গাঁজা বিক্রির সঙ্গে পুলিশ-বিচারক জড়িত

প্রমান পেয়েছে তদন্ত কমিটি

প্রতিনিধি
নরসিংদী
আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২৫, ০৪: ২৮
Thumbnail image

  • তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল
  • পুলিশের ৬ সদস্য দায়ী
  • বিচারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেনি তদন্ত কমিটি
  • আরো ১২০ কেজি গাঁজা ও ১৩০ বোতল ফেনসিডিল বিক্রির চেষ্টা করতে গিয়েই ধরা পড়ে
  • বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ

পুলিশের কয়েক সদস্য ও বিচারক মিলে ৯৬ কেজি গাঁজা বিক্রির ঘটনার তদন্ত শেষ হয়েছে। তদন্ত শেষে পুলিশ সুপারের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: কলিমুল্লা। তদন্তকালে পুলিশের ১২ জন সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন বলে জানা গেছে। দশ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন ঘেঁটে দেখা যায় ডিবি, নরসিংদী কর্তৃক উদ্ধারকৃত ৯৬ কেজি গাঁজা কোর্ট মালখানায় জমা প্রদান করেনি। বাস্তবে বিজ্ঞ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও মালখানা অফিসারের সামনে ধ্বংসও করেনি। ঘটনাটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে মর্মে এ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

Kamrujjaman OC DB

এ নেক্কার জনক ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশের ৬ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। অভিযুক্তরা হলেন এসএম কামরুজ্জামান, বিপি-৮০০৬১০২২০৬ পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) জেলা গোয়েন্দা শাখা, নরসিংদী (সাবেক ওসি ডিবি বর্তমানে ঢাকা রেঞ্জ অফিসে সংযুক্ত), খন্দকার জাকির হোসেন, বিপি-৬৬৯৩০০৮৮৭৭, পুলিশ পরিদর্শক নরসিংদী (সাবেক কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক বর্তমানে ঢাকা রেঞ্জ অফিসে সংযুক্ত) , এসআই(নিঃ)/আঃ গাফফার, পিপিএম-বার বিপি-৭৮৯৮০৫৫৯০১ জেলা গোয়েন্দা শাখা, নরসিংদী (বর্তমানে গাজীপুর জেলায় কর্মরত), এসআই(নিঃ) শামীনুর রহমান, বিপি-৭৪৯২০৪৪৫০৪, মালখানা শাখা, সদর কোর্ট, নরসিংদী, কনস্টেবল/১০৭৫ রোমান মিয়া, বিপি-৯৮১৮২২২১৪২, জুনিয়র সেরেস্তা শাখার এলসি, জেলা গোয়েন্দা শাখা, নরসিংদী ও নারী কনস্টেবল/১০০৮ কামরুন নাহার, (বিপি- ৯১১১১২৯৮০৮) মালখানা শাখা, সদর কোর্ট, নরসিংদী।

প্রতিবেদন ঘেঁটে দেখা যায়,আঃ গাফফার, তার জবানবন্দিতে জানান জেলা গোয়েন্দা শাখা, নরসিংদীর জিডি নং-৭৫, তারিখ-০৪/০২/২০২৫খ্রিঃ মূলে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শিবপুর থানাধীন নতুন আটাসিয়া সাকিনস্থ জনৈক মনির হোসেন এর লটকন বাগান হইতে মোট ০৬ টি বস্তায় ৯৬ (ছিয়ানব্বই) কেজি গাঁজা পরিত্যাক্ত অবস্থায় উদ্ধার পূর্বক জব্দ করিয়া উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেন। জব্দকৃত আলামতসহ ডিবি অফিসে জিডি মূলে হাজির হওয়ার পর ডিবির তৎকালীণ পুলিশ পরিদর্শক এসএম কামরুজ্জামানকে অবগত করে উল্লেখিত মালামাল ডিবি অফিসের হেফাজতে রাখেন।

S I Gaffar

পরে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর তিনি পত্রপ্রেরণ করে জব্দকৃত আলামত মালখানা অফিসারের নিকট বুঝিয়ে দেন। তবে মাল খানায় আলামত জমা রাখার কোন প্রমানপত্র তার সংগ্রহ রাখেননি। একজন সু-শৃঙ্খল বাহিনীর দ্বিতীয় শ্রেণীর গেজেটেড কর্মকর্তা হয়ে তার এহেন কর্মকান্ড শৃংখলাবিরোধী কাজে জড়িত হওয়া, অসৎ উদ্দেশ্য, মিথ্যাচার, কর্তব্যের প্রতি অবহেলা ও পেশাগত অদক্ষতার সামিল বলে মন্তব্য করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

৯৬ কেজি গাাঁজা মালখানায় জমা দিলে চালানের একটি রিসিভ কপি কেন সংগ্রহ করেননি এর কোন উত্তরও দিতে পারেননি পুলিশের এই দারোগা।

Jakir

এসআই শামীনুর রহমান তার জবানবন্দিতে জানান জেলা গোয়েন্দা শাখা, নরসিংদীর জিডি নং-৭৫, তারিখ-০৪/০২/২০২৫খ্রিঃ মূলে পরিত্যাক্ত অবস্থায় উদ্ধার হওয়া জব্দকৃত আলামত ৯৬ (ছিয়ানব্বই) কেজি গাঁজা, সদর কোর্ট স্মারক নং-১৬১০, তারিখ-০৬/০২/২০২৫খ্রিঃ মূলে বিজ্ঞ আদালত মালখানা অফিসার বরাবরে জমা প্রদানের জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। অদ্যবধি উক্ত মালামাল মালখানায় জমা হয়নি। ওসি ডিবি তাকে একাধিকবার ডিবি অফিসে ডেকে পাঠান। আলামত জমা দেওয়া যাবে না বলে তাকে খাম অফার করেন। তিনি অপারগতা প্রকাশ করলে বিষয়টি এসপির নলেজে আছে বলে তাকে ভয় দেখায়।

শামীনুর রহমান তদন্ত কমিটিকে আরো জানান, ম্যাজিস্ট্রেট মৌখিক ভাবে উক্ত নথি উপস্থাপন করতে বললে ম্যাজিস্ট্রেটের মৌখিক নির্দেশটি কোর্ট পুলিশ পরিদর্শককে জানালে কোট পরিদর্শক জাকির হোসেন তাকে বলে আপনার সমস্যা কি ,আপনারতো কোন দায়ভার নাই বিষয়টা এসপি জানে।

এছাড়া কোর্ট ইন্সপেক্টর জাকির ও পরে ডিবির ইন্সপেক্টর কামরুজ্জামান দুজনই শামীনুরকে জিডির ৯৬ কেজি গাজা ধ্বংসের বিষয়টা এসপির নলেজে আছে বলে ভয় দেখায়।

সম্প্রতি ডিবিতে ১২০ কেজি গাঁজা ও ১৩০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার হয়েছিল। গত ১৩ মার্চ তারিখে ওসি ডিবি উক্ত মাদকদ্রব্যসমূহ পূর্বের ন্যায় জমা না দিয়া ধ্বংস দেখানোর বিষয়ে আবার শামীনুরকে প্রস্তাব দেয়। এর প্রেক্ষিতে নিরুপায় হয়ে গত ১৫ মার্চ তিনি বিষয়টি পুলিশ সুপারকে অবহিত করেন। এরপরই ঘটনা জানাজানি হয়ে যায়।

ওসি ডিবি এসএম কামরুজ্জামান, আলোচ্য বিষয়টি এসপির নলেজে আছে বলে মিথ্যা তথ্য প্রচার করেন। প্রকৃতপক্ষে পুলিশ সুপার, এ বিষয়ে কিছুই জানতেন না। ওসি ডিবি পুলিশ পরিদর্শক এসএম কামরুজ্জামান মূলত উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে হেয় প্রতিপন্ন করা এবং উর্ধ্বতন কর্মকর্তার মানহানির জন্য উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে পুলিশ সুপারের নামে মিথ্যা তথ্য প্রচার করেন। এ ঘটনার পর তিনি রেঞ্জ অফিসে ক্লোজ হওয়ার পরে সোশ্যাল মিডিয়াতে নানা ধরণের ভিত্তিহীন বক্তব্য প্রচার করেন। যার কারণে জনসম্মুখে পুলিশের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন হয়।

প্রতিবেদনের মতামত কলামে উল্লেখ করা হয়,এসএম কামরুজ্জামান উদ্ধারকৃত ৯৬ (ছিয়ানব্বই) কেজি গাঁজা ধ্বংসের বিষয়ে, সততার সাথে যথাযথ আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহন করেননি। আলামত জমা নেওয়া যাবে না বলে ডিবি অফিসের এলসি রোমান মিয়াকে দিয়া মালখানায় কর্মরত পুলিশ সদস্যদের জন্য উপহার হিসেবে খাম পাঠিয়েছেন তিনি। মালখানার ইনচার্জ এসআই(নিঃ)/শামিনুর রহমানকে একাধিকবার ডিবি অফিসে ডেকে আলামত জমা নেওয়া যাবে না বলে খাম অফার করেছেন। এতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করলে বিষয়টি এসপিরে নলেজে আছে বলে ভয় দেখান। এবং তাকে জোর পূর্বক তিনটি খাম দেন। এছাড়াও গত ১৩ মার্চ তারিখে উদ্ধারকৃত ১২০ (একশত বিশ) কেজি গাঁজা ও ১৩০ (একশত ত্রিশ) বোতল ফেনসিডিল পূর্বের ন্যায় জমা না দিয়ে ধ্বংস দেখানোর বিষয়ে মালখানার ইনচার্জ এসআই(নিঃ) শামিনুর রহমান ও নারী কনস্টেবল ১০০৮ কামরুন্নাহার কে প্রস্তাব দেন।

সাবেক কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক খন্দকার জাকির হোসেন গত ১৩মার্চ তারিখে উদ্ধারকৃত ১২০ (একশত বিশ) কেজি গাঁজা ও ১৩০ (একশত ত্রিশ) বোতল ফেনসিডিল পূর্বের ন্যায় জমা না দিয়া ধ্বংস দেখানোর বিষয়ে মালখানার ইনচার্জ এসআই(নিঃ) শামিনুর রহমান ও নারী কনস্টেবল কামরুন্নাহার এর নিকট হতে অবগত হয়েও তিনি এ বিষয়ে তিনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণসহ উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করার অপরাধ সমূহ প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে মর্মে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। তারা উভয়ই সু-শৃঙ্খল বাহিনীর প্রথম শ্রেণীর গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্বেও এহেন শৃংখলাবিরোধী কাজে জড়িত হওয়া, অসৎ উদ্দেশ্য, কর্তব্যের প্রতি অবহেলা ও পেশাগত অদক্ষতার সামিল বলে মন্তব্য করা হয়েছে।

উল্লেখ্য গত ১৬ মার্চ বিচারক ও পুলিশের পেটে ৯৬ কেজি গাঁজা শিরোনামে নিখাদ খবরে সংবাদ প্রকাশের পর টনক নড়ে প্রশাসনের। এরপর এঘটনায় দুই পরিদর্শককে নরসিংদী থেকে ঢাকায় বদলী করা হয়।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

মাদক নিয়ে আরও পড়ুন

জামালপুরে অভিযানে ৪ কেজি গাঁজা সহ বিপ্লব ব্যাপারী (৩২) ও মো. শফিকুল ইসলাম শিপন (৩৩) নামে ২ দুই মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করেছে জামালপুর ডিবি পুলিশ।

৭ দিন আগে