কপোতাক্ষ বাঁধে ভাঙন

মেগা প্রকল্পে অনিয়ম ও ধীরগতি

প্রতিনিধি
খুলনা
Thumbnail image
ছবি: প্রতিনিধি

খুলনার কয়রা উপজেলার নদী ভাঙন এলাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং বাঁধের দুর্বলতার কারণে জলমগ্ন পরিস্থিতি বিরাজ করছে। প্রতিবছর এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত উপকূলীয় এই এলাকায় নদী ভাঙনের তীব্রতা বাড়ে। জলবায়ু পরিবর্তন, জোয়ার–ভাটার প্রকৃতি এবং নদীর গতিশীলতার কারণে ঝুঁকি বেড়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে প্রত্যাশিত ১২ হাজার কোটি টাকার মেগা বাঁধ প্রকল্প অনুমোদিত হলেও কাজের ধীরগতি, অনিয়ম ও অবৈধ বালু উত্তোলন এবং নদীর চরের বনায়নের ক্ষতি বাঁধের স্থায়িত্বকে হুমকির মুখে ফেলেছে।

জানা যায়, বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) গভীর রাতে কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের মাটিয়াভাঙ্গা এলাকায় প্রায় ২০০ মিটার বেড়িবাঁধ হঠাৎ ভেঙে যায়। স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমে রিং বাঁধ দিয়ে পানি আটকাতে সক্ষম হলেও আতঙ্ক কাটেনি। নদীর পাশে বসবাসকারীরা দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ী বাঁধ সংস্কারের অভাব এবং নদী খননে অবহেলার কারণে ভাঙন বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন। বর্তমানে ধানচর, শামুকপোতা, কুতুবেরচর, গাবতলা ও খোলপেটুয়া পাড়সহ কয়েকটি এলাকা ঝুঁকিতে রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, নদীর পাড়ের মাটি আগেভাগেই সরে যাওয়ার অস্বাভাবিক শব্দ শোনা যাচ্ছিল, কিন্তু মেরামতের যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ভাঙা অংশটি মেগা প্রকল্পের আওতায় থাকলেও ঠিকাদারের মনোযোগহীনতার কারণে নির্মাণ কাজ ধীরগতিতে চলছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য অনুযায়ী, ১,২০০ কোটি টাকার প্রকল্পের আওতায় ৩২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধে উচ্চতা ও প্রস্থ বৃদ্ধি, নদীশাসন এবং চরবনায়নের কাজ চলছে। মাটিয়াভাঙ্গার অংশও প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত।

স্থানীয় ইউপি সদস্য দিদারুল আলম জানান, বাঁধে এক মাস আগেই ফাটল দেখা দেয় এবং পাউবোর লোকদের জানানো হলেও কেবল দায়সারা বালুর বস্তা ফেলে অস্থায়ীভাবে কাজ করা হয়েছে। রাতের ভাঙন মোকাবিলায় গ্রামবাসী এবং পাউবো মিলে রিং বাঁধ নির্মাণ করেন, যা আপাতত প্লাবন রোধ করেছে। তবে সচেতন মহল বলছে, রিং বাঁধ স্থায়ী নয় এবং যে কোনো মুহূর্তে ভেঙে যেতে পারে।

উপ সহকারী প্রকৌশলী আলমগীর কবির জানান, কাজ চলমান অবস্থায়ই বাঁধ ভেঙেছে, সরঞ্জাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে বিকল্প রিং বাঁধে বড় বিপর্যয় এড়ানো গেছে। পাউবো উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রাশিদুল ইসলাম বলেন, প্রকল্প দ্রুত শেষ করার চেষ্টা চলছে। জমি অধিগ্রহণ জটিলতা, বরাদ্দ বিলম্ব, বালু ও মাটির সংকট এবং নদীর ভাটার সময়ের ওপর নির্ভরশীলতার কারণে কাজ পিছিয়ে যাচ্ছে। মাটিয়াভাঙ্গার ভাঙনের পর দ্রুত রিং বাঁধ নির্মাণে বড় ধরনের বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব হয়েছে এবং এখন ঝুঁকি কমেছে।

কয়রার নদী ভাঙন প্রকৃতির তাণ্ডব ও বাঁধের কাঠামোগত দুর্বলতার সমন্বয়। দ্রুত স্থায়ী সংস্কার না হলে বর্ষার আগে বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

জেলা নিয়ে আরও পড়ুন

পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ থেকে মুক্তিপণের দাবিতে ৭ জেলেকে অপহরণ করেছে বনদস্যুরা। রোববার সকালে সাতক্ষীরা রেঞ্জের মালঞ্চ এলাকার হাঁসখালী, চেলাকাটা, হেতালবুনি খাল থেকে তাদের অপহরণ করে। আত্মসমর্পণকৃত বনদস্যু ডন বাহিনীর পরিচয়ে ১০ জনের একদল সন্ত্রাসীরা তাদের অপহরণ করে।

১০ ঘণ্টা আগে

নীলফামারীর ডোমারে কৃষিজমি থেকে মাটি কেটে ইটের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করায় ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে শালকী ব্রিকসের মালিক জাফর ইকবাল পলাশকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

১২ ঘণ্টা আগে

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে দুই দিন ধরে তীব্র শীতের প্রভাব দেখা দিয়েছে। রবিবার (৭ ডিসেম্বর ২০২৫) সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা শনিবারের সঙ্গে একই রকম। পাহাড়, হাওর ও চা-বাগান এলাকায় ঠান্ডার তীব্রতা সবচেয়ে বেশি, যার ফলে জনজীবনে অসুবিধা তৈরি হয়েছে।

১৩ ঘণ্টা আগে

‎খুলনার কয়রা উপজেলার নদী ভাঙন এলাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং বাঁধের দুর্বলতার কারণে জলমগ্ন পরিস্থিতি বিরাজ করছে। প্রতিবছর এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত উপকূলীয় এই এলাকায় নদী ভাঙনের তীব্রতা বাড়ে। জলবায়ু পরিবর্তন, জোয়ার–ভাটার প্রকৃতি এবং নদীর গতিশীলতার কারণে ঝুঁকি বেড়েছে।

১৩ ঘণ্টা আগে