কুয়েটে উপাচার্য না থাকায় ৬’শ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ বন্ধের পথে

প্রতিনিধি
খুলনা
Thumbnail image
ছবি: প্রতিনিধি

উপাচার্য না থাকায় খুলনা প্রকৌশলে প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) ‘র চলমান উন্নয়ন কাজের বিল পরিশোধ করা যাচ্ছে না। এতে প্রায় ৬’শ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

একই সঙ্গে উপাচার্যের অনুমোদন ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চলতি অর্থবছরের রাজস্ব খাতে বরাদ্দকৃত অব্যায়িত অর্থ খরচ করা সম্ভব হচ্ছ না। ৩০ জুনের মধ্যে এ অর্থ খরচ করতে না পারলে বিশ্ববিদ্যালকে আর্থিক জটিলতা তৈরির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে জানা গেছে, কুয়েটে ১০ তলা নতুন অ্যাকাডেমিক ভবন, ১২’শ আসন সম্বলিত ১০ তলা ১ টি ছাত্র হল ও ১ টি ছাত্রী হল, পাঁচতলা ১ টি ফরেন স্টুডেন্ট ডরমিটরি এন্ড ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি ভবন, শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের জন্য একটি ১০ তলা আবাসিক ভবন, পাঁচতলা বিশিষ্ট শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের জন্য একটি ডরমেটরি ভবন, গ্রীন বাউন্ডারি ওয়াল, ইন্টারনাল আরসিসি রোড নির্মাণ, সোলার সিস্টেম স্থাপনসহ সাব স্টেশন নির্মাণ, ভূমি উন্নয়ন, রিটেনিং ওয়াল, কভার স্নাবসহ সাবফেস ড্রেন নির্মাণসহ বেশ কিছু উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। এসবের আর্থিক মূল্য প্রায় ৬০০ কোটি টাকা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব শাখা থেকে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের আর্থিক ক্ষমতা উপাচার্যের হাতে। তার স্বাক্ষর ছাড়া এক টাকারও বিল পাস হয় না। গত দুই মাস ধরে তার স্বাক্ষরের অভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১’শ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন- ভাতা, চলমান উন্নয়ন কার্যক্রমের বিলসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় আর্থিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। নতুন উপাচার্য নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত এ সমস্যার সুরাহা সম্ভব নয়।

উপাচার্যের স্বাক্ষরের অভাবে মে মাসের বেতনসহ পবিত্র ঈদুল আযহার উৎসব ভাতাও পায়নি কোন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী। আর্থিক সংকটের কারণে এ সকল শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অধিকাংশই ঈদুল আযহার আনন্দ ঠিকমতো উদযাপনে করতে পারেনি। ৪ জুন ভিসি নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ বিভাগ থেকে। ২৬ জুন আবেদনের শেষ সময়। শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারীদের চলতি মাসেরও বেতন নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

নতুন ১০ তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দ্যা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড এসএসএল(জেভি) ‘র প্রকৌশলী মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘রমজানের ঈদের আগে আমরা সর্বশেষ বিল পেয়েছি। এরপর থেকে আর কোন বিল পাইনি। দশ তলা একাডেমি ভবন নির্মাণসহ অন্য একটি কাজ মিলিয়ে আমাদের দেড়শ’ কোটি টাকার কাজ চলছে। কোম্পানি ধার দেনা করে কোনোমতে কাজ চলমান রেখেছে। বিল না পেলে কাজের গতিও বাড়াতে পারছে না। কর্মচারীদের ঠিকমতো বেতনও দিতে পারছে না’।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো ও অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরিচালক ড. জুলফিকার হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬০০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। উপাচার্যের স্বাক্ষরের অভাবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিল পরিশোধ বন্ধ রয়েছে। ৩০ জুন চলতি অর্থ বছর শেষ হবে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজের বিল না পেলে তারা কাজ বন্ধ করে দিবে, এমন আভাস দিয়েছে। তিনি বলেন, মাছুদ স্যারকে অব্যাহতি দেয়ার পর, অন্তবর্তীকালীন উপাচার্য উন্নয়ন কাজের কোন বিলে স্বাক্ষর করেননি। দ্রুত উপাচার্য নিয়োগ না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান ৬০০ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ বন্ধ হয়ে যাবে”।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী এবিএম মামুনুর রশিদ বলেন, ‘উপাচার্য না থাকার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান উন্নয়ন কাজের সাথে সম্পৃক্ত ঠিকাদারগণকে সময়মতো বিল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। গত প্রায় দুই মাস ধরে তাদের কাজের বিল পরিশোধ করা যাচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে চলমান উন্নয়ন কাজ বন্ধ হয়ে যাবে। এছাড়া চলতি অর্থ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজস্ব খাতে বরাদ্দকৃত অব্যয়িত অর্থ খরচ করতে না পারলে বিশ্ববিদ্যালয় বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবে’।

উল্লেখ্য, শিক্ষকদের অনাস্থা ও আন্দোলনের মুখে ১৯ মে অন্তবর্তীকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ হযরত আলী দাপ্তরিক কাজের কথা বলে ঢাকার উদ্দেশ্যে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। এর দুইদিন পর ২২ মে রেজিস্টারের মোবাইল ফোনে মেসেজ দিয়ে তিনি পদত্যাগের কথা জানান। সেই থেকে টানা প্রায় দুই মাস অভিভাবকহীন কুয়েট।

এর আগে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২৫ এপ্রিল উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ ও উপ- উপাচার্য প্রফেসর ড. শরিফুল আলমকে অব্যাহতি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

ক্যাম্পাস নিয়ে আরও পড়ুন

দেশের প্রায় ৩ লাখ ৮০ হাজার সহকারী শিক্ষক নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করলেও তাদের মর্যাদা ও আর্থিক নিরাপত্তা দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত। বর্তমানে একজন সহকারী শিক্ষক ১৩তম গ্রেডে যোগদান করে মোট ১৭ হাজার ৬৫০ টাকা বেতন পান, যা বর্তমান বাজারমূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়

৬ ঘণ্টা আগে

প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা বোর্ড কর্মকর্তারা বলেন, গত বছর এসএসসি পরীক্ষা হয়েছিলো ১৬ এপ্রিল, এবার আমাদের টার্গেট আছে ৩০ এপ্রিল শুরু করার

৩ দিন আগে

পদটি বিলুপ্ত হওয়ায় এখন আগের মতোই প্রভাষকরা সরাসরি সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাবেন। প্রভাষকরা চাকরির ১০ বছর পূর্তিতে জাতীয় বেতন স্কেলের গ্রেড ৯ থেকে ৮ প্রাপ্য হবেন এবং ধারাবাহিকভাবে এমপিওভুক্তির ১৬ বছর পূর্তিতে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাবেন

৩ দিন আগে

আগের মোবাইল সেটে নতুন সরবরাহ করা সিম নিয়মিত চালু রাখলে শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হয়। সে কারণে গ্রামীণের করপোরেট নম্বর ব্যবহার করতে প্রতিষ্ঠানগুলোতে অনাগ্রহ দেখা দেয়

৩ দিন আগে