাদ্যশস্য বরাদ্দে চরম বৈষম্যের প্রতিবাদে মাঠে নেমেছে বৈষম্যের শিকার সচেতন ত্রিপুরা ও মারমা নাগরিক সমাজ, পার্বত্য চট্টগ্রাম সম-অধিকার আন্দোলন,পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ।
সংগঠনগুলো সাংবাদিক সম্মেলন,বিক্ষোভ মিছিল,সমাবেশ,প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি প্রদান ও মানববন্ধন করে পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা ও তার ব্যক্তি সহকারী যুগ্ম সচিব কংকন চাকমাকে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার অন্যতম দোসর আখ্যায়িত করে তাদের অপসারণের ৭দিনের আল্টিমেটাম। অন্যথায় সড়ক অবরোধসহ আরো কঠোর কর্মসূচী ঘোষনার হুমকি দিয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম সম-অধিকার আন্দোলনের খাগড়াছড়ি শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. আসাদ উল্লাহর অভিযোগ,নগদ অর্থ ও খাদ্যশস্য বরাদ্দে চরম বৈষম্য হয়েছে। শুধু বাঙালিরা নয়, মারমা,ত্রিপুরা,হিন্দু ও বড়ুয়াসহ অন্যান্য সম্প্রদায়কে বঞ্চিত করে একটি সম্প্রদায়কে ৯৭ ভাগ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আমরা শুরু থেকে এমন বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে আসছি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল মজিদের অভিযোগ, খাগড়াছড়িতে বাঙালি,ত্রিপুরা,মারমা ও চাকমা সম্প্রদায়সহ একাধিক সম্প্রদায় বসবাস করলেও প্রতিনিধিত্ব ও বরাদ্দে বাঙালি,ত্রিপুরা ও মারমা সম্প্রদায়কে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এটা জুলাই-আগষ্ট চেতনা বিরোধী।
বাংলাদেশ মারমা ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুমেল মারমার অভিযোগ,পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে তিন পার্বত্য জেলায় গৃহীত প্রকল্প এবং বরাদ্দগুলো শুধু বৈষম্যমূলক নয়,পরিকল্পিতভাবে শেখ হাসিনার দোসরদের পুনর্বাসনের সুস্পষ্টভাবেই প্রতীয়মান হচ্ছে।
তিনি অভিযোগ করেন,সুপ্রদীপ চাকমা ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকারের আমলে রাষ্ট্রদূত ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। বর্তমানে অন্তবর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হয়েও তিনি খাগড়াছড়িতে শেখ হাসিনার দোসরদের নানাভাবে আর্থিক ও খাদ্যশস্য বরাদ্দ দিয়ে পুনর্বাসন করছেন। তারই ধারাবাহিকতায় খাগড়াছড়ি সদরে তিন আওয়ামী লীগ নেতাকে ১২৬ মে:টন খাদ্যসশ্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
তিনি অভিযোগ করেন,পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়,পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড,পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম টাস্কফোর্স ও পার্বত্য জেলা পরিষদ সমূহে একচেটিয়াভাবে একটি সম্প্রদায় নেতৃত্বে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় মহাসচিব মোঃ আলমগীর কবির অভিযোগ করেন,পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা পাহাড়ে পলাতক হাসিনার অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। জাতি বৈচিত্র্য সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান অধ্যাদেশ ২০২৫ প্রণয়নের বিতর্কিত প্রস্তাবের মাধ্যমে পাহাড়কে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছে। আইনের মাধ্যমে 'ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী' শব্দটিকে বাদ দিয়ে 'নৃ-বৈচিত্র্য' বা 'জাতি বৈচিত্র্য' শব্দচয়ন চালু করা হচ্ছে তা ভবিষ্যতে আদিবাসী স্বীকৃতির কৌশলগত ভিত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
মনগড়া,বৈষম্যমূলক ও ভুয়া প্রকল্পের বিষয়ে জানতে একে একে কল করা হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমার একান্ত সচিব, সচিব ও উপসচিবদের নাম্বারে। তাদের মধ্যে উপদেষ্টার একান্ত সচিব খন্দকার মুশফিকুর রহমানের মুঠোফোনে কল রিসিভি করে এ বিষয়ে সচিবের সঙ্গে কথা বলতে বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। অভিযোগ উঠেছে জেলা পরিষদ সদস্য ও উপদেষ্টার নিকট আত্মীয় বঙ্গমিত্র চাকমা এসব বরাদ্দে বড় প্রভাব বিস্তার করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে বঙ্গমিত্রের মুঠোফোনে কল ও হোয়াটস অ্যাপে খুদে বার্তা দেওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি।
সুপ্রদীপ চাকমা ২০২৪ সালের ১২ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের পার্বত্য উপদেষ্টা নিয়োগ পান। তার আগ পর্যন্ত পলাতক হাসিনার পছন্দের লোক হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর তিনিও আত্মগোপনে চলে যান। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে উপদেষ্টা হওয়ার ডাক পড়ে তার। কিন্তু জনরোষানলে পড়ার ভয়ে আত্মগোপনে থাকায় উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিতে দেরি হয় তার। কিন্তু বিধিবাম নানা বিতর্কে জড়িয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে যোগদানের এক বছর পার হতে না হতেই অপসারণের দাবি উঠেছে।
অনুসন্ধানের জানা গেছে, শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হিসেরব সুপ্রদীপ চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী থেকে প্রথম ফরেন সার্ভিসে যোগদান করেন এবং পরবর্তীকালে সচিব পর্যায়ে প্রথম চাকমা হিসেবে অধিষ্ঠিত হন। দেশে-বিদেশে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে চাকরি করার পর সর্বশেষ মেক্সিকো সিটির বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত পদ হতে ২০২১ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। শেখ হাসিনার অত্যন্ত আস্থাভাজন হওয়ায় ২০২৩ সালের ২৪ জুলাই দুই বছর সচিব পদমর্যাদায় সুপ্রদীফ চাকমাকে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হয়।
পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের বৈষম্যমূলক,গায়েবি প্রকল্পে অর্থ ও খাদ্যশস্য বরাদ্দে ফুঁসে উঠছে পাহাড়ি জেলা খাগড়াছড়ি। বৈষম্যের প্রতিবাদে প্রতিদিন খাগড়াছড়িতে বিভিন্ন সংগঠন বিক্ষোভ সমাবেশ, মানববন্ধন ও সাংবাদিক সম্মেলন প্রধান উপদেষ্টার স্মারকলিপি দেওয়াসহ নানা কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা ও তার ব্যক্তি সহকারী যুগ্ম সচিব কংকন চাকমাকে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা দোসর আখ্যায়িক করে তাদের অপসারণের দাবিতে ৭দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে মাঠে নেমেছে বঞ্চিত ত্রিপুরা,মারমা ও বাঙালি সংগঠনগুলো।
অভিযোগ রয়েছে,প্রত্যেক বরাদ্দে পার্বত্য উপদেষ্টা ও তার ব্যক্তিগত সহকারীর যোগ সাজসে আওয়ামী লীগ পদধারী নেতা ও আওয়ামী লীগ ঘরানার লোক এবং নামসর্বম্ব সমিতির নামে গায়েবি প্রকল্পে অর্থ ও খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অথচ বাস্তবে সরেজমিনে বরাদ্দকৃত ব্যক্তির কোন অস্তিত্ব নেই। আর এর পিছনে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের একজন সদস্যের নাম এসেছে। ভুয়া প্রকল্প দিয়ে পার্বত্য মন্ত্রণালয় খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের কতিপয় সদস্য হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা।
অনুসন্ধানের জানা গেছে,পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তিন দফায় বরাদ্দ ৪ হাজার ১শ ৮৬ মে:টন খাদ্যশস্যের মধ্যে চাকমা সম্প্রদায় ৩ হাজার ৭শ ১৫ মে:টন, মারমা সম্প্রদায় ১শ ১২ মে:টন,ত্রিপুরা ৬৬ মে:টন: ও মুসলমান,হিন্দু ও বড়ুয়া মিলে ২শ ৯৩ মে:টন বরাদ্দ পেয়েছেন। যা বিক্ষুব্ধ করে তুলে বঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে।
প্রথম দফায় চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ৭৫১ মে:টন খাদ্যসশ্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ বরাদ্দে চাকমা সম্প্রদায় ৪৫৯ মে:টন.,মুসলমান,হিন্দু ও বড়ুয়া মিলে ১৩৩ মে:টন. ত্রিপুরা- ৬৬ মে:টন ও মারমা সম্প্রদায় ৯২ মে:টন বরাদ্দ পেয়েছে।
দ্বিতীয় দফায় চলতি বছরের ২৫ মার্চ পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় বিভিন্ন প্রকল্পের অনুকূলে নগদ ৩ কোটি ১২ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেন। বরাদ্দের মধ্যে চাকমা সম্প্রদায় ২ কোটি ২৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা,মুসলমান,হিন্দু ও বড়ুয়া মিলে ৫১ লাখ ২০ হাজার টাকা, মারমা ২০ লাখ ৪০ হাজার ও ত্রিপুরা সম্প্রদায় ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তৃতীয় দফায় চলতি বছরের ২৭ মার্চ এক হাজার ৯শ ১৩ মে:টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। তার মধ্যে বিভিন্ন প্রকল্পের বিপরীতে চাকমা সম্প্রদায় পেয়েছেন এক হাজার ৮শত ২৩ মে:টন. মুসলমান,হিন্দু ও বড়ুয়া মিলে ৮০ মে:টন ও মারমা সম্প্রদায় ১০ মে: টন পেলেও ত্রিপুরা সম্প্রদায় কোন বরাদ্দ পায়নি। সর্বশেষ চলতি মাসের ১৩ মে চতুর্থ(সংশোধিত) এক হাজার ৫শ ২২ মে:টন বরাদ্দে চাকমা সম্প্রদায় এক হাজার ৪শ ৩২ মে:টন,মারমা সম্প্রদায় ১০মে:টন, মুসলমান,হিন্দু ও বড়ুয়া মিলে ৮০ মে:টন এবারের বরাদ্ধেও ত্রিপুরা সম্প্রদায় কোনো বরাদ্দ পায়নি।
২০২২ সালের জনশুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুসারে খাগড়াছড়ির মোট জনসংখ্যা ৭ লাখ ১৪ হাজার ১১৯ জন। এর মধ্যে বাঙালি ৩ লাখ ৬৪ হাজার ৭৪১ (৫১.০৮%) জন এবং অবাঙালি/ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৩৭৮ (৪৮.৯২%) জন।
ধর্মের দিক থেকে মুসলিম ৩ লাখ ৩২ হাজার ৪৯৪ (৪৬.৫৬%) জন, চাকমা, মারমা ও বড়ুয়া মিলে বৌদ্ধ ২ লাখ ৫৬ হাজার ৫১২ (৩৫.৯২%) জন, হিন্দু ও ত্রিপুরা সম্প্রদায় ১ লাখ ১৯ হাজার ৬১৫ (১৬.৭৫%) জন, খ্রীস্টান ৪ হাজার ৪২৮ (০.৬২%) জন এবং অন্যান্য ১ হাজার ১৪৩ (০.১৬%) জন। খাগড়াছড়ি জেলার প্রতি বর্গ কিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব ২৬০ জন ও সাক্ষরতার হার ৭১.৭৩%। আপৎকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলার নামে সরকারের গচ্চা যাচ্ছে তিন কোটি ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা
জানা গেছে, চলতি বছরের ২৫ মার্চ পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ১৮৫ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির বিপরীতে তিন কোটি ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়। তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বরাদ্দ পাওয়া অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই নামই ভুয়া কিংবা নামসর্বস্ব। তালিকায় থাকা একজনের নাম ত্রিনা চাকমা। তিনি নারী উদ্যোক্তাদের উন্নয়নের নাম ভাঙিয়ে ১২টি প্রকল্পের অনুকূলে ২৫ লাখ টাকা অর্থ বরাদ্দ পান । ত্রিনা চাকমার বিরুদ্ধে ফ্যাস্টিট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও নারী উদ্যোক্তাদের বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলেও তার নামে সরকারি অর্থ বরাদ্দে হতবাক হয়েছেন স্থানীয়রা।
এছাড়া রক্তদান ফাউন্ডেশনের নামে ৫০ হাজার টাকা, হাসিখুশি শিল্পগোষ্ঠীর নামে ৪০ হাজার টাকা এবং হিলমুন কালচারাল গ্রুপের নামে ৩০ হাজার টাকাসহ ১ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তালিকার শুরুতেই নাম থাকলেও বাস্তবে এসব সংগঠনের কোনো অস্তিত্ব নেই। সংগঠন তিনটির প্রতিষ্ঠাতা নজরুল ইসলাম মাসুদের নামে এই অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। মাসুদ ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা পরিষদের জাপা এরশাদের লাঙ্গন প্রতীকের প্রার্থী ছিল। তিনি অনেকের কাছে টোকাই নজরুল নামে পরিচিত। ঐ অর্থ বরাদ্দে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ নেতার বাবার প্রতিষ্ঠানেও লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে তালিকার ২৭ নম্বরে থাকা খেজুরবাগান বিত্তহীন সমবায় সমিতি লি. এর সভাপতি নুরুচ্ছাফারের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলে তিনি সাড়া দেননি।
তালিকায় ৫৪ নম্বরে আছে খাগড়াছড়ি সদরের কলেজগেট এলাকার পাহাড়ি বাঙালি সম্প্রীতি সমবায় সমিতির অনুকূলে আর্থ সামাজিক উন্নয়নে মৎস্য বাঁধ সংস্কারসহ মৎস্য চাষ। সমিতির সভাপতি নিশি মনি চাকমা প্রকল্পের অবস্থান সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে পারেননি।
অনুসন্ধান বলছে,ব্যক্তি বিশেষ যোগসাজশে এমন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যা অধিকাংশ প্রকল্পই ভুয়া ও অস্থিত্ববিহীন। আর এসব ভুয়া প্রকল্পের পিছনে পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা,তার ব্যক্তিগত সচিব ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের কতিপয় সদস্যরা জড়িত। তারা বরাদ্দ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে আগাম অর্থ হাতিয়ে নিয়ে তারপর বরাদ্ধ দিচ্ছে। জবাবদিহিতা না থাকার কারণে এমন অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনায় সরকারের অর্থ অপচয় হচ্ছে।
তবে একটি সূত্র জানায়, সর্বশেষ বরাদ্দে পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দে রাঙামটি ও বান্দরবান জেলা পরিষদের মাধ্যমে দেওয়া হলেও খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে বরাদ্দে বৈষম্যমূলক হলেও প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয়েছে।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক এবি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার বলেন,বরাদ্দপ্রাপ্তরা যাতে উপকৃত হন এর জন্য সার্বক্ষণিক মনিটার করা হয়েছে। প্রত্যেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাদ্দের তদারকি করছেন।
এ দিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের চার দফায় নগদ অর্থ ও খাদ্যশস্য বরাদ্দে চরম বৈষম্যের প্রতিবাদে মাঠে নেমেছে বৈষম্যের শিকার সচেতন ত্রিপুরা ও মারমা নাগরিক সমাজ, পার্বত্য চট্টগ্রাম সম-অধিকার আন্দোলন,পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ।
সংগঠনগুলো সাংবাদিক সম্মেলন,বিক্ষোভ মিছিল,সমাবেশ,প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি প্রদান ও মানববন্ধন করে পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা ও তার ব্যক্তি সহকারী যুগ্ম সচিব কংকন চাকমাকে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার অন্যতম দোসর আখ্যায়িত করে তাদের অপসারণের ৭দিনের আল্টিমেটাম। অন্যথায় সড়ক অবরোধসহ আরো কঠোর কর্মসূচী ঘোষনার হুমকি দিয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম সম-অধিকার আন্দোলনের খাগড়াছড়ি শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. আসাদ উল্লাহর অভিযোগ,নগদ অর্থ ও খাদ্যশস্য বরাদ্দে চরম বৈষম্য হয়েছে। শুধু বাঙালিরা নয়, মারমা,ত্রিপুরা,হিন্দু ও বড়ুয়াসহ অন্যান্য সম্প্রদায়কে বঞ্চিত করে একটি সম্প্রদায়কে ৯৭ ভাগ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আমরা শুরু থেকে এমন বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে আসছি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল মজিদের অভিযোগ, খাগড়াছড়িতে বাঙালি,ত্রিপুরা,মারমা ও চাকমা সম্প্রদায়সহ একাধিক সম্প্রদায় বসবাস করলেও প্রতিনিধিত্ব ও বরাদ্দে বাঙালি,ত্রিপুরা ও মারমা সম্প্রদায়কে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এটা জুলাই-আগষ্ট চেতনা বিরোধী।
বাংলাদেশ মারমা ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুমেল মারমার অভিযোগ,পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে তিন পার্বত্য জেলায় গৃহীত প্রকল্প এবং বরাদ্দগুলো শুধু বৈষম্যমূলক নয়,পরিকল্পিতভাবে শেখ হাসিনার দোসরদের পুনর্বাসনের সুস্পষ্টভাবেই প্রতীয়মান হচ্ছে।
তিনি অভিযোগ করেন,সুপ্রদীপ চাকমা ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকারের আমলে রাষ্ট্রদূত ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। বর্তমানে অন্তবর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হয়েও তিনি খাগড়াছড়িতে শেখ হাসিনার দোসরদের নানাভাবে আর্থিক ও খাদ্যশস্য বরাদ্দ দিয়ে পুনর্বাসন করছেন। তারই ধারাবাহিকতায় খাগড়াছড়ি সদরে তিন আওয়ামী লীগ নেতাকে ১২৬ মে:টন খাদ্যসশ্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
তিনি অভিযোগ করেন,পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়,পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড,পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম টাস্কফোর্স ও পার্বত্য জেলা পরিষদ সমূহে একচেটিয়াভাবে একটি সম্প্রদায় নেতৃত্বে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় মহাসচিব মোঃ আলমগীর কবির অভিযোগ করেন,পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা পাহাড়ে পলাতক হাসিনার অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। জাতি বৈচিত্র্য সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান অধ্যাদেশ ২০২৫ প্রণয়নের বিতর্কিত প্রস্তাবের মাধ্যমে পাহাড়কে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছে। আইনের মাধ্যমে 'ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী' শব্দটিকে বাদ দিয়ে 'নৃ-বৈচিত্র্য' বা 'জাতি বৈচিত্র্য' শব্দচয়ন চালু করা হচ্ছে তা ভবিষ্যতে আদিবাসী স্বীকৃতির কৌশলগত ভিত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
মনগড়া,বৈষম্যমূলক ও ভুয়া প্রকল্পের বিষয়ে জানতে একে একে কল করা হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমার একান্ত সচিব, সচিব ও উপসচিবদের নাম্বারে। তাদের মধ্যে উপদেষ্টার একান্ত সচিব খন্দকার মুশফিকুর রহমানের মুঠোফোনে কল রিসিভি করে এ বিষয়ে সচিবের সঙ্গে কথা বলতে বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। অভিযোগ উঠেছে জেলা পরিষদ সদস্য ও উপদেষ্টার নিকট আত্মীয় বঙ্গমিত্র চাকমা এসব বরাদ্দে বড় প্রভাব বিস্তার করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে বঙ্গমিত্রের মুঠোফোনে কল ও হোয়াটস অ্যাপে খুদে বার্তা দেওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি।
সুপ্রদীপ চাকমা ২০২৪ সালের ১২ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের পার্বত্য উপদেষ্টা নিয়োগ পান। তার আগ পর্যন্ত পলাতক হাসিনার পছন্দের লোক হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর তিনিও আত্মগোপনে চলে যান। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে উপদেষ্টা হওয়ার ডাক পড়ে তার। কিন্তু জনরোষানলে পড়ার ভয়ে আত্মগোপনে থাকায় উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিতে দেরি হয় তার। কিন্তু বিধিবাম নানা বিতর্কে জড়িয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে যোগদানের এক বছর পার হতে না হতেই অপসারণের দাবি উঠেছে।
অনুসন্ধানের জানা গেছে, শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হিসেরব সুপ্রদীপ চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী থেকে প্রথম ফরেন সার্ভিসে যোগদান করেন এবং পরবর্তীকালে সচিব পর্যায়ে প্রথম চাকমা হিসেবে অধিষ্ঠিত হন। দেশে-বিদেশে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে চাকরি করার পর সর্বশেষ মেক্সিকো সিটির বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত পদ হতে ২০২১ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। শেখ হাসিনার অত্যন্ত আস্থাভাজন হওয়ায় ২০২৩ সালের ২৪ জুলাই দুই বছর সচিব পদমর্যাদায় সুপ্রদীফ চাকমাকে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হয়।
অন্তহীন সমস্যায় জর্জড়িত নরসিংদী জেলা কারাগার। হাত বাড়ালেই মিলে মাদক। বসে নিয়মিত জুয়ার আসর। থেমে নেই কোন অনিয়ম। একটু বৃষ্টি হলে একহাটু জলে ডুবে যায় কারা অভ্যন্তর। ফলে একেবারে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠছে কারাগারটি।
২ ঘণ্টা আগেপুলিশ জানায়, ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ অভিযানে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গতকাল দিনগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন আদিল শাহরিয়ারের নেতৃত্বে আকবপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়।
৪ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশে চিকিৎসক নিয়োগ ও বদলী প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ও বাণিজ্য এখন একটি গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছু অসাধু ব্যক্তি ও চক্র আর্থিক সুবিধা লাভের জন্য এ অনিয়ম করছে। এতে স্বাস্থ্যখাতে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে।
২ দিন আগেভোলার তজুমদ্দিনে চাঁদার দাবিতে স্বামীকে বেঁধে রাতভর নির্যাতন চালিয়ে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় অবশেষে মামলার প্রধান আসামি মো. আলাউদ্দিন ও দ্বিতীয় আসামি মো. ফরিদ উদ্দিনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
২ দিন আগেঅন্তহীন সমস্যায় জর্জড়িত নরসিংদী জেলা কারাগার। হাত বাড়ালেই মিলে মাদক। বসে নিয়মিত জুয়ার আসর। থেমে নেই কোন অনিয়ম। একটু বৃষ্টি হলে একহাটু জলে ডুবে যায় কারা অভ্যন্তর। ফলে একেবারে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠছে কারাগারটি।
পুলিশ জানায়, ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ অভিযানে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গতকাল দিনগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন আদিল শাহরিয়ারের নেতৃত্বে আকবপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়।
বাংলাদেশে চিকিৎসক নিয়োগ ও বদলী প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ও বাণিজ্য এখন একটি গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছু অসাধু ব্যক্তি ও চক্র আর্থিক সুবিধা লাভের জন্য এ অনিয়ম করছে। এতে স্বাস্থ্যখাতে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে।
ভোলার তজুমদ্দিনে চাঁদার দাবিতে স্বামীকে বেঁধে রাতভর নির্যাতন চালিয়ে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় অবশেষে মামলার প্রধান আসামি মো. আলাউদ্দিন ও দ্বিতীয় আসামি মো. ফরিদ উদ্দিনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।