মিরপুরে বিশেষ শিশুদের শিক্ষাকেন্দ্রে দুর্নীতি ও অব্যবস্থা

থেরাপি সেন্টারে সেবা না দিয়েই মোটা অঙ্কের টাকা আদায়

প্রতিনিধি
নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট : ০২ জুলাই ২০২৫, ২০: ৫৯
Thumbnail image
ফাইল ছবি

রাজধানীর মিরপুরে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য পরিচালিত একটি শিক্ষা ও থেরাপি সেন্টারে সেবা না দিয়েই মোটা অঙ্কের টাকা আদায়, অতিরিক্ত দামে বই বিক্রি, ন্যূনতম সুবিধার অভাব এবং অভিযোগ জানালে হুমকি দেওয়ার মতো একের পর এক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

‘স্কুল ফর স্পেশাল কেয়ার (এসএস কেয়ার)’ নামের এই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অভিভাবকরা বলছেন, প্রতিষ্ঠানটি একদিকে সেবা না দিয়ে আর্থিকভাবে চাপে ফেলছে, অন্যদিকে অব্যবস্থাপনা ও অসচেতন ব্যবহারে শিশু ও তাদের পরিবারকে দুর্ভোগে ফেলেছে।

প্রতিশ্রুতি ছিল থেরাপির, বাস্তবে কেবল বিল

মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের সি ব্লকে অবস্থিত এসএস কেয়ারে ভর্তি করা শিশুদের মাসিক বেতন ৯ হাজার ৯০০ টাকা। প্রতিষ্ঠানের দাবি, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য নির্ধারিত ৮ ধরনের থেরাপি ও বিভিন্ন সেবা তারা দেবে।

কিন্তু অভিভাবকদের অভিযোগ, ছয় মাস পার হলেও অনেক শিশু একটি থেরাপিও পায়নি। নিয়মিত মাসিক ফি আদায় করা হলেও সেবার বালাই নেই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক অভিভাবক বলেন, “সমস্যা হচ্ছে, একটা বাচ্চার জন্য মাসে ১০ হাজার টাকা দেই। প্রতিটা বাচ্চার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নেয়া হয়, কিন্তু থেরাপি দেয়ার কথা ছিল আটটা—দেয় মাত্র চারটা। থেরাপির কথা বললেই বলে, ‘টিচার দেখতেছি’। সব সময় বলে ‘দিচ্ছি’, কিন্তু দেয় না। আর যাদের এসব ভালো না লাগে, তাদের বলে—‘আপনারা চাইলে চলে যেতে পারেন’। এভাবে প্রত্যেককে হুমকি দেয়।”

বইয়ের দাম চারগুণ, তবু সময়মতো মেলে না

শুধু সেবার অভাব নয়, এসএস কেয়ারের বিরুদ্ধে বাণিজ্যিকভাবে বই বিক্রির অভিযোগও তুলেছেন অভিভাবকরা।

তাদের ভাষ্য, বাইরের দোকানে ১০০ থেকে ১২০ টাকায় যে বই পাওয়া যায়, সেগুলো প্রতিষ্ঠানটি ৪০০ টাকায় বিক্রি করছে। তাও সময়মতো বই দেওয়া হয় না।

এক অভিভাবক বলেন, “তিন-চার মাস আগে টাকা দিয়েও বই পাইনি। বারবার বললে শুধু বলে, ‘দিচ্ছি’, কিন্তু দেয় না।”

পরিবেশের ঘাটতি, ব্যবস্থাপনাও দায়সারা

প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ নিয়েও রয়েছে গুরুতর অভিযোগ। অভিভাবকদের বসার জায়গা নেই, নেই পর্যাপ্ত টয়লেট সুবিধা। টয়লেট ব্যবহারে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে, যা নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন অনেকে।

একজন অভিভাবক বলেন, “বাচ্চাদের সঙ্গে এসে বসে থাকতে হয়, অথচ আমাদের বসার জায়গা নেই। টয়লেট ব্যবহারের সময়ও নির্ধারিত—সময়ের আগে বা পরে ব্যবহার করা যাবে না।”

কথা বললেই হুমকি নেই কোনো প্যারেন্টস মিটিং:

অভিভাবকরা জানিয়েছেন, স্কুলে কোনো প্যারেন্টস মিটিং হয় না। অভিযোগ জানালে কর্তৃপক্ষ হুমকি দেয়, স্কুল ছেড়ে চলে যেতে হবে।

“সন্তানদের প্রতি আচরণ ঠিক আছে কি না, তাও বুঝতে পারি না,” বলেন এক অভিভাবক। “কিছু বললেই হুমকি দেয়—স্কুল ছেড়ে যান।”

আগেই বেতন বাড়ানোর তাগিদ

অনেকেই অভিযোগ করেছেন, এক বছর শেষ হওয়ার আগেই বেতন বাড়ানোর চাপ দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। অথচ ভর্তি নেওয়ার সময় এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।

অভিভাবকদের দাবি, নিয়মিত আলোচনা সভা ও স্বচ্ছতা থাকলে এসব অনিয়ম ঠেকানো সম্ভব হতো।

তদন্ত ব্যবস্থা চায় অভিভাবকরা

এসব অনিয়ম, দুর্নীতি ও হয়রানির ঘটনায় অভিভাবকরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।

তাদের মতে, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জীবন ও শিক্ষার সঙ্গে এমন অবিচার বরদাশতযোগ্য নয়। একজন অভিভাবক বলেন, “এই শিশুদের হয়ে কেউ কথা বলে না। তাই চাই, সরকার যেন নজর দেয়।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

ক্যাম্পাস নিয়ে আরও পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে অংশ নিতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে।

৭ ঘণ্টা আগে

এ পর্যন্ত এ আন্দোলনে অন্তত ৬ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) ২ অনশনকারী প্রশাসনের আশ্বাসে অনশন ভেঙ্গে চলে যান। প্রথমে ১০ কার্যদিবসে ইউজিসি সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য সময় চেয়ে নেয় উপাচার্য এবং পরে অক্টোবরের মধ্যেই নির্বাচন হবে এই আশ্বাসে অনশন ভেঙ্গে ফেলেন বেরোবির শিক্ষার্থীরা

৭ ঘণ্টা আগে

শিক্ষক সংকট আমাদের শিক্ষার মানকে চরমভাবে বাধাগ্রস্ত করছে। যে কয়জন শিক্ষক আছেন, তাদের বেশিরভাগই প্রভাষক। অথচ অধ্যাপক কিংবা সহযোগী অধ্যাপক নেই বললেই চলে। এতে করে মানসম্মত শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে

১ দিন আগে

ইমি বাম গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট থেকে ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কিন্তু শেখ হাসিনাকে ডাকসুর আজীবন সদস্য করার পক্ষে দেওয়া তার বক্তব্যটি আবার ভাইরাল হয়েছে

১ দিন আগে