ইরানের দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলের দেহদাশত শহরের ঠিক নিচেই লুকিয়ে ছিল মানবসভ্যতার এক প্রাচীন অধ্যায়। দীর্ঘদিনের সন্দেহকে সত্যে রূপ দিয়ে প্রত্নতত্ত্ববিদরা সেখানে খুঁজে পেয়েছেন অন্তত ৭ হাজার বছরের পুরোনো এক প্রাগৈতিহাসিক গ্রাম। এই আবিষ্কার অঞ্চলের নবপাথরিক যুগ (Neolithic period)–সংক্রান্ত গবেষণায় নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।

মেহের নিউজ এজেন্সির প্রতিবেদনে জানানো হয়, দেহদাশতে চলমান খনন প্রকল্পের নেতৃত্বে থাকা প্রত্নতত্ত্ববিদ জবিহুল্লাহ মাসউদিনিয়া শনিবার সকালে নিশ্চিত করেন যে, শহরের কেন্দ্রে ৫ম ও ৬ষ্ঠ সহস্রাব্দ খ্রিস্টপূর্ব সময়কার নিদর্শন পাওয়া গেছে। তাঁর ভাষায়, “দেহদাশতের ঐতিহাসিক এলাকায় আগে কখনো পূর্ণাঙ্গ প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান হয়নি। প্রথমবার সীমিত আকারে খনন চালাতেই আমরা একেবারে অপ্রত্যাশিত তথ্য পেয়েছি।”

শহরের ওপরের স্তরে মধ্যযুগীয় ও ইসলামী যুগের স্থাপত্য পাওয়া গেলেও, সেই স্তর অপসারণের পর মিলেছে আরও প্রাচীন সাংস্কৃতিক উপাদান। প্রাথমিক বিশ্লেষণে এর বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৭ হাজার বছর। মাসউদিনিয়া জানান, আবিষ্কৃত স্তরগুলোর নিচে সেলজুক ও সাফাভি যুগের কাঠামোর সঙ্গে মিলেছে নিওলিথিক যুগের মৃৎপাত্র, বাসন ও দৈনন্দিন ব্যবহার্য সামগ্রী।

আবিষ্কারগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিস্ময়কর হলো উত্তপ্ত পাথরের ব্যবহার–সংক্রান্ত প্রমাণ। সে সময়ের মানুষ আগুনে পাথর গরম করে তা দুধ, পানি বা খাবার গরম করতে ব্যবহার করত—যা তাদের প্রযুক্তিগত দক্ষতার গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত।

প্রত্নতত্ত্ববিদরা আরও জানিয়েছেন, ১৯৫৬ সালের আকাশচিত্রে দেহদাশত কারাভানসারাইয়ের পাশে একটি টিলার অস্তিত্ব দেখা গেলেও শহরের সম্প্রসারণে তা প্রায় বিলীন হয়ে যায়। বর্তমান খননে সেই হারিয়ে যাওয়া টিলাই আবার সামনে এসেছে, যা নিওলিথিক যুগের ওই প্রাচীন গ্রামের অস্তিত্ব নিশ্চিত করেছে।

খননকার্যে শহরের উত্তরাংশে প্রাচীন কানাত (Qanat) পানি সরবরাহ ব্যবস্থার ধ্বংসাবশেষও পাওয়া গেছে। গবেষকদের মতে, আধুনিক দেহদাশতের উল্লেখযোগ্য অংশই আসলে এই প্রাগৈতিহাসিক টিলার ওপর নির্মিত।

প্রত্নতাত্ত্বিকরা বলছেন, দেহদাশতের এই নতুন আবিষ্কার শুধু ইরানের নয়, মানবসভ্যতার প্রাচীন ইতিহাস বোঝার ক্ষেত্রেও এক বড় অগ্রগতি হয়ে থাকবে।