নিজস্ব প্রতিবেদক
সারাদেশে বলির পাঠা হতে যাচ্ছেন বিসিএস এডমিন ক্যাডারের কিছু নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (জুনিয়র)। সোমবার নরসিংদীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম গ্রেফতার হওয়ার পর এমন শঙ্কাই করছেন তারা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ১৮ জুলাই ২০২৪ সালে নরসিংদীতে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাহমিদ ভুঁইয়া। পুলিশকে গুলির নির্দেশ দেওয়ার দায়ে নরসিংদীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অনির্বাণ চৌধুরী ইতোমধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন। প্রসিকিউশনের আবেদনের শুনানির পর সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এ ঘটনার পর গুলির নির্দেশদাতা সিনিয়র অফিসারদের নিরবতা দেখে নরসিংদী জেলা প্রশাসনে কর্মরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ০৫ আগস্টের পর নরসিংদীর জেলা প্রশাসক ড. বদিউল আলম পাভেলকে অন্যত্র বদলি করা হয়।
তাহমিদ হত্যা, জেলা কারাগার ভাঙচুর ও লুটপাট, জেলা পরিষদ ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাটসহ একাধিক হামলার সময় সরকারি সফরে ড. বদিউল আলম ছিলেন নয়া দিল্লিতে। ১৪ জুলাই থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত তিনি নয়া দিল্লির সফর শেষে ২১ জুলাই সকালে তিনি নরসিংদী পৌঁছেন। তিনি নরসিংদী পৌছার আগেই ২০ জুলাই রাতে নরসিংদী পৌছেন সেনা সদস্যরা। এসময় জেলা প্রশাসকের দায়িত্বে ছিলেন মৌসমী সরকার রাখী (উপ পরিচালক, স্থানীয় সরকার, নরসিংদী)। ২০২৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তিনি নরসিংদীতে যোগদান করেন। সম্প্রতি তার অন্যত্র বদলির আদেশ হয়। নতুন কর্মস্থল পছন্দ না হওয়ায় তিনি এখানেই থেকে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে। ডিডি এলজির পাশাপাশি তিনি নরসিংদীর পৌর সভার প্রশাসক হিসাবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
রাখীর জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব থাকা সময়েই নরসিংদীতে যতসব ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটে। অথচ এই কর্মকর্তার যেন এখন আর কোন দায়ই নেই।
এদিকে জেলা প্রশাসনের নথি ঘেঁটে দেখা গেছে,কোটা আন্দোলন দমনের লক্ষ্যে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয়, নরসিংদী (জুডিশিয়াল মুন্সিখানা) থেকে এক অফিস আদেশ জারি হয়। এ আদেশে দেখা যায়, জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন কর্মসূচি চলাকালীন মোতায়েনকৃত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আইনানুগ দিক-নির্দেশনা প্রদান, ম্যাজিস্ট্রেরিয়াল দায়িত্ব পালনের জন্য ১৭ জুলাই ২০২৪ তারিখ হতে পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত উল্লিখিত এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটগণ মো: সাইফুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) নরসিংদী সদর থানা এলাকায় দায়িত্ব পালন করার নির্দেশ প্রদান করা হয়।
পলাশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) এ.এইচ.এম ফখরুল হোসাইনকে পলাশ উপজেলায়।
শিবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ মো: সজীব ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদুল হাসান রাসেলকে শিবপুর।
মনোহরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাছিবা খান ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো মারুফ দন্তেগীরকে মনোহরদী।
বেলাব উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: আব্দুল করিম, ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ নাজমুল হাসানকে বেলাব উপজেলায়। রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: ইকবাল হাসান ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) শফিকুল ইসলামকে রায়পুরা উপজেলায়।
সিনিয়র সহকারী কমিশনার রাজীব দাশ পুরকায়স্থকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের জেলখানা মোড়, ভেলানগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায়। সহকারী কমিশনার এ.এইচ. এম আজিমুল হককে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভেলানগর হতে মাহমুদাবাদ- এবং তৎসংলগ্ন এলাকা। সহকারী কমিশনার মো: সাজ্জাদ পারভেজকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের জেলখানা মোড় হতে মাধবদী এবং তৎসংলগ্ন এলাকায়। সহকারী কমিশনার মো: মেহেদী হাছান পাটোয়ারী, সারোয়ার আলম ও নেপাল কান্তি দেবকে নরসিংদী শহর এলাকায় দায়িত্ব পালন করার নির্দেশ প্রদান করেন।
নরসিংদী জেলায় কর্মরত উল্লিখিত একাধিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত ১৮ জুলাই দুপুরে জেলা প্রশাসনের সকল নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের রাখী নিজেই তার কক্ষে ডেকে পাঠান। ঘণ্টা ব্যাপী ধরে তারা তখন এ কক্ষে বসে টেলিভিশনে সারা দেশের খবর দেখছিলেন। বেলা সোয়া ৩টার দিকে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা শহরের ভেলানগর এলাকার জেলখানার মোড়ে জড়ো হয়। বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে দলে নানা বয়সী শিক্ষার্থীরা তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। শিক্ষার্থীদের স্লোগানে প্রকম্পিত হয় জেলখানার মোড় এলাকা। বেশ কিছু টায়ারে আগুন ধরিয়ে দেন তারা।
এসময় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলে। চলে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও গোলাগুলি। তখন রাবার বুলেটের আঘাতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় নবম শ্রেণিপড়ুয়া তাহমিদ ভুঁইয়া তামিম (১৫)। তার লাশ স্ট্রেচারে রেখে স্লোগান দিচ্ছিলেন আন্দোলনকারীরা। সে সময় আবার গুলি চালায় পুলিশ। সেই গুলি তাহমিদের লাশেও লাগে। প্রায় ১০০ গজ দূরে দাঁড়িয়ে তাহমিদের বাবা রফিকুল ইসলাম ভুঁইয়া অসহায়ের মতো সে দৃশ্য দেখেছিলেন। নিহত তাহমিদ নাছিমা কাদির মোল্লা হাইস্কুল অ্যান্ড হোমসের শিক্ষার্থী ছিল। দ্রুত ছাত্রদের মধ্যে এ খবর ছড়িয়ে পড়ে।
তখন ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক রাখী তাদেরকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার নির্দেশ প্রদান করেন। ততক্ষণে আন্দোলন দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে পিছু হটে পুলিশ । এরপর তারা জেলা প্রশাসন কার্যালয় থেকে বের হয়ে পুলিশ সুপার কার্যালয় পর্যন্ত এসে সামনে যেতে না পেরে দ্রুত আবার জেলা প্রশাসনে ফিরে যান। রাত সাড়ে ১০ টা পর্যন্ত চলে এ আন্দোলন। সে সময় ঢাকা সিলেট মহাসড়কে পুরোপুরি বন্ধ থাকে যানবাহন চলাচল।
ততক্ষণে ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশ ছাড়াই শত শত রাউন্ড গুলি, টিয়ার সেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে ফেলে পুলিশ । রাতেই পুলিশ এমসিসিতে ম্যাজিষ্ট্রেটের ফায়ারিং করার লিখিত নির্দেশ নামা দিতে চাপ দেয় জেলা প্রশাসনকে। পরে জেলা প্রশাসক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কিছু এমসিসিতে স্বাক্ষর দিতে জুনিয়রদের চাপ দেন । কিন্তু নির্দেশ অমান্য করে স্বাক্ষর দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন জুনিয়র ম্যাজিস্ট্রেটরা। এদিকে জেলা প্রশাসনের উপর পুলিশের চাপ বাড়তে থাকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিখাদ খবরকে বলেন, ১৮ তারিখে কোন এমসিসিতে ম্যাজিস্ট্রেটরা স্বাক্ষর করেননি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এমসিসিতে শেষ পর্যন্ত ২২ তারিখে ১৮ জুলাই তারিখের স্বাক্ষর করিয়ে নেয়।
তিনি আরো বলেন, যদি এ বিষয়ে দোষ ত্রুটি হয় তাহলে সিনিয়র অফিসারদের হবে। আমরা কেন গণহত্যা মামলার আসামি হবো ? আমরা কেন জেল খাটবো? আমাদের পরিবার কেন রাস্তায় ঘুরবে।
নরসিংদীতে কর্মরত আরেকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমি দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি জেলখানা মোড়ে যখন গোলাগুলি হয় সেখানে তখন কোন ম্যাজিস্ট্রেট ছিলনা। ঘটনা শুনে নির্দেশ পাওয়ার পর আমরা যেতে চাইলেও আন্দোলনের তীব্রতার কারণে আমরা সেখানে পৌঁছাতে পারিনি। পরে প্রেশার ক্রিয়েট করে সিনিয়ররা আমাদের কার স্বাক্ষর কোথায় নিয়েছে তা বলতে পারবো না। তবে চাপ থাকা সত্ত্বেও আমি আদেশ নামায় কোন স্বাক্ষর দেইনি। এমনকি বেশী চাপ দিলে চাকুরি ছেড়ে দেয়ার হুমকি পর্যন্ত দেই। পরে অবশ্য আমাকে আর চাপ দেয়নি।
নরসিংদীর এক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে বলেন, ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম গ্রেফতার হওয়ার পর সারা দেশে জুনিয়র ম্যাজিস্ট্রেটদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ রিবাজ করছে। ঘটনার সময় উপস্থিত না থেকেও একরকম জোড় করে তার স্বাক্ষর নেয়ায় এখন তাকেই আসামি হয়ে জেলে যেতে হলো। যারা তখন জুনিয়রদের উপর জুলুম করেছে আমি মনে করি সেই নির্দেশ দাতাদেরও বিচার হওয়া উচিত।
এ বিষয়ে নরসিংদীর সাবেক ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মৌসুমী সরকার রাখী নিখাদ খবরকে বলেন, যেহেতু এ বিষয়ে মামলা রুজু হয়েছে সেহেতু বিষয়টি নিয়ে আমি কোন কথা বলতে চাইনা।
নরসিংদীর সাবেক জেলা প্রশাসক ড. বদিউল আলম নিখাদ খবরকে বলেন,আন্দোলনের সময় ১৪ জুলাই থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত সরকারি সফরে আমি দেশের বাইরে ছিলাম। তবে ২১ তারিখে দেশে আসার পর আমি কোন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে এমন কোন নির্দেশনা দেইনি। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে হামলায় সরকারি স্থাপনা ভাঙচুর ও লুটপাটের হিসাব নিকাশ এবং আইন শৃঙ্খলা সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করার চেষ্টা করি।
এদিকে সচিবালয়ে কর্মরত একজন উপসচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, একজন ম্যাজিস্ট্রেট ঘটনা স্থলে উপস্থিত থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে তারা নিজের জানমাল রক্ষার্থে আইন শৃংখলা বাহিনীকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ফায়ারিং এর নির্দেশ দিতে পারেন। তারপরও তারা তা না দিয়ে প্রথমে তারা তাদের সিনিয়র অফিসারদেরকে বিষয়টি অবহিত করার চেষ্টা করেন। পরে তাদের দেয়া নির্দেশ মতে ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে (রেগুলেশন-১৫১, ১৫৫ পিআরবি) গুলির নির্দেশ প্রদান করেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থাকলে জুনিয়র অফিসারদের দিয়ে পরবর্তীতে কেন এই এমসিসিতে গুলি করার আদেশ লিখে নেয়া হলো তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা।
সারাদেশে বলির পাঠা হতে যাচ্ছেন বিসিএস এডমিন ক্যাডারের কিছু নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (জুনিয়র)। সোমবার নরসিংদীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম গ্রেফতার হওয়ার পর এমন শঙ্কাই করছেন তারা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ১৮ জুলাই ২০২৪ সালে নরসিংদীতে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাহমিদ ভুঁইয়া। পুলিশকে গুলির নির্দেশ দেওয়ার দায়ে নরসিংদীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অনির্বাণ চৌধুরী ইতোমধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন। প্রসিকিউশনের আবেদনের শুনানির পর সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এ ঘটনার পর গুলির নির্দেশদাতা সিনিয়র অফিসারদের নিরবতা দেখে নরসিংদী জেলা প্রশাসনে কর্মরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ০৫ আগস্টের পর নরসিংদীর জেলা প্রশাসক ড. বদিউল আলম পাভেলকে অন্যত্র বদলি করা হয়।
তাহমিদ হত্যা, জেলা কারাগার ভাঙচুর ও লুটপাট, জেলা পরিষদ ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাটসহ একাধিক হামলার সময় সরকারি সফরে ড. বদিউল আলম ছিলেন নয়া দিল্লিতে। ১৪ জুলাই থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত তিনি নয়া দিল্লির সফর শেষে ২১ জুলাই সকালে তিনি নরসিংদী পৌঁছেন। তিনি নরসিংদী পৌছার আগেই ২০ জুলাই রাতে নরসিংদী পৌছেন সেনা সদস্যরা। এসময় জেলা প্রশাসকের দায়িত্বে ছিলেন মৌসমী সরকার রাখী (উপ পরিচালক, স্থানীয় সরকার, নরসিংদী)। ২০২৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তিনি নরসিংদীতে যোগদান করেন। সম্প্রতি তার অন্যত্র বদলির আদেশ হয়। নতুন কর্মস্থল পছন্দ না হওয়ায় তিনি এখানেই থেকে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে। ডিডি এলজির পাশাপাশি তিনি নরসিংদীর পৌর সভার প্রশাসক হিসাবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
রাখীর জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব থাকা সময়েই নরসিংদীতে যতসব ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটে। অথচ এই কর্মকর্তার যেন এখন আর কোন দায়ই নেই।
এদিকে জেলা প্রশাসনের নথি ঘেঁটে দেখা গেছে,কোটা আন্দোলন দমনের লক্ষ্যে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয়, নরসিংদী (জুডিশিয়াল মুন্সিখানা) থেকে এক অফিস আদেশ জারি হয়। এ আদেশে দেখা যায়, জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন কর্মসূচি চলাকালীন মোতায়েনকৃত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আইনানুগ দিক-নির্দেশনা প্রদান, ম্যাজিস্ট্রেরিয়াল দায়িত্ব পালনের জন্য ১৭ জুলাই ২০২৪ তারিখ হতে পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত উল্লিখিত এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটগণ মো: সাইফুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) নরসিংদী সদর থানা এলাকায় দায়িত্ব পালন করার নির্দেশ প্রদান করা হয়।
পলাশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) এ.এইচ.এম ফখরুল হোসাইনকে পলাশ উপজেলায়।
শিবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ মো: সজীব ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদুল হাসান রাসেলকে শিবপুর।
মনোহরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাছিবা খান ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো মারুফ দন্তেগীরকে মনোহরদী।
বেলাব উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: আব্দুল করিম, ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ নাজমুল হাসানকে বেলাব উপজেলায়। রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: ইকবাল হাসান ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) শফিকুল ইসলামকে রায়পুরা উপজেলায়।
সিনিয়র সহকারী কমিশনার রাজীব দাশ পুরকায়স্থকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের জেলখানা মোড়, ভেলানগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায়। সহকারী কমিশনার এ.এইচ. এম আজিমুল হককে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভেলানগর হতে মাহমুদাবাদ- এবং তৎসংলগ্ন এলাকা। সহকারী কমিশনার মো: সাজ্জাদ পারভেজকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের জেলখানা মোড় হতে মাধবদী এবং তৎসংলগ্ন এলাকায়। সহকারী কমিশনার মো: মেহেদী হাছান পাটোয়ারী, সারোয়ার আলম ও নেপাল কান্তি দেবকে নরসিংদী শহর এলাকায় দায়িত্ব পালন করার নির্দেশ প্রদান করেন।
নরসিংদী জেলায় কর্মরত উল্লিখিত একাধিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত ১৮ জুলাই দুপুরে জেলা প্রশাসনের সকল নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের রাখী নিজেই তার কক্ষে ডেকে পাঠান। ঘণ্টা ব্যাপী ধরে তারা তখন এ কক্ষে বসে টেলিভিশনে সারা দেশের খবর দেখছিলেন। বেলা সোয়া ৩টার দিকে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা শহরের ভেলানগর এলাকার জেলখানার মোড়ে জড়ো হয়। বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে দলে নানা বয়সী শিক্ষার্থীরা তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। শিক্ষার্থীদের স্লোগানে প্রকম্পিত হয় জেলখানার মোড় এলাকা। বেশ কিছু টায়ারে আগুন ধরিয়ে দেন তারা।
এসময় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলে। চলে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও গোলাগুলি। তখন রাবার বুলেটের আঘাতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় নবম শ্রেণিপড়ুয়া তাহমিদ ভুঁইয়া তামিম (১৫)। তার লাশ স্ট্রেচারে রেখে স্লোগান দিচ্ছিলেন আন্দোলনকারীরা। সে সময় আবার গুলি চালায় পুলিশ। সেই গুলি তাহমিদের লাশেও লাগে। প্রায় ১০০ গজ দূরে দাঁড়িয়ে তাহমিদের বাবা রফিকুল ইসলাম ভুঁইয়া অসহায়ের মতো সে দৃশ্য দেখেছিলেন। নিহত তাহমিদ নাছিমা কাদির মোল্লা হাইস্কুল অ্যান্ড হোমসের শিক্ষার্থী ছিল। দ্রুত ছাত্রদের মধ্যে এ খবর ছড়িয়ে পড়ে।
তখন ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক রাখী তাদেরকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার নির্দেশ প্রদান করেন। ততক্ষণে আন্দোলন দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে পিছু হটে পুলিশ । এরপর তারা জেলা প্রশাসন কার্যালয় থেকে বের হয়ে পুলিশ সুপার কার্যালয় পর্যন্ত এসে সামনে যেতে না পেরে দ্রুত আবার জেলা প্রশাসনে ফিরে যান। রাত সাড়ে ১০ টা পর্যন্ত চলে এ আন্দোলন। সে সময় ঢাকা সিলেট মহাসড়কে পুরোপুরি বন্ধ থাকে যানবাহন চলাচল।
ততক্ষণে ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশ ছাড়াই শত শত রাউন্ড গুলি, টিয়ার সেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে ফেলে পুলিশ । রাতেই পুলিশ এমসিসিতে ম্যাজিষ্ট্রেটের ফায়ারিং করার লিখিত নির্দেশ নামা দিতে চাপ দেয় জেলা প্রশাসনকে। পরে জেলা প্রশাসক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কিছু এমসিসিতে স্বাক্ষর দিতে জুনিয়রদের চাপ দেন । কিন্তু নির্দেশ অমান্য করে স্বাক্ষর দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন জুনিয়র ম্যাজিস্ট্রেটরা। এদিকে জেলা প্রশাসনের উপর পুলিশের চাপ বাড়তে থাকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিখাদ খবরকে বলেন, ১৮ তারিখে কোন এমসিসিতে ম্যাজিস্ট্রেটরা স্বাক্ষর করেননি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এমসিসিতে শেষ পর্যন্ত ২২ তারিখে ১৮ জুলাই তারিখের স্বাক্ষর করিয়ে নেয়।
তিনি আরো বলেন, যদি এ বিষয়ে দোষ ত্রুটি হয় তাহলে সিনিয়র অফিসারদের হবে। আমরা কেন গণহত্যা মামলার আসামি হবো ? আমরা কেন জেল খাটবো? আমাদের পরিবার কেন রাস্তায় ঘুরবে।
নরসিংদীতে কর্মরত আরেকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমি দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি জেলখানা মোড়ে যখন গোলাগুলি হয় সেখানে তখন কোন ম্যাজিস্ট্রেট ছিলনা। ঘটনা শুনে নির্দেশ পাওয়ার পর আমরা যেতে চাইলেও আন্দোলনের তীব্রতার কারণে আমরা সেখানে পৌঁছাতে পারিনি। পরে প্রেশার ক্রিয়েট করে সিনিয়ররা আমাদের কার স্বাক্ষর কোথায় নিয়েছে তা বলতে পারবো না। তবে চাপ থাকা সত্ত্বেও আমি আদেশ নামায় কোন স্বাক্ষর দেইনি। এমনকি বেশী চাপ দিলে চাকুরি ছেড়ে দেয়ার হুমকি পর্যন্ত দেই। পরে অবশ্য আমাকে আর চাপ দেয়নি।
নরসিংদীর এক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে বলেন, ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম গ্রেফতার হওয়ার পর সারা দেশে জুনিয়র ম্যাজিস্ট্রেটদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ রিবাজ করছে। ঘটনার সময় উপস্থিত না থেকেও একরকম জোড় করে তার স্বাক্ষর নেয়ায় এখন তাকেই আসামি হয়ে জেলে যেতে হলো। যারা তখন জুনিয়রদের উপর জুলুম করেছে আমি মনে করি সেই নির্দেশ দাতাদেরও বিচার হওয়া উচিত।
এ বিষয়ে নরসিংদীর সাবেক ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মৌসুমী সরকার রাখী নিখাদ খবরকে বলেন, যেহেতু এ বিষয়ে মামলা রুজু হয়েছে সেহেতু বিষয়টি নিয়ে আমি কোন কথা বলতে চাইনা।
নরসিংদীর সাবেক জেলা প্রশাসক ড. বদিউল আলম নিখাদ খবরকে বলেন,আন্দোলনের সময় ১৪ জুলাই থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত সরকারি সফরে আমি দেশের বাইরে ছিলাম। তবে ২১ তারিখে দেশে আসার পর আমি কোন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে এমন কোন নির্দেশনা দেইনি। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে হামলায় সরকারি স্থাপনা ভাঙচুর ও লুটপাটের হিসাব নিকাশ এবং আইন শৃঙ্খলা সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করার চেষ্টা করি।
এদিকে সচিবালয়ে কর্মরত একজন উপসচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, একজন ম্যাজিস্ট্রেট ঘটনা স্থলে উপস্থিত থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে তারা নিজের জানমাল রক্ষার্থে আইন শৃংখলা বাহিনীকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ফায়ারিং এর নির্দেশ দিতে পারেন। তারপরও তারা তা না দিয়ে প্রথমে তারা তাদের সিনিয়র অফিসারদেরকে বিষয়টি অবহিত করার চেষ্টা করেন। পরে তাদের দেয়া নির্দেশ মতে ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে (রেগুলেশন-১৫১, ১৫৫ পিআরবি) গুলির নির্দেশ প্রদান করেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থাকলে জুনিয়র অফিসারদের দিয়ে পরবর্তীতে কেন এই এমসিসিতে গুলি করার আদেশ লিখে নেয়া হলো তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা।
কারিগরি ত্রুটির কারণে ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের গোড্ডায় নির্মিত আদানি গ্রুপের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় শুক্রবার (১১ এপ্রিল) রাতে। এর ১৭ ঘণ্টা পর শনিবার (১২ এপ্রিল) সন্ধ্যা সোয়া ছয়টায় একটি ইউনিট থেকে আবার বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়।
৬ দিন আগেফিলিস্তিনের জন্য কাঁদলেন রাজধানী ঢাকা। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে অশং নিয়ে ফিলিস্তিনের জন্যকাঁদলেন লাখো মানুষ। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ও শান্তি কামনায় করা বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেওয়া লাখো মানুষের চোখে ছিল অশ্রু।
৭ দিন আগেবাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে বাস করে ফিলিস্তিনিরা। এমন মন্তব্য করেছেন ইসলামিক স্কলার ও আলোচক ড. মিজানুর রহমান আজহারী।
৭ দিন আগেআল-আকসার ইমাম শেখ মুহম্মদ সেলিমকে ৭ দিনের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইসরায়েল।
৭ দিন আগেসারাদেশে বলির পাঠা হতে যাচ্ছেন বিসিএস এডমিন ক্যাডারের কিছু নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (জুনিয়র)। সোমবার নরসিংদীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম গ্রেফতার হওয়ার পর এমন শঙ্কাই করছেন তারা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ১৮ জুলাই ২০২৪ সালে নরসিংদীতে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাহমিদ ভুঁইয়
কারিগরি ত্রুটির কারণে ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের গোড্ডায় নির্মিত আদানি গ্রুপের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় শুক্রবার (১১ এপ্রিল) রাতে। এর ১৭ ঘণ্টা পর শনিবার (১২ এপ্রিল) সন্ধ্যা সোয়া ছয়টায় একটি ইউনিট থেকে আবার বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়।
ফিলিস্তিনের জন্য কাঁদলেন রাজধানী ঢাকা। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে অশং নিয়ে ফিলিস্তিনের জন্যকাঁদলেন লাখো মানুষ। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ও শান্তি কামনায় করা বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেওয়া লাখো মানুষের চোখে ছিল অশ্রু।
বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে বাস করে ফিলিস্তিনিরা। এমন মন্তব্য করেছেন ইসলামিক স্কলার ও আলোচক ড. মিজানুর রহমান আজহারী।