নজরুল ইসলাম
চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ছয় লেন প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। আধুনিক, প্রযুক্তি নির্ভর টেকসই মহাসড়ক নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু হলেও কাজের কোন অগ্রগতি নেই। ভৌত কাজ বাস্তবায়ন, পুনর্বাসন কার্যক্রম বাস্তবায়ন, আয় ও জীবিকা পুনর্বাসন কর্মসূচি বাস্তবায়ন এবং সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে পরামর্শক সেবা গ্রহণ না করেই ইচ্ছেমত ঢিমেতালে কাজ চালাচ্ছে। কাজের চেয়ে কর্তাদের ভাগ-বাটোয়ারা ও লুটপাটের ফলে গত চার বছরে মাত্র ১৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। যেটুকু হয়েছে সেটাও খুব নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে করার অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে নরসিংদী অংশের ৫২ কি: মি: সড়কের কত শতাংশ কাজ শেষে হয়েছে তা জানাতে পারলেন না সড়ক ও জনপথ বিভাগের নরসিংদীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো: রেজা ই রাব্বি। তবে মূল রাস্তার উন্নয়নের খবর না থাকলেও বাইপাস সড়ক নির্মাণ নিয়ে বেজায় তৎপর স্থানীয় প্রশাসন। বাইপাস হলে জমি অধিগ্রহণ করা হবে। জমি অধিগ্রহণ থেকে শতকরা ১৫ শতাংশ যায় স্থানীয় প্রশাসনের পকেটে। এ কারণেই বাইপাস নিয়ে এতো মাতামাতি।
বেশী ক্ষতিগ্রস্ত নরসিংদীর মানুষ:
কাজ না করে ফেলে রাখার ফলে প্রকল্পের বিদ্যমান ২০৯.৩২৮ কিমি মহাসড়কের মধ্যে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নরসিংদী জেলার মানুষ। এরপর রয়েছে ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলা। অপরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন কাজ করার ফলে রাস্তায় তৈরি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট। চলাচলের বিকল্প ব্যবস্থা না করে পুরো রাস্তা ভেঙ্গে ফেলে কাজ করার ফলে মহাসড়ক জুড়ে লেগে থাকে দীর্ঘ যানজট। এ দৃশ্য নিত্যদিনের। এতে করে এই মহাসড়কের যাত্রীদেরও পোহাতে হচ্ছে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। স্থানীয় মিল কারখানায় যেতে পারছে না পণ্যবাহী গাড়ি। উৎপাদন নেমে এসেছে অর্ধেকের নীচে। এতে করে বন্ধ হয়ে গেছে ছোট ও মাঝারি শ্রেণীর বেশ কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠান। মিল কারখানা বন্ধ হওয়ার ফলে বেকার হয়ে পড়ছে হাজার হাজার শ্রমিক। শিল্পোন্নত এ অঞ্চলের ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের লোকসান গুণতে হচ্ছে শত শত কোটি টাকা। ঠিক এমনই সময় স্থানীয় ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী বাইপাস বন্ধে আন্দোলনে লিপ্ত থাকার পরও মাধবদী বাবুর হাট সড়ককে পাশ কাটিয়ে ৮ কিলোমিটার বাইপাস সড়ক নির্মাণ কাজের জন্য জমি অধিগ্রহণের একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন স্থানীয় জেলা প্রশাসন। এই বাইপাস হলে ধ্বংস হবে ঐতিহ্যবাহী বাবুর হাট। বাংলাদেশের কাপড়ের বাজার দখল করবে ভারতীয় কাপড়।
বিনষ্ট হচ্ছে ১২৪.৯১৮ একর তিন ফসলি কৃষিজমি
স্থানীয় প্রশাসনের এ আত্মঘাতি সিদ্ধান্তের ফলে ১২৪.৯১৮ একর অতিরিক্ত তিন ফসলি জমি বিনষ্ট হবে। মাধবদী বাইপাস সড়ক করলে মোট জমির প্রয়োজন ১৪৭.১৬৫ একর। অতিরিক্ত ১২৪.৯১৮ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য সরকার আর্থিকভাবে বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এছাড়াও আইন অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় কোন ক্রমেই কৃষি জমি যাতে নষ্ট না হয় তা বলা আছে। তা সত্ত্বেও কিছু ব্যক্তির ব্যক্তিস্বার্থে কৃষি জমি নষ্ট করে বাইপাস নির্মাণ করার অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বারবার নকশা পরিবর্তন
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০২১ সালের ২৪ অক্টোবর সড়কটি ছয় লেনে উন্নীত করে কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ২০২৫ সালের মধ্যে ঢাকার কাঁচপুর থেকে সিলেট পর্যন্ত ২০৯ কিলোমিটার ছয় লেন এবং সিলেট থেকে তামাবিল পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটার চার লেন দৃশ্যমান হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বারবার নকশা পরিবর্তনসহ নানা জটিলতার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে প্রকল্পটি। এতে করে নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধিসহ নানা জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে।
বেঁচা কেনা নেই বাবুর হাটে
গত দুই মাস ধরে মহাসড়কের মাধবদী অংশে রাস্তার উপর রড বেধে ফেলে রাখা হয়েছে। চলাচল করতে পারছে না কোন যানবাহন। একদিকে ঢালাই দিলে অন্য জায়গায় থাকে রড বাধা। এ অবস্থায় যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে থাকে। এতে করে যানযটের ভয়ে দেশের দূর দূরান্ত থেকে পাইকার আসছে না বাবুর হাটে। পাইকার না আসায় প্রাচ্যের ম্যানচেষ্টার খ্যাত বাবুর হাটে ঈদের হাটেও নেই কোন বেচা কেনা।
ব্যবহার হচ্ছে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী
নির্মাণাধীন মহাসড়ক জুড়েই নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। বিশেষ করে যেখানে বালি দিয়ে ফিলিং করার কথা প্রকাশ্যেই উচু টিলা থেকে লালমাটি কেটে রাস্তা ভরাট করা হচ্ছে। এতে করে ঠিকাদার লাভবান হলেও রাস্তা দেবে যাওয়ার শংকা রয়েছে। অন্যদিকে টিলা টেঙ্গর থেকে লালমাটি কেটে আনার ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। পাশাপাশি জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হওয়ার আশংকা দেখা দিচ্ছে। ভেলানগর জেলখানা মোড়ে দেখা যায় দীর্ঘদিন ধরে খোলা আকাশের নীচে রড ফেলে রাখার ফলে রডে মরিচা ধরে গেছে। এই মরিচা ধরা নিম্নমানের রড দিয়েই আবার কাজ করা হচ্ছে। ঢালাই দিচ্ছে রাতের অন্ধকারে। এতে করে কাজের গুণগত মান নিয়েও নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
কাজের অগ্রগতির খবর রাখেন না স্থানীয় প্রশাসন
ধীরগতিতে কাজ হলেও কাজের গুণগত মান বা অগ্রগতি নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা নেই স্থানীয় প্রশাসনের। মহাসড়কের নরসিংদী অংশের ৫২ কি: মি: সড়কের মধ্যে কত শতাংশ কাজ শেষে হয়েছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় সড়ক ও জনপথের নরসিংদীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো: রেজা ই রাব্বির কাছে। এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন এ প্রতিবেদককে। তবে এসবের খবর না রাখলেও বাইপাস সড়ক নির্মাণ নিয়ে বেজায় তৎপর রয়েছেন প্রশাসনের এই কর্মকর্তারা।
নির্মাণাধীন কালভার্টের দুই মুখেই মাটি ভরাট
নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলাবাসীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে প্রকল্পটি ভূমিকা রাখার কথা থাকলেও কাজের ধীর গতির জন্য হচ্ছে এখন উল্টো। মূল সড়কের উভয় পাশে ধীরগতির যান চলাচলের জন্য ৫.৫ মিটার প্রশস্ত সড়ক ছাড়াও ৬৬টি সেতু, ৩০৫টি কালভার্ট, সাতটি ফ্লাইওভার-ওভারপাস এবং ছয়টি রেলওয়ে ওভারপাস থাকবে। এরমধ্যে মধ্যে নরসিংদী অংশে ৩০ টি কালভার্ট এর প্রস্থ বাড়িয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। কালভার্টের দুই মুখ বন্ধ থাকায় পানি নামার কোন সুব্যবস্থা নাই। সুতরাং এ সকল কালভার্ট নির্মাণে কোনো ফল পাবেনা জনসাধারণ। পরিকল্পনা মাফিক কাজ না করার ফলে নির্মাণব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। অনর্থক অপচয় হচ্ছে রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা ।
চক্রান্তের নায়ক অমিত কুমার চক্রবর্তী:
বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর ও ভারতীয় এজেন্টে হিসেবে পরিচিত সাসেক ঢাকা-সিলেট করিডোর সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যবস্থাপক অমিত কুমার চক্রবর্তী। এই চক্রবর্তীই এ চক্রান্তের নায়ক। এ প্রকল্পের অনিয়মের প্রধান হোতাও তিনি । এই কর্মকর্তা বাংলাদেশের নাগরিক হলেও তার এবং তার পরিবারের সদস্যদের কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় নামে বেনামে জমি, বাড়ি ও ফ্ল্যাট রয়েছে বলে জানা গেছে। উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানোর জন্য এই অমিত কুমার চক্রবর্তী শুরুতেই বাইপাস সড়ক নির্মাণের জন্য প্রস্তাব দিয়ে আসছেন। ছাত্র জীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত এই কর্মকর্তা নীলনকশা করে বাইপাস সড়ক নির্মাণ করে বাবুর হাটকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে মেতে আছেন। ভারতপন্থী এই কর্মকতার প্রচেষ্টা সফল হলে বাবুর হাট চিরতরে ধ্বংস হয়ে যাবে বলে শংকা প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা। আর এ সুযোগে একচেটিয়া দেশীয় কাপড়ের বাজার দখল করবে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত। এসব বিষয়ে জানার জন্য অমিত কুমার চক্রবর্তীর মোবাইল ফোনে বারবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। এমনকি হোয়াটসঅ্যাপে ম্যাসেজ দিলেও তিনি জবাব দেননি।
এদিকে মাধবদী ও বাবুর হাট রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব আনোয়ার হোসেন আনু এ প্রতিবেদককে বলেন, জেলা প্রশাসনের সাথে সভা করে আমরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি বাবুর হাটের ক্ষতি যারা করবে আমরা তাদের সাথে নাই। তারা দেশের মঙ্গল চায়না। আর দেশ বিরোধী চক্রান্ত হলে তা রুখে দেবে এই অঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষ।
ব্যবসায়ী নেতা আব্দুল বাতেন শাহিন বলেছেন, জেলার পাশাপাশি দেশীয় অর্থনীতিতে ভুমিকা রাখছে নরসিংদীর শেখেরচর-বাবুরহাট ও মাধবদী অঞ্চল। সরকারের সিদ্ধান্তে সড়ক উন্নয়ন যেমনি জরুরী তেমনি ব্যবসায়ীক এলাকাও বাঁচিয়ে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। তাই পূর্বের সড়ক ঠিক রেখে মহাসড়ক প্রশস্ত করণের দাবী তাদের। ফলে সড়ক উন্নয়ন, অর্থনীতির পাশাপাশি বাঁচবে কৃষি জমি। তিনি আরো বলেন, বাইপাস সড়ক নির্মাণ বন্ধের জন্য গত দুই মাস ধরে আন্দোলনে নেমেছে মাধবদী ও বাবুরহাট রক্ষা কমিটি। বেশ কয়েকদিন ঢাকা সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেন সাধারণ মানুষ। বাইপাস সড়ক বন্ধ করার আশ্বাস দিয়ে আন্দোলন কারীদের সব রকমের কর্মসূচি বন্ধ রাখতে বলেছেন নরসিংদীর জেলা প্রশাসক রাশেদ চৌধুরী। তবে আন্দোলনকারীদের ধোকা দিয়ে গোপনে বাইপাস অংশের অধিগ্রহণ কাজ আবারও শুরু করেছেন জেলা প্রশাসক। যার ফলে আবারও ক্ষোভ বিরাজ করছে আন্দোলনকারীদের মধ্যে।
এ বিষয়ে নরসিংদীর জমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা এইচএম নাজমুল হকের কাছে জানতে চাইলে এ প্রতিবেদকে তিনি বলেন, সকল স্টেক হোল্ডারদের সাথে বসে আমরা বাইপাস নির্মাণের সিদ্ধান্তে উপনিত হয়েছি। তবে বাবুরহাট যাতে ভালো থাকে সে জন্য আগের সড়ককে ৪ লেনে উন্নিত করা হবে। ছোট গাড়ীর জন্য রাস্তার পাশদিয়ে আঞ্চলিক সড়ক নির্মাণ হবে। এ বিষয়ে কারো কোন দ্বিমত নেই চেম্বার অব কমার্স এবং মাধবদীর ব্যবসায়ীরা সকলেই লিখিত সম্মতি দিয়েছেন। এ সংক্রান্ত একটি রেজ্যুলেশনও হয়েছে। তবে এ বিষয়ে নরসিংদী চেম্বার অব কমার্স এর প্রেসিডেন্ট রাশেদুল হক রিন্টুর সাথে কথা বললে তিনি জানান, সভায় যে উপস্থিত ছিলাম তার স্বাক্ষর দিয়েছি। রেজুল্যেশন পেপারে কোন স্বাক্ষর দেইনি।
চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ছয় লেন প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। আধুনিক, প্রযুক্তি নির্ভর টেকসই মহাসড়ক নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু হলেও কাজের কোন অগ্রগতি নেই। ভৌত কাজ বাস্তবায়ন, পুনর্বাসন কার্যক্রম বাস্তবায়ন, আয় ও জীবিকা পুনর্বাসন কর্মসূচি বাস্তবায়ন এবং সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে পরামর্শক সেবা গ্রহণ না করেই ইচ্ছেমত ঢিমেতালে কাজ চালাচ্ছে। কাজের চেয়ে কর্তাদের ভাগ-বাটোয়ারা ও লুটপাটের ফলে গত চার বছরে মাত্র ১৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। যেটুকু হয়েছে সেটাও খুব নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে করার অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে নরসিংদী অংশের ৫২ কি: মি: সড়কের কত শতাংশ কাজ শেষে হয়েছে তা জানাতে পারলেন না সড়ক ও জনপথ বিভাগের নরসিংদীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো: রেজা ই রাব্বি। তবে মূল রাস্তার উন্নয়নের খবর না থাকলেও বাইপাস সড়ক নির্মাণ নিয়ে বেজায় তৎপর স্থানীয় প্রশাসন। বাইপাস হলে জমি অধিগ্রহণ করা হবে। জমি অধিগ্রহণ থেকে শতকরা ১৫ শতাংশ যায় স্থানীয় প্রশাসনের পকেটে। এ কারণেই বাইপাস নিয়ে এতো মাতামাতি।
বেশী ক্ষতিগ্রস্ত নরসিংদীর মানুষ:
কাজ না করে ফেলে রাখার ফলে প্রকল্পের বিদ্যমান ২০৯.৩২৮ কিমি মহাসড়কের মধ্যে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নরসিংদী জেলার মানুষ। এরপর রয়েছে ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলা। অপরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন কাজ করার ফলে রাস্তায় তৈরি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট। চলাচলের বিকল্প ব্যবস্থা না করে পুরো রাস্তা ভেঙ্গে ফেলে কাজ করার ফলে মহাসড়ক জুড়ে লেগে থাকে দীর্ঘ যানজট। এ দৃশ্য নিত্যদিনের। এতে করে এই মহাসড়কের যাত্রীদেরও পোহাতে হচ্ছে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। স্থানীয় মিল কারখানায় যেতে পারছে না পণ্যবাহী গাড়ি। উৎপাদন নেমে এসেছে অর্ধেকের নীচে। এতে করে বন্ধ হয়ে গেছে ছোট ও মাঝারি শ্রেণীর বেশ কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠান। মিল কারখানা বন্ধ হওয়ার ফলে বেকার হয়ে পড়ছে হাজার হাজার শ্রমিক। শিল্পোন্নত এ অঞ্চলের ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের লোকসান গুণতে হচ্ছে শত শত কোটি টাকা। ঠিক এমনই সময় স্থানীয় ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী বাইপাস বন্ধে আন্দোলনে লিপ্ত থাকার পরও মাধবদী বাবুর হাট সড়ককে পাশ কাটিয়ে ৮ কিলোমিটার বাইপাস সড়ক নির্মাণ কাজের জন্য জমি অধিগ্রহণের একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন স্থানীয় জেলা প্রশাসন। এই বাইপাস হলে ধ্বংস হবে ঐতিহ্যবাহী বাবুর হাট। বাংলাদেশের কাপড়ের বাজার দখল করবে ভারতীয় কাপড়।
বিনষ্ট হচ্ছে ১২৪.৯১৮ একর তিন ফসলি কৃষিজমি
স্থানীয় প্রশাসনের এ আত্মঘাতি সিদ্ধান্তের ফলে ১২৪.৯১৮ একর অতিরিক্ত তিন ফসলি জমি বিনষ্ট হবে। মাধবদী বাইপাস সড়ক করলে মোট জমির প্রয়োজন ১৪৭.১৬৫ একর। অতিরিক্ত ১২৪.৯১৮ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য সরকার আর্থিকভাবে বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এছাড়াও আইন অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় কোন ক্রমেই কৃষি জমি যাতে নষ্ট না হয় তা বলা আছে। তা সত্ত্বেও কিছু ব্যক্তির ব্যক্তিস্বার্থে কৃষি জমি নষ্ট করে বাইপাস নির্মাণ করার অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বারবার নকশা পরিবর্তন
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০২১ সালের ২৪ অক্টোবর সড়কটি ছয় লেনে উন্নীত করে কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ২০২৫ সালের মধ্যে ঢাকার কাঁচপুর থেকে সিলেট পর্যন্ত ২০৯ কিলোমিটার ছয় লেন এবং সিলেট থেকে তামাবিল পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটার চার লেন দৃশ্যমান হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বারবার নকশা পরিবর্তনসহ নানা জটিলতার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে প্রকল্পটি। এতে করে নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধিসহ নানা জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে।
বেঁচা কেনা নেই বাবুর হাটে
গত দুই মাস ধরে মহাসড়কের মাধবদী অংশে রাস্তার উপর রড বেধে ফেলে রাখা হয়েছে। চলাচল করতে পারছে না কোন যানবাহন। একদিকে ঢালাই দিলে অন্য জায়গায় থাকে রড বাধা। এ অবস্থায় যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে থাকে। এতে করে যানযটের ভয়ে দেশের দূর দূরান্ত থেকে পাইকার আসছে না বাবুর হাটে। পাইকার না আসায় প্রাচ্যের ম্যানচেষ্টার খ্যাত বাবুর হাটে ঈদের হাটেও নেই কোন বেচা কেনা।
ব্যবহার হচ্ছে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী
নির্মাণাধীন মহাসড়ক জুড়েই নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। বিশেষ করে যেখানে বালি দিয়ে ফিলিং করার কথা প্রকাশ্যেই উচু টিলা থেকে লালমাটি কেটে রাস্তা ভরাট করা হচ্ছে। এতে করে ঠিকাদার লাভবান হলেও রাস্তা দেবে যাওয়ার শংকা রয়েছে। অন্যদিকে টিলা টেঙ্গর থেকে লালমাটি কেটে আনার ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। পাশাপাশি জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হওয়ার আশংকা দেখা দিচ্ছে। ভেলানগর জেলখানা মোড়ে দেখা যায় দীর্ঘদিন ধরে খোলা আকাশের নীচে রড ফেলে রাখার ফলে রডে মরিচা ধরে গেছে। এই মরিচা ধরা নিম্নমানের রড দিয়েই আবার কাজ করা হচ্ছে। ঢালাই দিচ্ছে রাতের অন্ধকারে। এতে করে কাজের গুণগত মান নিয়েও নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
কাজের অগ্রগতির খবর রাখেন না স্থানীয় প্রশাসন
ধীরগতিতে কাজ হলেও কাজের গুণগত মান বা অগ্রগতি নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা নেই স্থানীয় প্রশাসনের। মহাসড়কের নরসিংদী অংশের ৫২ কি: মি: সড়কের মধ্যে কত শতাংশ কাজ শেষে হয়েছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় সড়ক ও জনপথের নরসিংদীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো: রেজা ই রাব্বির কাছে। এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন এ প্রতিবেদককে। তবে এসবের খবর না রাখলেও বাইপাস সড়ক নির্মাণ নিয়ে বেজায় তৎপর রয়েছেন প্রশাসনের এই কর্মকর্তারা।
নির্মাণাধীন কালভার্টের দুই মুখেই মাটি ভরাট
নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলাবাসীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে প্রকল্পটি ভূমিকা রাখার কথা থাকলেও কাজের ধীর গতির জন্য হচ্ছে এখন উল্টো। মূল সড়কের উভয় পাশে ধীরগতির যান চলাচলের জন্য ৫.৫ মিটার প্রশস্ত সড়ক ছাড়াও ৬৬টি সেতু, ৩০৫টি কালভার্ট, সাতটি ফ্লাইওভার-ওভারপাস এবং ছয়টি রেলওয়ে ওভারপাস থাকবে। এরমধ্যে মধ্যে নরসিংদী অংশে ৩০ টি কালভার্ট এর প্রস্থ বাড়িয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। কালভার্টের দুই মুখ বন্ধ থাকায় পানি নামার কোন সুব্যবস্থা নাই। সুতরাং এ সকল কালভার্ট নির্মাণে কোনো ফল পাবেনা জনসাধারণ। পরিকল্পনা মাফিক কাজ না করার ফলে নির্মাণব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। অনর্থক অপচয় হচ্ছে রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা ।
চক্রান্তের নায়ক অমিত কুমার চক্রবর্তী:
বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর ও ভারতীয় এজেন্টে হিসেবে পরিচিত সাসেক ঢাকা-সিলেট করিডোর সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যবস্থাপক অমিত কুমার চক্রবর্তী। এই চক্রবর্তীই এ চক্রান্তের নায়ক। এ প্রকল্পের অনিয়মের প্রধান হোতাও তিনি । এই কর্মকর্তা বাংলাদেশের নাগরিক হলেও তার এবং তার পরিবারের সদস্যদের কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় নামে বেনামে জমি, বাড়ি ও ফ্ল্যাট রয়েছে বলে জানা গেছে। উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানোর জন্য এই অমিত কুমার চক্রবর্তী শুরুতেই বাইপাস সড়ক নির্মাণের জন্য প্রস্তাব দিয়ে আসছেন। ছাত্র জীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত এই কর্মকর্তা নীলনকশা করে বাইপাস সড়ক নির্মাণ করে বাবুর হাটকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে মেতে আছেন। ভারতপন্থী এই কর্মকতার প্রচেষ্টা সফল হলে বাবুর হাট চিরতরে ধ্বংস হয়ে যাবে বলে শংকা প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা। আর এ সুযোগে একচেটিয়া দেশীয় কাপড়ের বাজার দখল করবে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত। এসব বিষয়ে জানার জন্য অমিত কুমার চক্রবর্তীর মোবাইল ফোনে বারবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। এমনকি হোয়াটসঅ্যাপে ম্যাসেজ দিলেও তিনি জবাব দেননি।
এদিকে মাধবদী ও বাবুর হাট রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব আনোয়ার হোসেন আনু এ প্রতিবেদককে বলেন, জেলা প্রশাসনের সাথে সভা করে আমরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি বাবুর হাটের ক্ষতি যারা করবে আমরা তাদের সাথে নাই। তারা দেশের মঙ্গল চায়না। আর দেশ বিরোধী চক্রান্ত হলে তা রুখে দেবে এই অঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষ।
ব্যবসায়ী নেতা আব্দুল বাতেন শাহিন বলেছেন, জেলার পাশাপাশি দেশীয় অর্থনীতিতে ভুমিকা রাখছে নরসিংদীর শেখেরচর-বাবুরহাট ও মাধবদী অঞ্চল। সরকারের সিদ্ধান্তে সড়ক উন্নয়ন যেমনি জরুরী তেমনি ব্যবসায়ীক এলাকাও বাঁচিয়ে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। তাই পূর্বের সড়ক ঠিক রেখে মহাসড়ক প্রশস্ত করণের দাবী তাদের। ফলে সড়ক উন্নয়ন, অর্থনীতির পাশাপাশি বাঁচবে কৃষি জমি। তিনি আরো বলেন, বাইপাস সড়ক নির্মাণ বন্ধের জন্য গত দুই মাস ধরে আন্দোলনে নেমেছে মাধবদী ও বাবুরহাট রক্ষা কমিটি। বেশ কয়েকদিন ঢাকা সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেন সাধারণ মানুষ। বাইপাস সড়ক বন্ধ করার আশ্বাস দিয়ে আন্দোলন কারীদের সব রকমের কর্মসূচি বন্ধ রাখতে বলেছেন নরসিংদীর জেলা প্রশাসক রাশেদ চৌধুরী। তবে আন্দোলনকারীদের ধোকা দিয়ে গোপনে বাইপাস অংশের অধিগ্রহণ কাজ আবারও শুরু করেছেন জেলা প্রশাসক। যার ফলে আবারও ক্ষোভ বিরাজ করছে আন্দোলনকারীদের মধ্যে।
এ বিষয়ে নরসিংদীর জমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা এইচএম নাজমুল হকের কাছে জানতে চাইলে এ প্রতিবেদকে তিনি বলেন, সকল স্টেক হোল্ডারদের সাথে বসে আমরা বাইপাস নির্মাণের সিদ্ধান্তে উপনিত হয়েছি। তবে বাবুরহাট যাতে ভালো থাকে সে জন্য আগের সড়ককে ৪ লেনে উন্নিত করা হবে। ছোট গাড়ীর জন্য রাস্তার পাশদিয়ে আঞ্চলিক সড়ক নির্মাণ হবে। এ বিষয়ে কারো কোন দ্বিমত নেই চেম্বার অব কমার্স এবং মাধবদীর ব্যবসায়ীরা সকলেই লিখিত সম্মতি দিয়েছেন। এ সংক্রান্ত একটি রেজ্যুলেশনও হয়েছে। তবে এ বিষয়ে নরসিংদী চেম্বার অব কমার্স এর প্রেসিডেন্ট রাশেদুল হক রিন্টুর সাথে কথা বললে তিনি জানান, সভায় যে উপস্থিত ছিলাম তার স্বাক্ষর দিয়েছি। রেজুল্যেশন পেপারে কোন স্বাক্ষর দেইনি।
হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে গড়ে তোলা শিল্পকারখানা নিয়ে এখন চরমভাবে শঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা। জ্বালানি সংকট, ঋণের উচ্চ সুদহার, ডলার সংকট, নিরাপত্তাহীনতা, মামলা-হামলাসহ নানান রকম সংকটে ব্যবসায়ীরা। চরম গ্যাস ও ব্যাংকিং সংকটে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দেশের কল-কারখানাগুলো।
১ দিন আগেভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিসরির বরাতে সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, ভারত ও পাকিস্তানের ডিরেক্টর জেনারেল অফ মিলিটারি অপারেশনস (ডিজিএমও) একমত হয়েছেন— উভয়পক্ষই বিকাল ৫টা থেকে স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে সব ধরনের সামরিক পদক্ষেপ বন্ধ করবে।
৯ দিন আগেভারতের সামরিক হামলার বদলায় শনিবার পাকিস্তান বুনিয়ানুম মারসুস’ নামে যে অভিযান শুরু করেছে, তাতে ভারতের কলিজায় আঘাত লেগেছে বলে সহজেই ধারণা করা যায়
৯ দিন আগেভারতের বিরুদ্ধে আজ শনিবার ভোর থেকে নতুন মাত্রায় এক সামরিক অভিযান শুরু করার কথা জানিয়েছে পাকিস্তান। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন বুনইয়ান–উন–মারসুস’।
৯ দিন আগেহাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে গড়ে তোলা শিল্পকারখানা নিয়ে এখন চরমভাবে শঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা। জ্বালানি সংকট, ঋণের উচ্চ সুদহার, ডলার সংকট, নিরাপত্তাহীনতা, মামলা-হামলাসহ নানান রকম সংকটে ব্যবসায়ীরা। চরম গ্যাস ও ব্যাংকিং সংকটে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দেশের কল-কারখানাগুলো।
ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিসরির বরাতে সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, ভারত ও পাকিস্তানের ডিরেক্টর জেনারেল অফ মিলিটারি অপারেশনস (ডিজিএমও) একমত হয়েছেন— উভয়পক্ষই বিকাল ৫টা থেকে স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে সব ধরনের সামরিক পদক্ষেপ বন্ধ করবে।
ভারতের সামরিক হামলার বদলায় শনিবার পাকিস্তান বুনিয়ানুম মারসুস’ নামে যে অভিযান শুরু করেছে, তাতে ভারতের কলিজায় আঘাত লেগেছে বলে সহজেই ধারণা করা যায়
ভারতের বিরুদ্ধে আজ শনিবার ভোর থেকে নতুন মাত্রায় এক সামরিক অভিযান শুরু করার কথা জানিয়েছে পাকিস্তান। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন বুনইয়ান–উন–মারসুস’।