যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয়

স্বদেশে গেলে ঝুঁকিতে রিফিউজি স্ট্যাটাস ও স্থায়ী বসবাস

প্রতিনিধি
নিজস্ব প্রতিবেদক
Thumbnail image
ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক নিপীড়ন, নিরাপত্তাহীনতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ যুক্তরাজ্যে আশ্রয় চান। আশ্রয়ের আবেদন গৃহীত হলে প্রথম ধাপে পাঁচ বছরের Protection-Based Leave বা সুরক্ষামূলক বসবাসের অনুমতি দেওয়া হয়।

এ সময় উত্তীর্ণ হলে যোগ্যরা পান ‘ইনডেফিনিট লিভ টু রিমেইন’ (আইএলআর)—যা কার্যত যুক্তরাজ্যে স্থায়ী বসবাসের অধিকার। এরপর আরও অন্তত এক বছর যুক্তরাজ্যে থাকার পর ব্রিটিশ নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করা যায়।

এই পদ্ধতিরই আলোচনায় সম্প্রতি ফের এসেছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নাম। এক–এগারোর সময়কার রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর গ্রেফতারের মধ্যে ২০০৮ সালে তিনি চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে যান এবং তারপর থেকেই লন্ডনে অবস্থান করছেন। তিনি কোনো মর্যাদায় সেখানে অবস্থান করছেন—রিফিউজি নাকি অন্য কোনো স্ট্যাটাস—এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক তথ্য এখনো জানা যায়নি। খালেদা জিয়ার গুরুতর অসুস্থতার পর দেশে তাঁর প্রত্যাবর্তন সম্ভাবনা নিয়ে নতুন আলোচনাই এই প্রশ্নগুলো সামনে এনেছে।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

নিজ দেশে ভ্রমণ করলেই ঝুঁকিতে আশ্রয়ের মর্যাদা

যুক্তরাজ্যের অভিবাসন ও মানবাধিকার আইন বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন বলেন,

রাজনৈতিক আশ্রয় মানে হলো নিজের দেশের নিপীড়ন থেকে সুরক্ষা পাওয়া। তাই আইএলআর বা স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পাওয়ার পরও স্বদেশে ফিরে গেলে হোম অফিস ধরে নিতে পারে যে ওই ব্যক্তির আর নিরাপত্তা হুমকি নেই। এতে রিফিউজি স্ট্যাটাস যেমন বাতিল হতে পারে, তেমনি হারাতে হতে পারে স্থায়ী বসবাসের অধিকারও।”

তিনি ব্যাখ্যা করেন, রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়া ব্যক্তিদের জন্য যুক্তরাজ্য একটি ‘রিফিউজি ট্রাভেল ডকুমেন্ট’ সরবরাহ করে, যা দিয়ে তারা নিজ দেশ ছাড়া অন্য দেশে ভ্রমণ করতে পারেন। যার কাছ থেকে আশ্রয় চাওয়া হয়েছিল—সেই দেশেই ভ্রমণ করা এই নথিতে নিষিদ্ধ। কারণ, যে দেশে নিপীড়নের আশঙ্কা দেখিয়ে আশ্রয় নেওয়া হয়েছে, সেই দেশে ফিরে যাওয়া আশ্রয়ের মূল যুক্তিকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে।

স্বদেশে যেতে হলে প্রয়োজন মাতৃদেশের পাসপোর্ট—এতে বাড়ে আইনি সংকট

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, কোনো বাংলাদেশি আশ্রয়প্রাপ্ত যুক্তরাজ্য ত্যাগ করে বাংলাদেশে যেতে চাইলে তাঁকে বাংলাদেশি পাসপোর্ট বা সরকারের দেওয়া ভ্রমণ পারমিট ব্যবহার করতে হবে। এই প্রক্রিয়া নিজেই আশ্রয় দাবির বিপরীত সঙ্কেত পাঠায়। ফলে হোম অফিস অনুমান করতে পারে যে ওই ব্যক্তি আর নিপীড়নের ঝুঁকিতে নেই—এতে রিফিউজি স্ট্যাটাস, মানবিক সুরক্ষা এবং আইএলআর—সবই বাতিল হতে পারে।

যদি এই বাতিলের সিদ্ধান্ত ব্যক্তির যুক্তরাজ্যে অনুপস্থিত অবস্থায় হয়, তাহলে পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে ওঠে। তখন যুক্তরাজ্যে ফিরে আসাও আইনগতভাবে সম্ভব নাও হতে পারে এবং নতুন ভিসার মাধ্যমে পুনরায় প্রবেশের প্রক্রিয়া জটিল হয়ে যায়।

সাধারণ অভিবাসীদের নিয়ম আলাদা

সাধারণ স্থায়ী অভিবাসীদের ক্ষেত্রে আইএলআর পাওয়ার পর বিদেশে যাওয়া এবং যুক্তরাজ্যে ফিরে আসা আইনগতভাবে অনুমোদিত। তবে যুক্তরাজ্যের বাইরে টানা দুই বছরের বেশি অবস্থান করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আইএলআর বাতিল হয়ে যায়। তখন আবার প্রবেশ করতে হলে ‘রিটার্নিং রেসিডেন্ট’ ভিসা লাগে।

ব্রিটিশ নাগরিকত্ব ত্যাগের আইন

যদি কোনো ব্যক্তি ব্রিটিশ নাগরিকত্ব ত্যাগ করতে চান, হোম অফিসে আনুষ্ঠানিক আবেদন জমা দিতে হয়, যা সাধারণত দুই থেকে তিন মাসে নিষ্পত্তি হয়। আবেদন অনুমোদিত হলে নাগরিকত্ব ত্যাগের সনদ দেওয়া হয়, এবং ওই তারিখ থেকে তিনি আর যুক্তরাজ্যের নাগরিক থাকেন না। তখন যুক্তরাজ্যে থাকতে চাইলে নতুন ভিসা বা বসবাসের অনুমতি নিতে হয়।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে আরও পড়ুন

ভোরের নিস্তব্ধতায়, শীতের আকাশে আলোর আগে, নদীয়া জেলার নবদ্বীপ শহরের রেলওয়ে কলোনির এক অন্ধকার কোণে ঘটল অদ্ভুত এক দৃশ্য। এক নবজাতক শিশুকে দেখা গেল ঠান্ডা মাটিতে পড়ে, ঘিরে দাঁড়িয়ে ছিল কয়েকটি বেওয়ারিশ কুকুর। তারা কোনো আক্রমণাত্মক আচরণ করছিল না; বরং নিখুঁত প্রহরায় শিশুটিকে রক্ষা করছিল

৫ ঘণ্টা আগে

বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক নিপীড়ন, নিরাপত্তাহীনতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ যুক্তরাজ্যে আশ্রয় চান। আশ্রয়ের আবেদন গৃহীত হলে প্রথম ধাপে পাঁচ বছরের Protection-Based Leave বা সুরক্ষামূলক বসবাসের অনুমতি দেওয়া হয়

৬ ঘণ্টা আগে

আন্তর্জাতিক মুদ্রাবাজারে রুপির ওপর চাপ নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে আন্তঃব্যাংক লেনদেনে প্রতি ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপির বিনিময়হার নেমে দাঁড়িয়েছে ৮৯.৭৩—যা এখন পর্যন্ত রুপির সর্বনিম্ন মান। মাত্র দুই সপ্তাহ আগের ৮৯.৪৯-এর রেকর্ডও এই দরপতনে ছাড়িয়ে গেছে

৬ ঘণ্টা আগে

পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ঘিরে সম্ভাব্য সহিংসতা ও মৃত্যুর গুজবের কারণে সরকারের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে তিন দিনের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে

১ দিন আগে