কক্সবাজারে মাদক ও স্বর্ণ চোরাচালানের গডফাদার জসিম

এসপি-ওসি ইয়াবা কেলেঙ্কারির মাস্টারমাইন্ড

প্রতিনিধি
আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯: ২০
Thumbnail image
জসিম উদ্দিন নাহিদ: ছবি: সংগৃহীত

মহেশখালীর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শরীফ বাদশার হাত ধরে অপরাধ জগতে প্রবেশ করে কক্সবাজারের আলোচিত মাদক ও স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেটের মূল হোতা জসিম উদ্দিন নাহিদ। কক্সবাজারের আবাসিক হোটেলে কর্মরত থাকা অবস্থায় টেকনাফের কুখ্যাত ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। ধীরে ধীরে মাদকের বড় কারবারি হয়ে ওঠেন তিনি।

মাদক পাচার করতে গিয়ে জসিমের পরিচয় হয় স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেটের কয়েকজন হোতার সঙ্গে। এরপর তিনি দুবাই চলে যান এবং সেখান থেকে স্বর্ণ চোরাচালান শুরু করেন। মাদক ব্যবসা ও স্বর্ণ চোরাচালানের বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে তুলে তিনি ঢাকায় ফ্ল্যাট কিনে স্থায়ী হন।

কক্সবাজারে তার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের জন্য বাহারছড়ার দুলালকে সহযোগী বানান। দুলালের মেয়েকে বিয়ে করে তার শালাদের (দুলালের দুই ছেলে) মাধ্যমে মাদক ও স্বর্ণ চোরাচালানের কাজ পরিচালনা করেন। জসিম দুবাই থেকে ইয়াবা নিয়ে গিয়ে ফেরার সময় স্বর্ণের চালান নিয়ে আসে। একই কৌশলে দুলালের দুই ছেলে মাদক নিয়ে দুবাই গিয়ে আসার সময় স্বর্ণের চালান নিয়ে ফিরে আসে।

সম্প্রতি কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) রহমত উল্লাহর বিরুদ্ধে সাড়ে তিন লাখ ইয়াবা আত্মসাতের অভিযোগ উঠে আসে। একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে আসে, এসপি রহমত উল্লাহ ও তার বাহিনীর সহায়তায় জসিম উদ্দিন নাহিদ বিপুল পরিমাণ ইয়াবা কারবার চালিয়ে যাচ্ছিল। এই অভিযোগ প্রকাশের পরপরই এসপি রহমত উল্লাহকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়।

২০২৩ সালে জসিমের ঢাকার ফ্ল্যাটে র‍্যাব অভিযান চালায়। তবে তিনি আগেই প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি মিটিয়ে ফেলেন। টেকনাফের ইয়াবা ডন ভূট্টোর কাছ থেকে কোটি টাকার ইয়াবা এনে ৫০ লাখ টাকা দিয়ে বাকি টাকা আত্মসাৎ করেন। পরে বিচার-সালিশে জায়গা-জমির বিনিময়ে ২০ লাখ টাকায় বিষয়টি মীমাংসা হয়। তবে দুলালের প্রভাবের কারণে সেই টাকা ফেরত দেননি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে জসিম তার বেশিরভাগ ব্যবসা স্ত্রী ও শালাদের নামে পরিচালনা করেন। তিনি নিয়মিত দুবাই যাতায়াত করেন এবং অপরাধ চক্রের মাধ্যমে বিপুল অর্থ উপার্জন করেন।

জসিম উদ্দিন নাহিদের সঙ্গে দুবাইয়ের স্বর্ণ ব্যবসায়ী ও পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক হত্যার আসামি আরাভ খানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। দুবাইয়ে স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেটে তারা একসঙ্গে কাজ করে।

কক্সবাজারের আলোচিত এসপি-ওসির ইয়াবা কেলেঙ্কারির মামলার এজাহারেও জসিমের নাম উঠে এসেছে। তার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড দীর্ঘদিন ধরেই চলছিল, কিন্তু প্রশাসনের ছত্রছায়ায় তিনি বারবার পার পেয়ে গেছেন।

স্থানীয় সচেতন মহল বলছে, `জসিম উদ্দিন নাহিদের উত্থান যেমন চাঞ্চল্যকর, তেমনি তার অপরাধ কর্মকাণ্ডও ভয়াবহ। এসপি রহমত উল্লাহর ইয়াবা কেলেঙ্কারি তার অপরাধ সাম্রাজ্যের একটি বড় উদাহরণ। প্রশাসনের সহায়তায় অপরাধ চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ থেকে যদি তিনি পার পেয়ে যান, তবে তা হবে দেশের আইনশৃঙ্খলার জন্য চরম হুমকি। এই কেলেঙ্কারির সুষ্ঠু তদন্ত ও কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।'

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

মাদক নিয়ে আরও পড়ুন

মুজিব শতবর্ষ উদ্‌যাপন কমিটির সভাপতি কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরি হত্যা মামলায় কারাগারে রয়েছেন। অথচ মুজিব শতবর্ষ উদ্‌যাপন কমিটির সদস্য সচিব ৪ হাজার কোটি টাকা লুটপাটের নায়ক এমদাদ উল্লাহ মিয়ান (৫৭০৪) এখনো কৃষি সচিব হিসেবে বহাল আছেন।

৬ ঘণ্টা আগে

সাতক্ষীরা সহকারী পুলিশ সুপার( তালা সার্কেল ) হাসানুর রহমান খান জানান, এঘটনায় মা পারুল বেগমকে আটক করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে ।

১০ ঘণ্টা আগে

রাজধানীর মিরপুর থেকে জমি নিয়ে জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার মামলার ৩ আসামিকে গ্রেফতার করেছে পল্লবী থানা পুলিশ। এরা হলেন-জয়নাল আবেদীন, জালাল এবং কাউসার। আসামিদের আদালতে হাজির করার প্রক্রিয়া চলছে।

১ দিন আগে

জ্ঞাত আয় বহির্ভূত এসব টাকা দিয়ে ঝিনাইদহ ছাড়াও তাঁর নিজ জেলা মাগুরা, যশোর ও নড়াইলে নামে-বেনামে গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। এমনকি আওয়ামী লীগ শাসনামলে বিধি বহির্ভূত ভাবে পদায়ন ও জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নিয়েছেন তিনি।

২ দিন আগে